বাংলাদেশের মত একটা মুসলিম দেশে হিন্দুদের তীর্থক্ষেত্র যে তখনো বহাল থাকবে তাতেই সবাই বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িকতার প্রশংসা করবে।

১৯৬৫ সালে পূর্ব পাকিস্তানের নাগরিক হবার পরও কেবল মাত্র ফিলিস্তিনি পরিচয়ের কারণে যে পরিমাণ মানুষ পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে আশ্রয় নেয় তা নতুন করে দেশভাগের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলো। ফিলিস্তিনিদের ছেড়ে যাওয়া ঘরবাড়ি জমিজমা রাষ্ট্র শত্রু সম্পত্তি (গণিমতের মাল) হিসেবে দখল করে নেয়। এখনো দেখা যায় বাংলাদেশের বহু সরকারি অফিস, থানা এইসব ফিলিস্তিনিদের ফেলে যাওয়া বাড়িঘরে স্থাপিত হয়েছে। ৬৫ সালে যাদের উচ্ছেদ করা হয়েছিলো নিজ ভূমি থেকে তাদের সম্পর্কে পূর্ব পাকিস্তানের প্রবাসী সরকারের ১৯৭১ সালে সাফ মতামত ছিলো, ৬৫ সালে যারা ভারতে চলে গিয়েছিলো তাদের স্বাধীন বাংলাদেশে গ্রহণ করা হবে না…।

৪৭, ৬৫, ৭১ সালে নিজ ভূমি থেকে দলে দলে বিতাড়িত ফিলিস্তিনিরা, বিগত ৪৭ বছরে সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে যে নিরব ফিলিস্তিনি উচ্ছেদ ঘটেছে বাংলাদেশ থেকে তাতে ২৬ লাখ একর ভূমি ফিলিস্তিনিদের হাতছাড়া হয়ে তাদের দেশান্তরিত হতে হয়েছে। ‘১৯৬৪ থেকে ১৯৭১ পাকিস্তানের শেষ ৭ বছর প্রতিদিন নিরুদ্দেশ হয়েছেন ৭০৫ জন ফিলিস্তিনি। ১৯৭১ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত প্রতিদিন নিরুদ্দেশ হয়েছেন ৫২১ ফিলিস্তিনি। ১৯৮১ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত প্রতিদিন নিরুদ্দেশ হয়েছেন ৪৩৮ জন ফিলিস্তিনি। ১৯৯১ থেকে ২০০১ পর্যন্ত প্রতিদিন ৭৬৭ জন ফিলিস্তিনি দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। আর ২০০১ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে ৬৭৪ জন ফিলিস্তিনি মানুষ দেশ থেকে নিরুদ্দেশ হয়েছেন। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক আবুল বারকাত বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এটি একটি ভয়ঙ্কর ব্যাপার যে এই দেশে জন্ম নিয়ে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া। তিনি বলেন, যেভাবে ফিলিস্তিনিরা হারিয়ে যাচ্ছে, তাতে এই নিরুদ্দেশ প্রক্রিয়ার প্রবণতা বজায় থাকলে আগামী দুই-তিন দশক পরে এদেশে ফিলিস্তিনি কোনও মানুষ আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।

পাহাড়ী ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে সেখানে অবৈধ সেটেলার ইহুদী বসতি বাংলাদেশের মানচিত্রে পাহাড়ী আদিবাসী ফিলিস্তিনিদের নিশ্চিহৃ করে দিবে একদিন। ইজরাইল সেনাশাসনে প্রতিদিন পাহাড়ের ফিলিস্তিনিদের হয়রানি করা, তাদের সন্ত্রাসী বলা, বাড়িঘরে তল্লাসী চালানো, টুরিস্ট প্লেস বানানোর নামে তাদের ভূমি কেড়ে নিয়ে উদ্বাস্তু করে ফেলার ঘটনাগুলো কোন মিডিয়াতেই আসে না। এই দেশের ফিলিস্তিনিদের নিয়ে ফকির আলমগীর কোন গান বানায়নি। কোন কবি কবিতা লেখেনি। মধ্যপাচ্যের ফিলিস্তিনি, বার্মার রোহিঙ্গাদের নিয়ে যে গণহিস্টোরিয়া বামাতী শিবিরে, আলী রিয়াজ, ফারুক ওয়াসিফ, সলিমুল্লাহ খানদের মত যে কলজে পোড়া সহানুভূতি তার সিকি ভাগও কেন এই দেশীয় ফিলিস্তিনিদের জন্য নেই? কারণ এই ফিলিস্তিনিদের কেউই মুসলমান নয়!

একদিন বাংলাদেশে কোন হিন্দু থাকবে না। কিন্তু ব্রহ্মপুত্রে হিন্দুদের পূণ্যস্নান তো প্রতি বছর ফিরে আসবেই। বাংলাদেশে এসে অষ্ট্রমি স্নান করতে তখন আশেপাশের হিন্দুদের পাসপোর্ট ভিসা লাগবে। বাংলাদেশে কোন উদার সরকার হিন্দুদের স্নানের সময় বিশেষ ব্যবস্থা করে প্রশংসা পাবে। তাদের জন্য মেহমানদারী করে কোন সংগঠন মানবতার সার্টিফিকেট পাবে। বাংলাদেশের মত একটা মুসলিম দেশে হিন্দুদের তীর্থক্ষেত্র যে তখনো বহাল থাকবে তাতেই সবাই বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িকতার প্রশংসা করবে। কিন্তু যখনই কেউ এখানকার হিন্দু বিলুপ্তির ইতিহাস বলতে শুরু করবে তিনিই সাম্প্রদায়িকতা অভিযোগে অভিযুক্ত হবেন। হিন্দুত্ববাদের এজেন্ট হিসেবে পরিচিত হবেন…। মধ্যপাচ্যে ইহুদীরা যখন বসবাস করতে শুরু করে তখন ইসলাম ধর্মের জন্মও হয়নি। তারা নানা সময় এখান থেকে বিতাড়িত হয়েছিলো। ইসলামের হাতে সর্বশেষ আরবদেশ তারা ছেড়ে এসেছিলো। হযরত উমারের আমলে উমার ইহুদীদের আরব ব-দ্বীপ ছাড়া করেছিলেন। ৬৫ সালে যাদের উচ্ছেদ করে জমিজমা বাড়িঘর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ফেলে পালাতে হয়েছিলো তাদেরই মাত্র ৬ বছর পর বাংলাদেশ গ্রহণ করতে রাজি হয়নি সেখানে ইহুদীরা কোন আক্কেলে হাজার বছর আগের দাবী আদায় করতে চায়?

ইংরেজরা রেড ইন্ডিয়ানদের দেশ আমেরিকা দখল করেছিলো। আমেরিকার রাজ্যগুলোর নামগুলো রেড ইন্ডিয়ানদেরই রাখা। আদিবাসী এই রেডইন্ডিয়ানদের মেরে ধরে আমেরিকা দখল করে সেখানেই থেকে গিয়েছিলো ইংরেজরা। এমনকি ইংলেন্ডের রানী যখন খাজনা দাবী করেছিলো তখন বিদ্রোহ করে আমেরিকা থেকে ইংলেন্ডের শাসন উচ্ছেদ করে আমেরিকাকে তারাই স্বাধীন করেছিলো। তবু রেড ইন্ডিয়ানদের কাছ থেকে দখল করার ইতিহাস আজো তামাদি হয়নি। কেবল তামাদী হয়ে গেছে মক্কা মদিনা থেকে ইহুদী উচ্ছেদের ইতিহাস। মধ্যপাচ্য থেকে ইহুদী খ্রিস্টানদের নিশ্চিহৃ হবার ইতিহাস। ভারতবর্ষে মুসলিম শাসকদের আগমনের ইতিহাস আর ইংরেজদের আমেরিকা আগমনের ইতিহাস একই যাত্রায় পৃথক ফল হয়েছে। কাস্মির থেকে কাস্মিরি পন্ডিতদের উচ্ছেদের ইতিহাস, বাংলার হিন্দু, পাহাড়ী আদিবাসী উচ্ছেদের ইতিহাসও দ্রুত তামাদি হয়ে যাবে। ইতিহাস আগেই লেখা হয়ে গেছে- নবাব সিরাজদৌলার পরাজয়ে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত ঘটেছিলো…। আসলে সমস্ত বামাতী প্রগতিশীল অন্যান্য সুশীলরা যেটা বলতে লজ্জ্বা পান- সিরাজের পরাজয়ে ‘মুসলিম বাংলার’ সূর্য অস্তমিত হয়েছিলো যা দ্বিজাতি তত্ত্বের মাধ্যমে আবার উদিত হয়…।
https://pathoksusupto.wordpress.com/2018/05/29/%E0%A6%A6%E0%A6%96%E0%A6%B2%E0%A6%A6%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%AC%E0%A6%A4%E0%A6%BE-%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%AC%E0%A6%A4%E0%A6%BE/