বাঙলার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।

বাঙলার সংক্ষিপ্ত ইতিহাসঃ-
~~~~~~~~~~~~~~~~~

১৯০৫ সালে ভারতের বড়লাট কর্জন সাহেব বাঙালীর বাসভূমি অর্থাৎ বাঙালীস্তানকে কেটে দু’টুকরো করে দিয়েছিল ৷
•এক অংশের নাম পূর্ববঙ্গ ও অসম প্রদেশ,রাজধানী হ’ল ঢাকা,
•অপরাংশের নাম পশ্চিমবঙ্গ (Bengal) রাজধানী থেকে গেল কলকাতাতেই ৷

পূর্ববঙ্গ ও অসমের প্রদেশ ছিল—
ক)উত্তর বাঙলাঃ রাজসাহী,পাবনা,বগুড়া, দিনাজপুর,রঙপুর
জলপাইগুড়ি ও উত্তর-পূর্ব রঙপুর(ধুবড়ি)
খ)পূর্ব বাঙলাঃ  মৈয়মনসিং,ঢাকা,ফরিদপুর,বাখরগঞ্জ, ব্রিটিশ ত্রিপুরা,(কুমিল্লা),নোয়াখালি চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম,সিলেট,কাছাড় ৷
  গ)পূর্ব ভারতের পার্বত্য অংশঃ গারো পাহাড়(এটি আগে মৈমনসিংহের সুষঙ্গ রাজাদের জমিদারীতে ছিল ৷রাজারা ছিলেন বাঙ্গালী বারেন্দ্র শ্রেণীর),খাসি পাহার (অনেক গুলি ছোট ছোট দেশীয় রাজ্য নিয়ে গঠিত ছিল ৷ তারই মধ্যে একটি ছিল মিলিয়েম রাজ্য ৷ শিলং শহরটি ছিল তাতেই, জয়ন্তিয়া পাহাড়, মিকির পাহাড়,নাগা পাহাড় (নাগাল্যাণ্ড),লুসাই পাহাড় (মিজোরাম) ৷
ঘ) অসমঃ  কামরূপ,দরং,শিবসাগর,নগাঁও, উত্তর লখিমপুর ও বালিয়াপাড়া সীমান্ত জেলা (পরবত্তীকালে নেফা, আরও পরবত্তীকালে
অরুণাচল) ৷

বাঙলা(Bengal) অংশে রইল–
ক) পশ্চিম বাঙলাঃ বর্দ্ধমান,বীরভূম,বাঁকুড়া,হুগলী,হাওড়া,মেদিনীপুর,মুর্শিদাবাদ,নদীয়া,যশর,খুলনা,চব্বিশ পরগণা,কলিকাতা,মানভূম,সিংভূম,সাঁওতাল পরগণা,মালদা,দার্জিলিং ও পূর্ণিয়া ৷
খ) বিহারঃ  ভাগলপুর,মুঙ্গের,তিরহুত (দ্বারভাঙ্গা ও মুজাফ.ফরপুর),চম্পারণ (মোতিহারি),সারণ (ছাপরা), সাহাবাদ (আরা),পটনা ও গয়া ৷
গ) চুটিয়া-নাগপুরঃ চুটিয়া নাগপুর (রাঁচী),পলামু (ডাল্টনগঞ্জ),হাজারীবাগ।
  ঘ)ওড়িষ্যাঃ  কটক,পুরী,বালেশ্বর,অঙ্গুল-খোন্দমহল ও সম্বলপুর ৷

বাঙলার মানুষ এই বিভাজন মেনে নেননি ৷ তাঁরা দুই বাঙলাকে মেলাবার জন্যে জোরদার আন্দোলন শুরু করে দিলেন ৷ বলতে পারা যায় এই অান্দোলনের মাধ্যমে সূত্রপাত হয়েছিল ভারতে স্বাধীনতা সংগ্রাম ৷ দুই বাঙলাকে এক করাই ছিল তাদের মূখ্য উদ্দেশ্য ৷
তবে সেই আন্দোলন কিছু দিন চলার পরে বাঙলাকে জোড়া লাগাবার সঙ্গে সঙ্গে ভারতকে বহিঃশত্রুর কবল থেকে মুক্ত করার ইচ্ছাও জেগে উঠেছিল ৷তাই সেই সময়টাকে বলতে পারি স্বাধীনতা স্পৃহার বীজের অঙ্কুরোদগমের অবস্থা ৷
সেই সময়ে পূর্ববঙ্গ ও অসম প্রদেশের শাসকেরা আন্দোলন দমন করবার জন্যে ক্ষ্যাপা কুকুরের মত কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল ৷তাদের এই নিপীড়ণ ও নির্যাতন বাঙলার মানুষের মধ্যে এক ধরণের নিরুপায় সন্ত্রাসবাদ(terrorism as an effect of helplessness complex)
জেগে উঠেছিল ৷ এ ধরণের অত্যাচার বাঙলায়(Bengal)তেমন হয়নি তাই
সন্ত্রাসবাদও এই দিকটায় তেমন মাথা চাড়া দেয়নি ৷
আজ ভাবতে কেমন লাগে যে সেদিন প্রকাশ্যে ‘বন্দেমাতরম্ ‘ শব্দটি উচ্চারণ করাও নিষিদ্ধ ছিল ৷প্রকাশ্যে ‘বন্দেমাতরম’ ধ্বনি দেবার অপরাধে বরিশালে পুলিশ বাঙালী ছেলেদের মাথা ফাটিয়ে মেরেছিল ৷আর যারা মরেনি তাদের জেলে পুরেছিল  ৷

   “একদিন যে বাঙালী দুই বাঙলাকে এক করবার জন্যে সমস্ত শক্তি নিয়ে লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সেই বাঙালীই আবার বাঙলাকে দু’টুকরো করবার জন্যে ১৯৪৭ সালে ইংরেজের কাছে দরবার করেছিল।”
১৯১২* সালে যখন দুই বাঙলা এক হয়েছিল তখন বাঙালী ভেবেছিল তারা লড়াইয়ে জয়ী হয়েছে ৷ আর ১৯৪৭ সালে যখন বাঙলা দু’টুকরো হ’ল তখনও বাঙালী ভেবেছিল তারা জয়ী হয়েছে ৷ ইতিহাসের কি বিয়োগান্ত নাটক ( ট্রাজেডী )৷
১৯১২ সালে দুই বাঙলা যখন এক হয়েছিল তখন বাঙালীস্তানের অনেকটা অংশকে বাঙলার বাইরে রেখে দেওয়া হয়েছিল কেন, তা ইতিহাসই বলতে পারবে !

(তথ্য সূত্র:  প্রভাতরঞ্জনের গল্প সঞ্চয়ন ,ষষ্ঠ খণ্ড, শ্রী প্রভাত রঞ্জন সরকার )
সম্পাদনায়ঃ শ্রী সঞ্জিৎ মণ্ডল ( Sanjit Mondal)  ও অনন্যা সেনগুপ্ত।