উপমহাদেশের এক গর্ভ, গুগলের সিইও সুন্দর পিচাই ……………………।।।

১৯৭২ সালে ভারতের চেন্নাইতে জন্মগ্রহণ করেন সুন্দর পিচাইয়। তিনি ইন্ডিয়ান
ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি খড়গপুর থেকে প্রযুক্তি বিষষে স্নাতক সুন্দর
যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএস ও পেনসিলভানিয়া
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ সম্পন্ন করেছেন।গুগলের
ঘোষণা অনুযায়ী, অ্যালফাবেটের-এর হয়ে সার্চ ইঞ্জিন, অ্যানড্রয়েড, ক্রোম,
পরিকাঠামো, ইউটিউব এবং বিজ্ঞাপন দেখবে গুগল। এছাড়া অ্যালফাবেটের অধীনে
থাকছে গুগল এক্স, নেস্ট, ক্যালিকো, লাইফ সায়েন্স এবং গুগল ফাইবার।
স্বয়ংক্রিয় গাড়ি, ডেলিভারি ড্রোন, ইন্টারনেট বেলুন-এর মতো ব্যবসাগুলি
দেখবে গুগল এক্স। স্মার্ট থার্মোস্ট্যাট-এর ব্যবসা দেখবে নেস্ট। গুগল
ফাইবার-এর অধীন থাকছে ব্রডব্যান্ড পরিসে
বার ব্যবসা। দীর্ঘস্থায়ী জীবন নিয়ে
গবেষণার কাজ দেখবে ক্যালিকো। ক্যালিকো এরই মধ্যে যৌবনকে দীর্ঘস্থায়ী করার
গবেষণায় বিনিয়োগ করেছে। আর বিশেষ ধরনের কনট্যাক্ট লেন্স-এর ব্যবসা করবে
লাইফ সায়েন্স। এ প্রত্যেকটি সংস্থার নিজস্ব সিইও থাকবে। যেমন গুগলের সিইও
হলেন সুন্দর পিচাই।

গুগলের সিইও হলেন ভারতীয় বংশদ্ভূত প্রযুক্তিবিদ সুন্দর পিচাই! যাঁর হাত
ধরে, একে একে পৃথিবী কাঁপিয়েছে গুগল ক্রোম, ডেস্কটপ সার্চ এবং গুগল
অ্যান্ড্রয়েড! আইআইটি-খড়গপুরের এই প্রাক্তনীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ
গুগল-প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ।
গুগল শীর্ষে ভারতীয় বংশদ্ভূত! নতুন সাজে সাজার পর, সংস্থার সিইও বা
প্রধান কার্যনির্বাহী আধিকারিক  ৪৩ বছরের
প্রযুক্তিবিদ সুন্দর পিচাই!

স্কুলের পড়া শেষ করে খড়গপুর আইআইটি থেকে মেটালার্জিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
নিয়ে বিটেক করেন সুন্দর। তারপর উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি দেন মার্কিন
মুলুকে। সেখানে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএস। তারপর পেনসিলভেনিয়া
বিশ্ববিদ্যালয়ের হোয়ার্টন স্কুল থেকে বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে মাস্টার্স
ডিগ্রি।
২০০৪ সালে গুগলে প্রবেশ সুন্দরের। ২০০৮-এ তাঁর নেতৃত্বেই বাজারে আসে
‘ক্রোম’। জন্ম লগ্নেই তা কড়া টক্কর দেয় মাইক্রোসফ্টের ইন্টারনেট
এক্সপ্লোরার-এর একাধিপত্যকে! এরপর কার্যত তাঁর হাত ধরেই বাজারে আসে ‘গুগল
টুলবার’, গুগল ‘ডেক্সটপ সার্চবার’-এর মতো প্রোডাক্ট। বছর দুই আগে সবার নজর
কাড়া ‘গুগল অ্যান্ড্রয়েড’-এরও অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সুন্দরই! এহেন সুন্দর
সম্পর্কে ল্যারি পেজ মন্তব্য করেছেন, পিচাই গুগলকে ভবিষ্যতের পথে নিয়ে
যাবেন।
এতদিন অবধি শুধুমাত্র ইন্টারনেট দুনিয়াতেই নিজেদের সীমাবদ্ধ রেখেছিল
গুগল। কিন্তু নয়া এই সংস্থার হাত ধরে গুগল তাদের প্রভাব বিস্তার করবে
স্ব-চালিত গাড়ি থেকে চিকিত্সা সংক্রান্ত সমস্ত ক্ষেত্রে। যদিও ইন্টারনেট
দুনিয়ায় জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন গুগল নামেই পরিচিতি থাকবে, কিন্তু নয়া সংস্থা
‘অ্যালফাবেট’-এ ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘর পরিচালনার না না দ্রব্যসামগ্রী
পাওয়া যাবে, থাকছে ক্যালিসো নিয়ে গবেষণাও। ক্যালিসো হল সেই বিষয় যা দীর্ঘ
মনুষ্যজীবনচক্র নিয়ে গবেষণা করে। এই সবকিছুই আসছে নতুন সংস্থা
অ্যালফাবেট-এর আওতায়। 
গত অর্থনৈতিক বর্ষে গুগল ৬৬ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা করেছিল। সেই থেকে ১৪
বিলিয়ন ডলার লাভ হয়। নয়া সংস্থার হাত ধরে নিজেদের লাভের পরিমাণ আরও
বাড়াতেই নয়া ভূমিকায় সুন্দর। এবার ভারতের সুন্দরের হাতেই গুগলের লাগাম!

মেধাবী ছাত্র আইআইটি-তে অনেকেই থাকেন। কিন্তু মেটালার্জি অ্যান্ড
মেটিরিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র পি সুন্দররাজনের বি টেক স্তরের ‘থিসিস’-এও
ছিল উদ্ভাবনী চিন্তার ছোঁয়া। পড়ার সময় থেকেই ঝোঁক ছিল বৈদ্যুতিন মাধ্যমে
ব্যবহৃত ধাতু (সিলিকন, গ্যালিয়াম) নিয়ে কাজ করার। এ সব দেখে নব্বইয়ের দশকের
গোড়ায় আইআইটি খড়্গপুরের শিক্ষক-অধ্যাপকদের অনেকে বলতেন, ‘‘এ ছেলে লম্বা
রেসের ঘোড়া।’’ কিন্তু পিচাই সুন্দররাজনের (দুনিয়া যাঁকে সুন্দর পিচাই নামে
চেনে) দৌড়টা যে মাত্র ৪৩ বছর বয়সে গুগলের সিইও পদে পৌঁছে যাবে, এতটা বোধ
হয় আশা করেননি তাঁরাও।
শান্ত ছেলেটা পড়াশোনার বাইরে ক্যাম্পাসে বেশি মেলামেশা করত না। তাই
প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তনী গুগ্‌ল-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়েছেন শুনেও অনেকেই
মনে করতে পারেননি তাঁকে। কর্পোরেট দুনিয়ায় পরিচিত সুন্দর পিচাইকে আইআইটি
নথিপত্রেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। মেটালার্জি অ্যান্ড মেটিরিয়াল
ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক সনৎ রায়ই মনে করিয়ে দেন, আইআইটি-র নথিপত্রে ওর নাম
ছিল পি সুন্দররাজন। ১৯৯৩-এ মেটালার্জি অ্যান্ড মেটিরিয়ালস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে
বি টেক পাশ পি সুন্দররাজনই এখন নাম বদলিয়ে সুন্দর পিচাই!
মেধাবী সুন্দররাজনকে শিক্ষকেরা মনে রেখেছেন তাঁর অমায়িক ব্যবহারের
কারণেও। সনৎবাবু বলছেন, ‘‘ধাতুবিদ্যার কঠিনতম বিষয়েও সড়গড়, ঝরঝরে ইংরেজি
বলতে পারা সুন্দরের মধ্যে কোনও দেখনদারি ভাব ছিল না।’’ ছাত্রের এই অনবদ্য
কীর্তির পরে উচ্ছ্বসিত কানপুর আইআইটি-র ডিরেক্টর অধ্যাপক ইন্দ্রনীল মান্না।
তাঁর অধীনেই (তিনি তখন খড়্গপুরে মেটালার্জি বিভাগের শিক্ষক) স্নাতক
স্তরের ‘থিসিস’ করেছিলেন সুন্দর। ইন্দ্রনীলবাবু বলছেন, ‘‘ল্যাবরেটরিতে যে
কোনও সমস্যা লিখে ফেলতেও সুন্দরের জুড়ি মেলা ভার। এত ভাল লেখার হাত কম
দেখা যায়।’’ তার সঙ্গে ছিল দুরন্ত স্মৃতিশক্তি। একসঙ্গে অনেক ফোন নম্বর মনে
রাখতে পারতেন। সহপাঠীদের অনেকে বলছেন, ‘‘ও ছিল ছুপা রুস্তম।’’ কী রকম?
ক্যাম্পাসেই সুন্দরের পরিচয় হয়েছিল কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে আসা
অঞ্জলির সঙ্গে। পড়ার সময় দু’জনের প্রেম কিন্তু টেরই পাননি কেউ! পরে সেই
অঞ্জলিই সুন্দরের ঘরণী। এ ছাড়া আরও বেশ কিছু বন্ধু ছিল। তার মধ্যে
স্বামীনাথন বলে আর এক যুবকের কথা মনে আছে ইন্দ্রনীলবাবুর। মেধাবী
স্বামীনাথন পরে জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি শেষ করার
রাতেই গাড়ি  দুর্ঘটনায় মারা যান।

আইআইটি ক্যাম্পাসে সুন্দরকে পড়ার বাইরে সে ভাবে দেখা না গেলেও টুইটারে
কিন্তু তিনি ফুটবল থেকে সমকামী বিয়ে, সবেতেই সপ্রতিভ। টুইটারেই সুন্দরকে
অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে শুরু করে সত্য
নাদেল্লা, টিম কুক সকলেই। সুন্দর এ দিন টুইটে মোদীকে উত্তরও দিয়েছেন।
বলেছেন, ‘‘আশা করছি শিগগিরি আমাদের দেখা হবে!’’ সেপ্টেম্বরে সিলিকন
ভ্যালিতে যাওয়ার কথা রয়েছে মোদীর। সেখানে তাঁর সঙ্গে সুন্দরের কথা হয় কি
না, সে দিকেই এখন তাকিয়ে রয়েছেন সবাই। গত বছরে সুন্দরের সঙ্গে দেখা হয়েছিল
শাহরুখ খানের। গত বছর অক্টোবরে ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ ছবির প্রচারে গুগ্‌ল-এর
অফিসে গিয়েছিলেন শাহরুখ। বলেছিলেন, এক সময় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারই হতে
চেয়েছিলেন তিনি। সুন্দরের পাল্টা প্রস্তাব ছিল শাহরুখের কাছে, ‘‘আপনি কি
এখনও পেশা বদল করতে চান?’’
গুগ্‌ল অফিসেও সুন্দর জনপ্রিয় তাঁর এমনই অমায়িক ব্যবহারের জন্য।
গুগ্‌ল-এর জনসংযোগ বিভাগের প্রাক্তন কর্ত্রী পরমা রায়চৌধুরী (বর্তমানে
সফটব্যাঙ্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট) বলছেন, ‘‘গুগ্‌ল ক্রোম নিয়ে সুন্দরের
সাক্ষাৎকার প্রয়োজন ছিল। ওকে বলতেই অনুরোধ করল, ৩০ মিনিট পরে কথা বলতে।
কারণ, সে সময় ও বাচ্চাদের ঘুম পাড়াচ্ছিল।’’ পরমা বলছেন, বড় কাজের মধ্যে
ছোট ছোট ব্যাপারগুলোও কখনও সুন্দরের নজর এড়ায় না।
তথ্যপ্রযুক্তি দুনিয়ার শীর্ষে উঠে আসার পিছনে মেধার সঙ্গে অমায়িক
ব্যবহারের রসায়ন তো রয়েইছে। আবার আইআইটি-র অন্দরে একটা অন্য রসিকতাও চলছে।
ক্যাম্পাসের নেহরু হল-ও (বি টেক পড়ার সময় সুন্দরের ঠিকানা) নাকি এই
চমকপ্রদ উত্থানের পিছনে অনেকটা দায়ী। বি টেক পড়ার সময় ওই বাড়িতে চার বছর
থাকলে নাকি জীবনটা বদলে যেতে পারে! যার উদাহরণ হিসেবে উঠে আসছে মেকানিক্যাল
ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এক ছাত্রের নাম!
রেভিনিউ সার্ভিসের উঁচু পদ ছেড়ে ৪৭ বছর বয়সে যিনি এখন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী! অরবিন্দ কেজরীবাল!