রতি ও আরতি………………..!!

আপনারা জানেন যে রতি শব্দের অর্থ যৌনমিলন হয়। এছাড়া পুরাণে কামদেব মদনের স্ত্রীর নামও রতি। আরতি ও রতি শব্দের নৈকট্য রয়েছে। আ এরং রতি জুড়ে আরতি হয় (আ+ রতি = আরতি)। পূজায় আরতি করা হয়, যা খুব পবিত্র কর্ম্মরূপে বিবেচিত হয়। এখন প্রশ্ন : আরতি ও রতি শব্দ দু’টি এমন ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত হল কী ক’রে? ব্যাপারটা বিস্ময়কর লাগা স্বাভাবিক।

কলিম খান ও রবি চক্রবর্তীর ‘সরল শব্দার্থকোষ’ ক্রিয়াভিত্তিক নিয়মে বিষয়টি খুব সহজেই ব্যাখ্যা করেছে। বিষয়টা বুঝতে হলে রত, রতি, সুরত, আরতি ইত্যাদি শব্দগুলি একত্রে বিবেচনা করুন। সুরত মানে যৌনমিলন হয়, এছাড়া যেকোনো কাজে ভালভাবে রত হওয়াকেও সুরত (সু মানে ভালো, রত মানে কাজে লাগা) বলা চলে। আরতি মানে চলমান সুরতি, কর্ম্মে রত কর্ম্মী (সুরতি শব্দে ই-কার ক্রিয়ার চলমানতা বুঝায়)। পূজায় যে আরতি করা হয় তা ভালবাসা ও শ্রদ্ধা সহকারে কর্ম্মে রত হওয়ারই প্রতীক। এটা না বুঝে মন্দিরে গিয়ে এমনি এমনি পূজারতি ক’রে কোনো লাভ আছে কিনা তা আপনারা ভেবে দেখুন। আমার তো মনে হয় যে, প্রায়ই সেটা প্রায়ই এক ধরণের বিড়ম্বনায় পরিণত হয়।

কর্ম্মে রত কর্ম্মীদের রতি বলা যেতে পারে। এই জন্যই মদনের স্ত্রীর নাম রতি। মদন মানে যে কর্ম্মে প্ররোচিত করে, মত্ততা দেয়। বর্ণভিত্তিক নিয়মে মদন শব্দে ম বর্ণে মত্ততা, দ বর্ণে দান এবং ন বর্ণে অনকরণ (on-করণ) বুঝতে পারেন। রতি (কর্ম্মীরা) ও মদন কামসূত্রে (কাজের সূত্রে) গ্রথিত থাকে। এর অর্থ কর্ম্মীরা আনন্দে কাজ করে। এখানে কামসূত্র শব্দে শুধুমাত্র যৌনতা বিষয়ক কিছু ভেবে বসলে রীতিমতো সমস্যা আছে। কলিম খান ও রবি চক্রবর্তী মহাশয় বলেন যে বাৎসায়নের ‘কামসূত্র’ বইটি প্রকৃতপক্ষে একটি management-এর বই, যদিও ক্রিয়াভিত্তিক ভাষা না বুঝে কোনো কোনো আধুনিক পাঠক এটিকে যৌনতা বিষয়ক বই বলে মনে করে থাকেন। শাস্ত্রগ্রন্থের ভিতরের মানে না বুঝে সে আর এক ভয়ানক বিড়ম্বনা ! শাস্ত্রগ্রন্থ পড়তে গিয়ে আমাদের কোনো কোনো যুক্তিবাদী ও নাস্তিক বন্ধু প্রায়ই এই ধরণের বিড়ম্বনার শিকার হন।

এই প্রসঙ্গে ‘সুরতহাল রিপোর্ট’ শব্দটিও আলোচনা করা চলে। সুরত মানে ভালোভাবে রত হওয়া। কোনো কাজ ভালোভাবে হয়েছে কিনা তার রিপোর্টই সুরতহাল রিপোর্ট। ঘটনার প্রকৃত অবস্থার তদারক বুঝাতে এই শব্দটি ব্যবহৃত হয়।

আশা করি এই রচনা থেকে রতি ও আরতির সম্পর্ক পরিষ্কার হল।

Scroll to Top