রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান…………………..!!!

রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানঃ
===================
গত কয়েক বৎসর ধরে মায়নমারে বৌদ্ধ এবং রোহিঙ্গা মুসলমানদের মধ্যে যে সংঘর্ষ চলছে, তা নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন প্রকার মতামত প্রকাশ করছেন। তার মধ্যে অধিকাংশই বিভ্রান্তিমুলক, যেহেতু বিশ্বে ৫৬টি মুসলিম দেশ রয়েছে এবং বৌদ্ধদের থেকে  তারা অর্থে এবং প্রচারে বলিয়ান তাই তাদের (মুসলমানদের) মিথ্যা প্রচারে জনসাধারণ বিভ্রান্ত হচ্ছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে আমি আমার প্রতিবেদন সহৃদয় পাঠক-পাঠিকাদের সমীপে নিবেদন করছি।
.
মুসলমান অনুপ্রবেশকারীদের মানবিকতা এবং অনুকম্পা দেখাতে গিয়ে আরাকান নামক একটি বৌদ্ধরাজ্য কিভাবে মুসলমান রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে, তার বিবরণ দেওয়ার  চেষ্টা করছি। বর্তমান বাংলাদেশের চট্টগ্রামের দক্ষিণপূর্ব সীমান্তে অবস্থিত আরাকান মায়নমারের অন্তর্গত একটি রাজ্য। এই রাজ্যের  রাজারা বৌদ্ধ ধর্মালম্বী ছিলেন,এখানে তারাই প্রথম বুদ্ধমূর্তি এবং প্যাগোডা স্থাপন করেন। আরাকানের প্রাচীন ইতিহাস “বাজোয়াং” সূত্রে জানা যায়, রাজা মহৎ ঈঙ্গচন্দ্র (৭৮৮-৮১০) রাজত্বের শেষ দিকে আরাকনের নিকটবর্তী রামরী দ্বীপের নিকটে আরব জলদস্যুদের একটি বাণিজ্যজাহাজ ডুবে যায়। তাতে অধিকাংশ জলদস্যু ডুবে মারা যায়। যে কয় জন জীবিত ছিল তারা আরাকানে এসে উপস্থিত হয়। রাজার সৈন্যসামন্তরা তাদেরকে বন্দী করে রাজদরবারে উপস্থিত করলে রাজা তাদের প্রতি  দয়াপরবশ হয়ে স্বীয়রাজ্যে বসবাসের  অনুমতি দেন। রাজার অনুমতি প্রাপ্ত এই আরব জলদস্যূরাই আরাকানে প্রথম বসতি স্থাপনকারী প্রথম মুসলিম জনগোষ্ঠী। পরবর্তীকালে তারা স্থানীয় রমণীদের বিবাহ করে আরাকানে ইসলাম চাষাবাদ আরম্ভ করে।
.
এরপর পঞ্চদশ শতাব্দীতে অারাকানে অভাবনীয়ভাবে মুসলমান অনুপ্রবেশ পরিলক্ষিত হয়। ধীরে ধীরে আরাকানে মুসলমান অত্যাচারীদের দ্বারা নারী অপহরণ, ধর্ষণ বলপূর্বক ধর্মান্তকরণ বৃদ্ধি পেতে থাকে। মুসলমানদের চাপে আরাকান রাজারা নিজেদের বৌদ্ধনামের পাশাপাশি মুসলমান নামও গ্রহণ করতে বাধ্য হন, ১৪৩০ খ্রীষ্টাব্দ আরাকানের লিঙ্গায়ের বংশের শেষ রাজা মিনসুরাম ওরফেনরমিখলা ইসলাম কবুল করে সুলেমান শাহ নাম গ্রহন করে লেপ্র নদীর তীরে রাজধানী স্থাপন করে একটি বৃহৎ মসজিদ নির্মান করেন, যা সান্দিকা নামে বিখ্যাত। অতএব, দেখা যাচ্ছে মাত্র কয়েক জন মুসলমান জলদস্যুকে মানবতার কারনে আশ্রয় দিয়ে কি ভাবে একটি বৌদ্ধ রাজ্য মুসলমানদের পদানত হয়েছে।
.
ইংরেজদের বার্মা দখলের পর ভারত-বার্মা সীমান্ত সুরক্ষিত ছিলনা, সেই সুযোগে আরাকান সংলগ্ন বার্মার বিশাল বনাঞ্চল চট্টগ্রামের মুসলমান অনুপ্রবেশকারীদের দখলে চলে যায়। তাদের মাতৃভাষা এখানে চট্টগ্রামের মুসলমানদের ভাষা, তারা বার্মিজ ভাষায় কথা বলতে পারে না। ইংরেজ সরকার চট্টগ্রামের মুসলমান অনুপ্রবেশ নিয়ে কোন উচ্চবাচ্য করেননি। ঐ সব বনাঞ্চলে যেসব বার্মিজ বৌদ্ধ বাস করতো, মুসলমান অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে তারা বার্মার মূল ভূখন্ডের দিকে পালিয়ে বসবাস আরম্ভ করে।
.
ইতিমধ্যে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে ইংরেজরা যখন জাপানীদের কাছে পর্যদুস্থ হয়ে বার্মা ছাড়তে বাধ্য হয়, তখন প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র ফেলে আসে। ঐ অস্ত্রশস্ত্র  হাতে পেয়ে অনুপ্রবেশকারী মুসলমানরা প্রায় ৫০ হাজার বৌদ্ধকে হত্যা করে (সম্প্রতি চীন সরকার বলছে যে সংখ্যা এক লক্ষও হতে পারে)। ইংরেজরা যখন ভারত ও ব্রহ্মদেশকে স্বাধীনতা দিয়ে চলে যায়, তখন আরাকানের মুসলমানরা এবং ব্রহ্মদেশের অনুপ্রবেশকারী মুসলমানরা করাচী  গিয়ে জিন্না সাহেবের নিকট তদবীর করে ঐ অঞ্চল পূ্র্ব পাকিস্তানের অন্তর্ভক্ত করে নেওয়ার জন্য। এখানে বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য যে, স্বাধীনতার পরে দেশের সীমানা নির্ধারিত হয়ে যাওয়ার পরেও আসামের মুসলীম লীগ নেতারা আসামের বাংলাভাষী অঞ্চলকে পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বিশেষ চেষ্টা করেছিলেন। ১৯৪৭-এর নভেম্বর মাসে কাছার থেকে মুসলমানদের একটি প্রতিনিধিদল গিয়ে জিন্না সাহেবকে সনির্বন্ধ অনুরোধ জানান যেন বাংলাভাষী কাছার এবং গোয়ালপাড়া জেলা পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত  করা হয়। উপরন্তু অব্দুল সৈয়দ খাঁ নামে এক মুসলিম লীগ নেতা আমাদের বাংলাভাষী অঞ্চলগুলিকে পূ্র্ব পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্তি  করার জন্য তীব্র আন্দোলন আরম্ভ করেন।
.
কাইদে আজম জিন্না এই বাংলাভাষী মুসলমানদের এই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন। কারণ, এমনিতেই বাঙ্গালীরা পাকিস্থান জনসংখ্যার ৫৬ শতাংশ, এরপর আরো সংখ্যা বাড়ালে পুরো পাকিস্থানের শাসনক্ষমতা বাঙ্গালীদের হাতে চলে যাবে। কাইদে আজমের দূরদর্শিতা সত্ত্বেও পাকিস্থান দুই টুকরো হয়ে গেল।
.
দেশ ভাগের সময় পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশাল অংশ পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করে দিয়ে যায়,যেখানে মুসলমানদের অকথ্য অত্যাচার বহু বৌদ্ধ চাখমা ব্রহ্মদেশ এবং ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর অত্যাচারের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। বৌদ্ধ বিতাড়ন এবং মুসলমান অনুপ্রবেশের ফলে পার্বত্য চট্টগ্রাম এখন বৌদ্ধের সংখ্যা ৫০ শতাংশে নেমে এসেছে।
.
এই মুসলমান অনুপ্রবেশ প্রতিহত করতে গিয়ে বার্মা সরকারের সঙ্গে রোহিঙ্গা মুসলমান  অনুপ্রবেশকারীদের সংঘর্ষ আরম্ভ হয়। এই রোহিঙ্গা মুসলমানরা পাকিস্তানের জঙ্গী সংগঠনগুলি দ্বারা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। নেট খুললেই দেখা যায়, তারা রাইফেল হাতে লম্ফঝম্ফ করছে, তারা গত ২৫শে আগষ্ট ৩০টি থানা এবং ৯টি সেনা ছাউনি ধংস করে দিয়েছে, ফলে বার্মা সেনারা ব্যাপক হারে সামরিক অভিযান চালায়। ফলে বহু মুসলমান  ওখান থেকে পালিয়ে বাংলাদেশ এবং অন্যান্য দেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। মুসলমানদের জানা উচিত ছিল, ইঁট ছুড়লে পাটকেলটি খেতেই হয়। মুসলিম দুনিয়া চিৎকার আরম্ভ করেছে ব্রহ্মদেশ সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘন করছেন, আমার প্রশ্ন ১৯৫০ সালে যখন পূর্ব পাকিস্তান সরকার ৩ মাসে ৫০ লক্ষ বাঙ্গালী হিন্দুকে বিতাড়িত করেছিল, তখন এই মিয়াঁ ভাইরা কোথায় ছিলেন?
.
সম্প্রতি কয়েকদিন পূর্বে রোহিঙ্গা বিতাড়নের বিরূদ্ধে কলকাতায় মুসলমানরা এক প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেন, তাতে একলক্ষ লোকের সমাবেশ হয়। ১৯৫০ সালে হিন্দু বিতাড়নের কথা ছেড়েই দিলাম। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সময় যখন খান সেনারা ৩০ লক্ষ বাঙ্গালী হিন্দু ও মুসলমানকে অকথ্য অত্যাচার করে হত্যা করে, যখন চার লক্ষ নারী ধর্ষিতা হন খান সেনাদের দ্বারা, তখন কেন কলকাতার মিয়াঁ ভাইরা চুপ করে ছিলেন? সে দিন তাদের বিবেক কোথায় বন্ধক দেওয়া ছিল? ঐ সময় পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত মুসলিম নেতারা দলমত নির্বিশেষে একত্রিত হয়ে কলকাতাস্থ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতাদের সঙ্গে মোলাকাৎ করে আচ্ছেলাম ওয়ালাহেকুম সম্বোধন করে তাদেরকে পাকিস্তান ভাঙ্গার চক্রান্ত থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করে। বিতর্ক এমন পর্য্যায়ে পৌছায় যে তা ধস্তাধস্তিে পর্যবসিত হয়। নিজের জাত ভাই বাঙ্গালীদের জন্য তাদের দরদ নেই, এখন রোহিঙ্গাদের জন্য তাদের হৃদয় বিগলিত করুণা জাহ্নবী যমুনায় পর্যবসিত হচ্ছে।
.
আমার কাছে খবর আছে, প্রতি বছর বাংলাদেশে ২৫শে ডিসেম্বর কাইদে আজম মঃ আলী জিন্নার জন্মদিবসে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের পর আরম্ভ হয় জ্বালাময়ী হিন্দু বিদ্বেষী তথা ভারত বিদ্বেষী বক্তৃতার প্রতিযোগিতা। বক্তৃতা শেষে তার নামে শপথ নিয়ে বলা হয় “হে মুসলমান ভাইরা! যদিও তিনি  আমাদের এতিম (অনাথ) করে দিয়ে বেহেস্তে চলে গেছেন (ইন্না লিল্লাহেওয়াহিনে রাজেউন), কিন্তু আজ তার এই জন্মদিনে অখন্ড বাংলাকে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত করার স্বপ্ন পূর্ণ করার জন্য আমরা, খোদার বান্দা, প্রতিটি মুসলমান, আমরা জেহাদ চালানোর শপথ নেব। যদি সমস্ত বাংলা না-ও পাই, তবে গঙ্গার পূর্বতীর পর্যন্ত এবং জিন্না সাহেবের স্বপ্নের কলকাতাকে আমরা আমাদের করে নেবই। আল্লার দরবারে এখন আমরা তার (কাইদে আজম) এই স্বপ্নপূরন করার জন্য মোনাজাত করব।”
.
ওখান থেকে কিছু হিন্দু অত্যাচারিত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। আমার নিকট খবর আছে, মোদী সরকারকে বিপাকে ফেলতে রোহিঙ্গা মুসলমানরা মুখোশ পরে এই অত্যাচার চালাচ্ছে। সর্বশেষে যে সব সেকুলারবাদীরা রোহিঙ্গাদের ভারতে আশ্রয় দেওয়ার জন্য দালালি করছে, আপাতত গঙ্গার পূর্বপাড় পর্যন্ত যদি গ্রেটার বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত হয়, তবে তারা কোথায়  যাবেন? রোহিঙ্গাদের তো বাংলাদেশ আশ্রয় দিতেই পারে। দেশভাগের পর হিন্দুরা যে সমস্ত সম্পত্তি ফেলে এসেছে, সেখানে স্বচ্ছন্দে তাদের পুনর্বাসন হয়ে যাবে, তাতে কোন সন্দেহ নেই ।
.
একদিকে মুসলিম দুনিয়া রোহিঙ্গাদের জন্য কেঁদে বুক ভাসাচ্ছেন। অন্যদিকে সৌদী রাজপুত্ররা তাদের নিজস্ব বিমানে পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা দামী গাড়ী বহন করে লন্ডনে ঈদের বাজার করতে ব্যস্ত। কোন গাড়ি সোনার জলে রং করা, কোনটা সম্পূর্ণ সোনার পাতে মোড়া বডি। লন্ডনের রাস্তায় যখন ঐ সব গাড়ী দাঁড়ায়, তখন সেখানকার ধনীর দুলালরা এবং চিত্রতারকারা তাতে হাত বুলিয়ে আত্মতৃপ্তি লাভ করে।
.
.
মূল লেখনীতে: নোয়াখালি হত্যা ও ধর্ষণযজ্ঞের অন্যতম সাক্ষী শ্রীযুক্ত বাবু রবীন্দ্রনাথ দত্ত মহাশয়।
.
অনুলিখনে: শ্রীমতি Chandrima Dey।