হিন্দুদের ঐক্যের অভাব তো আছে, কিন্তু গুরুর অভাব নাই।

লিখলেন Diptarup Samyadarshi

হিন্দুদের জমির অভাব আছে, ঐক্যের অভাব তো আছেই, এমনকি বর্তমানে সাহসেরও মোটামুটি অভাবই বলা যায়। কিন্তু এমন অভাবের সংসারেও গুরুর অভাব নেই। দেবতার জন্ম ও গুরুর জন্ম হিন্দুদের মধ্যে চিরকালই গুচ্ছ গুচ্ছ। তো সেই ট্র‍্যাডিশন মেনেই যুগে যুগে গুরুগণ মরজগতে আসেন, শিষ্যরা তার পদপ্রান্তে বসেন এবং গুরু হাগলেও তারা বলেন, “অহো পুরীষে চম্পকপুষ্পলব্ধ সুগন্ধ, আইস, উহা অঙ্গে মার্জন করি।”

একদা এক গুরু মরুপ্রেমে বিভোর হয়ে গীতার নামই এফিডেভিট করে বিজাতীয় করেছিলেন, বর্তমানে সুদুর মঙ্গলগ্রহে অপর এক গুরু অধিষ্ঠান করেছেন, যিনি মরুপ্রেমে দিশাহারা। তারা যা করে তাই চোখে বসন্তের পুষ্পবনের মতো লাগে। মরুভুমিতে কাকের পায়খানা থাকলেও তিনি ও তার শিষ্যগণ সেটাকে পলান্ন ভাবতে থাকেন।
তবে অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে এটাই, তাঁরা সকলকেই মরুময়সুধা পান করাতে চান বটে, কিন্তু সাথে সাথে এটাও জোর গলায় দাবী করেন তারা নাকি মরুবিরোধী!! এখন এই প্রশ্ন অবশ্যই ওঠা স্বাভাবিক যে ভাই মরুবাদ যদি এতই অসাধারণ, তাহলে আর বালের হিন্দু হিন্দু করে লাভ কি, সরাসরি মরুবাদেই দাওয়াত দাও। এত পেঁচানোর কি আছে? ওটাই যখন হতে হবে, তখন আর সেটার বিরোধিতার নাট্যানুশীলনের প্রয়োজন কি?
কিন্তু এ ধরণ প্রশ্ন মুর্তাদি। মরুবাদীদের মতোই, গুরুবাদীরাও এসব প্রশ্নে খুশী হন না। তাই এসব থাক। তবে সমস্যা হচ্ছে, বর্তমানে বঙ্গভুমে কাজের অবস্থা ভালো নয়। মানুষ এখানে বিক্রি হয় সস্তায়।

তো যাক গে যাক, মরুভুমের পর বোধহয় এই বঙ্গভুমেই ওহি নাজিল হয়েছে। সেই ওহিতে বলা হয়েছে, “নারীর গর্ভে কোনভাবে বীজ পুঁতে দাও। তারপর ছয়মাস কোনরকমে রাখো, তারপর ফেলে দিয়ে অন্য ‘কাজে’ চলে যাও।”

এই দৈববাণীর অর্থ খুবই সহজ। মেয়ে পটাও। সেক্স করো। যাতে সে অ্যাবোরশন না করাতে পারে কনফার্ম করো(21 সপ্তাহের পর অ্যাবোরশন ইল্লিগাল, তাই), তারপর…. এইটা সবচেয়ে ইম্পর্ট্যান্ট। কারণ এই দৈববাণী যারা নাজিল ও প্রচার করেছেন তারা মরুবাদী রেফারেন্সে করতে গিয়ে হেগে ছড়িয়েছেন এখান থেকে… তারা বলেছেন ছয়মাস কোনভাবে কাটিয়ে তারপর মেয়েটা যখন সবচেয়ে অসহায় অবস্থায় থাকবে তখন তাকে ফেলে চলে যাও। অন্য কোথাও বীজ পুঁততেই সম্ভবতঃ।

ওয়েট ওয়েট, দৈববাণীর প্রচারকরা ইসলাম থেকে শিখতে বলেছেন। যে ইসলামী কানুনকে আমরা মধ্যযুগীয় বলি সেখান থেকে। ফ্যাক্ট কি জানেন? একজন ইসলাম জানা লোকের সামনে যখন আপনি “হিন্দু” হয়ে এই বক্তব্য নিয়ে দাঁড়াবেন তখন হ্যাটা হবেন। কেন জানেন? কারণ তারা তাদের শরীয়া থেকে দেখিয়ে দেবে যদি কোন “দক্ষিণ হস্তের অধিকারভুক্ত” নারীও মালিকের দ্বারা ইম্প্রেগনেটেড হয় তবে ছয়মাসে তাকে ছেড়ে দেবার কোন বিধান নেই। সন্তানের জন্ম পর্যন্ত ইভেন বিক্রিও করা যায় না।

তাহলে আপনি ঐ মহাহিন্দু দৈববাণী নিয়ে কোথায় দাঁড়াবেন তখন? আপনিই ভাবুন।

এনিওয়ে।

আরেকটু ভাবুন। একজন মহাহিন্দু। সে একটা মেয়েকে পটাল। তারপর ইম্প্রেগনেট করল। তারপর অ্যাবোরশন করতে পারবে না কনফার্ম করে ফুটে গেল অন্য মেয়ের গর্ভে প্রাকৃতিক পদ্ধতি কাজে লাগাতে।

দৈববাণী তো এইখানে শেষ। আপনি পরের অংশটা মন দিয়ে ভাবুন। কদিন আগে আমার বোনের ছেলে হয়েছে। ছয়মাসের পর থেকে আস্তে আস্তে মেয়েটির চলাফেরা সব এফেক্টেড হতে থাকে। পেট ফুলে ওঠে বিশ্রীভাবে। সে স্বপ্ন দেখতে থাকে। খুব বোকা বোকা, আবেগপ্রবণ হয়ে ওঠে। কারণ সে মা হতে চলেছে। আপনার পাওয়া দৈববাণী মতে হিন্দুরক্ষায় তখন আপনি অন্য কাজ করতে কেটে পড়েছেন। আর মেয়েটি? প্রতি মূহুর্তে বঞ্চনা ও ক্ষোভের গ্লানি নিয়ে ধুঁকতে ধুঁকতে বড় করে চলেছে বাচ্চাটিকে। কারণ…. ঐ যে আপনার “মহাহিন্দু” দৈববাণী বলেছে মেয়েটির আর কিছু করার নেই। প্রকৃতিই নাকি সব করে দেবে…

দেবে বটে। কারণ মেয়েটি অ্যাবোরশন করাতে পারবে না। জন্ম তাকে দিতেই হবে। তারপর?
নিশ্চিত থাকুন। আমাকে লোকে হরবখত খিস্তি করে। আবেগের ছিঁটেফোঁটা আমার নেই। মেয়েটির জন্ম দেবার আগের কষ্ট তাই আমার আলোচ্য নয়। “মহাহিন্দু” যোজনার বিষয়েই আমার বক্তব্য।
ঐ সদ্য মা হওয়া মেয়েটি কি করবে? হয় বাচ্চাকে কোন ডাস্টবিনে ফেলে দেবে। মহাহিন্দুর পোঁতা বীজ কুকুরে খেয়ে যাবে। আর যদি না ফেলে, তবে তার বাপের পরিচয় দিলে সেই প্রজন্ম ঠিক কতটা ঘৃণা নিয়ে বেড়ে উঠবে উক্ত মহাহিন্দু বীজদাতা বাবাদের প্রতি সেইটা চট করে ভেবে ফেলুন। ভাবলেই বুঝবেন, উক্ত দৈববাণী, অর্থাৎ “নারী ধরো। বীজ পোঁতো। ছয়মাস অপেক্ষা করো। তারপর অন্যত্র বীজ পুঁততে ফুটে যাও” আসলে কাদের পিন্ডি চটকানোর ধান্দা।

ইসলামের বৃহত্তর অংশ পর্যন্ত “মুতাহ্”কে এই কারণে নিষিদ্ধ করেছে। তারা অন্ততঃ ভাবনাচিন্তা করেছে পরবর্তী ঘটনাগুলো নিয়ে। তাই তাদের গুরু ফিক্সড। যখন তখন জন্মায় না।
.
এখন কথা হচ্ছে তাহলে এসব দৈববাণী কেন হচ্ছে? গুরু তো এমনি হয় না কেউ। কোন না কোনভাবে লোককে আকৃষ্ট করার ক্ষমতা থাকলে তবেই না হয়। লাভ জিহাদে আক্রান্ত মেয়েদের গালি দিলে যে একদা বিরুদ্ধতা করত শক্তভাবে, মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলত হিন্দু ভালোবেসে বিয়ে করুক, তাকে আমি শেল্টার দেব, যে দলিতস্বার্থবাদী কথা বলার ধক রাখত মঞ্চেই… যদিও বছর দুয়েক আগে, সে হঠাৎ এহেন দৈববাণী নাজিলের পরবর্তী কনসিকোয়েন্সেস বোঝে না এটা স্রেফ হতেই পারে না।

তবে কেন এ দৈববাণী?

আমার জানা নেই।

কিন্তু এটা ঘটনা যে স্বাধীনতার পর থেকে চলে আসা ইসলাম তোষণের নমুনা দেখে বিরক্ত হতে হতে, খুব ধীরে হলেও সেই ক্লিশে প্রগতিশীলতার বিরুদ্ধে হিন্দু ভাবধারা, দর্শনকে নতুনভাবে আবিষ্কার করে নতুন কিছু মুখ উঠে আসছে, যারা শিক্ষিত, রিজনেবল এবং হয়তো সময় পেলে নতুন বিকল্প আর্থ-সামাজিক লাইন তৈরী করতে সক্ষম। এরা প্রতি মুহূর্তে এতদিনকার কায়েম হয়ে থাকা লেফ্টিস্লামিক ইন্টেলিজেন্সিয়ার আক্রমণের মুখোমুখি হয়। এবং সেটার এগেন্সটে নতুনভাবে দেখাতে চায় হিন্দুধর্মটাকে। এটায় এতদিনকার প্রগতিব্যবসায়ীরা খুবই সন্ত্রস্ত হয়।
ঠিক তখন এই দৈববাণীগুলি তাদে হাতে অস্ত্র যোগায়। একটি নারী যখন সত্যভামার শার্ঙ্গ দেখে ইম্প্রেসড ঠিক তখনই তার সামনে দৈববাণী লটকে দেওয়া হয়।

ফলাফল কি হতে পারে যাদের কোথাও মাথা বিক্রি করা নেই তাদের বুঝতে অসুবিধা হবার কথা নয়।
তো কেন এই অস্ত্রগুলো তুলে দেওয়া হচ্ছে? যাতে এই নতুন ওঠা ইন্টেলিজেন্ট হিন্দুইস্ট মুখগুলোকে আরো আক্রমণের মুখে ফেলে নষ্ট করা যায়, বা এরা নিজেরাই এসব জঙ্গুলে কারবার দেখে সরে পড়ে হতাশ হয়ে?
.
যাইহোক, আমি আমার কথা বলি। যদি আমাকে জঙ্গলের রাজত্বেই ফিরতে হয়, তো আমি জঙ্গলে যাওয়া প্রেফার করব। এসি ঘরে জঙ্গল বানাবো না। কারণ সেটায় ঘরটা ঘরও থাকবে না, আবার জঙ্গলও হয়ে উঠতে পারবে না।