যেখানেই কোন জঙ্গি হামলা,বোমা হামলা হত্যার মত কোন ঘটনা ঘটলেই মুমিনরা এই আয়াত নিয়ে হাজির হয়।

ইসলামের উদার ব্যাখ্যা করতে গেলে যে কুরআনের আয়াতই মুছে ফেলতে হবে সেই বিষয়টা আপনাদের দেখানো দরকার। আজকের বিশ্বে ইসলামের পক্ষে সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন হলো সুরা মায়দার ৩২ নং আয়াত। সুশীল মডারেট মুসলিম থেকে ইসলামীপ্রেমি অজ্ঞেয়বাদী, ইসলামের বন্ধু কমিউনিস্ট কমরেড সকলেই এই আয়াতটা আওড়ান, ‘যে কেউ প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ অথবা পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করা ছাড়া কাউকে হত্যা করে সে যেন সব মানুষকেই হত্যা করে। এবং যে কারও জীবন রক্ষা করে, সে যেন সবার জীবন রক্ষা করে’।

ইসলামে যে কোন রক্তপাত নেই বরং মানুষের জীবন বাঁচানোকে সমগ্র মানবজাতির কল্যাণ বুঝায় এটি হচ্ছে সেই বিজ্ঞাপনের ভাষা। যদিও আয়াতটি কাটিং করা অংশ আমরা দেখতে পাই। এই আয়াতে শুরুতে যা বলা হয়েছে তা আমরা দেখতে পাই না। এই আয়াতের শুরুতে বলা হয়েছে, “এ কারণেই আমি বনী-ইসলাঈলের প্রতি লিখে দিয়েছি যে” অর্থ্যাৎ এটা তাওরাতের লেখা আছে এমন কিছু কথা বলা হয়েছে। ৩২ নং আয়াতে তাওরাতে যা লেখা আছে এমন কিছুর কথা বলা হচ্ছে। এটা কুরআনের নির্দেশ নয়। স্পষ্ট করে বলা হচ্ছে বণি ইসরাইলীদের (ইহুদীদের) লিখে দেয়া হয়েছিলো…। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, এরকম কোন কথা তাওরাতে লেখা নেই। এটা লেখা আছে ইহুদীদের ‘তালমুদ’ নামের একটি ধর্মীয় বইতে যা মোটেই তাওরাতের মত কোন কিতাব নয়। মুহাম্মদের তাওরাত সম্পর্কে স্বল্প জ্ঞানের দরূণ তালমুদের কথা এখানে ঈশ্বরের প্রত্যাদেশ প্রাপ্ত হিসেবে তুলে ধরেছেন। তালমুদ তথাকথিত ঈশ্বরকৃত নাযিল কোন কিতাব নয়। এটি ইহুদী একজন রাব্বিকৃত লিখিত ধর্মীয় পুস্তক। যাই হোক, কথা সেটা নয়। আসল কথা হচ্ছে এই আয়াতটাকেই যদি শান্তির পক্ষে প্রচারণা করে মুসলমানদের জঙ্গিবাদ থেকে বিরত রাখার কোন খোয়াব আপনি দেখে থাকেন তাহলে অত্যন্ত দু:খের সঙ্গে বলতে হচ্ছে তাহলে অবশ্যই ৩৩ নং আয়াতটাকে কুরআন থেকে মুছে ফেলতে হবে! কারণ সেখানে স্পষ্টভাবে হত্যা খুন রক্তপাতের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ৩২ নং আয়াতে বণি ইজরাইলীদের জন্য কি লেখা ছিলো সেটা বলার পরই এখন মুসলমানদের জন্য কি নির্দেশ করা হলো সেটা ৩৩ নং আয়াতে বলা হলো, “যারা আল্লাহ ও তার রসূলের সঙ্গে সংগ্রাম করে আর ভূপৃষ্ঠে অশান্তি সৃষ্টি করে তাদের একটাই শাস্তি যে, তাদের হত্যা করা হবে, অথবা শূলে চড়ানো হবে অথবা একদিকে হাত ও অপর দিকের পা কেটে ফেলা হবে অথবা ভূপৃষ্ঠ হতে বের করে দেয়া হবে”।

এবার বলেন ইসলামের উদার ব্যাখ্যা কিভাবে সম্ভব? এই আয়াতে তো খোলাখুলিই সব বলা হয়ে গেছে। এই আয়াত ধরেই আবু বকর জাকাত অস্বীকারকারী কুফাবাসীদের উপর হামলা চালিয়েছিলো। ইসলাম ত্যাগকারীদের উপর অভিযান পরিচালনা করা হয়েছিলো এই আয়াত দ্বারাই। মুরতাদ হত্যার দলিল হচ্ছে মায়দার এই ৩৩ নং আয়াত। এই আয়াতের তাফসির করেছেন ইবনে কাথির। তিনি লিখেছেন, ‘ইসলাম ত্যাগ করে মুরতাদ হয়ে উট নিয়ে পালিয়ে যাবার সংবাদ নবীর কানে গেলে তিনি আনসারদের পাঠালেন তাদের ধরে আনতে। আনসাররা তাদের ধরে আনে এবং নবী তাদের পিছন থেকে হাত-পা কেটে ফেলেন এবং চোখে গরম শলকা ভরে দেন!’ (ইবনে কাথিরের তাফসির, সুরা মাইদা, পৃষ্ঠা-৮০৬-৮০৭)।

এখানো যখন টেলিভিশনের বিজ্ঞ জ্ঞানী আলোচকদের মায়দার ৩২ নং আয়াতের কাটিং অংশ আবৃত্তি করে ‘ইসলাম শান্তির ধর্ম’ বলতে শুনি তখন তাদের ইসলামী জ্ঞান নিয়ে হাসি আসলেও চিন্তিত হই, ৩২ নং আয়াত দিয়ে ইসলামকে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে তারা তো ৩৩ নং আয়াতকেই কার্যকর হতে সাহায্য করলেন!