শক্তিগড়ের ল্যাংচার উৎপত্তি
___________________________________
নদিয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের পরিবারের একটি কন্যার বিবাহ হয়েছিল বর্ধমান রাজার এক পুত্রর সঙ্গে। বিবাহের কয়েকবছর পর মেয়েটি সন্তানসম্ভবা হয়। কিছুই তার মুখে রোচে না। তার শাশুড়ি – বর্ধমান মহিষী – নানান সুখাদ্য নিয়ে আসেন; কিন্তু পুত্রবধূ শুধু মাথা নাড়ে। একদিন তিনি জনান্তিকে বৌমাকে চেপে ধরেন, বল মা, তোমার কী খেতে ইচ্ছে করছে ?
বালিকাবধু নতনেত্রে বলেছিল – ল্যাংচা।
ল্যাংচা ? খাদ্যদ্রব্য ? রানীমা আকাশ থেকে পড়েন। জানতে চান, সেটা কী ?
মুখ ফসকে বলে ফেলেছে। বালিকাবধূ কিছুতেই আর কিছু বলে না। পরদিন তার স্বামী জনান্তিকে তার মাকে জানায় ‘ল্যাংচা’ কোন খাদ্যদ্রব্যের নাম নয়। তবে বাপের বাড়িতে থাকতে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের প্রাসাদে এই বালিকাবধূ কী একটা মিষ্টান্ন খেয়েছে। তার নামটা ভুলে গেছে। যে তৈরি করত তার একটা পা খোঁড়া। সেই ল্যাংচা-মেঠাইওয়ালার সেই বিশেষ মিষ্টান্নটি আস্বাদনের সাধ হয়েছে আসন্নপ্রসবার। কথাটা সে মুখ ফসকে বলে ফেলেছে। জানাজানি হলে বেচারি নিদারুণ লজ্জা পাবে।
রাজমহিষী গোপনে সংবাদটা জ্ঞাপন করলেন বর্ধমানরাজকে। তৎক্ষণাৎ এক বিশ্বস্ত অশ্বারোহী দ্রুতগতি ঘোড়া ছোটালেন নদিয়ার দিকে – রাজাবাহাদুরের জরুরি এবং গোপন পত্র নিয়ে। অনতিবিলম্বেই বন্দী করে আনা হল সেই খঞ্জ ময়রাকে। কৃষ্ণচন্দ্রের অনুমতিক্রমে বর্ধমানরাজ সেই খঞ্জকে শহর বর্ধমানের পুবে চারক্রোশ দূরে বড়শূল গ্রামে একটি ভূসম্পত্তি দান করলেন। ঘর ছাইয়ে দিলেন। লেংচা-বিশারদ প্রতিষ্ঠা পেল। দোকান দিল বাদশাহী সড়কের উপর শক্তিগড় গ্রামে – বড়শূল থেকে আধক্রোশ দূরে। প্রত্যহ তার ভিয়েন থেকে একমণ করে সেই বিচিত্র মিষ্টান্ন সরবারহ হতে থাকে বর্ধমান রাজপ্রাসাদে।
খঞ্জ মিষ্টান্ন বিশারদ সবই পেল – জমি জেরেত, ঘর দোকান – খোয়ালো মাত্র একটি জিনিস – তার আবিষ্কৃত মিষ্টান্নের আদিম নামটা।
সেটা হয়ে গেলঃ ল্যাংচা !
– সূত্র নারায়ণ সান্যালের উপন্যাস “রূপমঞ্জরী”