কি দুর্ভাগ্য আমাদের | আমাদের পূর্বপুরুষের বিজয়গাথা , তাদের সংগ্রামের ইতিহাস আমাদের পড়ানো হয় না | শত্রুর অত্যাচারের কাহিনী আমাদের পাঠ্যবইতে উল্লেখ করা নিষেধ | মন্দির ধ্বংসের কোনো কাহিনী ইতিহাস বইতে থাকবে না | বিগত সরকারের ফরমান | যে যত কম জানে তত মঙ্গল | একই বৃন্তে দুটো কুসুম দোলানো কি মুখের কথা ??? প্রপাগান্ডার হওয়া না দিলে দুলবে কেন ? এইভাবেই টুকরো টুকরো ভাবে তবু আসতে থাকুক আমাদের আসল ইতিহাস।
প্রথম দৃশ্য
৯১৯ হিজারায়, খৃষ্টাব্দ ১৫১৩ হেমন্তের মেঘমুক্ত সকাল, বাংলার সুলতান আলাউদ্দীনের সেনা ছাউনি।
নামাজ শেষে গৌর মল্লিক তাবু থেকে বেরিয়ে আকাশে দিকে তাকালেন, আকাশে তখনও খণ্ড চন্দ্রকে অস্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। গৌর মল্লিকের চোখেমুখে একটা স্পষ্ট উত্তেজনা লক্ষ্য করা যাচ্ছিল।গৌরের শরীর মন দুটোকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল এক আগত আনন্দঘন সংশয়। সেকি পারবে বাংলার সুলতানের হারিয়ে যাওয়া গৌরবময় মহিমাকে ফিরিয়ে আনতে? ত্রিপুরা রাজ্যকে তার জয় করতে হবেই, সুলতান তাকে যে দায়িত্ব দিয়েছে সেই দায়িত্ব পালন করে সুলতানের আরো বিশ্বাস তাকে অর্জন করতেই হবেই।
দ্বীনের ধর্মের আশ্রয় নেবার পরথেকে গৌরের জীবন ছুটেছে উন্নতির চরমে, সুলতানের বিশ্বাস সে আর্জন করেছে সেব্যাপারে সন্ধেয় নেই, সেই বিশ্বাস কে যথাযথ মর্যাদা দেবার সময় এখন গৌরের কাছে।
তবুও তার আত্মবিশ্বাস কিছুটা হলেও সংশয় গ্রস্ত, তার একটাই কারণ ত্রিপুরাবাসীর অসীম বীরত্ব।
সুলতান যখন প্রথম ত্রিপুরা আক্রমণ করে সেই ব্যর্থতা এখন সুলতান কে বিচলিত আর আপমানিত করে, সুলতানের সেই ব্যার্থ অভিব্যক্তি গৌর দেখছে, গৌর চায় সুলতানের সেই ব্যর্থতাকে ভুলিয়ে দিতে, ত্রিপুরাকে এমন শাস্তিদিতে যাতে প্রজন্মান্তর সেই শিক্ষা ভুলতে না’পারে।
গৌর মল্লিক প্রাথমিক ভাবে কিছুটা সফল কুমিল্লার যুদ্ধে সে ত্রিপুরার সৈন্যদের পরাজিত করেছে, ছিনিয়ে নিয়েছে মেহেরকুল দুর্গ,ছারখার করে দিয়েছে, নগর রক্তস্রোতে ভাসিয়ে দিয়েছে, গোরক্ত আর গোমাংসে অপবিত্র করে দিয়েছে বির্ধমীদের দেবালয় জনশূন্য করে দিয়েছে অঞ্চল।এবার লক্ষ্য রাজধানী রাঙ্গামাটীয়া।
গৌর সেনাকে আদেশ দেয় এগিয়ে যাওয়ার আজ রাতেই অতর্কিতভাবেই ঝাঁপিয়ে পরতে হবে রাঙ্গামাটীয়াতে, দুনিয়া থেকে চিরতরে মুছে দিতে হবে ত্রিপুরেশ্ব মহারাজ ধন্যমাণিক্য ও তাঁর ত্রিপুরা রাজ্যের নাম।
দৃশ্য দুই
হাজার হাজার মানুষ সংগ্রাম করে চলেছে প্রকৃতি বিরুদ্ধে, নিজেদের অস্তিত্বের তাগিদে নিকষকালো রাতের অন্ধকারে।
মহারাজ ধন্যমাণিক্য অন্ধকারে হাজার মানুষের ভিড়ে কাকে যেন খুঁজেন, কর্দমাক্ত একটি কালো ছায়ামূর্তি মজারাজের সামনে এসে নীরবে দাঁড়ায়।।
মহারাজ আপনি এখানে? ধন্যমাণিক্য সেনাপতি রায় চয়চাগের দুহাত চেপে ধরেন, চয়চাগ আমরা ধর্মের অবমাননা করছিনাতো?? ক্ষত্রিয়ধর্ম এইরকম যুদ্ধ অপমানকর, আমরা পাপ করছিনাতো?চল বীরের মত সম্মুখ যুদ্ধে তাদের পরাস্ত করি, বিজয় আমাদের হবেই।
চয়চাগ শান্তভাবে মহারাজকে বলে মহারাজ মার্জনা করবেন। যে শত্রু নিজেই যুদ্ধের নিয়ম মানেনা, অসামরিক মানুষকে হত্যা করে আনন্দ পায়, শিশু, নারী কেউ যাদের হিংসা আর বাসনা থেকে রেহাই পায়না, লুণ্ঠন, ধর্ষণ যাদের রাজধর্ম, আমাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে বলছি মহারাজ তাদের কাছে যুদ্ধ আইনের কোন মর্যাদাই নেই, গুপ্তচর খবর এনেছে মহারাজ আজ রাতেই সুলতানের সেনারা রাঙ্গামাটীয়া আক্রমণ করবে, আপনি দূর্গে ফিরে গিয়ে প্রস্তুত থাকুন মহারাজ, গোমতীর উপর বাঁধ নির্মাণ শেষ করেই,এখানে তাদের জন্য আমরা প্রস্তুত থাকছি।মহারাজ এ লড়াই আমাদের ধর্ম অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই, বিজয় ভিন্ন আর কোন উপায়ান্তর নেই, মাতা ত্রিপুরেশ্বরী আমাদের কৃপা করুক।
তৃতীয় দৃশ্য
চারিপাশে নিকষকালো তমসাবৃত নিস্তব্ধ গোমতীর তটভূমি, গৌর মল্লিক তীরে এসে দাঁড়ান, মনেমনে অনন্দিত হয়, এরথেকে ভালো সুযোগ আর হয়না গোমতী জল একেবারে কম, রাতের অন্ধকারে গোমীতে পেড়িয়ে অতর্কিত ভাবে রাঙ্গামাটীয়া অধীকার, বাধাবিঘ্ন ছাড়াই, গৌর রোমাঞ্চিত হয়, সেনাদলকে সাবধানে গোমতী অতিক্রম করতে বলে।
গৌর মল্লিক মধ্য গোমতীতে সেনা নিয়ে পৌঁছায়, এক অদ্ভুত গম্ভীর শব্দ ক্ষীণ থেকে ক্রমে বিকট শব্দে গৌরের কানে আসে,,, গৌর অবাক হয়ে যায়, এত জল প্লাবন!!, সুলতানের সৈনকে খড়কুটার মত গিলে ফেলে সেই প্লাবন, শুষ্কজলা গোমতী নিমিষেই ভয়াল ভয়ঙ্করী রুদ্রমূর্তি ধারণ করে কালের গহ্বরে নিমজ্জিত করে সুলতানের সেনাদের। যারা প্রাণে জীবিত ছিল,তারা ত্রিপুরা বিজয়ের কথা ভুলে নিজেদের প্রাণরক্ষায় জন্য নিরুপায় হয়ে চণ্ডীগড়ে তীরে উঠলেন, সেখানে তাদের জন্য সাক্ষাৎ মহাকাল রূপে চয়চাগ উপস্থিত ছিলেন,,,,,,,এরপর গৌর মল্লিকের কি হয়ে ছিল তা ইতিহাস জানেনা।
( সৌজন্যেঃ শ্রী Sumit Bhattacharya….)