সত্যি এত টাকা, ফ্রির রেশন, ফ্রির মদ, কষ্ট কিসের?

সাধারণ মানুষের  মধ্যে বিশেষ করে বাঙালীদের মধ্যে একটা ধারণা রয়েছে যে, সৈনিকরা সব ফ্রিতে পায় আর একজন সৈনিক মারা গেলে সরকার প্রচুর টাকা দেয়।

১) সৈনিক শহীদ হলে এককালীন ২৫ লক্ষ টাকা পায়, কিন্তু সরকার ওটা মুফতে দেয় না। তার জন্য প্রতিটি Armed Force Personnel -এর তার মাইনে থেকে প্রতি মাসে ২২০০ টাকা করে কাটায়। GIS (Group Insurance Scheme) এ, সেখান থেকেই টাকাটা দেওয়া হয়। মানে আমার টাকা, আমাকেই দেওয়া হয়। আর অতিরিক্ত কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকার যে গুলো ঘোষণা করে, সেই গুলো কতটা পূর্ণ করা হয়, তা কোনও শহীদের পরিবারকে জিজ্ঞেস করলেই জানা যাবে। তবে হ্যাঁ শহীদের মৃত্যু যদি ভোটের আগে আগে হয়, তাহলে সেই শহীদের পরিবার কিছুটা ফায়দায় থাকে।

২) সাধারণ চাকুরিজীবীদের মত একজন সৈনিক কিন্তু ৮ ঘন্টা কাজ করার পর বলতে পারেনা যে সে আর ডিউটি করবেনা। কারণ সে ২৪ ঘন্টার জন্য দায়বদ্ধ, আর বেশীরভাগ পোস্টিংয়ে সৈনিক তার ফ্যামিলি রাখতে পারেনা। তাই মেসে তাকে তিনবেলা খাওয়ার দেওয়া হয়। হ্যাঁ একদম ফ্রিতে নয়, প্রতেকটা সৈনিক তার জন্য প্রতি মাসে মেস মেন্টেনেন্স দেয়। আগে সৈনিকরা ছুটিতে আসার সময় ছুটির সময়ের রেশনের টাকা পেয়ে যেত, সেটা পঞ্চম পেকমিশন মানে ২০০৬ থেকে বন্ধ হয়ে গেছে। তার মানে সৈনিকরা #ফ্রিতে_খায়না।

৩) সৈনিকরা তাদের পদ অনুযায়ী নির্দিষ্ট বারে ৩ পেগ করে মদ পায়, হ্যাঁ বিনা পয়সায় নয়, সাধারণ মানুষের চেয়ে কিছুটা কম দামে। যে মেস মেন্টেনেন্স বা মেস বিলের কথা বললাম, তাতে বারের মেন্টেনেন্সও ধরা থাকে। তার মানে সৈনিকরা একদম #ফ্রিতে_মদ খায়না।

৪) দেশে কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটলে, সরকারের তরফ থেকে বেতন থেকে একদিনের বেতন কেটে নেওয়া হয়। একজন সাধারণ মানুষ টাকা দিয়েই খালাস কিন্তু একজন সৈনিক দৈহিক ভাবে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেই বিপদগ্রস্থ মানুষদের কে রক্ষাও করবে, আবার পয়সাও দেবে। এখানেই শেষ নয় নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাদেরকে বাঁচিয়েছে, তাদের কাছ থেকেই পাথর ছোড়ার যন্ত্রণাও সহ্য করবে।

৫) একজন সাধারণ মানুষের মত একজন সৈনিকও কিন্তু কর(Tax) দেয়। সবচেয়ে মজার ব্যাপার এই সৈনিকের ট্যাক্সের পয়সায় সাবসিডিতে পড়ে জে.এন.ইউর কানাইয়া বা যাদবপুরের দেবপ্রিয়র মত জানোয়ার গুলো সেনাদেরই গালি দেয়, আর এদের সমর্থনে এগিয়ে আসে রাহুল, কেজরিওয়াল, কারাতের মত নেতারা।

৬) আমাদের রাজ্যে যখন উড়ালপুল ভেঙ্গে পড়ে, তখন সবার আগে দৌড়ে আসে ফোর্ট উইলিয়াম থেকে জলপাই রঙের পোশাকের সেনারাই। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যখন বলেন পাহাড় হাসছে, জঙ্গল হাসছে, তখন তাকে ভরসা যোগায় কিন্তু ওখানে মোতায়েন আধা সামরিকের সেনারাই। কিন্তু সেই মুখ্যমন্ত্রীই কিন্তু অবলীলায় বলে দেন সেনা টাকা তুলছে। মুখ্যমন্ত্রী ঈদের দিনে সকাল বেলা যে রেড রোডে হাজিরা দেন, সেখানেই ভারতীয় বায়ু সেনার এক ২২ বছরের তরুণকে (Corporal Gour) পিষে দিয়ে চলে যায় ওনার স্নেহধন্য একজন দাগী দাড়িওলার ছেলে, সেই বয়ুসৈনিক তরুণটি কিন্তু ন্যায় বিচার পায়না।

এত কিছুর পরেও একজন সৈনিক কিন্তু তার পরবর্তী প্রজন্মকে আবার সেনাই বানাতে চায়, কিন্তু কোনও রাজনৈতিক নেতা বা নেত্রী চায়না।

সত্যি এত টাকা, ফ্রির রেশন, ফ্রির মদ, কষ্ট কিসের?