এই সেই ইতিহাস লেখার গাইডলাইন! হ্যাঁ কি কি লেখা যাবে না, পরিষ্কার বলা আছে। পড়েই দেখুন।
ভারতে মুসলিম আক্রমণ ও বীভৎস অত্যাচারের ইতিহাসকে বিস্মৃতির অতলে ডুবিয়ে দেওয়ার ঘৃণ্য বামপন্থী প্রচেষ্টাঃ…….
“ভারতীয় সংবিধান জনসাধারণকে বাকস্বাধীনতা বা সত্যকথা লিখে জনসচেতনতা বৃদ্ধির অধিকার দিয়েছেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁদের এক আদেশ বলে, জনসাধারণের সেই অধিকারের টুটি চেপে ধরেছেন। তাতে বলা হয়েছে গত ১২৩৫ বছরের (৭১২-১৯৪৭) মুসলিম অত্যাচার, নারী ধর্ষণ, মন্দির ধ্বংসের বিষয়ে কোনকিছু লেখা বা বলা যাবে না-“Muslim rule should not attract any criticism. Destruction of Temples by Muslim invaders and rulers should not be mentioned. (Circular No. SYL/89/1 date 28.4.1989 Ministry of Education, Govt of West Bengal)”
রবীন্দ্রনাথ দত্ত (‘দ্বিখন্ডিতা মাতা, ধর্ষিতা ভগিনী’, পৃষ্ঠা নং ২)
১৯৮৯ সালে পশ্চিমবঙ্গের মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষৎ কর্তৃক জারি হওয়া বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গ সরকার অধিকৃত সরকারী বিদ্যালয়গুলির প্রধান শিক্ষকদের নির্দেশ দেওয়া হয় যে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের জন্য কিভাবে বই লিখতে হবে এবং ঐসকল নির্দেশাবলীর প্রধান শর্তগুলিই ছিল যে ভারতের মুসলিম শাসনকালের কোনোরূপ বিরূপ সমালোচনা করা যাবে না ও মহান(?) মুসলমান শাসকেরা যে হিন্দু মন্দির ধ্বংস করেছেন তা উল্লেখ করা যাবে না – তা বলাই বাহুল্য। কি ভাবে বামপন্থী আমলে ভারতের মধ্যযুগীয় ইতিহাস’কে বিকৃত করা হয়েছে, নিচে তারই কিছু প্রমান আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে।
নিম্নে রাধেশ্যাম ব্রহ্মচারী লেখা ‘মিথ্যার আবরণে দিল্লি-আগ্রা-ফতেপুর সিক্রি’ গ্রন্থ কিছু উদ্ধৃতি প্রসঙ্গক্রমে উল্লিখিত হল:
“……… মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষৎ যে সব ইতিহাসের পাঠ্যপুস্তককে নবম শ্রেণীর পাঠযোগ্য বলে স্বীকৃতি দিয়েছে সেই বইগুলোর মধ্যযুগের ইতিহাসের অধ্যায়ে কিছু কিছু পরিবর্তন প্রয়োজন। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদরাই এই পরিবর্তনগুলো সুপারিশ করেছেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।
“এই কারণে নবম শ্রেণীর ইতিহাসের পাঠ্যপুস্তকগুলির লেখক ও প্রকাশকদের অনুরোধ করা যাচ্ছে যে তাঁরা যেন তাঁদের বইয়ের ভবিষ্যৎ সংস্করণগুলিতে, নিচে যেমন দেখানো হয়েছে সেইভাবে, অশুদ্ধ অংশগুলোকে শুদ্ধ করে প্রকাশ করেন। আর যে সব বই ইতিমধ্যে ছাপা হয়ে গিয়েছে, তাতে নিম্নলিখিত ‘অশুদ্ধ-শুদ্ধ’ তালিকাটি জুড়ে দেন এবং সেই রকম একখানা বই যেন ৭৮ নং রফি আমেদ কিদোয়াই রোড, কলিকাতা- ১৬স্থিত পর্ষৎ অফিসে জমা দেন।”
‘শুদ্ধ-অশুদ্ধ’ তালিকা থেকে কয়েকটি নমুনা নিম্নে দেওয়া হলঃ-
১.) পুস্তকের নাম : ভারত কথা
লেখকের নাম : বর্ধমান শিক্ষাসমিতি, শিক্ষা সংগঠন। প্রকাশকের নাম : সুখময় দাস
(ক) অশুদ্ধ : পৃঃ ১৪১ – চতুর্থতঃ, বলপূর্বক হিন্দু মন্দির ধ্বংস করাও একপ্রকার আক্রমণ। পঞ্চমতঃ বলপূর্বক হিন্দু রমণীদের বিবাহ করা ও তাদের ইসলামে ধর্মান্তরিত করাও উলেমাদের দ্বারা মৌলবাদের প্রসারের আর এক দিক মাত্র।
শুদ্ধ : যদিও ‘চতুর্থতঃ’ শব্দের পর থেকেই অশুদ্ধতা শুরু হয়েছে, তবে ‘দ্বিতীয়তঃ’ থেকে ‘উলেমা’ পর্যন্ত পুরো অংশটাই বাদ দিতে হবে।
২.) পুস্তকের নাম : ভারতবর্ষের ইতিহাস
লেখকের নাম : ডঃ নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। প্রকাশকের নাম : চক্রবর্তী এন্ড সন্স
(ক) অশুদ্ধ : পৃঃ ৮৯ – সুলতান মামুদ ব্যাপক হত্যা, লুণ্ঠন, ধ্বংসাত্মক কাজকর্ম ও বলপূর্বক ধর্মান্তরকরণ করেছিলেন।
শুদ্ধ : সুলতান মামুদ ব্যাপক হত্যা, ধ্বংস ও লুণ্ঠন করেছিল ঠিকই, কিন্তু বলপূর্বক ধর্মান্তরকরণ করেছিল তার কোন প্রমাণ নেই।
(খ) অশুদ্ধ : পৃঃ৮৯ – সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন করে সে প্রায় ২ কোটি দিরহাম (স্বর্ণমুদ্রা) মূল্যের মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে গিয়েছিল। সোমনাথের শিবলিঙ্গ গজনীতে নিয়ে গিয়ে সেখানকার মসজিদে তা সিঁড়ির মত ব্যবহার করেছিল।
শুদ্ধ : ‘সোমনাথের শিবলিঙ্গ…. সিঁড়ির মত ব্যবহার করেছিল’ অংশটা বাদ দিতে হবে।
(গ) অশুদ্ধ : পৃঃ ১১২- মধ্যযুগে হিন্দু-মুসলমানের সম্পর্কের ব্যাপারটা খুবই স্পর্শকাতর বিষয় ছিল। অমুসলমানদের মৃত্যু অথবা ইসলাম, এই দুইয়ের মধ্যে একটা বেছে নিতে হত।
শুদ্ধ : সমস্ত বিষয়টাই বাদ দিতে হবে।
৩.) পুস্তকের নাম : ভারতের ইতিহাস
লেখকের নাম : শুভঙ্কর চট্টোপাধ্যায়। প্রকাশকের নাম : নর্মদা পাবলিশার্স
(ক.) অশুদ্ধ : পৃঃ ১৩২- বিখ্যাত ঐতিহাসিক টড’-এর মতে আলাউদ্দিনের চিতোর অভিযানের মূল উদ্দেশ্য ছিল রানা রতন সিংহের সুন্দরী পত্নী পদ্মিনীকে হস্তগত করা।
শুদ্ধ : পুরোটা বাদ দিতে হবে।
(খ.) অশুদ্ধ : পৃঃ ১৬১- প্রথমদিকের মুসলমান শাসকেরা বলপূর্বক হিন্দুদের মুসলমান করে ইসলামের সাম্রাজ্য বাড়াতে খুবই তৎপর ছিলেন।
শুদ্ধ : পুরোটা বাদ দিতে হবে।
৪.) পুস্তকের নাম : ভারত কথা
লেখকের নাম : জি. ভট্টাচার্য। প্রকাশকের নাম : বুলবুল প্রকাশন
(ক.) অশুদ্ধ : পৃঃ ৪০- মুসলমানরা ভারতীয়দের উপর তাদের ধর্মবিশ্বাস চাপিয়ে দিতে অকথ্য অত্যাচার ও অন্যান্য অমানবিক পন্থা গ্রহণ করত।
শুদ্ধ : পুরোটা বাদ দিতে হবে।