গুলশান হামলার পর দু্ইজন মাওলানার নাম উঠে এসেছিলো হামলাকারীদের অনু্প্রেরণাকারী হিসেবে, মুফতি রাজ্জাব বিন ইউসুফ এবং মাওলানা তারিক মুনোয়ার নামের এই দুইজন বিমানবন্দর দিয়ে তারপর বহুবার বুক ফুলিয়ে দেশ-বিদেশ আসা যাওয়া করেছে, ইমিগ্রেশন তাদের আটকে দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়নি। তরুণদের উগ্রপন্থায় জড়ানোর জন্য দায়ী করা হয় যে পিস টিভিকে- তার আমদানীকারক প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহায়তাকারী বিধায় তিনিও ধঁরাছোয়ার বাইরে। এইসব রাঘরবোয়ালদের কথা বাদ দিলেও রোজ বোমা এবং জিহাদী বই নিয়ে গ্রেফতার হওয়া জঙ্গিরা মামুলি সন্ত্রাস দমন আইনে আটক হয়ে সহজেই জামিন নিয়ে বেরিয়ে পড়ছে। কিন্তু ব্লগার আসাদ নূর এত বড় অন্যায় করেছে যে তাকে জামিন অযোগ্য ৫৭ ধারায় গ্রেফতার করা হয়েছে!
আসাদ নূরের ভিডিও ব্লগ দেখে কেউ মাদ্রাসাতে হামলা করতে গেছে? তার ভিডিওতে কি বলা হতো, ধর্ম বিশ্বাসীদের যেখানে পাও সেখানেই হত্যা করো…। মোটা দাগে কুরআনকে ভ্রান্ত বলা ছাড়া বিশেষ কিছু তো আসাদ করেনি। এতে যদি মুসলমানরা ক্ষিপ্ত হবার অধিকার রাখে তাহলে বাইবেল-তাওরাতকে বিকৃত-ভ্রান্ত বলে মুসলমানরা কি একইভাবে অন্য ধার্মীকদের ক্ষিপ্ত করছে না? যীশুর মৃত্যু নিয়ে মুসলমানরা কি খ্রিস্টানদের ধর্ম বিশ্বাসকে আঘাত করছে না? ‘আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নাই’- এটা কি সরাসরি অন্যের ধর্মবিশ্বাসকে আঘাত করছে না? এর সবগুলোই যদি মুসলমানদের ধর্মীয় অধিকার হয়ে থাকে তাহলে কুরআনে মিথ্যা বলা তো আসাদসহ সব নাস্তিকের বাকস্বাধীনতার মধ্যেই পড়ে। যদি বাকস্বাধীনতার একটা লিমিট আছে বলে মনে করে থাকেন, অন্যের ধর্ম বিশ্বাস নিয়ে কটুক্তিতে করাকে বাকস্বাধীনতা বলে মনে না করে থাকেন তাহলে ‘ইসলাম আসার পর অন্যসব ধর্ম বাতিল হয়ে গেছে’ জাতীয় ধর্মকথাকে কি বাকস্বাধীনতার পর্যায়ে পড়ে বলে মনে করেন?
শামসুজ্জোহা মানিকের করা অনুবাদ বই পড়ে বাংলা একাডেমির পরিচালক শামসুজ্জামান খান সাংবাদিকদের কাছে মানিককে হত্যা করার উশকানি দিয়ে বলেছিলেন, ‘তোমাকে দেখাবো যে নারী সম্পর্ক বিষয়টা নিয়ে ওই বইটাতে (ব-দ্বীপ প্রকাশনীর প্রকাশিত বই) হযরত মোহাম্মদ (স.) কে কী কুৎসিত চরিত্রে অংকন করেছে। আমি এটা সবটা বললে তাকে (প্রকাশককে) মেরে ফেলবে’। লেখক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল একাডেমির পরিচালককে সমর্থন করে তরুণদের বইটা পড়তে নিষেধ করে দেন। আমরা তাই আশা করতে পারি না ব্লগার ৫৭ ধারায় গ্রেফতার হলে দেশের মূলধারায় বুদ্ধিজীবীরা তার বিরোধীতা করবেন। বামপন্থি লেখক বুদ্ধিজীবীরা ইসলামের বিরোধীতাকে মনে করেন ইউরোপ যাবার ধান্দা। ‘পেন’ নামের আন্তর্জাতিক লেখকদের সংগঠনের বাংলাদেশ শাখা ‘পেন বাংলাদেশ’ এর প্রধান নির্বাচিত হয়েছে বিশিষ্ট লেখক শিক্ষক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম। আমার জানা মতে এখন পর্যন্ত একজন ব্লগার প্রাণ বাঁচাতে বিমানবন্দর দিয়ে দেশ ছাড়ার প্রাক্কালে ৫৭ ধারায় গ্রেফতার হবার ঘটনায় এই সংগঠন টু শব্দটি করেনি। আসলে এরা এবং এদের অগ্রজরা কতখানি সাম্প্রদায়িক মুসলমান ছিলেন তার প্রমাণ পাওয়া যায় ৪৭ সালের দেশভাগের কালে। এরা বড়জোর ‘মুসলমান প্রগতিশীল’ হতে পারে। তাদের কাছে আসাদ নূর ইসলাম বিদ্বেষী। আসাদের কোন ক্ষমা নাই…।
নাস্তিকরা মূলধারার লেখক কবি সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবীদের বয়কট করে উনিশ শতকীয় বিদ্যাসাগর ঘরানায় মুক্তিবুদ্ধির চর্চা করুন। সমাজকে আঘাত করুন। ধর্ম শিক্ষার অপ্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরুন। বিদ্যাসাগরকেও তার সময়কার বুদ্ধিজীবীরা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তাকে উপদেশ দিয়েছিলেন শিক্ষার হার বেড়ে গেলে আপনাআপনি চেঞ্জ এসে যাবে। বিদ্যাসাগর তাদের অগ্রাহ্য করে সমাজের বদ্ধবিশ্বাসের দরজায় স্বজোড়ে আঘাত করেছিলেন। অনলাইনে তো আসাদের মত ছেলেরা সেটাই করে চলেছে…। তাই সব বিভক্তি ভুলে গিয়ে এখন সবাই আসাদকে সমর্থন করুন…।