অরুন্ধতী রায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কথা বলেছেন। মোছলেমদের প্রতি তার পক্ষপাতিত্ব মোটামুটি এখন সবার চোখেই ধরা পড়েছে। কারণ তিনি বেলুচিস্তানীদের স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষে কখনই সরব হন না। তিনি বেছে বেছে কাস্মির ফিলিস্তিনীদের পক্ষে কথা বলেন। বিজেপি-হিন্দুত্ববাদীদের প্রতি তার রোষ- সেটাও পক্ষপাতমূলক। কারণ সারা দুনিয়া নিয়ে তিনি কথা বললেও ইরানের ইসলামিক শাসনে নারীদের চরম অবমাননা, সেখানকার হিজাব বিরোধী আন্দোলন, ধর্ষণের বিচার চাইতে গিয়ে উল্টো ধর্ষিতাকেই জেল খাটাতে হয়, সৌদি আরবে যেখানে নারীরা পুরুষের সম্পত্তি হিসেবে গোণ্য, যেখানে নারীদের গতিবিধি খবরদারী করতে সৌদি পুরুষরা অ্যাপ ব্যবহার করে, যেখানে কোন নারী মাথার চুল দেখালে জেল খাটতে হয়, ইন্দোনেশিয়া যেখানে একটি মেয়ে কোন শপিং মলে গিয়ে অবিবাহিত সম্পর্কিত কোন পুরুষের সঙ্গে কথা বললে শরীয়া পুলিশ ধরে এনে বেত্রাঘাত করে- এসব কিছুই অরুন্ধতীকে ঘামায় না। কারণ আল জাজিরা টেলিভিশনে সাংবাদিক ‘মেহেদি হাসানের’ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, কাস্মির সেভাবেই পরিচালিত হওয়া উচিত যেভাবে কাস্মিরবাসী চায়’। তার মানে ইরানের মোল্লারা, সৌদি সালাফিরা যেভাবে ইচ্ছা সেখাবে তাদের দেশ চালালে অরুন্ধতীর কোন আপত্তি নেই? এই ফর্মূলায় ভারতের হিন্দুরা দেশটাকে হিন্দু বানিয়ে ফেললে, হিন্দুত্ববাদে মানুষকে বিচার করে পৃথক করে ফেললেও তার কোন আপত্তি নেই? কাস্মিরের জনগণ যদি কাস্মিরকে পাকিস্তানের ক্লোন বানায় তাদের স্বাধীন কাস্মিরকে সেটাই হওয়া উচিত কারণ সেটা কাস্মিরা চায় বলে। এটাই অরুন্ধতীর বক্তব্য। তাহলে পশ্চিমারা যদি হোয়াইট সুপ্রিমিটিতে তাদের দেশ চালাতে চায় সেটাও কি অরুন্ধতীর ফিলটার সম্মতি দিবে? দিবে যে না সেটা তো অরুন্ধতীর লেখা বক্তব্যই প্রমাণ করে। ভারতের শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তন করে মাওবাদীরা কমিউনিজম প্রতিষ্ঠা করুক সেটাই তিনি চান। কিন্তু কাস্মির ইসলামিক খেলাফতের তলে চলে যাক, সপ্তম শতাব্দী পৃথিবীতে নেমে আসুক তাতে কিছু যায় আসে না। আফগানিস্থানের মানুষ চেয়েছিলো ইসলামিক শাসন হোক। সেই চাওয়ার মূল্য দিতে হয়েছে আফগানিদেরই। পৃথিবীর সব মানুষের, ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সবার স্থান হতে পারে সেক্যুলারিজম আর গণতন্ত্রে বিশ্বাস করলে। অরুন্ধতী বলেননি কাস্মির সেভাবে পরিচালিত হোক যেভাবে সভ্য পৃথিবীর দেশগুলি পরিচালিত হয়। তিনি বলেছেন, কাস্মিরীরা যেভাব চায় সেভাবেই পরিচালিত হোক, কাস্মিরীরা কিভাবে চাচ্ছে সেটাই প্রশ্ন। জইশ-ই মুহাম্মদ বা লস্করে যোগ দেয়া কাস্মিরী যুবকরা তাদের স্বপ্নের স্বাধীন কাস্মিরকে ইসলামিক রূপেই দেখছে এটা বুঝতে কি খুব বেশি জ্ঞান প্রয়োজন? তাহলে রামবমনি মিছিল করা উগ্র হিন্দু যুবকরা যদি চায় ভারতকে তারা এরকম উগ্রভাবে পরিচালিত করবে- তখন কি অরুন্ধতী সমর্থন দিবে?
অরুন্ধতী আল জাজিরাকে বলেছেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত সহায়তা করেছিলো এবং সাধারণ ভারতীয়রা বাংলাদেশের মানুষকে আশ্রয় দিয়েছিলো। তাহলে এখন কেন নিপীড়িত কাস্মিরদের স্বাধীনতার পক্ষে থাকছে না ভারতীয়রা! তাদের উচিত কাস্মিরের স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলা।… অরুন্ধতী আসলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানেন না। তিনি না জেনেই আজগুবি কথা বলেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে ভারতের সঙ্গে ৬৫ সালেও গোপনে আওয়ামী লীগ নেতাদের সাক্ষাৎ হয়েছিলো। তারা ভারতকে আশ্বস্ত করেছিলো স্বাধীন বাংলাদেশ হবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ প্রগতিশীল রাষ্ট্র। ভারত তার পাশে কোন গোড়া ইসলামিক দেশ চাইবে না। এরকম রাষ্ট্র থেকে প্রতিনিয়ত ভারতে সন্ত্রাস ছড়ানো হবে। দেশভাগ করে ‘পাকিস্তান’ নামের একটা ইসলামিক পয়োজন তৈরি করে চিরকালের জন্য ভারতের অশান্তি তৈরি করে দিয়ে গিয়েছিলো ব্রিটিশরা। ‘সেক্যুলার বাংলাদেশ’ ভারতকে ‘ইসলামিক পাকিস্তানের’ সীমান্ত দু;শ্চিন্তা থেকে রেহাই দিবে- এটাই ছিলো তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষের আবেগ ও সহায়তা যদিও ব্যাখ্যাতিত কারণ তারা এইসব পূর্ববঙ্গীয় মুসলমানদের হাতেই সর্বস্ব দিয়ে খালি হাতে দেশ ছেড়েছিলেন। কেবলমাত্র বাঙালী ও বাপদাদার দেশের মানুষ- এই রকম আবেগ দিয়ে ভালোবাসাটা নজিরবিহীন। অরুন্ধতী এসব জানেন না। তিনি অনেক আগেই নষ্ট হয়ে গেছেন অতিবাম হতে গিয়ে। কোন ভারতীয়ই চাইবে না কাস্মির পাকিস্তানের মত একটি ক্লোন দেশ হোক যেটা ভারতের পেটের মধ্যে থেকেই আজীবন সন্ত্রাস জন্ম দিয়ে যাবে। পৃথিবীর কোন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ চাইবে না কোথাও নারীদের উপর ইসলামিক শরীয়া শাসন নেমে আসুক। কিন্তু বামাতীরা চাইবে। তসলিমা নাসরিককে এইসব বামাতীরা পরামর্শ দিয়েছিলো আলাদাভাবে নারীবাদ নিয়ে না লিখে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য লেখালেখি করতে। কারণ সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়ে গেলেই সমাজে নারীর প্রতি বৈষম্য দূর হয়ে যাবে আপনাআপনি। বামাতীরা মূর্খ অসভ্য সপ্তম শতাব্দীর আচারআচরণ নিয়ে গর্ব করা মোছলেমদের চটাতে চায় না। বরং তাদের সংখ্যাকে কাজে লাগাতে চায়। তারা মনে করে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়ে গেলে সব ধর্মান্ধতা দূর হয়ে যাবে আপনাআপনি। এসব ধার্মীকদের মত অমোঘ কিছুতে বিশ্বাস করার মত। অরুন্ধতীরা ইসলামিক জাতীয়তাবাদে মোছলেমদের কট্টর আপোষহীন উগ্র অবস্থান দেখে এই স্পীডকে কাজে লাগানোর স্বপ্ন দেখে। হিটলার যেমন মোছলেমদের কট্টর জাতীয়তাবাদের বিপরীতে খ্রিস্টানদের বিচ্ছিন্নতাকে তুলনা করে মোছলেমদের প্রশংসা করেছিলেন। তাই পৃথিবীর যে কোন কাল্টই ইসলামে আগ্রহী হবে। এখান থেকে শিখবে কিভাবে ফ্যাসিস্ট হতে হয়। বামাতীরা সেটাই শিখছে?
কিছুদিন আগে অরুন্ধতী ভারতের একটা কাগজে লিখেছিলেন, কাস্মিরের তরুণরা জন্ম থেকে সেনাবাহিনীর অত্যাচার, নিপীড়ন দেখে নিজেদের মুক্ত করতে চরমপন্থা দলগুলোতে গিয়ে নাম লেখায়। অর্থ্যাৎ ইসলামিক জঙ্গিবাদের কাস্মিরী ভার্সনের বামাতী শানে নযুল হচ্ছে জইশ-ই মুহাম্মদ কিংবা লস্করের মত ইসলামিক জিহাদী দলগুলো আসলে ভারতীয় বাহিনীর নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী শক্তি। এটাই যদি ফর্মূলা হয় তাহলে পাকিস্তানে হিন্দুদের সয়সম্পত্তি দখল, তাদের বোনদের জোর করে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে ধর্মান্তর করে বিয়ে করা এবং সেই সূত্রে ‘শশুড়ের সম্পত্তি’ দাবী করা, তাদের মন্দিরে আক্রমন করে, ব্লাসফেমি আইন দিয়ে খ্রিস্টানদের উপর নিপীড়ন চালানোর পরও পাকিস্তানী সংখ্যালঘুদের লস্কর কিবং জইশ-ই’য়ের মত কোন জঙ্গি দল গঠন করেনি কেন? পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী গতকালই সেদেশে হিন্দু দুই বোনকে জোর করে ধর্মান্তরিত করে বিয়ের অভিযোগকে তদন্ত করে দেখতে বলেছেন। বলাই বাহুল্য এরকম খবর পাকিস্তানের মিডিয়াতে আসে না। আজকালকার যুগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমই তাই নিপীড়িতের মিডিয়া হয়ে উঠেছে। সাহস করে সেই দুই হিন্দু মেয়ের ভাই ফেইসবুকে লাইভ করায় বিষয়টা সবাই জানতে পেরেছে। সবার নিশ্চয় এতখানি সাহস হবে না। এইসব ভাইদের কেউ কি জঙ্গি হয়ে উঠেছে? সেই দলের নাম কি? দেশভাগের পর ভিটেমাটি হারানো পূর্ববঙ্গের হিন্দুরা কেন প্রবলভাবে মুসলিম বিরোধী না হয়ে উল্টো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শেখ মুজিবের দলকে সমর্থন জানালো? এর কোন জবাব নেই!
Susupto Pathok