ইবনে সিনা পরকালে অবিশ্বাসী ছিলেন। ইসলামে জ্বিন ত্বত।

যে ভিডিওটা আপনাদের দেখিয়েছিলাম অন্য পোস্টে এক হুজুর জ্বিনদের মাহফিলে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি অবলীলায় দাবী করছেন জ্বিনরা তাকে এক দৌড়ে কোলকাতা থেকে নবরত্ম তেল এনে দিয়েছিলো। এসব ওয়াজে কেবল অশিক্ষিত লোকজন বসে থাকে না। ডিসি এসপি থেকে ঝানু উকিল, কলেজের ফিজিক্সের প্রফেসর পর্যন্ত মাথায় টুপি দিয়ে বসে থাকে। জ্বিন নামের অদৃশ্য এক প্রাণী, যে নানা রকম প্রাণীর ছুল ধরতে পারে এমন একটি অতিপ্রাকৃত জিনিসে বিশ্বাস করা ইসলামের অন্যতম ঈমানের স্তম্ভ। কুরআন বলছে, আমি জ্বিন ও মানুষকে আমার এবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছি। পৃথিবীতে খালি চোখে দেখা যায় না এমন প্রাণীর নাম ব্যাকটেরিয়া ভাইরাস। এদের বিজ্ঞান খুঁজে বের করেছে অনুবিক্ষণ যন্ত্র আবিস্কার করে। জ্বিনদের যেহেতু মানুষের মত বিচার হবে, তাদের দোষ ত্রুটি আছে, তাদের মধ্যে নেকি ও পাপি আছে। তাহলে মানুষ কেন তাদের কোন খোঁজ পাবে না? মহাকাশে গ্যালাক্সির পর গ্যালাক্সি সন্ধান আমরা পেয়েছি। ব্লকহোলের ছবি সমানেই দেখতে পাবো। তাহলে ‘পরীস্থান’ নামের কোন স্থান কেন আজতক দাড়িঅলা পাগরিঅলা লোকজন ছাড়া কেউ সন্ধান পেলো না? আমরা কেউ আল্লাহকে দেখতে চাইছি না। চাইছি আমাদের মত একটা প্রাণীকে যাদের আগুন থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। কত হুজুর নাকি জ্বিনের সঙ্গে মানুষের বিয়ে পড়িয়েছেন। তাহলে নাশার রাডার কেন জ্বিনদের ধরতে পারল না আজ পর্যন্ত? ইবনে সিনার নাম শুনেনি এমন মুসলমান জন্ম নেয়নি। কারণ সিনা একজন মুসলমান এবং তথাকথিত ‘মুসলিম বিজ্ঞানী’ বলতে যে দুই-চারজন পৃথিবীতে ছিলো সিনা তাদের একজন। সেই ইবনে সিনা জ্বিনদের অস্তিত্বকে অস্বীকার করেছিলেন বলে আলেমরা তার উপর ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে কাফের ঘোষণা করে এবং বাদশাহকে এর উপযুক্ত সাজা দিতে চাপ দিতে থাকে। ইবনে সিনা কুরআনের অনেক বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত করে তার বৈজ্ঞানিক মতামত দেয়াতে দেশান্তরিত হতে বাধ্য হয়। ইমাম গাজ্জালি তার বিরুদ্ধে ধর্মদ্রোহীর ফতোয়া দিয়েছিলেন কারণ ইবনে সিনা পরকালে অবিশ্বাসী ছিলেন। অর্থ্যাৎ মৃত্যুর পর পুনরুত্থানে অবিশ্বাসী ছিলেন।

যাই হোক, ইবনে সিনার চেয়ে আমাদের বর্তমান ডক্টর শমসের আলী নিশ্চয় অনেক বেশি জ্ঞানী, না হলে তিনি কেমন করে ইসলামকে একটা বৈজ্ঞানিক ধর্ম বলে ঘোষণা করেন? এখানে শয়তান ও জ্বিনদের মত অতিপ্রাকৃত বর্ণনা কেমন করে একজন পদার্থ বিজ্ঞানী গ্রহণ করেন ভেবে বিস্মিত হতে হয়। পশ্চিমা বহু বামপন্থি ইসলামকে অন্যান্য ধর্মের চেয়ে আধুনিক বলেছিলেন সেটা কি দেখে নাকি ধান্দাবাজী রাজনৈতিক কোন লক্ষ্যের উদ্দেশ্যে জানি না। আমরা শুধু এটুকু বলতে পারি যখন আপনি ঈশ্বর ভগবান আল্লাহ নামের কুসংস্কারে একবার আস্থা রাখবেন তখন আপনাকে তার নামে সব কিছুই বিশ্বাস করতে হবে। যদি শুনেন মাদ্রাসার কোন বাচ্চাকে জ্বিনরা মেরে গলা দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে রেখেছে- সেটাই আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে। যদি শুনেন কোন মহিরাকে জ্বিনে ধরেছে আপনি সেটাই বিশ্বাস করবেন হোন আপনি ডাক্তার! মাথায় টুপি দিয়ে নামাজে যাওয়া মেডিকেলের ছাত্ররা ‘জ্বিনে ধরা’ বিষয়ে কেমন করে তাদের মেডিক্যাল সায়েন্সকে ব্যালেন্স করেন জানতে খুব আগ্রহী।

এবার আসল কথায় আসি। আপনি আমি যতই অবাক হই যে, হুজুর এক আসর ভর্তি মানুষের সামনে জ্বিনদের মাহফিলে যোগ দেয়ার গল্প বলল কোন সাহসে? এতখানি গাঁজাখুড়ি গল্প লোকজন বিনাবাক্যে মেনেও নিলো কিভাবে? এটাই পৃথিবীর প্রাচীন একটি মানবিক দিক তা হচ্ছে ‘বিশ্বাস’। বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর…। এটি জঘন্নতম একটি দার্শনিক মতবাদ যা মানুষকে কুসংস্কারচ্ছন্ন করে রাখে। জ্বিনদের মাহফিলে যোগ দেয়া হুজুরের ওয়াজ, কিংবা দেওয়ানবাগী হুজুরের দরবারে আল্লার মিছিল করা তাদের ভক্তরা চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করেই শুধু না, উল্টো যারা অবিশ্বাস করে তাদের চ্যালেঞ্জ জানায় মিথ্যা হলে প্রমাণ করে দেখান। যা নেই তা কি করে প্রমাণ করে দেখানো যায়? বরং যারা মনে করেন আছে তারাই তো সেটা প্রমাণ করে দেখাবে। ধার্মীকরা এরকমই উল্টো দাবী করে। এবার লেখাটা শেষ করি পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম একটি ধর্মীয় দাবীর মিথ্যা প্রমাণিত হবার কিছু প্রমাণ দিয়ে। হযরত মুহাম্মদ এক রাতে মক্কা থেকে জেরুজালেমের বাইতুল মোকাদ্দেশ ভ্রমণ করে এসেছিলেন বলে দাবী করেছিলেন। বাইতুল মোকাদ্দেশের ধর্মীয় কাহিনী হচ্ছে এরকম, বাইবেল মতে নবী ডেভিড(দাউদ) জেরুজালেম দখল করে নিয়ে তার রাজধানী বানান এবং তার পুত্র রাজা সলোমন (নবী সুলাইমান) এখানে একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। এটি ইহুদীদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র বলে স্বীকৃত কারণ এটি নবী সলোমনের হাতে গড়া প্রার্থনা স্থান। এটাকে ইহুদীরা আজো তাদের কিবলা হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। এই সলোমনের মন্দির আক্রান্ত হয় বহির্রাগতদের হামলায়। কয়েকবারের আক্রমনে আগুনে পুড়ে মন্দিরের পুরোটা ধ্বংস হয়ে কেবলমাত্র মন্দিরের একপাশের দেয়াল অবশিষ্ট থাকে। বর্তমান ইহুদীদের আমরা যে দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে বিড়বিড় করতে দেখি এটি কথিত সেই দেয়ালের অংশ। ইতিহাস ও মিথ মিলেমিশে ইহুদী ও খ্রিস্টানদের ধর্মীয় দাবীর বিপরীতে ইসলামী আরেকটা দাবী আছে জেরুজালেমের উপর। সেটি হচ্ছে নবী মুহাম্মদকে আল্লাহ এর রাত্রে মক্কা থেকে এই জেরুজালেম ঘুরিয়ে দেখিয়ে এনেছিলেন। মুসলমানরা এজন্য জেরুজালেমের উপর তাদের দাবী ষোলআনা রয়েছে বলে মনে করে। এমনকি এই দাবী ইহুদী খ্রিস্টানদের থেকেও তাদের বেশি মনে করে। এখন দেখা যাক নবী মুহাম্মদের জেরুজালেম ভ্রমণ সম্পর্কে কোন তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায় কিনা। মুহাম্মদ যখন জেরুজালেম ভ্রমণের কাহিনী প্রকাশ করলেন এবং জানালেন তিনি বাইতুল মোকাদ্দেশে সমস্ত নবীদের নিয়ে নামাজ পড়ে এসেছেন তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো বাইতুল মোকাদ্দেশকে তিনি কেমন দেখলেন। ইসলামি সোর্স বলে নবী মুহাম্মদ বাইতুল মোকাদ্দেশের প্রতিটি দরজা জানালাসহ হুবহু বর্ণনা করে শুনান এবং উপস্থিত বহুলোক দাবী করেন তারা এমনটাই কিছুদিন আগে জেরুজালেম ভ্রমণ করে দেখে এসেছেন। এই গল্প একদমই ধাপ্পা! কারণ সেসময় জেরুজালেমে কোন ভবণই অবশিষ্ঠ ছিলো না। বাইতুল মোকাদ্দেশ খ্রিস্টপূর্ব ৫৮৬ সালে প্রথম ব্যাবলীয়নরা হামলা করে ধ্বংস করে ফেলে। ৫১৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এটি ফের নতুন করে নির্মাণ করা হয়। ৭০ খ্রিস্টাব্দে এটি রোমানরা আবার ধ্বংস করে ফেলে। তারপর থেকে এটি সেভাবেই পড়ে থাকে। কোন রকম দালানকোঠা সেখানে তোলা হয়নি। মুহাম্মদ মেরাজ যাবার দাবী করেন ৬২১-২২ খ্রিস্টাব্দে। পৃথিবীতে যত তথ্যপ্রমাণ আছে সব জড়ো করেও সেসময় জেরুজালেমে বাইতুল মোকাদ্দেস বা সলোমনের মন্দিরের এতটুকু চিহৃ অবশিষ্ঠ ছিলো না কেবল কিছুমাত্র পোড়া দেয়াল ছাড়া। অথচ ইসলামী সোর্সগুলি বলছে মুহাম্মদ বাইতুল মোকাদ্দেসের প্রতিটি দরজা জানালার বর্ণনা দিয়েছিলেন সঠিক নির্ভুলভাবে! মুহাম্মদের নিজের ভাষ্যে শুনুন, ‘আমি হিজরে দাঁড়ালাম, বাইতুল মোকাদ্দেস দেখতে পেলাম এবং এর নিদর্শনগুলো বর্ণনা করলাম। তাদের মধ্যে কেউ কেউ জানতে চাইলো, ওই মসজিদে কতগুলো দরজা আছে? আমি(পূর্বে) সেগুলো গুণিনি। কাজেই আমি এর দিকে তাকালাম এবং এক এক করে সব গুণলাম এবং তাদের জানালাম।(আত-তাবাকাত আল-কুবরা, খণ্ড- ১,  ইবন সা’দ, পৃষ্ঠা ২৪৬-২৪৮)।

সেখানে কোন ভবণ না থাকার পরও কি অবলীলায় দরজা গুণে বলে দিলেন আমাদের নবীজি! সেই যুগে মক্কা থেকে জেরুজালেম যাবার কোন সহজ পথ ছিলো না। গুগল বলতেও কোন সার্চ ইঞ্জিন ছিলো না যে মুহাম্মদের দাবী কেউ যাচাই করে দেখবে। তবে পরবর্তীতে ৬২১-২২ খ্রিস্টাব্দে জেরুজালেমে কোন মন্দির বা মসজিদের অস্তিত্ব না থাকার ইতিহাস জানার পর ইসলামিস্টরা মহা ফাঁপড়ে পড়ে যায়। তারপর থেকে তারা বলতে থাকে মসজিদ মানে নামাজের স্থান। মসজিদ বলতে সব সময় ইটকাঠ পাথরের দালাণ ইসলামে বুঝানো হয় না। তাই বাইতুল মোকাদ্দেসে তখন কোন কিছু না থাকলেও সোলাইমান নবীর মসজিদের (আসলে সেটি মন্দির ছিলো ইহুদীদের ভাষ্যে) স্থানেই নবীজি নামাজ পড়েছিলেন। আর মসজিদের দরজা জানালার গোণার বিষয়ে তাদের বক্তব্য যেহেতু বাইতুল মোকাদ্দেস বলতে একটি স্থান ছিলো এবং সেখানে প্রবেশের পথ ছিলো তাই সেই পথে ঢুকার নিশ্চয় কোন দরজা ছিলো। নবীজি সেই দরজার কথাই বলেছেন। এরকম দুর্বল যুক্তি দেয়া হয় বিশ্বাসী মুসলমানদের জন্য। এটুকু তাদের না দিলেও চলে কারণ তারা বিশ্বাসের শিকলে বন্দি। নইলে এরা বুঝত যেখানে বলা হচ্ছে বাইতুল মোকাদ্দেসটা নবীর চোখের সামনে তুলে ধরা হয়েছে আর তিনি সেটা দেখে প্রতিটি দরজা জানালার বর্ণনা দিয়ে গেছেন। কিছুই যার নেই তার আবার কি বর্ণনা হবে? সবচেয়ে বড় কথা যে আল্লাহ ব্যাবলীয়ান, রোমানদের হামলায় তার নবীর মন্দির/মসজিদ রক্ষা করতে পারেননি, ৭০ খ্রিস্টাব্দের পর সাড়ে ছয়শ বছর যেটা পরিত্যাক্ত ধ্বংসপ্রাপ্ত ছিলো সেটা আবার নবীর চোখের সামনে ধরে দেখায়! হুজুর যে জ্বিনদের মাহফিলে যোগ দেয়ার ওয়াজ আপনার দেখেছেন সেখানেও কোন অবিশ্বাসী শ্রোতা পাওয়া যায়নি। কাজেই ১৪০০ বছর আগে কাজটা আরো সহজ ছিলো মানতেই হবে!

https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=333053224066678&id=244833342888667

Scroll to Top