ভারতের সব রাজনৈতিক দল চেয়েছে মুসলমানরা ধর্ম নিয়েই থাক, মাদ্রাসা মসজিদ নিয়েই ওরা খুশি থাক। এরকম ধর্মযুগীয় চিন্তা চেতনা নিয়ে যারা পড়ে।

পশ্চিমবঙ্গে উর্দুভাষীসহ মুসলিম ভোট সম্ভবত ৩০ পার্সেন্ট। এই ভোটটি বগলদাবা করতে পূর্বে কংগ্রেস ও কমিউনিস্টরা চরমভাবে ইসলাম নিয়ে খেলেছে। মুসলমান ও ইসলামকে তারা একাকার করে ফেলেছিলো। মুসলমানদের জন্য মসজিদ, মাদ্রাসা আর অন্যদের জন্য স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় আধুনিক সব ব্যাপারস্যাপার। মুসলমানরা পশ্চিমবঙ্গে আজো মাদ্রাসাকেই তাদের প্রধান শিক্ষাকেন্দ্র মনে করে। পশ্চিমবঙ্গ কেবল নয়, গোটা ভারতের মুসলিম কমিউনিটির নেতা হয়ে রয়েছে বড় কোন মসজিদের মোল্লা। এরাই মুসলমানদের হয়ে দেন দরবার করেন। এরাই মুসলমানদের কাদের ভোট দেয়া উচিত সেটা বলে দেন। পশ্চিমবঙ্গে এক সময় বামফ্রন্ট মুসলিম ভোট বাগিয়ে নিয়েছিলো ইসলামকে তোষণ করে এখন সেটা তৃণমূল একাই গ্রাস করছে একই ফর্মূলার ইসলাম তোষণ করে। সম্প্রতি একটা ভিডিও দেখলাম যেখানে তৃণমূলের একজন মুসলিম নেত্রী রোহিঙ্গাদের সব রকম সুযোগ সুবিধান দেয়ার ঘোষণা করছে। তাদের কেউ তাড়াতে পারবে না বলে হুমকি দিচ্ছে। আরো বাজেভাবে সাম্প্রদায়িক উশকানি দেয়া সেই ভিডিওটি আমার পেইজে প্রকাশ করা হয়েছে। ।

ভারতের নির্বাচনে যদি নরেন্দ্র মোদী হিন্দুত্ব নিয়ে খেলেন বলে অভিযোগ থাকে তাহলে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে ক্ষমতাশীন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা ব্যানার্জী কি মুসলমানের ইসলাম অনুভূতি নিয়ে খেলছেন না? তিনি সম্প্রতি এক নির্বাচনী জনসভায় বললেন, সবাইকে মাথায় রাখতে হবে ইসলাম একটি পবিত্র ধর্ম…।

ধর্ম দিয়ে এক ছটাক চাল কেনা যায় না। ধর্ম অসুখে অষুধ দেয় না। ধর্ম মেয়ের বিয়ের টাকা এনে দেয় না। বেকার ছেলের চাকরি করে দেয় না। এগুলো অশিক্ষিত পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠি বুঝতে পারে না। তারা মনে করে তাদের কিছু না থাক, তাদের কেবল ধর্ম ঠিক থাকলেই চলবে কারণ এই জীবনের চাইতে পরকালের জীবনটাই চিরস্থায়ী…। এসব কারণে মমতা ব্যানার্জী সরাসরি ইসলাম ধর্মকে টেনে এনেছেন। তিনি জানেন এইসব ধর্মান্ধদের প্রিয় জিনিস হচ্ছে ইসলাম। এরা মাদ্রাসা করে দিলে খুশি হয়। ইমামের বেতন বাড়িয়ে দিলে খুশি হয়ে উঠবে। এই খুশিতে মমতার ভোট নিশ্চিত থাকবে…। এখানেই মমতার মত অন্য সকলের হিসাবে বড় একটা ভুল থেকে যাচ্ছে…।

পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম জনসংখ্যা রোহিঙ্গাদের নিয়ে কোন মতে ৪০ হতে পারলে সেখানে মুসলিম নেতারা নিজেরাই ইসলামিক পার্টি খুলে নির্বাচনে দাঁড়াবে। যেমনটা বেলজিয়ামে ঘটেছে। বেলজিয়ামে মুসলিমরা প্রথমে বামপন্থিদের ভোটার ছিলো। তারপর সংখ্যায় বেড়ে যাবার পর তারা নিজেরাই ইসলামিক দল গঠন করে নির্বাচনে জিতে শরীয়া আইন দাবী জানাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গেও এরকম ঘটবে। তৃণমূলের অনেক মোল্লা তখন তৃণমূল ত্যাগ করে ইসলামিক পার্টিতে যোগ দিবে। তৃণমূল, কংগ্রেস, কমিউনিস্টদের টাইম দেয়ার সময় মুসলমানদের তখন থাকবে। কারণ ভারতের কোন রাজনৈতিক দল মুসলমানরা প্রগতিশীল হোক সেটা চায়নি। ভারতের সব রাজনৈতিক দল চেয়েছে মুসলমানরা ধর্ম নিয়েই থাক, মাদ্রাসা মসজিদ নিয়েই ওরা খুশি থাক। এরকম ধর্মযুগীয় চিন্তা চেতনা নিয়ে যারা পড়ে থাকে তারা তো ইসলামিক নেতাদের দলেই শরিক হবে। কাজেই পশ্চিমবঙ্গে আগামী দিনে ইসলামিক পার্টি হবে অন্যান্য বড় দলের মূল প্রতিদ্বন্দি। ইসলামিক পার্টি তো আর এমনি এমনি দল গড়বে না। তাদের কিছু ইসলামিক দাবী দাওয়া থাকবে। তাদের সঙ্গে দরকষাকষি করে যারা সরকার গঠন করবে তারা সেসব মেনে নিবে গদি দখল করতে। তাই পশ্চিমবঙ্গ ভারতের সবার আগে ইসলামিক যে কোন ভাবধারা সরকারিভাবে প্রতিষ্ঠা হবার সবচেয়ে জড়ালো সুযোগ বাজায় রাখে। এসববের জন্য ভারতের লিবারাল রাজনৈতিক দল ও কমিউনিস্টরাই দায়ী। তারা মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাসকে নিয়ে রাজনীতি করেছে। তাদের আধুনিকমনস্ক করতে চাননি।

ভারতে যখন তিন তালাকের বিরুদ্ধে আইন হলো তখন ভারতের লিবারাল ও কমিউনিস্টরা এগুলোর বিরুদ্ধতা করেছে। অথচ তিন তালাকের বিরুদ্ধে মুসলিম দেশগুলির নারীরাও লড়াই করছে। পুরুষের বহুবিবাহ মুসলিম নারী জন্য এক অভিশাপ। ভারতের হিন্দুত্বাদী সরকার মুসলিম নারীদের আইনি সহায়তা দিতে ইসলামিক আইনের বিরোধীতা করায় লিবারাল ও কমিউনিস্টদের কাছ থেকে বিরোধী পেয়ে এসেছে। অথচ তাদেরই উচিত ছিলো মুসলিমদের জন্য সংস্কারে কাজ করা। উল্টো দেখা গেছে ভারতীয় মুসলিমদের জন্য এরা অভিশাপের মত কাজ করেছে। ভারতের প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীদের কি উচিত ছিলো না তিন তালাকের বিপক্ষে দাঁড়ানো? নরেন্দ মোদীকে ভারতীয় মুসলিম নারী আন্দোলনকারীরা অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানিয়েছিলো। মুসলিম পুরুষরা মুসলিম নারীদের নিপীড়নের সুযোগ হাত ছাড়া হোক সেটি চাইবে না। কাজেই ভারতীয় মুসলিম পুরুষরা নিশ্চয় এজন্য কমিউনিস্ট ও তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ কংগ্রেসকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলো? আগামী দিনে ভারতকে ধর্মীয়ভাবে বিভক্ত করতে নিশ্চয় ইতিহাস এইসব দলগুলোকে ধন্যবাদ (দায়ী) জানাবে…!