একাত্তরের মিথ্যাচার -জিন্নাহর বায়বীয় রাষ্ট্র কাঠামোর ভণ্ডামির আখ্যান

একাত্তরের মিথ্যাচার -জিন্নাহর বায়বীয় রাষ্ট্র কাঠামোর ভণ্ডামির আখ্যান

সবাইকে ঐতিহাসিক বিজয় দিবসের বিলম্বিত শুভেচ্ছা জানিয়ে এই লেখা শুরু করছি। আমি সামান্য এক বঙ্গ সন্তান ,পেটের দায়ে সময় করে উঠতে পারি নি তাই বিজয় দিবসের শুরুতে এই লেখা আপনাদের সামনে রাখতে পারি নি তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। তবে একটা উদ্দেশ্য হয়তো সাধন হবে। এই দিনটি অনেক ছাগ সন্তান তাদের পিতৃরূপ দেশটির এই কলঙ্কময় দিনে শীতঘুমে থাকে তাই পরের দিন আবার ম্যাৎকার করলেই এই লেখা হাতে ধরিয়ে দিন। আর হ্যা,যুদ্ধ শেষ হয়েছিল ১৭ঈ ডিসেম্বর,এক দিন পরে মানে আক্ষরিক অর্থে সম্মুখ সমরের শেষ ভাগে। ওই মহান সেনাবাহিনী বোঝে নি যে তাদের পরাজয় হয়েছে তাই পশ্চিম রনাঙ্গনে আরো কিছু মার খেয়েছিল।আজ ওই পশ্চিম রনাঙ্গনে মার খাওয়ার উপর মূলত বর্ননা দিয়েছি।

আমরা ইউ টিউব বা সংবাদ মাধ্যমের বিবিধ উৎস থেকে ১৯৭১ এর অনেক কিছুই আজ জানি। এই কারণে সেই পুরোনো কিছু না ,আজ তুলে ধরবো এক নতুন বিষয়, কি অবস্থা ছিল তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান এবং আজকের পাকিস্তান (এখনো পর্যন্ত ) এর সংবাদ মাধ্যমের অবস্থা ? সাধারণ মানুষের কাছে কতটা খবর যাচ্ছিল ওই ঘৃণ্য অত্যাচার আর এই শতকের অন্যতম সর্বাধিক (হিটলারের ইহুদি হত্যার পর ) মানব হত্যার বিষয় ? আজকে তুলে ধরবো কিছু সেই সময়ের পাকিস্তানের খবরের কাগজের বিভিন্ন আস্ফালন এবং বিজ্ঞাপন।

মনে রাখবেন , এই প্রোপাগান্ডা আজো চলছে। আজ আরো বেশি করে ধর্মীয় এবং এই বাংলার নানান কোনের দেশি ব্ল্যাক বেঙ্গলের সাহায্যে মিনি পাকিস্তান করে তোলার সুখ স্বপ্ন দেখা এই জীবগুলো আরো সক্রিয়। এই কারণে সতর্ক করছি সব শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন বঙ্গসন্তান কে। মনে রাখবেন,লড়াই শেষ হয় না। লড়াই চলতে থাকে।
পূর্ব রনাঙ্গনের খবর তো আমরা অনেকেই রাখি কিন্তু একই সময়ে ইয়াহিয়া পশ্চিম রনাঙ্গনে কি করছিল তার খবর ? কারন তার এবং বাকিদের তো কালো এবং নিচু জাতের বাঙালি ছিল অতীব বর্জনীয় একটি জাত।তাদের ‘নিজেদের ‘ ভূমির আর আজীবন লালিত কাশ্মির ইত্যাদি দখলের কাজ করতে গিয়ে কি করেছিল ? বর্ননা নিচে দিচ্ছি ।
দুদিকের পাকি পিয়ারু মানুষ এবং সঙ্গে জড়ো হওয়া কিছু আলোকপ্রাপ্ত মানুষের ধারণা ভারত ওই যুদ্ধ শুরু করে। না , হে প্রানিগন,ওটাও আগের মতই করে পাকিস্থান।৯ই নভেম্বর এর একটি সিআইএ রিপোর্টের ভিত্তিতে ইয়াহিয়া ডিসেম্বর তিন তারিখে বায়ু সেনা দিয়ে আক্রমন করে।এই অপারেশন এর নাম দেওয়া হয় অপারেশন চেঙ্গিজ খান।আগেরটা ছিল অপারেশন জিব্রাল্টার (আয়ুব এর ) এবার এতো কম না এক্কেবারে চেঙ্গিজ খান !তা এই চেঙ্গিজ এর অপারেশন এর উত্তরে ভারত করে অপারেশন ট্রাইডেন্ট।
১.পাকিস্তান ভারতের পাঞ্জাব ,কাশ্মীর এবং রাজস্থানের বিবিধ সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে আক্রমন করার পরপর ভারতীয় বায়ু সেনা পাল্টা আক্রমন করে আর তার সাথে ভারতীয় নৌবহর করাচির হাল খারাপ করে দেয়। পাকিস্তানের PNS খাইবার আর মুহাফিজ এর শুইয়ে দেওয়ার কাজ করে দেয় ডিসেম্বর ৪ আর ৫ তারিখের মধ্যেই। এর মধ্যে PNS Ghazi নামের পাকিস্তানি সাবমেরিন একটু জেহাদ করতে বঙ্গোপসাগরে এসেছিল। ভারতের বিমানবাহী রণতরী বিক্রান্ত তার সলিল সমাধি করিয়ে দেয়। অবশ্য আমরা একটা ফ্রিগেট INS Khukri হারাই করাচির কাছে সম্মুখ সমরে।
২. ছাম্ব ,রবি-চিনাব করিডোর দিয়ে কাশ্মীরের সাথে ভারতের মূল ভুখন্ডের সংযোগ বিচ্ছিন করতে তেসরা ডিসেম্বর,১৯৭১ এ তিনটি ইনফ্রেন্টরি ডিভিশন আর একটি স্বশস্ত্র ব্রিগেড নিয়ে ওই চেষ্টা করতে যায়। পুরো ব্যর্থতার চুনকালি মাখে পাকিস্তান সেনা,মনে রাখবেন এই সেক্টরে কোনো গণ প্রতিরোধ ছিল না তবু এই বাঘের বাচ্চারা যে আসলে মারখোর এর সন্তান তা আবার প্রমান হলো। এর আগে ১৯৬৫তে হয়েছিল তবে অনেক ঢাকাঢুকি দিয়ে ওটা আটকানো হলেও এবার আর হলো না।এতে কারোর পাকানুভুতিতে আঘাত আসতে পারে এই জন্য একদম পবিত্র দেশের খবরের সূত্র দিচ্ছি : https://www.dawn.com/news/1227489
৩. এ ছাড়া ইয়াহিয়া রাজস্থানে আরো একটি চেষ্টা করে জয়্সলমীর দখল করার। এই কাজে একটা গোটা ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশন কে ৯০ মাইল মরুভুমির পথে পাঠায় এই মহান জেহাদের জন্য। উর্বর মস্তিষ্কের বুদ্ধি না হলে এই কাজ করে ? বালিতে সাধারণ সেনা বহনকারী আর অন্য গাড়ি বন্ধ হয়ে যায়। একমাত্র T-59 ট্যাংক এর বাহিনী যখন ময়দানে পৌঁছায় তখন ভারতীয় বায়ু সেনার কাছে স্রেফ উড়ে যায়। আসলে যুদ্ধ যে আর ঘোড়া বা উটের পিঠে করার দিন নেই ,ওটা যে মাথা দিয়ে করতে হয় তা এদের জানা ছিল না। আজো নেই ,যদিও অনেক পাকি পিয়ারু মানুষের ওটা ঠিক হিসেবে নেই বোধহয়।এর সূত্র ? হ্যা, দিচ্ছি। এই যে , এইটা ও পবিত্রদেশের : https://www.dawn.com/news/506298
৪. ভারতের পুঞ্চ রণাঙ্গনে শোচনীয় মার্ : ভারতের এই রণাঙ্গনের কর্নধার লেফটেনেন্ট জেনারেল কে কে সিং এর নেতৃত্বে এই সেক্টরে প্রচন্ড মার্ খায় পাকি জলপাই। ১০০ র উপর অফিসার মারা যায়, ভারতীয় সেনা একটি ঘাঁটি দখল করে রেখেছে তাই ওটা ছাড়াতে একের পর এক ইউনিট পাঠানোর প্ল্যান হয়। অতঃপর পরপর দুটো ইউনিট এর বেহেস্ত প্রাপ্তি হয় ভারতীয় ট্যাঙ্কের হাতে। ১৬ই ডিসেম্বর প্রথম ইউনিট উপরে যায় এবং তার পরে দ্বিতীয় ইউনিট। পাঠক এই তারিখ খেয়াল করে , এর মধ্যেই কিন্তু পূর্ব রণাঙ্গনে বাঘ এর রূপে ছাগল জবাই হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ ,এদের চেষ্টা ছিল এইদিকে একটা প্রত্যাঘাত করার। স্পষ্টতই যুদ্ধবিরতির কোনো ধার ধারেনি। ফলাফল সবার সামনে। এর সূত্র ? হ্যা, ওটা ও একদম পাকিস্তানের কাগজের থেকেই দিচ্ছি : https://www.dawn.com/news/506298
৫. পাকিস্থানের নৌ সেনার আরো কিছু মার খাওয়ার ইচ্ছা ছিল তাই তারা গুজরাটের ওখা বন্দরে আক্রমন করে। এর উদ্দেশ্য ছিল ভারতের ওই অঞ্চলের খনিজ তেলের ভান্ডারে আগুন লাগিয়ে ব্যাপক ক্ষতি করা। আবার ভুল হয় ,এর তিনদিনের মাথায় ডিসেম্বর ৮ এবং নয় তারিখে ভারত শুরু করে নৌ বহরের অপারেশন পাইথন। তিনটি বানিজ্যিক জাহাজের একদম ধ্বংস আর তারপরেই করাচির বন্দরের তেলের ডিপোর ২২ টি তেলের গুদাম নস্ট হয় ভারতের আক্রমনে। ৮ তারিখ থেকেই করছি বন্দর স্তব্ধ হয়ে যায়।এর সূত্র লাগবে ? আবার পাকিস্থানি সূত্র দিচ্ছি : https://www.dawn.com/news/708855

না বলতে চেয়েও বলতে হচ্ছে রমনা ময়দানের কথা।সেই ঐতিহাসিক দিনটিতে প্রায় ১০ লক্ষ বাঙালি একত্রিত হয়েছিল এই আত্বসমর্পন দেখার জন্য।ওই মুষ্টিমেয় পাকিস্থানি সেনা যারা এই অনুষ্ঠানে ছিল আর তাদের ঘিরে থাকা ভারতীয় সৈন্য এত বেশি ছিল না যে ক্ষিপ্ত জনতার রোষ থেকে তাদের রক্ষা করতে।নিজেদের উচুজাতের মানুষ ভাবা ওই মারখোর এর সন্তানরা দেখেছিল কি ভাবে বাঙালি সংযম দেখিয়েছে।এই দিক কিন্তু মিডিয়া তুলে ধরে না।
আত্বসমর্পর্ন করা ওই ৯৩ হাজার পাকিস্থানি (হামুদুর রহমান কমিশনের কথা অনুযায়ী ,৯০হাজার ৩৬৮ জনের অধিকাংশ কিন্তু নিয়মিত সৈন্য অর্থাত আজকাল অনেকেই যে বলে এদের অধিকাংশ বেসামরিক লোক ওটা বেমালুম মিথ্যা কথা। ৭৫ হাজারের উপর প্রতিরক্ষা দফতরের মানুষ এবং সামনের সারির যুদ্ধরত মানুষ এর অন্তর্গত ছিল। সূত্র ? ওটা ও পাকিস্থানি দিচ্ছি : https://www.dawn.com/news/718001
অত:পর নিজেদের কাগজে মিথ্যাচারের প্রমান :
চৌঠা ডিসেম্বর ১৯৭১ : পাকিস্থানের কাগজ ডন খবর দিচ্ছে এক সার্বিক যুদ্ধের,ছবি নম্বর এক ,ছবি নম্বর দুই ৫ই ডিসেম্বরের,ভারতের একেবারে সর্বনাশ করে দিচ্ছে তার বিবরন।এইভাবে ১৬ই ডিসেম্বর এবং আরো একটু পরের মানে ২০ তারিখ পর্যন্ত ছবি গুলো পরপর দেখুন,বিশেষ কিছু বলার দরকার হবে না।নিজেই বুঝে যাবেন।
শেষে দেওয়া ছবিটি দেখবেন মানে এই সংবাদ বিষয়ক ভাগ এর, ভুট্টো নিজের গদি সুরক্ষিত করার পর চেষ্টা করেছিল একটা পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্থান কনফেডারেশন তৈরী করার। মনে রাখবেন,মুজিব তখন পাকিস্থানের জেলে বন্দী এবং তার কিছুই জানা ছিল না।প্রবল চাপ দিয়েও কোনো সুবিধা করতে পারেনি এই ধূর্ত লোকটি।এরপর তার গদিতে বসার স্বপ্ন সফল হয় কিন্তু ওই যে কর্মফল ! পাকিস্থানি সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করতে আর আগের দুই জেনারেল এর সাথে কৌশলে সফল ভুট্টো বোঝেনি তার নিজের হাতের তৈরী জিয়া উল হক তার বধের কারন হবে। একদা এই ভুট্টো ঢাকার সমাবেশে বাঙালি প্রতিবাদী জনতা কে এক জনসভায় বলেছিল “ শুয়ার কি বাচ্চে জাহান্নাম মে যাও “ – এই জাহান্নাম কি জিনিস তা ফাসির মাধ্যমে নিজেই বুঝেছিল।আফসোস এর পরে ও এখনকার গুলো বোঝে না যে পাকিস্থানি সেনাবাহিনী তার নিজের দেশের কোনো ভালো বোঝে না ।
কি ভাবছেন ? অতিরিক্ত ঘৃণায় কোনো অতিরঞ্জিত কিছু বলছি ? উহু,আগেও অনেক জায়গায় বলেছি ,তথ্যসূত্র ছাড়া কিছু বলবো না তাই একদম শেষ পাতে দু একটা  ভিডিও প্রতিবেদন দিচ্ছি,ইউটিউবে আছে নিজেরাও দেখে নিতে পারেন।প্রথমটি ভুট্টোর যে তত্কালীন পুর্বপাকিস্থানের এক জনসভায় বিক্ষুব্ধ বাঙালিদের বলেছিল “ শুয়ার কে বাচ্চে জাহান্নাম মে যাও “ , https://www.youtube.com/watch?v=B3k2bwub9sk&index=4&list=PLa7XOegxAsbxr3SrptjNeXk9i6tG_j49a
দ্বিতীয় সুত্রে দেখুন নিজেকে ‘টাইগার ‘ বলা এই ক্লীব কত বড় বড় কথা বলে শেষে নির্লজ্জ অত্বসমর্পর্ন করে কি ভাবে।  https://www.youtube.com/watch?v=sOnQ2gDG1gM&feature=youtu.be&list=PLa7XOegxAsbxr3SrptjNeXk9i6tG_j49a
একটি সূত্র পেয়েছিলাম যাতে ওই আত্বসমর্পর্ন এর পরে সন্ধ্যায় খানাপিনা করেছিল নির্লজ্জ পাকিস্থানি সেনাবাহিনীর কর্তারা।ওটা পেলেই যোগ করে দেবো। আবার বলছি, এই পাকিস্থানি শাসকদের কোনটা তাদের দেশের প্রতি দায়বদ্ধ না।ভবিষ্যতে আরো অনেক কিছু দেখবেন।
বিজ্ঞাপনের ছবিগুলোর উপর কিছু বললাম না তবে যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বলবেন,চেষ্টা করবো তার জবাব দিতে।
শেষের দুটো ছবি দিলাম একটু লেখার ভার বাড়াতে। কারন দুটো ছবি নিয়ে আর নতুন কিছু বলার নেই। আর হ্যা এই দুটো ছবি ও নিয়েছি পাকিস্থানি কাগজের থেকে।
সবাইকে আবার ধন্যবাদ !

জয় বাংলা ! ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী দীর্ঘজীবি হোক !

তথ্যসূত্র লেখার ফাকে ফাকে দিলাম। ইন্টারনেট আর বর্তমান প্রযুক্তি খুব পাজি জিনিস,কোনো কিছু পর্দার ভিতরে রাখতে দেয় না।