ভবিষ্যতের গাজা:
———————
অনেক ঐতিহাসিক লিখেছেন সিন্ধু নদের উপত্যকায় সনাতন ধর্মের জন্ম, তবে এই ‘সনাতন’ ব্যাপারটা ঠিক হজম হয় না ! বিশ্বের চারটি প্রাচীন সভ্যতার (Mesopotamia, Egypt, Indus, China) মধ্যে সিন্ধু নদের সভ্যতা একটা।
৫৭০ সালের পরে ইসলামের বিস্তার ঘটতে থাকে সারা বিশ্বে ,কারনটা অনেকেরই অজানা নয় যতই সুফি বন্দনা করুন না কেনো ! ৬৩৬ সালে খলিফা ওমরের শাসনামলে ভারত ভুখন্ডে প্রথম মুসলিম আগ্রাসন শুরু হয় । পরের দিকে খলিফা ওসমান, আলী ও মুয়াবিয়ার আরো আক্রমণ হানে । হাজ্জাজ বিন ইউসুফের দুটো ব্যাপক আগ্রাসনও ভারতবর্ষে পরিপূর্ণভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হলো, হাজ্জাজের ভাইপো মোহাম্মদ বিন কাসিম ৭১২ সালে সিন্ধুর দেবাল বন্দর জয় করলো আর প্রথম ইসলামী ঘাঁটি গাড়তে সক্ষম হলো ভারতবর্ষে । এরপর ১৩০০ বছরে ৮ কোটিরও বেশী হিন্দু নিধন চললো আর ইসলাম উপমহাদেশে জাঁকিয়ে বসলো । ইরানের নাদির শাহ ১৭৩৮এর দিকে, ১৮০০এর দিকে আফগান আহমাদ শাহ আবদালী কিংবা মুঘল সাম্রাজ্যের টিপু সুলতানরা হাজারে-হাজারে, লাখে-লাখে স্থাণীয় হিন্দু নিধন, সম্পদ লুন্ঠন, ক্রীতদাসত্বকরণ করেছিল ।
বহুল সমালোচিত সতীদাহ প্রথার উৎপত্তিও এই সময়কালেই । মোহাম্মদ বিন কাসিমের ক্রীতদাসত্বের থেকে রক্ষা পেতে এবং নিজেদের ইজ্জৎ বাঁচাতে হিন্দু বিবাহিত নারীরা স্বামীর সাথেই আগুনে ঝাঁপ দিয়ে মরত । এটা হিন্দু সমাজের অংশ হিসেবে বিশ্বে প্রচার পেয়ে গেল ! এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলো ১৫৬৮ সালে চিত্তোরগড়ে ৮ হাজার হিন্দু নারী একসাথে আগুনে ঝাঁপ দিয়ে স্বামীদের সাথেই মরেছিল । ( এম. এ. খানের “জিহাদ: জবরদস্তিমূলক ধর্মান্তকরণ, সাম্রাজ্যবাদ ও ক্রীতদাসত্বের উত্তরাধিকার” ) ।
একটু সংখ্যায় চোখ বুলিয়ে নি : দেশভাগের পরে এবং বাংলাদেশ স্বাধীনের পরে পাকিস্তানে ১৫% হিন্দু ছিলো ,আজকে ২% এরও নিচে !! বাংলাদেশে ১৯৫১ সালের হিসেবে ৩৩% থেকে আজ ৮-৯% এ নেমে এসেছে !! স্বাধীনতার পরে ভারতে মুসলিম জনসংখ্যা ৯% থেকে আজ প্রায় ২০% এরও বেশী ।
‘লাভ জিহাদ’ এর ব্যাপারটা এখন আর অজানা নয় । হিন্দু মেয়েদের ভালোবাসার জালে ফেলে ধর্মান্তরিত করে বিয়ে পরে হয়ত আরেকটা বিয়ে পরে বাপ-মায়ের কথা রাখতে আর দাসী করে রাখা । ধর্মান্তরিত মেয়েটি অনেক ক্ষেত্রেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় । আরও আছে, হিন্দুদের জমি দখল, মেয়েদের ধর্ষণ, পুরুষদের হত্যা, সম্পদ লুঠ, মন্দির ধ্বংস – এসব তো নিয়ম করে হয় বাংলাদেশ-পাকিস্তানের মতো দেশে । আজকাল শুরু হয়েছে ফেইসবুকে নবীজী কিংবা ইসলামকে অবমাননার দায়ে হিন্দু পল্লীতে আক্রমণ । এই গল্পে হিন্দু জনসংখ্যা বাংলাদেশ-পাকিস্তান থেকে বিলুপ্ত হতে আর বেশী বছর নেই ! ভারতে সেকু-মাকু তো আছেই যারা বামপন্থার ‘ব’ মানেনা কিন্তু কাশ্মীরের স্বাধীনতায় গলা ফাটায় !
ভারতে বহু তীর্থস্থাণের ঠিক পাশেই মসজিদ-মাদ্রাসা গড়ে উঠেছে (কেদারনাথ, মথুরা, বৃন্দাবন…….) । কেউ যদি প্রশ্ন করে কেনো এসব জায়গাগুলোতেই তাহলে ট্যাগ খাবে “সাম্প্রদায়িক” ! মালদার কথা নাই বা বললাম । কলকাতা এয়ারপোর্টের রানওয়েতে মসজিদের ব্যাপারটা নিশ্চই পাঠকরা ভুলে যান নি ?
তাহলে ভারতের আগামীতে কি অপেক্ষা করছে ? কালের বিবর্তনে যদি আবার কোনো বড় বিশ্বযুদ্ধের মতো কিছু ঘটে, যখন হিটলারের মতো হিন্দু পুরোপুরি বিলুপ্তিতে কোনো শাসক মাথাচারা দিয়ে উঠবে, তখন পশ্চিমা বিশ্ব (বৃটেন, আমেরিকা ) হয়ত হিন্দুদেরকে Balfour Declaration এর মতো কোনো আইন বানিয়ে তাদের পূর্বপুরুষদের ভূমি ভারতবর্ষে ফেরত আসতে বলবে বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে ! স্থাণীয় মুসলিমরা বলবে আমরাই তো এখানে আদিকাল থেকে বাস করছি, যেমন কাশ্মীরের আজকের মুসলমানরা বলে আর লেগে যাবে যুদ্ধ । Zionist দের মতো হিন্দু উগ্রবাদী কিছু গোষ্ঠী তখন কোনো মতেই ছেড়ে কথা বলবে না, হয়তো চলবে অনির্দিষ্টকালীন যুদ্ধ আর মরবে মানুষ । বিশ্ব চোখের জলে কেঁদে ভাসাবে ভারতবর্ষের মুসলিম নিধনে, ঠিক যেমন আজকে কাঁদে প্যালেস্টাইনের জন্য ! সবাই দোষারোপ করবে হিন্দুদের, যেমন ইসরাইল আর ইহুদিদের আজকে করে আর ফেইসবুক, টুইটার ভরে যাবে # SaveIndianMuslims বলে !!
উপরুক্ত মানবতাবাদীদের কেউই কিন্তু অমরনাথের তীর্থযাত্রীর উপর আক্রমণে কেউ চোখের জল ফেলে না, Human Rights Watch বা Amnesty International-কে প্রশ্ন করে না এসব নিয়ে ! বাবার সামনে মাকে ও মেয়েকে যখন ধর্ষণ করা হয়, তখন দুনিয়ার অধিকাংশ চুপ !! সামান্য কিছু মানুষ সেইসব নারীদের জন্য আওয়াজ তোলে যারা শীতের দিনে মুসলিম শোষকদের হাত থেকে বাঁচার জন্য পুকুরে, নদীতে ডুব দিয়ে মরার অভিনয় করে বাঁচার চেষ্টা করেছিলো, কিন্তু কোনো বিচার পায় নি !
পাঠক, ইসরায়েলের গাজার মতো আরেকটা ভূখণ্ড তৈরির মালমশলা একদম রেডি । ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হয়, সে পশ্চিমাদের ক্ষেত্রেই হোক আর প্রাচ্যের ক্ষেত্রেই
হোক । আগামী প্রজন্ম ভারতীয় উপমহাদেশ ভূখণ্ডে কি নৃশংস বর্তমান সময়ের চেয়েও ভয়ানক ভবিষ্যত পার করবে ?