আকবর দ্যা গ্রেট (প্রকৃত ইতিহাস) : [ষোড়শ পর্ব]
(শেয়ার অবশ্যই করবেন)
আকবর ও তার নবরত্নঃ
পূর্বের পর…
(৮) মোল্লা-দো-পেঁয়াজা:- গোস্ত আর পেঁয়াজ দিয়ে তৈরি দো-পেঁয়াজা খায় নি এমন মুসলমান হয়তো উপমহাদেশে খুঁজে পাওয়া যাবে না। হ্যাঁ, এই দো-পেঁয়াজার আবিষ্কর্তা ‘আবদুল মোমিন’-ই ছিল জেহাদি আকবরের রাজসভার অষ্টম রত্ন। ১৫৫১ সালে মধ্যপ্রদেশের হাণ্ডিয়া বস্তিতে জন্মগ্রহণ করে আবদুল মোমিন। তার আব্বা বস্তির বাচ্চাদের কোরান পড়িয়ে খুব কষ্টে সংসার চালাতো, তাই ছোট থেকেই আবদুলের খুব বড়োলোক হবার শখ ছিল। আরবি শিক্ষা শেষে ১৫৭০ সালে হজ্জ করবার উদ্দেশ্যে মোল্লাদের দলে ভিড়ে ইরান চলে যায় সে। সেখানে গিয়ে জেহাদি ইসলামের পাঠ নিতে নিতে সে পারসিক ভাষায় ও ইসলামিক দর্শনে পাণ্ডিত্য অর্জন করে। প্রায় ১২ বছর পর ১৫৮২ সালে আগ্রাতে ফিরে নিরক্ষর আকবরের রাজসভায় নিজের ভাগ্য পরীক্ষা করতে যান। আকবর জ্ঞান জাহির করতে পারে এমন কাউকে খুবই সম্মান করতেন। অল্পদিনেই ইরানি রান্না জানার সুবাদে আবদুল আকবরের কসাইখানার দায়িত্ব পান। কিন্তু ধীরে ধীরে পারস্যের জেহাদি ইসলামী দর্শন শিক্ষা আবদুলকে আকবরের আরও কাছে নিয়ে আসে এবং আবদুল মোঘল লাইব্রেরির দায়িত্বও পান। এখান থেকেই শুরু হয় মোল্লা দো পেঁয়াজার আকবর ও বীরবলকে নিয়ে নানান রসালো গল্প রচনা, এমনকি নিজেকে নিয়েও হাজারো চাতুকারিতা পূর্ণ গল্প বাজারে ছেড়ে দেয় সে। অল্পদিনেই বিখ্যাত হয়ে মোঘল রাজসভায় স্থান হয় তার। পারস্য সহ সকল ইসলামী দেশে কাফেরদের সঙ্গে কিরকম ব্যবহার করা হয় তা আকবরের রাজসভায় জানতেন একমাত্র বিদেশ ঘোরা হাজি মোল্লা দো পেঁয়াজা। সে অল্পদিনেই বিশ্বজুড়ে জেহাদের গল্প শুনিয়ে হিন্দুস্তানে হিন্দুদের ওপর আকবরের নৃশংসতার প্ররোচনাকারীরূপে আকবরের কাছের মানুষ হয়ে ওঠে। ইসলামী দেশে অমুসলিম মেয়েদের যৌনদাসী বানিয়ে কিভাবে হারেমখানা পূর্ণ করে রাখে ইসলামী শাসকরা তা আকবরের কাছে প্রথম তুলে ধরে, ফলে আকবরের হারেমখানা প্রায় ১২ হাজার হিন্দু নারীতে পূর্ণ হয়ে ওঠে। সেই সুবাদে মুঘল হারেমে অবাধ যাতায়াতের পথ প্রশস্ত হয় তার। ১৬২০ সালে এই জেহাদি মোল্লার মৃত্যুর পর নিজের গ্রাম মধ্যপ্রদেশের হাণ্ডিয়াতে কবর দেওয়া হয় তাকে।
(৯) মিয়াঁ তানসেন:- গোয়ালিয়রে বিহাটের এক হিন্দু কবি মুকুন্দ মিস্ত্রীর ঘরে ১৪৯৩ সালে জন্ম হয় রামতনু মিস্ত্রীর। মাত্র ১০ বছরেই বৃন্দাবনের তৎকালীন বিখ্যাত সঙ্গীত শিক্ষক হরিদাস স্বামীর যোগ্য ছাত্র হয়ে উঠেছিল এই রামতনু। বৃন্দাবনেই রামতনুর সঙ্গীতের মূল ভিত রচিত হয়, বিভিন্ন রাগের সুষ্ঠু চর্চার মাধ্যমে তিনি বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পীতে পরিণত হন। মুলতঃ ভক্তিগীতি রামতনুর হাত ধরেই সংস্কৃত ভাষা থেকে ব্রজবুলি এবং হিন্দি ভাষায় প্রবেশ করে। কিন্তু দুর্ভাগ্য বৃন্দাবনের ভক্তিরসের মিষ্টতা রামতনুকে এক অমেরুদণ্ডী কাপুরুষে রূপান্তরিত করেছিল। বাবা মায়ের অকাল মৃত্যুতে যথেষ্ট বড় ২৮ বৎসরের রামতনু ২৮ দিনের বাচ্চার মত দিশেহারা হয়ে যায়, এই সুযোগের সম্পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে সাত্তারি’র সূফী গায়ক মোহাম্মদ ঘাউস। সূফীইজম্ ভারতে এসেছিল প্রকৃতপক্ষে কৃষ্ণ ভক্তিরসপ্রিয় হিন্দুদের বোকা বানিয়ে আল্লাভক্ত দাসে পরিণত করার জন্যে। মোহাম্মদ ঘাউস রামতনুকে নিজের সঙ্গে আমেদাবাদের ‘এক তোরা মসজিদে’ নিয়ে আসেন এবং সূফী ঘরানার সঙ্গীতের সঙ্গে পরিচয় করান। সঙ্গে চলতে থাকে সূফী সাধকদের চিরাচরিত ইসলামের ছত্রছায়ায় আনার জন্যে ব্রেনওয়াসের কাজ। অচিরেই নানান তুকতাক এবং মস্তিষ্ক প্রক্ষালনের ফলে রামতনু ইসলাম গ্রহণ করে মিয়াঁ তানসেন নামে পরিচিত হয়…
(চলবে)
( সৌজন্যেঃ Writankar Das… )