সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী তাঁর টুইটার অ্যাকাউন্টে মহরম ও প্রতিমা বিসর্জন নিয়ে যে ফরমান জারি করেছেন তা মানতে পারছেন না স্বয়ং মুসলিমরাই। ৩০শে সেপ্টেম্বর বিজয়া দশমীর দিন সন্ধ্যা ৬ টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা অর্থাৎ ১লা অক্টোবর পর্যন্ত কোন প্রতিমা বিসর্জন করা যাবেনা বলে সরকারী বিজ্ঞপ্তি ও জারি করা হয়েছে। কারণ হিসাবে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র মহরমকে প্রকাশ্যে এনেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
কিন্তু যাদের জন্য এতকিছু তারাই যে এভাবে বেঁকে বসবে সেটা হয়ত আঁচও করতে পারেননি তৃণমুল সুপ্রিমো মমতা বন্দোপাধ্যায়। ফুরফুরা শরিফের পিরজাদা ত্বহা সিদ্দিকি টাইমস্ বাংলাকে বলেন – “কোরানের কথা অনুযায়ী তুমি তোমার ধর্ম করো অন্যকে তার ধর্ম করতে দাও, অর্থাৎ ধর্ম পালনের ক্ষেত্রে প্রত্যেক সম্প্রদায়ের নিজস্ব স্বাধীনতা রয়েছে। সে মহরমের দিন বিসর্জন হোক, কিম্বা ঈদের দিনে বিসর্জন হোক মুসলমানদের এতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়।”
একটু এগিয়ে পিরজাদা আরো বলেন- “যদি দুর্গাপুজোর সময় ঈদ পড়ে আর সেই ঈদ পিছিয়ে দেওয়া জন্য সরকারি ভাবে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয় তাহলে মুসলিম জন মানসে তার কি প্রভাব পড়তে পারে সেটা আগে আমাদের ভাবা উচিত। রাজ্য প্রশাসন দুই সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে কোন আঘাত না হেনে সাম্য ও সম্প্রীতির বাংলায় নিজ নিজ ধর্ম পালনে সহযোগিতা করবে এটাই আশা রাখি। “
অন্যদিকে রাজ্যের শিয়া সম্প্রদায়ের প্রধান সাঈদ ফিরোজ হোসেন জাইদি বলেন -” মুসলিমরা মহরমের জন্য অন্য কোন সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে পিছিয়ে দেওয়ার পক্ষে নয়। আমরা এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কোন আবেদনও করিনি। রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের এটা একান্ত ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।” হোসেন জাইদি আরো বলেন -আমরা যে ধর্মগ্রন্থকে মেনে চলি সেই পবিত্র কোরান যখন উভয় সম্প্রদায়কে মিলে মিশে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালনের ছাড়পত্র দিচ্ছে, তখন আমি আপনি কে সে বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার? এটা রাজ্যর প্রশাসনিক দুর্বলতার কথা মাথায় রেখে মমতা ব্যানার্জীর ব্যক্তিগত একটি সিদ্ধান্ত, এর সাথে মুসলিম সম্প্রদায়ের কোন সম্পর্কই নেই। “
পাশা পাশি দারুল উলুম দেওবন্দের প্রাক্তন ছাত্র তথা কাটিয়াহাট সিনিয়র মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক মাওলানা সামসুদ্দোহা কাসেমী বলেন-” মমতা ব্যানার্জী অনেকটা আগ বাড়িয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে আমি মনে করি, সরকারী ফরমানে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে যেন কোন রকম ভুল বোঝা বুঝির পরিবেশ তৈরী না হয় সেটাও ভেবে দেখা উচিত মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীকে। প্রয়োজনে উভয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসে স্পর্শকাতর এই বিষয়টির সমাধান করতে হবে।”
এছাড়া রাজ্যের একাধিক মুসলিম সংগঠনের বক্তব্য অনুযায়ী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নিজেই অযাচিত সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কে দিচ্ছেন। তাই মুসলিম তোষনের নামে মমতা ব্যানার্জীর এইসব হঠকারী সিদ্ধান্তকে আর কোনভাবেই বরদাস্ত করা হবেনা। প্রয়োজনে সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তাঁরা সম্মিলিতভাবে প্রতিবাদ মিছিল করবেন বলেও জানিয়েছেন রাজ্যের একাধিক মুসলিম নেতৃত্ব।