জাকির_নায়েক_ও_রবিশঙ্করের_তথাকথিত_বিতর্কের_মূল_রহস্যটা_আসলে_কী ?

#জাকির_নায়েক_ও_রবিশঙ্করের_তথাকথিত_বিতর্কের_মূল_রহস্যটা_আসলে_কী ?

জাকির নায়েকের চাপাতি টিভি, চাপাতি টিভি এজন্যই বললাম যে, জাকিরের টিভির নাম তো পিস টিভি, আর পিস মানে শান্তি, কিন্তু মুসলমানরা শান্তি বলতেই তো বোঝে তরোয়াল-চাপাতির মাধ্যমে অর্জিত শান্তি, এজন্যই বললাম চাপাতি টিভি।

এখানে একটা প্রশ্ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, ইসলাম মানে যদি শান্তি হয়, তাহলে ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বললে, মুসলমানরা ক্ষেপে যায় কেনো বা চাপাতি দিয়ে কোপাতে চায় কেনো ? কেনো ওরা শান্তি পূর্ণ পদ্ধতিতে আলোচনায় বসে না ? মুসলমানদের রাগ আর সন্ত্রাস কি এটা প্রমান করে যে, ওদের ধর্মের নাম বা ধর্মের বিষয় শান্তি ?

যা হোক, ফিরে যাই মুল আলোচনায়। জাকিরের পিস টিভিতে, রবিশঙ্কর এবং জাকির নায়েকের একটি একটা অনুষ্ঠান খুব ঘটা করে প্রচার করা হতো, যাতে রবিশঙ্কর পরাজিত নয়, বিব্রত হয়। আর এটা নিয়ে মুসলমানরা এটা প্রচার করে বা প্রমান করার চেষ্টা করে যে, যেহেতু রবিশঙ্কর জাকির নায়েকের কাছে পরাজিত হয়েছে, সেহেতু হিন্দুধর্মের চেয়ে ইসলাম শ্রেষ্ঠ ধর্ম এবং হিন্দুদের উচিত, হিন্দুধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণ করে ফেলা।

যেসব হিন্দু বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে ভেবে দেখে নি, তারাও এই সংশয়ে থাকে যে, সত্যিই মনে হয়, ইসলাম, হিন্দুধর্মের চেয়ে শ্রেষ্ঠ, না হলে রবিশঙ্কর জাকির নায়েকের কাছে পরাজিত হলো কেনো ?

প্রত্যেকটি মুসলমানের আজীবনের একটি লালিত স্বপ্ন হলো- কোনো একজন অমুসলিমকে মুসলমান বানানো, তাহলে তারা নাকি বিনা বিচারে বেহেশতে যেতে পারবে। আর বেহেশতে গিয়ে তাদের একমাত্র কাজ হলো ৭২ হুর নিয়ে যৌনলীলায় মেতে থাকা, যদিও মেয়েদের জন্য এরকম কোনো ব্যবস্থা নেই এবং এই একটি কারণেই মুসলমানরা প্রাণপাত করে ইসলাম পালন করে, বোঝেন ইসলাম কত মহান ধর্ম!

যা হোক, জাকিরের এই পিস টিভি খোলার পেছনে উদ্দেশ্যও ছিলো এই এক, ইসলাম প্রচারের আড়ালে ধর্মান্তর করা; এখন যেহেতু ঘাড়ে তলোয়ার ধরে বলার যুগ নাই যে ইসলাম গ্রহণ কর, না হলে মৃত্যু; তাই মুসলমানরা বেছে নিয়েছে ব্রেইন ওয়াশ থিয়োরি, এতে বছরে যদি একজন করেও অমুসলিম ধোকায় প’ড়ে বিভ্রান্ত হ’য়ে, ইসলাম গ্রহন করে, তবুও তো ইসলামের লাভ।

জাকিরের কাজ যেহেতু ভারতীয় উপমহাদেশে এবং এখানকার বেশিরভাগ মানুষ হিন্দু ধর্মাবলম্বী, তাই জাকিরের টার্গেট হলো হিন্দুরা এবং হিন্দুদের ব্রেইন ওয়াশের জন্য তার থিয়োরি হলো- কল্কি অবতারই মুহম্মদ, বেদ পুরানে আল্লা মুহম্মদের নাম আছে, রবিশঙ্করের ডিবেট, ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি।

“কল্কি অবতার ই মুহম্মদ” এবং “বেদ পুরানে আল্লা মুহম্মদ” বিষয়ে আমার আলাদা দুটি পোস্ট আছে, তাই আজকে শুধু রবিশঙ্করের ডিবেট নিয়েই কথা বলবো।

ভারত এবং ভারতের বাইরে শত শত মানুষ জাকিরকে চ্যালেঞ্জ দিয়েছে, তাদের সাথে তর্ক বির্তকে বসার জন্য, জাকির তাদের চ্যালেঞ্জ গ্রহন করে নি। কিন্তু কেনো ? তার ভয় কিসের ?
আমি যদি সত্য হই, পৃথিবীর সকল জায়গাতেই আমি নিজেকে সত্য বলে প্রমান করতে পারবো; তাহলে সকলের চ্যালেঞ্জ গ্রহন করতে আমার অসুবিধা কোথায় ? আমি তো আমার অনেক পোস্টে খোলা খুলি এই চ্যালেঞ্জ দিই যে, আমার পোস্টের জবাব কেউ যদি যুক্তিসঙ্গতভাবে দিতে পারে আমি ইসলাম গ্রহণ করে মুসলমান হয়ে যাবো, কেউ তো আমার চ্যালেঞ্জ গ্রহন করে না। আমি এই চ্যালেঞ্জ দিতে পারি, কারণ, আমি জানি সত্যটা কী এবং তা কোথায় ? তাহলে জাকির, সকলের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে না কেনো ?

অনেকে আমাকে জাকিরের সাথে ডিবেটে যেতে বলে, কিন্তু মুসলমানরা যেহেতু হিংস্র জাতি এবং যেহেতু তারা ইসলামের বিরুদ্ধে কোনো যুক্তি বোঝে না বা তা মেনে নিতে পারে না বা শুনতেই চায় না, তাই মুসলমানদের সাথে তর্কে জেতা অসম্ভব; যদিও বা আপনি কাউকে তর্কে পরাজিত করেন, সে সেই অপমানের প্রতিশোধ নিতে, নবীর নামে কটূক্তি করেছে ব’লে আপনার উপর চাপাতি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে বা দল বল নিয়ে এসে আপনার বাড়িতে হামলা করবে বা বাড়ি জ্বালিয়ে দেবে বা গ্রাম জ্বালিয়ে দেবে। ফলে শেষ পর্যন্ত জয় হবে মুসলমানদেরই। তাই মুসলমানদের সাথে ফেস টু ফেস বিতর্কে যাওয়া অসম্ভব; কারণ, আপনি যত বড়ই জ্ঞানী বা শক্তিশালী হোন না কেনো, আপনাকে এটা মাথায় রাখতে হবে যে, একজন মূর্খ মুসলমানের একটি চাপাতির কাছে আপনি অসহায়, যেটা আমি সব সময় মাথায় রাখি।

উপরের এই পদ্ধতির জন্য, ইন্টারনেট আবিষ্কারের আগে পর্যন্ত মুসলমানদের প্রচার ছিলো একতরফা; কারণ, তারা যা বলেছে, তার বিরুদ্ধে মুখ খোলার কোনো উপায় ছিলো না। শেষ পর্যন্ত ইন্টারনেট এবং ফেসবুক, সেই দুঃসহ অবস্থা থেকে পৃথিবীর মানুষকে মুক্তি দিয়েছে। মুসলমানরা মাঝে মাঝেই ইসলামের বিরুদ্ধে ইহুদি নাসারাদের ষড়যন্ত্রের কথা বলে, যদি ইসলামের বিরুদ্ধে তাদের কোনো ষড়যন্ত্র থেকেই থাকে, তা হলো এই ইন্টারনেট এবং ফেসবুক আবিষ্কার এবং আমার হিসেবে এটাই হলো ইসলামের বিরুদ্ধে তাদের সবচেয়ে বড় যড়যন্ত্র; যার মজা এখন মুসলমানরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।

আমি এত ইসলামের বিরুদ্ধে লিখি এবং মুসলমানদের চ্যালেঞ্জ দিই সেগুলোর জবাব দিয়ে আমাকে মুসলমান বানানোর জন্য, কিন্তু এখন পর্যন্ত এক হারামজাদাও আমাকে মুসলমান বানানোর জন্য জবাব দিতে এগিয়ে এলো না, যোগ্য জবাবের পরিবর্তে তারা যা দেয় তা হলো ইনবক্সে বা কমেন্টে গালি গালাজ; যেগুলোকে আমি রাস্তার বেওয়ারিশ কুকুরের ঘেউ ঘেউ বলেই মনে করি এবং যেগুলোকে আমি আমার বাল দিয়েও গুরুত্ব দিই না।

যা হোক, ইউটিউবে একটি ভিডিও পাওয়া যায়, ৫ মিনিটে ২৫ মিথ্যা নামে, এতে জাকির নায়েকের একটি ৫ মিনিটের বক্তব্যে, সে যে ২৫ টি মিথ্যে তত্ত্ব দিয়েছে, সেই পোস্টমর্টেম করা হয়েছে। এরা জাকির নায়েককে ওপেন চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলো, তাদের সাথে বিতর্ক করার জন্য, কিন্তু জাকির তা গ্রহণ না করায়, তারা ওর ঐ বক্তব্যের পোস্টমর্টেম করে ইউটিউবে ছাড়ে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, জাকিরের এত চ্যালেঞ্জকারী থাকতে সবাইকে বাদ দিয়ে জাকির তার টিভিতে রবিশঙ্করক নিয়ে এলো কেনো ? রবিশঙ্কর যে জাকিরকে কোনো দিন চ্যালেঞ্জ করেছিলো, এমন কি কেউ কোনোদিন শুনেছেন ? শুনেন নি। তাহলে পিসটিভিতে রবিশঙ্কর কেনো ?

বাংলাদেশে অনেক ব্যক্তিমালিকানাধীন টিভি চ্যানেল আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত মালিক হচ্ছে, এটিএন বাংলার মালিক মাহফুজুর রহমান। অন্য চ্যানেলগুলোর মালিক কে বা কারা এটা দেশের ৯৫% মানুষ না জানলেও, দেশের ৯৫% মানুষ, যারা নিয়মিত টিভি দেখে, তারা জানে যে, এটিএন বাংলার মালিক মাহফুজুর রহমান। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই মাহফুজুর রহমান, তার চ্যানেলে কি এমন কোনো অনুষ্ঠান দেখাবে, যাতে তার ইমেজ খারাপ হয় ? আপনাদের কমনসেন্স কী বলে, দেখাবে ? দেখাবে না ? তাহলে জাকির নায়েক, তার নিজস্ব টিভি চ্যানেলে এমন কোনো প্রোগ্রাম কেনো দেখাবে, যাতে সে কারো কাছ পরাজিত হয় ?

তাছাড়া পিস টিভিতে বিতর্কমূলক কোনো অনুষ্ঠান কিন্তু লাইভ দেখানো হয় না; তার মানে, এডিট করে, কেটে ছেঁটে সে সব অনুষ্ঠানই দেখানো হয়, যাতে জাকির নায়েকের মান বজায় থাকে এবং সে সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া ই দেখানো হয়, যাতে জাকিরের জবাব যুক্তিসঙ্গত বলে মনে হয়। পিস টিভিতে রবিশঙ্করের অনুষ্ঠান দেখানো হয়েছে এজন্যই যে, সেই অনুষ্ঠানে রবিশঙ্কর আপাতদৃষ্টিতে পরাজিত হয়েছে, যদি জাকির নায়েক পরাজিত হতো, তাহলে সেটা কি তারা দেখিয়ে ইসলামের বারোটা বাজাতো ? এই ব্যাপারটি পরিষ্কারভাবে বোঝে না বলেই অনেক হিন্দু রবিশঙ্করের ব্যাপারটি নিয়ে হীনম্মন্যতায় ভোগে এবং তাদের মনে হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে সন্দেহের সৃষ্টি হয়, হিন্দুদের মনে যে সন্দেহটি সৃষ্টি করা শুধু জাকির নায়েক কেনো, সব মুসলমানদের মরণপণ জিহাদী উদ্দেশ্য।

তাছাড়া, কে এই রবিশঙ্কর ? সে কি হিন্দুদের মনোনীত কোনো ব্যক্তি, যাকে হিন্দুরা জাকিরের সাথে ডিবেট করতে পাঠিয়েছে ? দেখে নিন উইকিপিডিয়াতে তার সম্পর্কে কী বলা হয়েছে ?

“রবি শঙ্কর, যিনি সাধারণত শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর নামে পরিচিত, হলেন ভারতের একজন আধ্যাত্মিক নেতা যিনি ১৩ মে ১৯৫৬ সালে তামিলনাড়ুতে জন্মগ্রহণ করেন। তাকে শ্রী শ্রী উপাধিতে বা গুরুদেব বা গুরুজি নামেও ডাকা হয়। ১৯৮১ সালে তিনি আর্ট অব লিভিং ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন, যার মূল লক্ষ্য হল মানুষের ব্যক্তিগত মনোদৈহিক চাপ, সামাজিক সমস্যা এবং সহিংসতা দূর করা।“

এছাড়াও Art of living পৃথিবীর বৃহত্তম একটি “হিউমেনিটারিয়ান & এডুকেশনাল এনজিও” এর প্রতিষ্ঠাতা রবিশঙ্কর একজন যোগ বিশেষজ্ঞ এবং পতঞ্জলি যোগসূত্র দ্বারা উদ্বুদ্ধ একজন দার্শনিক নেতা। বজ্রাসন ও সুখাসন এর মাধ্যমে কৃত সূদর্শন ক্রিয়া এর একজন অনন্য পরিচালক তিনি যার মাধ্যমে তিনি পৃথিবীতে বিদ্যমান হানাহানি ও মূল্যবোধের অবক্ষয় এর অবসান ঘটাতে চান। তিনি কখনোই একজন হিন্দুধর্ম বিশারদ নন এবং একজন বেদজ্ঞানী তো নন বটেই!

যার উদ্দেশ্যই হলো পৃথিবীর হানাহানি বন্ধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা, সে যাবে জাকিরের সাথে তর্ক বিতর্ক করতে! যেখানে তর্ক বিতর্কই হলো সকল অশান্তির মূল ? এছাড়াও এই তথ্যগুলো থেকে কি এটা প্রমান হচ্ছে যে, তিনি হিন্দুদের কোনো ধর্মগুরু ? তাহলে তার জয় বা পরাজয় নিয়ে হিন্দুদের এত মনোব্যথার কী আছে ?

এবার দেখুন, কোন প্রেক্ষাপটে জাকিরের পিস টিভি সেই ভিডিওটি তৈরি করেছিলো ?
রবিশঙ্কর যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলো, সেটা ছিলো “Concept of GOD in Hinduism & Islam” শীর্ষক একটি আলোচনা সভা, এটা মোটেই পূর্ব ঘোষিত কোনো বিতর্ক সভা নয়। রবিশঙ্কর সেখানে গিয়েছিলেন নিজে থেকেই কোনো হিন্দু ধর্মীয় সংগঠন বা হিন্দুদের পক্ষ থেকে নয়। কিন্তু ধূর্ত জাকির পুর্ব প্রস্তুতি অনুযায়ী সেখানে কাদিয়ানী লেখক মাওলানা আব্দুল্লা হক বিদ্যার্থীর বই থেকে হুবহু তোতা পাখির মতো কিছু মুখস্ত উদ্ধৃতি দেয় যে পবিত্র বেদ এ মোহাম্মদ এর কথা বলা আছে এবং ভবিষ্য পুরানেও মোহাম্মদ এর কথা বলা আছে। একজন ব্যক্তি যিনি কোনো বিতর্কের জন্য প্রস্তুত হয়ে যান নি বা তার সেই বিষয় নিয়ে বিতর্ক করার ইচ্ছা আছে কিনা সেটাও সন্দেহ, তাকে হঠাৎ করে বেদের খুঁটি নাটি বিষয়ে প্রশ্ন করলে সে বিব্রত হবে না তো কী হবে ?

ধান্ধাবাজ জাকিরের এই ভিডিও নিয়ে মুসলমানরা জোর গলায় বলে,

“জাকির নায়েক তো হিন্দুদের গুরু শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর এর সাথে বিতর্ক করেছে এবং জয়লাভ করেছে। রবিশঙ্কর তো আপনাদের চেয়ে বেশী জানেন। উনি যখন জাকির নায়েকের ভূল দেখাতে পারেনি তো আপনারা কে ?”

জাকির নায়েক, রবিশঙ্করের সাথে কী ধরণের তর্ক বিতর্ক করেছে এবং কোন সিচুয়েশনে করেছে, আশা করছি, উপরের বর্ণণায় তা বুঝতে পেরেছেন, তাই এটা নিয়ে আর বলার কিছু নেই।

এরপর মুসলমানদের তথ্য হলো-

“রবিশঙ্কর তো আপনাদের চেয়ে বেশি জানেন।”

রবিশঙ্কর কতটা জানে, সেটা আপনারা সার্টিফিকেট দিচ্ছেন কেনো ? আপনাদের কী মনে হয়, আমি ইসলাম ও হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে কম জানি ? আপনারা আমার কথার জবাব গালিগালাজ ছাড়া অন্য কোনো ভাষায় দেন না কেনো ? ক্ষমতা থাকলে আমার বিরুদ্ধে কলম ধরেন।

মুসলমানদের আরো প্রশ্ন হলো, রবিশঙ্কর যখন জাকির নায়েকের ভূল দেখাতে পারেনি তো আপনারা কে ?”

রবিশঙ্কর কি জাকির নায়েকের ভুল ধরে তার সা্থে ঝাগড়া করতে গিয়েছিলো যে রবিশঙ্কর জাকির নায়েকের ভুল ধরবে ? আর ‘আপনারা’ বলে সব হিন্দুকে আপনাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করাচ্ছেন কেনো ? শুধু Krishna Kumar Das কে, সেই হিসেব করেন; Krishna Kumar Das কে এবং কী জিনিস, তা তো এখনই হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন, অপেক্ষা করেন আরো পেতে থাকবেন।

এছাড়াও মুসলমানদের প্রশ্ন হলো- “জাকির যদি ভুলই হয় তবে হিন্দুধর্মীয় নেতারা তাকে ধরিয়ে দিচ্ছে না কেন ?”

পিস টিভি যখন রবিশঙ্করের এই ভিডিও প্রচার করে, তখন সবাই বুঝতে পারে যে, শান্তিবাদী রবিশঙ্করকে জাকির ফাঁসিয়েছে। এরপর বেদ নিয়ে প্রকৃত বিতর্কের জন্য বিখ্যাত বৈদিক সংগঠন আর্যসমাজ এর পক্ষ থেকে পর পর তিন বার অফিসিয়ালি ইমেইল এর মাধ্যমে IRF এর জাকির নায়েককে বিতর্কের জন্য আহবান জানানো হয়। কিন্তু ভীত ও ধূর্ত নায়েক জানেন যে বিখ্যাত বেদ গবেষনা সংগঠন আর্যসমাজের পন্ডিতগন, যাদের বেদ এর প্রতিটি অক্ষর পর্যন্ত মুখস্থ, তাঁদের সামনে বেদ নিয়ে অপপ্রচার চালানো সম্ভব হবে না, তাই সে কোনো সারা দেয় নি। শেষ পর্যন্ত চতুর্থবার বিতর্কের চ্যলেঞ্জ জানানোর পর IRF এর পক্ষ থেকে মাওলানা আব্দুল্লাহ তারিক কে পাঠানো হয় বিতর্কে অংশগ্রহনের জন্য। তখন আর্য সমাজের পন্ডিত মাহেন্দ্র পাল আর্য, যিনি নিজেও ৩০ বছর আগে ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে হিন্দুধর্মে ধর্মান্তরিত হন, আব্দুল্লাহ তারিককে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করেন। কিন্তু এই বিতর্কটি কি জাকির তার পিস টিভিতে দেখিয়েছ ?

এছাড়াও কথা হল IRF এর অনুষ্ঠানসমূহে জাকির যখন হিন্দুধর্ম সম্পর্কে বিভিন্ন দাবী করেন তখন সেখানে কোন হিন্দুশাস্ত্রবিশারদদের আমন্ত্রন জানানো হয়না কেন ? ইসলামের আবির্ভাবের পর থেকে মুসলমানরা তো সব সময় ফাঁকা মাঠেই গোল দিতে অভ্যস্থ, জাকির সেখান থেকে বের হবে কিভাবে ? জাকিরের যদি সেই সৎসাহস থাকতো বা তার ইসলাম নিয়ে এত আত্মবিশ্বাস থাকতো, তাহলে তার, সকলের চ্যালেঞ্জ গ্রহন করার মতো সৎ সাহস থাকতো।

জাকিরের আরেকটি ভন্ডামীর কথা জেনে রাখেন, তার অনুষ্ঠানে, যে সব লোক ধর্মান্তরিত হতো, সেগুলো সবই ছিলো সাজানো নাটক। জাকিরের পিস টিভি বন্ধ হওয়ার পর তার ব্যক্তিগত ড্রাইভারের কাছ থেকে জানা গেছে এই তথ্য।

শেষের দিকে এসে আরেকটি তথ্য আলোচনা না করেই পারছি না- জাকির, রবিশঙ্করকে যে অনুষ্ঠানে হাজির করেছিলো, তার নাম দিয়েছিলো, “Concept of GOD in Hinduism & Islam”। এখানে খেয়াল করবেন, হিন্দুধর্ম বোঝাতে Hinduism শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। যে সব হিন্দুর “ism” শব্দের মানে জানা নেই, তারা হয়তো বলবেন যে, কেনো এখানে সমস্যাটা কী ? কিন্তু এর মানে বোঝার পর জানতে পারবেন যে, আসলে এর পেছনের গভীর ষড়যন্ত্রটা কী এবং কোথায় ?

‘ইজম’ মানে হলো ব্যক্তিগত মতবাদ, যখন কোনো ব্যক্তি কোনো মতবাদ দেয়, সেই মতবাদ বোঝাতে তার নামের শেষে ইজম ব্যবহার করা হয়, যেমন কার্ল মার্ক্স এর মতবাদের নাম মার্ক্সিজম= মার্ক্স+ইজম। কিন্তু হিন্দু ধর্ম কি কোনো একজনের ব্যক্তিগত মতবাদ, যে জাকির হিন্দু শব্দের সাথে ইজম লাগিয়েছে ? আর হিন্দু কি কোনো একজন ব্যক্তির নাম যে, এর সাথে ইজম যুক্ত হবে ? এই হিন্দুইজম শব্দটি শুধু প্রয়োগের দিক থেকেই ভুল নয়, গঠনের দিক থেকেও ভুল। কিন্তু এখানে জাকিরের উদ্দেশ্য ছিলো হিন্দু ধর্মের বিশালত্বকে ইজম শব্দের মাধ্যমে একটি ক্ষুদ্র গণ্ডীর মধ্যে নিয়ে আসা, ষড়যন্ত্রটা এখানেই। হিন্দুধর্ম বোঝাতে হিন্দু শব্দের সাথে কখনো ইজম শব্দ যুক্ত হবে না; কারণ, হিন্দুধর্ম কোনো একজন ব্যক্তির ইচ্ছা অনিচ্ছার ফল নয়, যেমন একজন ব্যক্তির ইচ্ছা অনিচ্ছার ফল হলো- ইসলাম, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধসহ সকল ব্যক্তিগত ধর্ম, যদিও এগুলোকে এখন ধর্ম বলে চালানো হচ্ছে, আসলে এগুলো ধর্ম নয়, এগুলো এক একটি ব্যক্তিগত মতবাদ।

প্রকৃতির সৃষ্টি যে কোনো কিছুর ধর্ম থাকে, যেমন- ধর্ম আছে আগুন, জল বা লোহার। মানুষ এগুলোর ধর্ম বানাতেও পারে না আবার তার পরিবর্তনও করতে পারে না। ধর্ম বানানো তাই প্রকৃতি নামক ঈশ্বরের কাজ, কোনো মানুষের কাজ নয়। এই সূত্রে প্রকৃতির বিধিবদ্ধ নিয়মের নির্যাস হিসেবে পৃথিবীর মানুষের জন্য একমাত্র ধর্ম হলো সনাতন মানবধর্ম, আর বাকিগুলো কোনো ধর্ম নয়, ওগুলো ব্যক্তিগত মতবাদ।

যা হোক, জাকির ও রবিশঙ্কর প্রসঙ্গে শেষ কথা হলো- জাকিরের সাথে রবিশঙ্করের বিতর্ক বলে যা প্রচার করা হয়, সেটা যে আসলে বিতর্ক নয়, ধান্ধাবাজ জাকির কোম্পানির কৌশলে তোলা আলোচনা চক্রের একটি ভিডিও মাত্র, যাতে অপ্রস্তুত অবস্থায় রবিশঙ্করকে বেদ থেকে কিছু প্রশ্ন করে বিব্রত করা হয়েছে এবং রবিশঙ্কর হিন্দুদের যে কোনো ধর্মগুরুও নয়, বাবা রামদেব এর মতো একজন যোগসাধক মাত্র, তাই জাকিরের সাথে রবিশঙ্করের তথাকথিত পরাজিত হওয়া, আসলে যা পরাজিত হওয়া নয়- আশা করছি সেই সম্পর্কে আমার বন্ধুদের কাছে প্রকৃত সত্যটা উদঘাটন করতে পেরেছি।।

From: Krishna kumar das
                         

Scroll to Top