পতঞ্জলি……………………………………………………………..।।।


পতঞ্জলি (সংস্কৃত: पतञ्जलि, আইপিএ:  ১৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ বা খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতক ছিলেন হিন্দু যোগ দর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণিক শাস্ত্রগ্রন্থ যোগসূত্র-এর সংকলক। কিংবদন্তি অনুসারে, পতঞ্জলি মহাভাষ্য (পাণিনির অষ্টাধ্যায়ী-এর উপর রচিত কাত্যায়নের বৃত্তিকার টীকা) গ্রন্থেরও রচয়িতা। তিনি আয়ুর্বেদের উপরও একটি বই লিখেছিলেন।

Patanjali.jpg

                                                                       



বর্তমান পতঞ্জলি:
বাজিমাত করেই চলেছে বাবা রামদেবের পতঞ্জলি আয়ুর্বেদ। অভিনেত্রী রাখি
সাওয়ান্তের শরীরে সম্মোহনে সাড়া না দিয়ে তাবৎ দুনিয়ার আস্থা কুড়োনো এই
যোগগুরু উপহার দিয়ে যাচ্ছেন একের পর এক ভেষজ যাদু। আর সেই যাদুতে ধরাশায়ী
হয়ে পিছিয়ে পড়তে শুরু করেছে বহুজাতিক সব কোম্পানির রাসায়নিক নির্ভর পণ্য। তুলনামূলক কম দাম, গ্রামাঞ্চলে ব্র্যান্ডিং আর লাগাতার বিজ্ঞাপনের মতো
ত্রিমুখী কৌশলে ঈর্ষণীয়ভাবে ঊর্দ্ধমুখী পতঞ্জলির দেশজ দাওয়াই এর কদর। যেনো
জানিয়ে দিচ্ছে, রসায়নের এ যুগেও আয়ুর্বেদিক বা ভেষজ পণ্যকে আর পিছিয়ে রাখার
সুযোগ নেই।
সেই বার্তা আরও সংহত করছে বহুজাতিক কোম্পানির পণ্য হটিয়ে প্রকৃতির
গাছ-গাছালি, শেকড়-বাকড় থেকে প্রস্তুত পতঞ্জলির আয়ুর্বেদিক পণ্যের বাজার
দখলই।
মাত্র ১৯ বছর আগে ১৯৯৭ সালে ছোট্ট একটি ফার্মেসি নিয়ে যাত্রা শুরু করা
এই পতঞ্জলির এখন আউটলেট দাঁড়িয়েছে ১০ হাজারে। শুরুতে কেবল স্বাস্থ্য পণ্য
থাকলেও এই আয়ুর্বেদিক প্রতিষ্ঠানটি এখন খাবার থেকে শুরু করে দাঁতের মাজন,
টুথপেস্ট, এমনকি প্রসাধনী পর্যন্ত ছেড়ে বাজার করায়ত্ব করে চলেছে।
৪৫ ধরনের প্রসাধনী ও ৩০ ধরনের খাদ্যসহ পতঞ্জলির উৎপাদিত পণ্যের সংখ্যা
এখন ৪৪৪। আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় এসব পণ্য উৎপাদন হয় নানা ভেষজ ও
প্রাকৃতিক উপাদান থেকে, যার মধ্যে গাছ-গাছড়া, শেকড়-বাকড় ইত্যাদি
উল্লেখযোগ্য। এসবের মধ্যে এমন ৩০০ পণ্য রয়েছে, যেগুলো কেবল স্বাস্থ্য ও
ত্বকের যত্ন-আত্তির জন্যই। যাতে রয়েছে সাধারণ ঠাণ্ডা থেকে শুরু করে
দীর্ঘস্থায়ী পক্ষাঘাতে কার্যকর মেডিসিনও।
আয়ুর্বেদ
প্রতিষ্ঠানটির জনপ্রিয় পণ্যের মধ্যে রয়েছে- ‘পতঞ্জলি তেজস বিউটি ক্রিম’,
পতঞ্জলি সৌন্দর্য ফেসওয়াশ’, ‘পতঞ্জলি হারবাল কাজল’, ‘পতঞ্জলি তেজস তেইলম’
(গায়ে মাখানোর তেল), ‘পতঞ্জলি ক্র্যাক হিল ক্রিম’ (পায়ের গোড়ালি ফেটে গেলে
ব্যবহার্য), ‘পতঞ্জলি ১০০% পিউর অলমন্ড অয়েল’ (দিব্যা বাদাম রোগান অলমন্ড
অয়েল), ‘পতঞ্জলি অজাস মিন্ট তুসলি বডি ক্লিনসার’ (সাবান), ‘পতঞ্জলি
রোজওয়াটার’ (ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতে ব্যবহার্য), ‘পতঞ্জলি তেজস ১০০% পিউর
কোকোনাট অয়েল’, ‘পতঞ্জলি দিব্যা কান্তিলেপ’ (ত্বকের হালকা দাগ সারানোর
ক্রিম), ‘পতঞ্জলি তেজস অ্যান্টি রিংকল ক্রিম’ (তৈলাক্ত ত্বকে ব্যবহার্য),
‘পতঞ্জলি দিব্যা কেশ তেল’, ‘পতঞ্জলি কেশ কান্তি হেয়ার ক্লিনসার’, ‘পতঞ্জলি
কেশ কান্তি মিল্ক প্রোটিন হেয়ার ক্লিনসার’, ‘পতঞ্জলি আয়ুর্বেদ-আমলা
ক্যান্ডি’, ‘পতঞ্জলি দাঁন্ত কান্তি’ (টুথপেস্ট)  ইত্যাদি।
কোনো আয়ুর্বেদ প্রতিষ্ঠান এখন পর্যন্ত এতো ধরনের পণ্য বাজারে ছাড়তে না
পারলেও সেটিই করে আকাশমুখী মুনাফা লুফে নিতে ব্যস্ত পতঞ্জলি। তবে তাই বলে
তাদের পণ্য অনেক বেশি দামীও নয়। বরং অনেক শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের চেয়ে
প্রায় ১৫-২০ শতাংশ কম দামে মেলে পতঞ্জলির মানসম্পন্ন পণ্য। যে কারণে এর
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানগুলো ভোক্তা টানতে সবসময়ই নানা ধরনের অফার দিতে
ব্যস্ত থাকে।
ব্যবসায় বিশেষজ্ঞদের মতে, পতঞ্জলির মুনাফা ও জনপ্রিয়তার এই ধারাবাহিকতা
বজায় থাকলে আগামী অর্থবছরে (২০১৬-১৭) এটি হয়ে উঠতে পারে ভারতের পঞ্চম
বৃহত্তম ভোগ্যপণ্য সংস্থা।
বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে সংবাদমাধ্যম বলছে, ভারতের মতো বিশ্বের সবচেয়ে
প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজারে ছোট্ট একটি ফার্মেসি থেকে দু’দশকেরও কম সময়ে ১০
হাজার আউটলেটের চেইন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে পতঞ্জলিকে তাদের পণ্যের মান
কতোটা বজায় রাখতে হয়েছে তা তাদের আজকের এই সংহত অবস্থানই প্রমাণ করে।
বিশেষত গত কয়েকবছরের কথা উল্লেখ করা যায়। ২০১৪ সালেও পতঞ্জলির আউটলেট ছিল
মাত্র ২০০। সেটি এখন দাঁড়িয়েছে অনেক বহুজাতিক কোম্পানিকেও আড়াল করে দেওয়া
সংখ্যায়। কেবল তা-ই নয়, পতঞ্জলি আয়ুর্বেদের দু’ ডজনেরও বেশি ফাস্ট মুভিং
কনজিউমার গুডস (এফএমসিজি) বা পণ্য দেশি-বিদেশি ব্র্যান্ডের সঙ্গে টক্কর
দিচ্ছে।
পরিসংখ্যান
মতে, রমরমা ব্যবসা করতে থাকা ১৩ হাজার কোটি রুপির প্রতিষ্ঠান পতঞ্জলির
২০১৫-১৬ অর্থবছরে রাজস্ব আয় হয়েছে ৫ হাজার কোটি রুপি, যা আগের অর্থবছরের
দ্বিগুণ প্রায়। তবে, তারা এখানেই থামতে চাইছে না, বরং আগামী অর্থবছরে
রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে এবারের দ্বিগুণ অর্থাৎ ১০ হাজার কোটি রুপি।
সেটা যে পতঞ্জলির জন্য অসম্ভব হবে না সেই অভয় দিচ্ছে বাজারে তাদের
বর্তমান অবস্থানই। বিশেষজ্ঞ সংস্থার মতে, ভারতের বাজারজুড়ে ভোগ্যপণ্যের
চাহিদা বেড়েছে ৮ শতাংশ হারে। সেই বাজারে পতঞ্জলির পণ্যের চাহিদা বেড়েছে ১০৬
শতাংশ হারে।
বর্তমানে অনলাইনেও পণ্য বিক্রেতা পতঞ্জলি শিগগির রেলওয়ে স্টেশন ও এয়ারপোর্টেও আউটলেট খোলার পরিকল্পনা করছে।
বাজারে পতঞ্জলির এই আধিপত্য স্বাভাবিকভাবেই বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর
কর্মকর্তাদের মাথায় চিন্তার ভাঁজ ফেলছে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের
বিনিয়োগকারী ‘ব্যাংক অব আমেরিকা মেরিল লিঞ্চ’র কর্মকর্তা প্রাসাদ দেশমুখ
বলেন, আমরা বিশ্বাস করি টুথপেস্ট, হানি, হেয়ার অয়েল, বিস্কুট, শ্যাম্পুসহ
বিশেষ কিছুক্ষেত্রে পতঞ্জলির সঙ্গে প্রতিযোগিতার চাপ থাকবে, যার ফলে আগামী
২০১৭ অর্থবছরেও আমাদের ব্যবসায় ছন্দপতন হতে পারে।
প্রাসাদ দেশমুখের মতে, কেবল তাদের প্রতিষ্ঠানই নয়, বাজারে পতঞ্জলির এই
চ্যালেঞ্জের প্রভাব থাকবে ডাবর, নেসলে, হিন্দুস্তান ইউনিলিভার, ব্রিটানিয়ার
মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপরও।