শনিবার ১৮ নভেম্বর বিশ্বব্যাপী সংখ্যালঘু মানবাধিকার নেতৃবৃন্দ এক বিবৃতিতে রংপুরে হিন্দুদের ওপর বর্বোরচিত ধংসযজ্ঞ স্বচক্ষে দেখার জন্যে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ও এরশাদ এবং সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ-কে রংপুর গিয়ে সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানিয়েছেন। নেতৃবৃন্দ বলেন, দুই নেত্রী রোহিঙ্গাদের দেখতে কক্সবাজার গিয়েছিলেন, কিন্তু নাসিরনগর যাননি। তাই এবার তাদের রংপুর যাওয়া উচিত, কারণ রংপুরের ক্ষতিগ্রস্থরা বাংলাদেশের নাগরিক। বড় দুই দলের সাধারণ সম্পাদকদ্বয় যথাক্রমে ওবায়দুল কাদের এবং ফখরুল ইসলাম রংপুর যাচ্ছেন সংবাদে নেতৃবৃন্দ সন্তোষ প্রকাশ করেন। নেতৃবৃন্দ বলেন, রংপুর বা নাসিরনগরের মত ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে বড় দুই দলকে আন্তরিক হতে হবে এবং সেই লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। নেতৃবৃন্দ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রংপুর সফরে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন, কিন্তু তার আমলে একের পর এক সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেন। সংখ্যালঘু নেতৃবৃন্দ নিরপরাধী টিটু রায়ের গ্রেফতারের সমালোচনা করেন এবং বলেন, মৌলবাদীদের খুশি রাখতেই তাকে অকারণে বারবার রিমান্ডে নেয়া হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয় বলে নেতৃবৃন্দ মত প্রকাশ করেন। তারা টিটু রায়ের অবিলম্বে মুক্তি দাবি করেন।সংখ্যালঘু নেতৃবৃন্দ একই সাথে আইনমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেন।
বিবৃতিতে মৌখিকভাবে স্বাক্ষর করেন, নবেন্দু বিকাশ দত্ত, সভাপতি, যুক্তরাষ্ট্র ঐক্য পরিষদ (নিউইয়র্ক); তরুণ কান্তি চৌধুরী, সভাপতি, ইউরোপীয় ঐক্য পরিষদ (সুইডেন); অরুন বড়ুয়া, সভাপতি, বাংলাদেশ মাইনোরিটি কোয়ালিশন (জেনেভা); পুষ্পিতা গুপ্ত, সভানেত্রী, ইউকে সেকুলার ফোরাম (লন্ডন); উদয়ন বড়ুয়া, সভাপতি, ইউরোপ ঐক্য পরিষদ (ফ্রান্স); স্বদেশ বড়ুয়া, সভাপতি, ফ্রান্স ঐক্য পরিষদ (প্যারিস); শুভ রায়, বাংলাদেশ মাইনোরিটি রাইটস ম্যুভমেন্ট; অরুন দত্ত, সভাপতি, মাইনোরিটি রাইটস এলিয়েন্স, টরন্টো; দিলীপ কর্মকার, ঐক্য পরিষদ, কানাডা,(মন্ট্রিল); চিত্রা পাল, সভানেত্রী, সুইডেন হিন্দু ফোরাম; ডঃ সান্তায়ন কবিরাজ (লন্ডন); অজন্তা দেব রায় (লন্ডন); ডঃ মোহিত রায়, সভাপতি, ক্যাম্ব (কলকাতা); প্রিয়তোষ দে, জ্যামাইকা হিন্দু কমিউনিটি; ডঃ নিরঞ্জন রায়, সভাপতি, ক্যালিফোর্নিয়া ঐক্য পরিষদ; তরুণ চক্রবর্তী, (রাশিয়া); সুশীল সাহা, (নিউইয়র্ক); লুনা কবিরাজ, (বাংলাদেশ); এবং শিতাংশু গুহ (যুক্তরাষ্ট্র)।
শনিবার এক আন্তর্জাতিক কনফারেন্স কলে সংখ্যালঘু মানবাধিকার নেতৃবৃন্দ রংপুর নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তারা রংপুরে প্রশাসনের ভূমিকার অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, প্রশাসন চাইলে এ ঘটনা ঠেকানো যেতো। সংখ্যালঘু নেতৃবৃন্দ, রংপুরে ক্ষতিগ্রস্থদের পুনর্বাসন এবং অপরাধীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়ে বলেন, রামু, অভয়নগর, নন্দীরহাট,লংগদু, নাসিরনগর-সহ বহুস্থানে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটে গেলেও আজ পর্যন্ত কারো বিচার হয়নি এবং কেউ শাস্তি পায়নি। তারা বলেন, রংপুর থেকে বিচার শুরু হোক। নেতৃবৃন্দ, সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচারের জন্যেও একটি স্পেশাল ট্রাইবুনাল গঠন করার জোর দাবি জানান। তারা দাবি করেন, এই ট্রাইবুনালে এরশাদ আমলে দাঙ্গা থেকে সকল ঘটনা বিচারের আওতায় আনা হোক। নেতৃবৃন্দ দু:খ করে বলেন, ২০০১ সালে ন্যাক্কারজনক সংখ্যালঘু নির্যাতনের ব্যাপারে তদন্ত কমিটির সুনির্দিষ্ট সুপারিশ থাকলেও আজ পর্যন্ত বিচারের কাজ শুরু হয়নি। বিচারহীনতা একের পর এক ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। তাই অবিলম্বে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচারকার্য শুরু হওয়া দরকার। নেতৃবৃন্দ, গ্রেফতারকৃত মিঠুন চৌধুরীর মুক্তি দাবি করেন। নেতৃবৃন্দ সাম্প্রতিক সময়ে বিচার বিভাগ ও প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা-র পদত্যাগ নিয়ে যা ঘটেছে তা নিয়ে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানান এবং বিচার বিভাগের মর্যাদা ও স্বাধীনতা অক্ষুন্ন রাখার আহবান জানান। ধন্যবাদ।
বার্তা প্রেরক,
শিতাংশু গুহ, নিউইয়র্ক।
১৮ নভেম্বর ২০১৭।