কেন বিশ্ব মুসলিম বিদ্বেষী ও ইসলামোফাবিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে??

খাজা মঈনুদ্দিন চিশতির আজমি শরীফ ভারতকে উপমহাদেশের মুসলিমদের জন্য অবাধ যাতায়াত করে তুলেছে। কিন্তু শিখদের গুরু নানকের জন্মস্থান পাকিস্তানের পাঞ্জাবে হওয়ায় ভারতীয় শিখদের কি তা তীর্থ হয়ে উঠতে পেরেছে? হিন্দুদের বড় একটি তীর্থ হিংলাজ পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে পড়েছে। হিন্দুরা কি সেখানে তীর্থ করতে যেতে পারে আজমীর শরিফের মত করে?

শিখদের কাছে গুরু নানক নবী অবতারের মত। সেই নানকের জন্মস্থানে শত শত পাকিস্তানী মুসলমান শিখ মন্দিরে হামলা করে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। পুলিশ প্রশাসনের সামনে তারা হুংকার দিয়েছে পাকিস্তানে সমস্ত শিখ মন্দিরকে মসজিদ বানাতে হবে। শিখ তরুণীকে তুলে নিয়ে মুসলমান করে বিয়ে করার মত ইসলাম সম্প্রসারণের সহি তরিকায় বাধা আসলে এভাবেই যে কোন সংঘবদ্ধ তৌহদী জনতা তার সমুচিত জবাব দেয়। সেটাই আমরা পাকিস্তানে ঘটতে দেখলাম। বিশ্ববাসী চুপ।

ভারতে না হয় নরেন্দ মোদী যোগীনাথ অমিত শাহের মত সাম্প্রদায়িক হিন্দু এখন ক্ষমতায়, কিন্তু পাকিস্তানে তো অক্সফোর্ড পড়ুয়া ইমরান খান মসনদে বসে আছে যার জাতিসংঘ ভাষণ “পোগতিশীল মুসলমান” ও বামপন্থিদের মুগ্ধ করেছিলো। ইমরান খান কি করলেন শিখ মন্দির যখন পুড়ছিলো? লোকটা দাঙ্গা লাগানোর জন্য, পাকিস্তানের হিন্দুদের পিষে মেরে ফেলার জন্য ভারতের উত্তর প্রদেশের মুসলমানদের উপর হিন্দুদের হামলার ভিডিও বলে বাংলাদেশের হেফাজত ইসলাম ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের ২০১৩ সালের একটা ভিডিও আপলোড করে দাবী করলেন ভারতে মুসলমানরা হিন্দুদের হাতে এভাবেই মার খাচ্ছে…।
এই কাজ ট্রাম্প করলে এতক্ষণে বিশ্ব তাকে বেহায়া, মিথ্যুক, মাথামোটা, বর্ণবাদী বলে খিস্তিতে ভরিয়ে ফেলত। মোদী করলে লোকটা দাঙ্গা বাধাতে মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছে। কিন্তু ইমরান খান করলে প্রতিক্রিয়া সেভাবে হয় না। মুহাম্মদের জন্মস্থানে হামলা হলে সারা বিশ্বের মুসলমান এক হয়ে উঠত। মক্কা মদিনা আক্রমন হলে বাংলাদেশ তার সেনাবাহিনী পাঠিয়ে ইসলামের জন্মস্থানকে রক্ষা করবে বলে ওয়াদা করে এসেছে। ভারতে একটা পরিত্যাক্ত বাবরী মসজিদ ভাঙ্গার পর থেকে গোটা বিশ্ব জেনেছে পৃথিবীতে কেবল ভারতে মুসলমানদের ধর্মালয়ে হামলা ভাংচুর ঘটে। পাকিস্তানে কি পরিমাণ হিন্দু মন্দির জায়গা জমি হারিয়েছে, ঢাকার রমনা কালিমন্দির কেমন করে উচ্ছেদ হয়ে পোস্তগোলা যেতে হচ্ছিলো সেই ইতিহাস বাংলাদেশেই মাটি পুতে মেরে ফেলা হয়েছে। নিউজিল্যান্ডের মসজিদে হামলার পর নিউজিল্যান্ডের জাতীয় প্রতীক নামাজরত মুসলিমদের আদলে এঁকে মুসলিমদের পাশে থাকার ঘোষণা এসেছিলো। কিন্তু শ্রীলংকায় গির্জায় প্রার্থনারত খ্রিস্টানদের উপর হামলার পর মুসলিম বিশ্ব কি করেছিলো? গুরু নানকের জন্মস্থানে হামলার পর কি করছে?
“মুসলমানরা নির্যাতিত” পৃথিবীতে এককভাবে এই প্রচারণাটা ঘটে “মুসলিম উম্মাহ” দ্বারা। ইসলামের সঙ্গে এখানেই অন্যান্য ধর্মের তফাত। ইসলাম মুসলমানদের উম্মাহ, একটা জাতি ধারণা দেয়। বাস্তবে এর কোন অস্তিত্ব না থাকলেও এই আবেগ ইরাকে ঘটা কোন ঘটনার প্রতিক্রিয়া পাপুয়া নিউগিনিতে ঘটে যেতে পারে! মাফিয়া ধর্মের জন্য মানুষ হাসতে হাসতে মরতেও পারে। একজন মুসলমান তার ধর্মের জন্য এক হাজারটা খুন করে হাসতে হাসতে ফাঁসির দড়িতে যেতে পারে। একজন ধার্মীক মুসলমানকে অবশ্যই সাইকো হতে হবে। তার মানসিক পক্ষাঘাত যে কোন ভিন্ন ধর্মের ধার্মীকের চেয়ে ভিন্ন। সংখ্যালঘু হয়েও তাই কোন মুসলমান ইউরোপ আমেরিকায় একটা ছুরি হাতে ঝাপিয়ে পড়ে কোন অমুসলিমের উপর। আর এরকম ঘাতক মুসলমানের পাশে থাকার জন্য তো “মুসলিম উম্মাহ’ আছেই। মুসলিম উম্মাহ থেকেই ওআইসি গঠিত হয়েছে। মুসলমানরা সারাবিশ্বে নির্যাতিত তাদের ধর্মের কারণে- ওআইসি দিয়ে এরকম হিউমার ছড়ানোর মত শিখ খ্রিস্টান বৌদ্ধ হিন্দুদের কিছু নেই। যে কারণে আফগানিস্থানে বৌদ্ধ মূর্তিগুলো কামান দাগিয়ে ধ্বংস হলে তার কোন প্রতিক্রিয়া সাম্প্রদায়িকভাবে পড়ে না। এই না পড়াটা পৃথিবীর জন্য স্বস্তিকর। কিন্তু “মুসলিম উম্মাহ” সেই স্বস্তিকে বারবার অশান্ত করে তুলেছে। তারা অন্যের ধর্মালয় ভাঙ্গলে সেটা না দেখার ভান করবে- আর মুখে নিজেদের পৃথিবীর সবচেয়ে নিপীড়িত দাবী করবে! যে ধর্মে ইহুদীদের পবিত্র ভূমি জেরুজালেম ইমাম মাহদি এসে দখল করবে বলে বিশ্বাস করতে বলা হয়েছে তারা আর যাই হোক অন্যের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে পারে না। তাদের কাছে তো নানকের জন্মস্থান নিছক এক কাফেরের জন্মস্থান! সেটা দখল করে মসজিদ বানালে আল্লার নামে দিনে ৫ বার সেজদা হবে- নফরমানীর বদলে আল্লার কালাম পাঠ হবে- মুসলমানদের এই মানসিকতা কিভাবে পরিবর্তন করবেন?
তাই এই একবিংশ শতাব্দীতে এসে আমরা দেখছি ডানপন্থি হিন্দু খ্রিস্টান ইহুদী বৌদ্ধ জনমত গড়ে উঠছে। সবাই এন্টি মুসলিম। কোথাও কিন্তু খ্রিস্টানরা এন্টি হিন্দু বা এন্টি বৌদ্ধ দেখা যায় না। কোথাও হিন্দুদের এন্টি বৌদ্ধ কিংবা এন্টি খ্রিস্টান দেখা যায় না। মধ্যযুগের চরম বৈরী ইহুদী খ্রিস্টান পরস্পর এখন মিলেমিশে থাকে। কিন্তু সবাই এন্টি মুসলিম। কেন সেটা? কেন বিশ্ব মুসলিম বিদ্বেষী ও ইসলামোফাবিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে? কারণ সেই “মুসলিম উম্মাহ”। নিজেরা মুসলিম দেশ হব, মুসলিম জাতির আবেগে হাউ কাউ করব, অন্যের ধর্মের অধিকার হরণ করব, অন্যকে দেশ থেকে ছলেবলে বের করে দিবো আর নিজেকে নির্যাতিত নিপীড়িত বলে প্রচারণা করব- তাহলে বিশ্ব একদিন না একদিন সাম্প্রদায়িকভাবে তার জবাব দিবেই। সেটাই দৃশ্যমান হচ্ছে আজ চারদিকে। মুসলিমরা দ্রুত জাতি ধারণা থেকে বেরিয়ে না আসলে তাদের পিঠ বাঁচানোর কোন পথ থাকবে না। ওআইসি ভেঙ্গে দিয়ে মুসলমানদের যার যার নৃতাত্ত্বিক জাতি পরিচয়ে ফিরে গেলেই অন্যরাও ফিরে যাবে তাদের সহিষ্ণু গণতান্ত্রিক অবস্থানে।
Scroll to Top