সত্যঘটনা_অবলম্বনে #বাদুরিয়া….!!!

#সত্যঘটনা_অবলম্বনে
#বাদুরিয়া

————————————–
প্রতিদিন সকালে মরনিং ওয়াক করতে যায়, অভ্যাস। সেদিন ও গিয়েছিলাম।  তখন পূবের আকাশ সবে লাল হতে শুরু করেছে। সকালের অক্সিজেন মিশ্রিত বাতাস সদ্য ঘুম থেকে ওঠা শরীরটিকে তরতাজা করে দিচ্ছিল।
মিলনী সংঘের কাছে আসতেই আমার পা থমকে গেল। দুরে দেখি, এক দল মত্ত যুবক বাজারের দোকান ঘর লুটপাট করছে। কয়েকজন টায়ার জ্বালাচ্ছে। কয়েকজন ভাঙচুর করছে। হেডফোন খুলে পকেটে ঢোকালাম। আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারি নি,  সকাল বেলা এসব কি হচ্ছে। রেকর্ডিং করব ভেবে মোবাইল টা বের করেছি। হঠাৎ দেখি এক দল কম বয়েশি লুঙি পরা ছেলে তেড়ে আসছে। আমি বোধগম্য হারিয়েছি ততক্ষনে। কাছেই বাড়ি, সবাই চেনে, এলাকায় অনেক বন্ধু আছে, ভাবলাম কিছু হবেনা।
কি হয়েছে, কেন এরকম মুসলিম ছেলে গুলো করছে কিছুই জানতাম না।
কিছু বুঝে ওঠার আগে ‘নারায়ে তকবীর… আল্লাহু আকবর ‘ শ্লোগান দিতে দিতে আমার উম্মত্ত মুসলিম ছেলে গুলি আমার উপর আছড়ে  পডল। রাস্তা ফাকা,  আমার বহু পিছনে থাকা এক বৃদ্ধ প্রানপনে ছুটে চলে গেল, কেউ এল না।
লাঠির আঘাতে মাথা ফেটে রক্ত ঝরতে শুরু করেছে। সাদা টি শার্ট ততক্ষনে ভোরের রাঙা সুর্যের মত।
আমি ততক্ষনে বুঝেছি বাদুরিয়াতে সাম্প্রদায়িক ঝড় উঠেছে। আমি মাটিতে পড়ে গেলাম, শরীর অসাড়। কাউন্টার এট্যাক করার সুযোগটুকু পাই নি। তবে ওদের হাতে রড, লাঠি ধারালো অস্ত্র ছিল। আমি আক্রমন করলে হত মেরে ফেলত। দশ পনের জনের উন্মত্ত ভীড় আমায় টানতে টানতে নিয়ে গেল। আবছা দৃস্টিতে ভীড়ের মাঝে ছোটবেলার বন্ধু জামাল কে দেখে গা শিউরে উঠল। আজ মৃত্যু নিশ্চিত।
যে জামালের সাথে দীর্ঘদিন ছাত্র রাজনীতি করেছি, এক সাথে বিস্তর সময় কাটিয়েছি আজ সে কিসের প্রতিশোধ নিচ্ছে? এক শিশু দেখলাম বিকট স্বরে অত্যন্ত হিংস্রতার সাথে চিৎকার করছে “মালুরে মেরে ফ্যাল”। কোন শিশুর এত বিভৎস হিংস্র চোখ হতে পারে,  চোখে না দেখলে পৃথবীর কেউ বিশ্বাস করবে না।
কলেজ জীবনের আগে থেকেই আমি ধর্মকর্ম মানতাম না। পরিবারের পুরুষ সদস্য থেকে প্রাপ্ত বামপন্থি বিচার ধারায় মুগ্ধ ছিলাম। ‘হিন্দু’ মুসলিম’ এই শব্দ গুলি মানুষকে পৃথক করতে পারে না। আমি মনে প্রানে মানুষ ছিলাম। আজ বুঝলাম আমি “হিন্দু’। বামপন্থি বিচারধারা আমাকে আজ বাচাতে আসবে না।
আমার চোখ প্রায় বন্ধ হয়ে আসছিল,  টেনে হিচড়ে পাশের গলির মধ্যে নিয়ে যাওয়ার চেস্টা করল। হয়ত খুন করে দিত।
তখন দেখলাম ‘জয় শ্রী রাম ‘ ধ্বনী দিতে দিতে একদল হিন্দু যুবক ছুটে আসছে। আমি চিনতে পারলাম নিমাই(এলাকার হিন্দুত্ববাদী নেতা) আসছে, হাতে ধারালো কুড়ুল।
ঘুম যখন ভাঙল আমি তখন হাসপাতালে। সারা শরীরে ক্ষত,  যন্ত্রনার তীব্র তরঙ্গ। মাথায় ও হাতে সেলাই।আমি তখন ও বুঝতে পারিনি আমায় মেরে কি পেল? একজন নাস্তিককে হিন্দু ভেবে, রক্ত ঝরিয়ে কতখানি পুন্য অর্জন করল বুঝলাম না।মহান আল্লাহ কতখানি খুশি হল কি জানি।  নাস্তিক হলেও কুরান গীতা সমস্ত কিছু পড়া আছে। কুরানের একটা ভার্স  মনে পড়ে গেল। নিষিদ্ধ মাষ অতিক্রান্ত, অতএব সব কিছু স্বাভাবিক। এতদিন এসবে বিশ্বাস ছিল না,  আজ চেতনা হল। বাস্তব, সব কিছু বাস্তব।
ফেসবুকের কুরুচিকর মন্তব্য শুধু বাহানা মাত্র। আসল উদ্দেশ্য স্পস্ট হয়ে উঠল ধীরে ধীরে।
যে কোন মানুষের ওদের পাশবিকতা, হিংস্রতা দেখলেই শুবুদ্ধির উদয় হওয়া অতি স্বাভাবিক। আমি এতদিন মুর্খের রাজ্য বাস করতাম। হিন্দু মুসলিম ভাই ভাই ভাবতাম। এক পক্ষ ভাবলে অন্য পক্ষের কিছু এসে যায় না। পাকিস্তান, বাংলাদেশ গন্ঠন হওয়ার পর এবার পরের টার্গেট কাশ্মীর ও পশ্চিম বঙ্গ। তাই এত ঔদ্ধত্য। 
আমাদের ধর্মের প্রতি অনুগত্য নেই, বিশ্বাস নেই, নিজ ধর্মাবলম্বী দের প্রতি বিশ্বাস নেই। তাই বাংলার ঐতিহ্যময় হিন্দু সমাজ পতনের মুখে। আমাদের আর রক্ষা নেই। শুনেছিলাম ঠাকুরদা ওপার বাংলায় ছেড়ে এসেছিল সমস্ত ধন সম্পত্তি, ঘর বাড়ি। এপার বাংলায় নিরাপত্তা কোথায়?
দায়ী আমরা।  আমার পরিবার,  ঘর বাড়ি, পাড়া পড়শি কে বাচানোর জন্য সব্জি কাটা ছুরি বুটি ছাড়া কিছুই নেই।
সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরি।  সমস্ত জিনিসের ব্যবস্থা করতে পারব।ছুতে এলেই  নিমিষে যেন সব কিছু ছারখার হয়ে যায়। আত্মরক্ষার তাগীদে যা করতে হয় তাই করব তাতে যদি ‘অসহায় হিন্দু’ নামের কলঙ্ক দুর হয়।।
( নামে প্রকাশে অনিচ্ছুক)
[লেখা -বিকাশ তিওয়ারী ]

Scroll to Top