বামাতীরা একেকটা ঠান্ডার মাথার কাল্ট অনুসারী!

তসলিমা নাসরিন ভারতের হিন্দুত্ববাদীদের কাছ থেকে টাকা খেয়ে তার ‘লজ্জ্বা’ উপন্যাস লিখেছিলেন- বামাতীদের এই প্রচারণার কারণ ছিলো উপন্যাসে মুসলিমদের হাতে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা ধর্ষণ লুটপাটের চিত্র দেখানো। বাবরী মসজিদ ভাঙ্গাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশর মুসলমানদের হিন্দুদের উপর প্রতিশোধের প্রেক্ষাপটে ভয়ংকর নির্যাতন নেমে এসেছিলো সেসময়। নাসরিন সেই ঘটনাগুলোকেই তার লেখায় তুলে ধরেছিলেন। এতে ভারতীয় বামাতীরা ক্ষেপে গিয়েছিলো কারণ লজ্জ্বা নাকি ভারতীয় হিন্দু মৌলবাদীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিলো। অন্যদিকে বাংলাদেশী বামাতীরা বেমালুম অস্বীকার করে গেছে যে বাংলাদেশে কোন সাম্প্রদায়িক অশান্তি ঘটেনি। তসলিমা নাসরিন তার লজ্জ্বা উপন্যাসকে কেন্দ্র করে বামাতীদের প্রসঙ্গে কি লিখেছিলেন দেখুন- ‘…বামপন্থীরা আমাকে এক অদ্ভুত কারণে দোষ দিতে শুরু করলো। বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর যে অত্যাচার হয়, তার প্রতিবাদ করে আমি লজ্জা নামের একটি তথ্যভিত্তিক উপন্যাস লিখেছিলাম। যখন ভারতবর্ষে ভারতীয় জনতা পার্টি আমার বিনা অনুমতিতে লজ্জার জাল বই ছাপিয়ে ট্রেনে বাসে ফুটপাতে মুড়ি মুড়কির মতো বিক্রি করতে শুরু করেছিল, বামপন্থীরা দোষ দিয়েছিল আমাকে। ভারতের ডানপন্থীরা আমাকে সমর্থন করছে, এই দোষ আমার? (১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, বাংলাদেশ প্রতিদিন)।

ভারতের বামাতীদের মুসলিম মৌলবাদীদের তোষণের কারণ মুসলিমদের ভোট হাতানো। কিন্তু বাংলাদেশী মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ বিধায় তারা বামপন্থিদের গোণায় ধরে না। বামাতীদের কোন ভোট এখানে নেই। তবু মুসলমানদের খুশি করতে, তাদের কুখ্যাত ধর্মানুভূতির পক্ষ নিয়ে চেয়েছে মন জোগাতে। মুসলমানদের ঘটানো সাম্প্রদায়িক আক্রমনের সময় নিরব থেকেছে। বদরুদ্দীন উমার বাবরী মসজিদকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে ঘটা সমস্ত নির্যাতন দেশ ত্যাগের ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে প্রচার করেছিলো। তসলিমার লজ্জা বের হবার পর তারা সেটাকে হিন্দুত্ববাদীদের টাকা খেয়ে লেখা বলে প্রচার করেছে। যেমন তারা জঙ্গিবাদের পিছনে ইসলামের টেক্মটকে অস্বীকার করে আমেরিকার ঘাড়ে চাপায়। পৃথিবী যে কোন স্থানে জঙ্গি মুসলমানদের উত্থানে সাম্রাজ্যবাদীদের হাত দেখতে পেলেও তারা কিন্তু ভারতে হিন্দুবাদ জেগে উঠার বিশ্লেষণে আমেরিকার হাত আবিস্কার করে না! বলে না হিন্দুত্ববাদের উত্থানের জন্য হিন্দু ধর্মকে দায়ী করাটা নাস্তিকদের মূর্খতা আর অজ্ঞতা। এসব বুঝতে হলে উপমহাদেশের উপনিবেশিক অবস্থান, সাম্রাজ্যবাদীদের রাজনীতিকে বুঝতে হবে ইত্যাদি। এই বামাতীরা কিন্তু ঠিকই জিহাদের উত্থানে আপনাকে এই ছবক দিবে। আপনি কুরাআন থেকে টেক্সট দেখিয়ে ধার্মীক মুসলমানের জিহাদী হবার চান্স কতখানি বুঝাতে গেলে এরা সবজান্তা শমশেরের মত হেসে বলবে, ইতিহাস সম্পর্কে আপনার কোন জ্ঞান নেই! তারা কতখানি রাজনৈতিক ধান্দাবাজ সেটি তসলিমা নাসরিন একই কলামের এক জায়গায় দেখিয়েছেন। নাসরিন লেখেছেন, ‘নারীর সমানাধিকারের পক্ষে যখন লিখছিলাম, তখন তারা আমাকে বাধা দিয়েছে, বলেছে ‘তুমি শ্রেণীশত্রুকে চিহ্নিত করো, তাহলেই হবে। সমাজতন্ত্র এলেই নারীর সমানাধিকার আসবে। আলাদা করে নারীর সমানাধিকারের জন্য সংগ্রাম করার প্রয়োজন নেই।’ সমাজতন্ত্র এলে নারীর সমানাধিকার পাওয়ার কথা, কিন্তু যেসব দেশে সমাজতন্ত্র এসেছিল, সেসব দেশে কিন্তু নারীর সমানাধিকার জোটেনি। পলিটব্যুরোর কজন সদস্য নারী ছিলেন, শুনি?’ (১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, বাংলাদেশ প্রতিদিন)।

মুসলিম নারীদের ইসলাম কিভাবে ঠকিয়েছে, কেমন করে পুরুষের লালসার বেহেস্তের জন্য নারী নিজেকে বির্সজন দিচ্ছে তসলিমা নাসরিন মুসলিম নারীদের জাগাতে এইসব লিখলে বামাতীদের খুব অসুবিধা। বামাতীরা মুসলমানরা তাদের ধর্মে নাক পর্যন্ত ডুবে থাক তাতে কিচ্ছু যায় আসে না। তারা মনে করে সমাজতন্ত্র হলে মানুষ ধর্ম থেকে আপনাআপনি দূরে সরে যাবে। এই মনে করাতে বা বিশ্বাস করাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু নিজেদের রাজনৈতিক ধান্দার আশায় অন্যের লেখালেখিতে হস্তক্ষেপ, নাস্তিকতার সংজ্ঞা নির্ধারণ, কেমন করে নাস্তিকরা কেবল ইসলাম ধর্মকে বাদ দিয়ে লেখালেখি করে তাদের বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যাবে তার ছবক দেয়া প্রতিক্রিয়াশীল মনোভাব। এরা যদি কোনদিন ক্ষমতা হাতে পায় তো আমরা কিভাবে লিখবো, কিভাবে ভাববো তাও ঠিক করে দিবে। বামাতীরা একেকটা ঠান্ডার মাথার কাল্ট অনুসারী!

লজ্জ্বা লেখার আরো পরে পূর্ণিমা শীলের উপর যে মধ্যযুগীয় গণিমতের বিধান নেমে এসেছিলো তার কথা দেশবাসীর অজানা নয়। পূর্ণিমার ঘটনার কাছে লজ্জা উপন্যাসের ঘটনা তেমন কিছু্ই না। সারাদেশে একের পর এক হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় হামলা, তাদের দেশত্যাগ, রামু, মালোপাড়া, নাসিরনগর ঘটনার পিছনেও সাম্রাজ্যবাদীদের হাত রয়েছে। বিষয়টা কিন্তু মজা করলাম না। ফেইসবুকের বামাতীরা এইসব ঘটনা ঘটার পর দেখাতে চেয়েছে বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর নির্যাতন হলে ভারতের হিন্দুত্ববাদীদেরই লাভ। কাজেই বাংলাদেশের বিচ্ছিন্ন এইসব সাম্প্রদায়িক হামলার পিছনে ভারতের র’, আরএসএস, বিজেপি’র হাত থাকা অস্বাভাবিক নয়! অথচ এরাই আপনি যখন মুসলিম জিহাদীদের বিষয়ে ইসলাম ধর্মকে দায়ী করবেন তখন তারা জিহাদের পিছনে অর্থনীতি আন্তর্জাতিক রাজনীতি থেকে জ্ঞান নিতে বলবে। সিআই, পেন্টাগনের জঙ্গি মদদের স্বীকারোক্তির রেফারেন্স সামনে তুলে ধরবে। ইসলামের ইতিহাস পড়ার জন্য প্রফেসার হিট্টিকে তালগাছ মানবে! তারা কতটা অন্ধ সেটা তারা কোনদিন বুঝতে না পারলেও বাকীরা তাদের অন্ধত্বটাকে বুঝতে পারে। একসময় যারা বামাতীদের কাছের মানুষ মনে করত তারাই সঠিক সময়ে বামাতীদের আসল চেহারা আবিস্কার করে ফেলে। এরা যে কতবড় প্রগতিশীলতার শত্রু, সাম্রাজ্যবাদী ইসলামের বন্ধু তা বুঝা যাবে নানা প্রেক্ষাপটে। নাসরিন তার উপন্যাস নিষিদ্ধ হবার পর বুঝেছিলেন, তিনি লিখেছিলেন,’…ওদিকে বামপন্থীরা আবার মুসলিম মৌলবাদীদের দোসর। তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে কোনও কথা শুনতে তারা নারাজ। আমি ভারতবর্ষে বসে লজ্জা লিখিনি, লিখেছি বাংলাদেশে বসে। আমি অত্যাচারিত সংখ্যালঘুর পক্ষে কথা বলেছি, ঠিক বামপন্থীরা যা করে অন্যান্য দেশে, এই সত্য অনুধাবন করতে বামপন্থীরা পারে না। এটুকু অবধি ছিল। কিছু বামপন্থী আমার জীবনের সবচেয়ে ক্ষতি করলো সেদিন, যেদিন আমার বই নিষিদ্ধ করলো ভারতবর্ষে। আত্মজীবনীর তৃতীয় খণ্ড ‘দ্বিখণ্ডিত’ বইটি ভারতবর্ষে নিষিদ্ধ, কারণ আমি ইসলামের সমালোচনা করেছি, এতে নাকি মুসলিমদের ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে। কোনও মুসলমান দ্বিখণ্ডিত বইটি নিষিদ্ধ করার জন্য দাবি জানায়নি। কিন্তু আগ বাড়িয়ে বইটি নিষিদ্ধ করেছে বামপন্থী সরকার। এই বই নিষিদ্ধের পর ভারতীয় উপমহাদেশে আমার জীবন পুরোপুরিই পাল্টে গেছে। কারণ বামপন্থী সরকার আমাকে ‘ইসলাম বিরোধী’ আখ্যা দিয়ে মুসলিম মৌলবাদীদের হাতে তুলে দিয়েছে একটি অস্ত্র। সেই অস্ত্র আজও মৌলবাদীরা ব্যবহার করছে, এবং তারা ব্যবহার করছে বলেই ভারতবর্ষের অন্যান্য রাজনৈতিক দলও সেই অস্ত্র ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে। মুসলিম মৌলবাদীদের সঙ্গে ভারতবর্ষের ভোটরাজনীতির যোগ ভারতবর্ষের জন্ম থেকেই (১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, বাংলাদেশ প্রতিদিন)।

একদমই সঠিক বিশ্লেষণ। এই বামাতীরা ইসলাম সমালোচনাকারী লেখকদের নাম দিয়েছে ‘ইসলাম বিদ্বেষী’। এরা নাস্তিক লেখকদের মৃত্যুর জন্য তাদের লেখাকে দায়ী করেছে। নাস্তিকতা বিষয়ক লেখালেখিকে এরা ‘ইসলাম বিদ্বেষী’ আখ্যা দিয়ে ইসলাম ধর্মে সমালোচনা বন্ধ করতে চেয়েছে। সাম্রাজ্যবাদীদের বিরোধীতা করতে গিয়ে হামাস, লস্করের মত জিহাদীদের পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে। বিশ্বের যে কোন প্রান্তে বোমা ফুটলে এরা কাছা দিয়ে সেই জিহাদী ভাইটি কিংবা বোনটির হয়ে লড়ে যায়। জঙ্গিটি যে সেই দেশগুলোর কলোনিয়ান যুগের অত্যাচারের প্রতিশোধ নিয়েছে, এসবের জন্য যে পশ্চিমাদের উপনিবেশই দায়ী… এই সব ত্যানা প্যাঁচিয়ে লম্বা করতে থাকবে। বামাতী যদি মুসলিম ব্যাকগ্রাউন্ড হয়ে থাকে তাহলে সে নিশ্চিত করেই ছুপা মুসলিম জাতীয়তাবাদী। ইসলাম ধর্ম নিয়ে লেখালেখিতে সে কেবল ভারসাম্য চায়। অন্যান্য ধর্মেও জিহাদ আছে, অন্যান্য ধর্মেও মুহাম্মদ আছে এসব বলতে হবে। খালি ইসলাম নিয়ে যে লেখে সে সহি নাস্তিক নহে…!

আপনি এমন একটা প্রবাসী বামাতী পাবেন না যে কমিউনিস্ট কোন দেশে গিয়ে ঘাটি গেড়েছে। এদের সবার প্রথম চয়েজ সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা ইউরোপ। এসব জায়গায় বসে টাকিলা খেয়ে বিপ্লবের ছিড়া খ্যাতায় শুয়ে লাখ টাকার সমাজতন্ত্রের গান গায়! বাংলা ভাষার নাস্তিক্যবাদী লেখালেখিকে বিতর্কিত করে তোলতে, ধর্ম বিষয়ক নাস্তিক লেখকদের বিতর্কিত করতে এরা পরিকল্পিকভাবে অবস্থান নিয়েছে। বামাতীদের ইসলাম প্রেম নতুন নয়। আমাদের ব্লগ যুগেই এসব কারণে এদের ‘বামাতী’ ‘লালছাগু’ ‘বামসৈল্লামিক’ ইত্যাদি নামে নাস্তিকরা ক্ষ্যাপিয়েছে। এরা কিছুতে ইসলামের সাম্রাজ্যবাদকে স্বীকার করবে না। দরকার পড়লে এরা জিহাদ আর মুসলিম শাসনকে, দ্বিজাতি তত্ত্বকে, দেশভাগকে, খিলাফত আন্দোলনকে মুসলমানদের সাম্রাজ্যবাদী হিন্দুদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ বলতেও দ্বিধা করবে না…!