ক্রিকেট নিয়ে আমার ভবিষ্যৎ বাণী ফলে গেলে আমি খুশি হই না, ব্যথিত হই। কারণ এই বাংলাদেশ আমি চাই না বলেই আমার একমাত্র সম্বল লেখালেখি দিয়ে প্রতিবাদ করি। বিপিএল ক্রিকেটে মাশরাফি আর শুভাশিষ রায়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি নিয়ে শেষ পর্যন্ত যা ঘটল, তার বিপদটা ক্যাপ্টেন মাশরাফি বুঝতে পেরেছেন বলেই ভীত হয়েছেন তিনি। তিনি টের পেয়েছেন তার ফ্যানরা একটা ভিজ্যুয়াল হিন্দু বিরোধী দাঙ্গা বাধাবে যার প্রভাব অফলাইনেও প্রবাহিত হবে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের ফ্যানরা হার্ডকোর পাকিস্তান ক্রিকেট ফ্যান ছিলো বা আছে। তখন থেকেই তারা ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেটকে সাম্প্রদায়িকভাবে উপভোগ করত।
মাশরাফি শুভাষিককে ‘মাদারচোদ’ বলে গালি দিয়েছিলো প্রথম। তার প্রতিবাদ করতেই শুভাশিষ এগিয়ে এসে জানতে চেয়েছিলো এরকম গালি তাকে কি করে ম্যাশ দিতে পারল। এটাকেই কাল সন্ধ্যা থেকে মিডিয়া ‘মাশরাফির দিকে তেড়ে আসলেন শুভাশিষ’ এরকম শিরোনাম করে মুহূর্তের মধ্যে শুভাশিষকে টার্গেটে ফেলা হয়। কিন্তু কুৎসিত গালি দিয়ে অনুতপ্ত মাশরাফি পরে দেখলেন সারাদেশের ক্রিকেট ভক্তরা ‘হিন্দু শুভাশিষকেই’ শুধু না, তার ধর্মের সবাইকে ভারতে পাঠিয়ে দিতে ফেইসবুকে জিহাদ কায়েম করে ফেলেছে। মাশরাফি সত্যিকারের বাংলাদেশ ক্রিকেটে ভদ্রলোক। মুহুর্তের উত্তেজনায় মুখ খারাপ করে (খেলার মাঠে এরকম হতেই পারে) গালির জন্য তিনি ক্ষমা চেয়েছে। কিন্তু তার ফেইসবুক লাইভ দেখে সবাই বুঝতে পেরেছে এটা বলার জন্য তিনি লাইভে আসেননি। তিনি বার বার সবাইকে মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন, আমিও যেমন বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করি তেমনি শুভাশিষও করে। আমার মত শুভাশিষও বাংলাদেশের একজন ক্রিকেটার। সবাই যেন এই জিনিসটা মাথায় রাখে।
জ্বি না মিস্টার ক্যাপ্টেন, আপনি খেলায় খারাপ করলে আপনাকে দর্শক বড়জোর বলবে, হালার পুত খেলা পারে না। শুভাশিষ-সৌম সরকার খারাপ করলেই বলে ‘মালাউনের বাচ্চারে দল থিকা বাই কইরা দে’! হ্যা, এটাই ৯৯ ভাগ ফ্যানের চাওয়া। এই ৯৯ ভাগ ক্রিকেট ফ্যান মঙ্গল গ্রহ থেকে আসেনি। এরা এখানকার রাজনৈতিক, সামাজিক অবস্থান থেকেই উঠে এসেছে যারা ধর্মীয় পরিচয়ে মানুষকে মূল্যায়ন করে সর্বপ্রথম। ৯৯ ভাগ ফ্যানদের কথা ভেবেই ক্রিকেট আগামীদিনে পরিচালিত হবে। রাজনৈতিক দলের মত ধর্মাচ্ছন্ন হবে। ক্রিকেটার, সংগঠকরা ফ্যানদের অনুভূতির কথা ভাববে। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হতে হলে অবশ্যই তাকে একজন মুসলমান হতে হবে- এটা পাকিস্তানের আইন। তবে ক্রিকেট ক্যাপ্টেন হতে গেলে এরকম আইন করা সম্ভব হয়নি আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সংস্থার কারণেই। কিন্তু অঘোষিতভাবে ফ্যানদের অনুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে ভেবেই পাকিস্তানের ক্রিকেট ক্যাপ্টেন হতে গেলে প্রথম যোগ্যতা তাকে একজন মুসলিম ক্রিকেটার হতে হবে। বাংলাদেশে প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রী হতে গেলে মুসলমান হবার শর্ত নেই। তবে ৯৯ ভাগ সাপোর্টারের অনুভূতির কথা ভেবে কোন হিন্দুকে প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী করার ঝুঁকি কোন রাজনৈতিক দল নিবে না। ক্রিকেট ঘিরে বিগত বছরগুলোতে যে পরিমাণ সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ, সরাসরি বললে যে পরিমাণ হিন্দু বিদ্বেষ ভারতীয় ক্রিকেটকে কেন্দ্র করে এদেশের ক্রিকেট ফ্যানরা জারি রেখেছে, সর্বশেষ শুভাশিষ কেসের পর ৯৯ ভাগ ফ্যানের মন রাখতে অঘোষিতভাবে কোন ‘হিন্দু ক্রিকেটার’ কি বাংলাদেশের ক্যাপ্টেন হতে পারবে? ক্যাপ্টেন বাদ দিন, দলে চান্স পাবে কিনা কে জানে! যে হারে সৌম সরকারকে দল থেকে লাত্থি দিয়ে বের করে দিতে চায় ‘শালা মালাউনের বাচ্চা’ বিধায়। খুব কি অযৌক্তিক কিছু বললাম?
মাশরাফি শুভাশিষ কথা কাটাকাটির লিংক https://www.youtube.com/watch?v=Kr-yN4yZwGc
মাশরাফির লাইভ ভিডিও https://www.youtube.com/watch?v=oMJop25J4Fk