"গীতার আলোকে– মানুষের দুঃখ এবং অশান্তির কারন"

“গীতার আলোকে– মানুষের দুঃখ এবং অশান্তির কারন”
‘ধৃতরাষ্ট্রের অসুখ এবং অশান্তি’
ডাঃ মৃনাল কান্তি দেবনাথ

অর্জুনের কি ব্যাধি হয়েছিলো তা আমরা জানি। সেই ব্যাধির নাম ‘মোহ’। এই ব্যাধি মানুষকে, সমাজকে কুরে কুরে খায়, ক্যান্সার ব্যাধির মতো। মোহ জ্ঞানীকে অজ্ঞান করে দেয়, সমাজের সমুহ ক্ষতি হয়। এই ক্ষতি পরোক্ষ ভাবে ক্ষতি। অবশ্য- করনীয় কর্ম থেকে বিরত থেকে, সমাজের কর্নধারেরা দেশ ও দশের অপরিমেয় ক্ষতি করেন। এরা নিজেরাও অশান্তি ভোগ করেন আর অন্যের অশান্তির কারন হয়ে দাড়ান। সেই অবস্থা অর্জুনের হয়েছিলো।

সমাজের ক্ষতি  প্রত্যক্ষভাবে করে আরো বেশ কিছু অশান্ত মানুষ। তাদের সংখ্যাই বেশী। অপত্য স্নেহ যখন মাত্রা ছাড়িয়ে যায় তখন হয় বিপদের সুচনা। সেই ক্ষতি বা বিপদ ব্যাক্তি জীবনে যেমন হয় তেমনি ব্যাষ্টি জীবনেও হয়। অপত্য স্নেহ বা ‘বাৎসল্য প্রেম’ নামক ব্যাধি যদি কোনো রাষ্ট্রপ্রধান বা প্রশাসকের মধ্যে সঞ্চারিত হয় তাহলে কি হয় তার জ্বলন্ত প্রমান ধৃতরাষ্ট্র।

‘আমার সন্তান বা স্নেহের জন রাজা হবে’, এই সামন্ত্রতান্ত্রিক ভাব ধারনা একবার যদি কোনো প্রশাসনিক প্রধানের বা দেশ নায়কের সব কর্মের মুল নীতি হয়ে দাঁড়ায় তাহলে দেশ এবং দশ তার কাছে নগন্য হয়ে দাঁড়ায়। সেই নায়ক বা নায়িকার এক মাত্র ধ্যান জ্ঞান হয়ে দাঁড়ায় কি করে সেই অভিসন্ধি পুরন করা যায়। এমন উদারন সারা দুনিয়ায় ভুরি ভুরি। আমাদের দেশটা ভাগ হলো, তিন টুকরো হলো তো সেই একই কারনে। নেহেরুর প্রতি এক অমোঘ স্নেহ গান্ধীকে অন্ধ বানিয়ে দিলো। অন্ধ ধৃতরাষ্ট্রের মতো তিনি নেহেরু ছাড়া আর কাউকে দেশের কর্নধার হিসাবে দেখতে পেলেন না। বেনিয়া বুদ্ধির সুচতুর চাল দিয়ে একে একে দেশের সমস্ত সুসন্তানকে সরিয়ে দিলেন, দেশ ভাগে সম্মতি দিলেন। এমনতরো অন্ধ শধু কি ওই একজন???? আজ আমাদের পশ্চিম বংগেও তো সেই ‘অন্ধত্ব’ জাকিয়ে বসেছে।

এটা আমার সন্তান, এর জন্য সব করতে হবে , সব জমিয়ে রাখতে হবে, পাশের বাড়ির গরীবের সন্তান সামান্য দুধের অভাবে কান্না কাটি করলেও আমরা সেই কান্না শুনতে পাই না।  এই ‘অন্ধ অপত্য স্নেহ’ মানুষের এক মারাত্মক ব্যাধি।

গীতার প্রথম অধ্যায়ের সর্বপ্রথম শ্লোক তাই বলে——

“ধর্ম ক্ষত্রে কুরুক্ষেত্রে সমবেত যুযুৎসব।
মামকা পান্ডবশ্চৈব কিম কুরবৎ সঞ্জয়”।।

এই ‘মামকা’ অর্থ্যাত ‘আমার’—–তোমার ,আমি- তুমি, এই ভেদ বুদ্ধি মানুষের সর্বনাশের মুল কারনের একটি প্রধান কারন। এই কথা, এই ভাবনা ধৃতরাষ্ট্রের ‘অন্ধত্ব’ ই শুধু দেখায় না। মানব ‘সমাজের অন্ধত্ব’কে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।  সেই অন্ধ চোখ দিয়ে ধৃতরাষ্ট্র কোনোদিন বোঝেন নি যে ‘পান্ডবেরা’ তার মৃত ভাইয়ের অনাথ সন্তান। দুর্য্যোধন আমার, ওই গুলো পান্ডুর। আমরা তো প্রতিনিয়ত সেই অন্ধ ভাবেই চলছি। তাইতো সমাজে আজ এতো বিশৃংখলা,মারামারি হানহানি। এই ব্যাক্তি আমার দলের, আমার শিষ্য, আমার কথা শুনে চলে, আমার গুরু ভাই, আমরা একই ধর্ম মানি। সুতরাং, এ আমার ভাইজান, আমার গুরুভাই- আর সবাই অপাঙ্গতেয়।।

বাঃ বাঃ, বেশ বেশ, জয় গুরু, জয় গুরু।