কৈরানা, মহেশতলার উপনির্বাচন.., মুসলমানদের রাজনৈতিক দূরদর্শীতা, প্রাজ্ঞতা আর হিন্দুদের ভবিষ্যত !
আগেই বলে নিই – লেখাটা বড়, হয়তো কিছুটা অগোছালোও। যদি কারো এমন মনে হয়, আগে বিজেপিকে হারাতে হবে – এতে যদি ইসলাম পন্থীদের হাত ধরতে হয়, ধরবো। যদি এই দেশ ইসলামিক আগ্রাসনের গ্রাসে চলে যায়, যাক। এই দেশ ‘দার উল ইসলাম’ হয়ে গেলে যাক, মোদীকে রুখতে হবে – তাহলে কষ্ট করে এত বড় এই লেখা না পড়লেও চলবে।
আর যদি মনে হয়…, একটু হলেও সংশয় জাগে… ,
আমরা নিজেদের অজান্তেই হিন্দুত্ববাদকে ঠেকাতে গিয়ে ইসলামিক আগ্রাসনের পথ প্রশস্ত করছি না তো, বর্তমানে অচল মনুবাদকে ভোঁতা করতে গিয়ে শরিয়ত চাপানোর ব্যবস্থা করে দিচ্ছি না তো.., তাহলে পড়ে দেখতে পারেন।
আগেও বলছি – এই উপনির্বাচন কেন, কোন নির্বাচনেই বিজেপির হার বা জিত নিয়ে আমার মাথাব্যথা ছিল না কোনদিন, কিন্তু এখন আছে, প্রবল ভাবেই আছে …।
বিজেপি, কংগ্রেস, তৃণমূল বা সিপিএম এর চোখ দিয়ে নয়, এবারের উপনির্বাচন গুলির ফলাফল কি একটু অন্যভাবে বিশ্লেষণ করেছেন? কৈরানা বা ঘরের মহেশতলার নির্বাচনের ফলাফলকে? কিছু নজরে এসেছে কি?
এমন হচ্ছে না তো, আমরা বোকার মতো বিজেপি কংগ্রেস সিপিএম তৃণমূল করে ভাগ হয়ে যাচ্ছি, আর এদিকে মুসলিম ভোট এককাট্টা হয়ে সংখ্যালঘু হয়েও আমাদের নিয়ন্ত্রক হয়ে যাচ্ছে। কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে এরা রাজনৈতিক মঞ্চটাকে সুযোগ বুঝে ব্যবহার করে লোভী স্বার্থপর দুর্নীতি পরায়ণ নেতাদের লোভকে কাজে লাগিয়ে বিশেষ উদ্দেশ্যে এগিয়ে চলেছে না তো? আমাদের অলক্ষ্যেই লিখে চলেছে না তো আমাদের ললাট লিখন?
এই যে বিজেপি বা মোদীর বিরুদ্ধে দেশের প্রায় সব মুসলমান এককাট্টা হয়েছে , সেটা কি অসাম্প্রদায়িক মানসিকতা থেকে ‘সাম্প্রদায়িক’ মোদীর বিরুদ্ধাচরণ, নাকি ইসলাম পন্থী সাম্প্রদায়িক মুসলমান হিসাবে সাম্প্রদায়িক হিন্দু মৌলবাদের বিরুদ্ধাচরণ? কোনটা ভেবেই বা সেক্যুলারবাদীরা এদের সমর্থন করছেন? তাহলে কি আসলে অসাম্প্রদায়িকতাকে নয়, মুসলিম সাম্প্রদায়িকতাকে যারা সর্বোচ্চ তুষ্ট করতে পারবে, তারাই আসবে ক্ষমতায়?
আপনাদের কি মনে হয় না যে মুসলমানদের রাজনৈতিক দূরদর্শীতা প্রাজ্ঞতা হিন্দুদের চেয়ে অনেক বেশি? এবং সাম্প্রদায়িক মানসিকতার কারণেই এরা হিন্দুদের চেয়ে অনেক বেশি সম্প্রদায় সচেতন এবং অনেক বেশি সংঘবদ্ধ? হয়তো এদের ধর্মের প্রভাবেই এরা এরকম । তাই হিন্দু সংখ্যাগুরু এই দেশেও ক্ষমতায় থাকতে বা আসতে এই ভোট ব্যাংকের সমর্থন লাগবেই এবং এর বিনিময়ে যারা চোকাবে সর্বোচ্চ মুল্য – তারাই আসবে ক্ষমতায়, আপাতত । এটাই বাস্তব, এটাই এদের সফলতা। কিন্তু সেই মূল্যটা কী ? সেটা কি শুধুই হিন্দু সাম্প্রদায়িকতার উৎখাত, নাকি ইসলামিক খিলাফত প্রতিষ্ঠা?
আমাদের ভবিষ্যত কোনদিকে হাতছানি দিচ্ছে ?
আসুন, একটু বিশ্লেষণ করি –
সাধারণ ভাবে আমরা তো জানি, গণতন্ত্র মানেই ভোট, আর ভোট মানেই সংখ্যা। সত্যিই কি তাই? সম্প্রদায় বিশেষে সেই অর্থে সংখ্যাগুরু না হয়েও কি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না ভোট বা রাজনীতির সবকিছু, বিশেষ করে আমাদের মতো সুবিধাবাদী লোভী দুর্নীতিবাজ রাজনৈতিক নেতাদের দেশে ? ভোট ব্যাংকের বিশেষ ঘনত্ব আর বিশেষ মানসিকতার কারণেই মাত্র ত্রিশ শতাংশ বা এর চেয়ে আরো কম হয়েও কি হতে পারে না নির্ণায়ক? ক্ষমতায় টিঁকে থাকতে বা ক্ষমতায় আসতে প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দলকে করতে হবে এদের পদলেহন। সংখ্যালঘু হয়েও সম্প্রদায় সচেতনতা, রাজনৈতিক দূরদর্শীতা, প্রাজ্ঞতা আর সংগঠিত হওয়ার কারণে এরাই হবে নিয়ন্ত্রক। এদের মানসিকতাই চালিত করবে সেই সরকার বা প্রশাসনকে। আর সেই মানসিকতা কী, সেটা কি এখনো জানা হল না আমাদের? আর যখন প্রকৃত অর্থেই সংখ্যাগুরু হয়ে যাবে এরা, তখন? মুসলিম ভোট একজায়গায় পড়ে মুসলমানরা নির্ণায়ক হয়ে যাচ্ছে । এরপর যখন ক্ষমতার কাছে চলে এসে নির্ণায়ক নয়, নিয়ন্ত্রক হয়ে যাবে, তখন কি আপনাকে সুযোগ দেবে নির্ণায়ক হবার ?
ভেবে দেখুন তো, আমরা এমনিতে মুখে সংখ্যালঘু তোষণ বললেও আসলে কোথাও সংখ্যালঘু তোষণ হয় কি? হিন্দু প্রধান এদেশে হোক আর মুসলিম প্রধান ওদেশে – সব জায়গাতেই কিন্তু যেটা হয়, সেটা স্রেফ মুসলিম তোষণ । এদেশে তো মুসলমানরা সংখ্যালঘু নয়, দ্বিতীয় সংখ্যাগুরু। এদেশে যারা প্রকৃত অর্থে সংখ্যালঘু, সেই খ্রীষ্টান বৌদ্ধ, শিখ বা জৈনদের তোষণ হয় কি? যতবার শ্বাসে শ্বাসে উচ্চারিত হয় গুজরাত দাঙ্গার কথা, এর চেয়েও ব্যপক ঐ শিখ বিরোধী দাঙ্গার কথা সেক্যুলারবাদীরা একবারও বলে কি? বাংলাদেশে তো হিন্দুরা সংখ্যালঘু, সেখানে সংখ্যালঘু তোষণ হয় কি? সংখ্যাগুরু হোক আর সংখ্যালঘু, মুসলমানদের সংগঠিত ভোট ব্যাংক আর বিশেষ সাম্প্রদায়িক মানসিকতাই বাধ্য করে সবজায়গায় মুসলিম তোষণ করাতে, এদের অন্যায়কে প্রশ্রয় দিতে। এদের হাতেই থাকে নিয়ন্ত্রণ, এদের মানসিকতাতেই চালিত হয় সরকার, সব জায়গায়।
এর কারণটা বুঝতে আসুন একই দেশ ভেঙ্গে সৃষ্টি হওয়া তিনটি দেশের রাজনীতি নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করি –
ভোটের জন্য রাজনৈতিক নেতাদেরই সবচেয়ে বেশি মানুষের মন বুঝে চলতে হয় । ভোটের দিকে চেয়ে থাকা এদের কার্য কলাপই প্রমাণ করে দেয় কোন অঞ্চলের সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের মানসিকতাটা ঠিক কী । একই দেশ ভেঙ্গে সৃষ্টি হওয়া তিনটি দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর দিকে তাকালেই সেটা স্পষ্ট হয়ে যাবে। তাই বাংলাদেশ পাকিস্তানের মতো মুসলিম প্রধান দেশে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের সাম্প্রদায়িক মানসিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়েই শাসক হোক, বিরোধী হোক – সবকটি রাজনৈতিক দলকেই করতে হয় ইসলাম বন্দনা, জাহির করতে হয় বিধর্মী তথা কাফের বিদ্বেষ।অসাম্প্রদায়িক মানসিকতার বলে প্রচারিত হাসিনাকেও সংখ্যাগুরু মুসলমানদের মন পেতে হেফাজতে ইসলামের মতো সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী সংগঠনের কথা মেনে চলতে হয়, চলতে হয় তেঁতুল হুজুরের মতো লোকের হাত ধরে। তোষণ তো দূর, সবার সমান অধিকারের কথাও তো কেউ বলে না। মুসলিম প্রধান দেশে কাফেরদের আবার অধিকার কী! আর গদি পেতে হিন্দু প্রধান এই দেশে সব রাজনৈতিক দল, এমনকি বিজেপির মত হিন্দুত্ববাদী দলকেও করতে হয় মুসলিম তোষণ, বন্দনা করতে হয় ধর্ম নিরপেক্ষতার। ভোট বাবুরা জানে হিন্দু প্রধান দেশে এই নির্লজ্জ মুসলিম তোষণ বা ধর্ম নিরপেক্ষতার বুলি হিন্দুদের মনে কোন বিরূপ প্রভাব ফেলবে না, কারণ হিন্দুরা অসাম্প্রদায়িক মানসিকতার । কিন্তু মুসলিম প্রধান দেশে একটু সংখ্যালঘু সহানুভূতির প্রকাশ সংখ্যাগুরু ভোটে নামিয়ে দেবে ধস। হিন্দুদের মধ্যে সেক্যুলারিজমের আধিক্য বেশি বলেই হিন্দু প্রধান এই দেশে সংখ্যাগুরুর মন পেতে সবকটি রাজনৈতিক দলকে ভোটের জন্য সাজতে হয় সেক্যুলার, জপতে হয় সেক্যুলারিজমের মালা, সেক্যুলারিজমের নামে চলতে থাকে নির্লজ্জ মুসলিম তোষণ। আর মুসলমানরা সাম্প্রদায়িক মানসিকতার বলেই মুসলিম প্রধান ঐ দেশগুলিতে রাজনৈতিক দল গুলি সেক্যুলারিজমের নামও মুখে আনে না। এদেশে হিন্দু ধর্ম ছেড়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারীকে হিন্দুরাই ভোটে জিতিয়ে আনে, ওসব দেশে ধর্মান্তরিত দের নেওয়া হয় কল্লা।
পাকিস্তানে তো হিন্দুরা প্রায় লুপ্ত, লুপ্ত প্রায় প্রানীদের যত্ন করে সংরক্ষণ করে রাখতে হয় দেখানোর জন্য। তাই পাকিস্তান আনছি না, বাংলাদেশে রংপুর, নাসিরনগর, লংদু, মালোপাড়া… বিভৎস সব ঘটনা ছাড়াও হিন্দুদের উপর নির্যাতন তো বাংলাদেশে রোজকার রুটিন। এসবের প্রতিক্রিয়াও ওদেশের রাজনৈতিক দল গুলিকে বেশ বুঝে সুঝে হিসেব কষে দিতে হয়। কারণ, নিকৃষ্ট মূর্তি পূজারী মুশরিক হিন্দু তথা মালাউন দের প্রতি সামান্যতম সহানুভূতি দেখানো মানেই সাম্প্রদায়িক মানসিকতার সংখ্যাগুরু ভোট হারানো । তাই বাংলাদেশে শাসক আওয়ামী লীগ বা বিরোধী বিএনপি জামাত – উভয় তরফেই চলে নির্বিচারে হিন্দু নির্যাতন। ভোটে এই নির্যাতন ইস্যু হওয়ার কোন সম্ভাবনাই যে নেই। আর এদেশে যে দলই বিরোধী থাকুক, ওঁৎ পেতে থাকে কখন এই ইস্যুতে সারা দেশ তোলপাড় করে দেওয়া যায়। ফলে পাশের দেশগুলোর তুলনায় এদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন হয় না বললেই চলে।
বরং সেই সংগঠিত ভোটের কারণেই আমরা বরাবর উল্টোটাই দেখে আসছি। ব্যতিক্রমী হিন্দু প্রধান এই দেশে সংখ্যাগুরুরাই বরং সংখ্যালঘুদের হাতে তুলনামূলক বেশি নির্যাতিত হচ্ছে। বাংলাদেশের রংপুর বা নাসিরনগরের মতোই এই বাংলাতেও ফেসবুক পোষ্টকে কেন্দ্র করে সংখ্যালঘু মুসলমানরা একের পর এক গুঁড়িয়ে দিচ্ছে সংখ্যাগুরুদের বসতি। কালিয়াচক, ধুলাগড়, বাদুড়িয়া…! এই হিন্দু সংখ্যাগুরু দেশের হিন্দু সংখ্যাগুরু রাজ্যে সংখ্যালঘু মুসলমানের ভয়ে প্রাণ রক্ষায় টেবিলের তলায় সেঁদোয় গিয়ে পুলিশ। আমরা দেখতে অভ্যস্ত, পুরো থানা কে থানা জ্বালিয়ে দিচ্ছে জেহাদীরা , পুলিশ দৌড়ে পালাচ্ছে। বাইকের কাগজ দেখতে চাওয়ায় মাটিতে ফেলে পেটাচ্ছে পুলিশকে। সবই নাকি রাজনীতির খেলা ! তবে কেন জানি, এদেশে হোক আর ওদেশে, সংখ্যালঘু হোক আর সংখ্যাগুরু – একটা সম্প্রদায়ই শুধু কালিয়াচক, ধুলাগড়, বাদুড়িয়া বা নাসিরনগর, রংপুর করে? কিন্তু হিন্দুরা কেন জানি এত অত্যাচারের পরও ভুলেও ওসব দেশে একটাও ‘কালিয়াচক’ বা ‘বাদুড়িয়া’ করার কথা ভাবতেও পারে না। ওদেশে না পারুক , এদেশেও কেন জানি একটাও ‘নাসিরনগর’ করে না ! ওদেশে তো করছেই, এদেশেও ওরাই সংখ্যালঘু হয়ে সংখ্যাগুরুদের উপর অত্যাচার করবে, বানতলা, কামদুনি, পার্ক স্ট্রিট করবে। হিন্দুরা কেন জানি ভুলেও ওদেশে একটাও বানতলা বা কামদুনি করে না, এদেশের মতো দল বেঁধে সংখ্যাগুরুদের উপাসনা স্থল গুঁড়িয়ে দেওয়ার কথা ভাবতেও পারে না। আর একটা যদি বানতলা ধুলাগড় করে ফেলে, একটা খাগড়াগড় হয়ে যায় – একজন হিন্দুরও আর সেখানে থাকা সম্ভব হত না। এখন যে নগন্য কিছু লোক বাংলাদেশে অস্ফুটে হলেও হিন্দু নির্যাতনের প্রতিবাদ করছেন, তাদের একজনও তখন আর হিন্দুদের পাশে থাকতো না। আর এদেশে ওরা জানে – এরা যা কিছুই করুক, সংখ্যাগুরুদের উপর যতো অত্যাচারই করুক, ভোট ব্যাংকের ঐ বিশেষ ঘনত্বের কারণে প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকতে এদের পা চাটতে বাধ্য । প্রশাসন নতজানু হতে বাধ্য। ভাবুুুুন, সংখ্যালঘুতেই যদি এমন হয়, প্রকৃত অর্থেই যখন সংখ্যাগুরু হয়ে যাবে?
বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনের কথা বললে বললে কেউ কেউ বলে – “ওসব কিছু না, সব রাজনীতি” ! এখানেও হিন্দুদের উপর দল বেঁধে যে হামলে পড়ছে, পুরো থানা জ্বালিয়ে দিচ্ছে – সেটাও নাকি – “ওসব কিছু না, সব রাজনীতি” ! অর্থাৎ ওদেশে যে রাজনীতি সংখ্যাগুরু মুসলমানদের দিয়ে হিন্দুদের উপর অত্যাচার করাচ্ছে, এদেশে সেই রাজনীতিই নাকি সংখ্যালঘু হলেও সেই মুসলিমদেরই প্ররোচিত করছে সংখ্যাগুরু হিন্দুদের উপর অত্যাচার চালাতে । যেটা স্বাভাবিক ছিল, অর্থাৎ রাজনৈতিক চক্রান্তকারীরা কেন জানি বাংলাদেশের মতো এদেশে সংখ্যাগুরুদের দিয়ে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা করাতে পারে না। কেন জানি সব জায়গায় হিন্দুরাই এই তান্ডবের শিকার হয় ! অর্থাৎ রাজনীতি সবজায়গায় মুসলমানদের প্ররোচিত করে অত্যাচার করতে আর হিন্দুদের বাধ্য করে মুখ বুজে সেই অত্যাচার সহ্য করতে। বাঃ, দারুণ যুক্তি।
বুকে হাত দিয়ে বলুন তো, এখনই শুধু বিশেষ বিশেষ এলাকায় নয়, সব জায়গাতেই ওদের বেশ বুঝে সুঝে চলতে হয় না আমাদের, সংখ্যাগুরু হয়েও? শুধু আমাদের নয় – সরকার, পুলিশ, প্রশাসন, সবাইকে? হেলমেট ধারীদের না করে ফেজ টুপিধারীদের? হিন্দু সংখ্যাগুরু এই দেশের হিন্দু সংখ্যাগুরু এই বাংলাতেও কি এরাই আমাদের ভাগ্য নিয়স্তা হয়ে উঠছে না, সংখ্যালঘু হয়েও? এর একমাত্র কারণ কি ঐ বিশেষ মানসিকতা আর সেই মানসিকতার কারণে সৃষ্ট বিশেষ ঘনত্বের ভোট ব্যাংক নয়?
এবার অনেকে বলবেন, মমতার আমলে মাত্রাতিরিক্ত মুসলিম তোষণের কারণেই এসব দিন দেখতে হচ্ছে। শুধু মমতাজের আমলেই বুঝি? বাম আমলে? এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলেন বানতলার কথা? মুসলিম মৌলবাদীদের পায়ে মুখ ঘষে তসলিমা বিতাড়ন বৌদ্ধিক গুণে ভরপুর শিল্প সাহিত্য প্রেমী কোন মুখ্যমন্ত্রীর আমলে হয়েছিল? ঐ বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণেই সব আমলেই এরাই সুবিধা ভোগ করে যাবে, সবাই এদের বেশ সমঝে চলবে । এরা জানে সেটা । প্রথমে জনসংখ্যা বাড়িয়ে ক্ষমতার নির্ণায়ক, এরপর সরকার এবং প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতা দখল, এরপর….! এরপর বাংলাদেশ পাকিস্তান হয়ে সোজা ইরাক বা সিরিয়া।
আসলে রাজনীতি এদের কার্যকলাপকে চালিত করছে না , এদের মানসিকতাই চালিত করছে রাজনীতিকে। এরা রাজনীতিকে গায়ের চামড়া নয়, চাদর ভাবে। এরা কখনোই রাজনীতি করে না, বিভিন্ন রাজনীতির মঞ্চকে নিজেদের সম্প্রদায়ের স্বার্থে ব্যবহার করে সুপরিকল্পিত ভাবেই একটা বিশেষ উদ্দেশ্যে এগিয়ে চলেছে । যখনই যে ক্ষমতায়, ভোট ব্যাংক দেখিয়ে তার সঙ্গে ভিড়ে ক্ষমতার কাছাকাছি থেকে সেই ক্ষমতাকে ঐ বিশেষ উদ্দেশ্যে কাজে লাগানোই এদের উদ্দেশ্য। যাতে লেবেল পড়ে না যায়, ভোট ব্যাংক অটুট রেখে কিছু নেতা বিভিন্ন দলে ভিড়ে থাকে। রেজ্জাক মোল্লার বিবর্তনটাই লক্ষ্য করুন – সারা জীবন বামপন্থী আদর্শে বিশ্বাসী মোল্লা সাহেবের কাছে এখন ‘মার্ক্সের চেয়ে মহম্মদ বড় “! কারণ জেহাদী তোষনকারী তৃণমূলকে দিয়ে উনার সম্প্রদায়ের স্বার্থ উদ্ধার হচ্ছে, ভবিষ্যতের বিশেষ উদ্দেশ্যের জমি প্রস্তুত হচ্ছে। কয়েক দিন পর যে সে ওয়াইসির সুরে কথা বলবে না, বিবর্তিত হতে হতে আরো কিছু দিন পর সময় এলে স্বমূর্তী ধারন করে মহম্মদের নির্দেশিত পথে জেহাদে যে নেতৃত্ব দেবে না, গ্যারান্টি কি ? এরা সবাই বিভিন্ন রাজনৈতিক মঞ্চটাকে ব্যবহার করে শক্তি সঞ্চয় করে সেই বিশেষ সময়ের অপেক্ষা করছে না তো? বিশেষ সময় এলে যদি দেখা যায় সেলিম, আরাবুল, ফিরহাদ, মান্নানরা সব এক জায়গায় ভিড়ে গেছে – আমি অন্তত অবাক হব না। হিন্দু নেতারা রাজনীতি করে ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য, ক্ষমতার জন্য। আর এরা করে নিজেদের সম্প্রদায়ের স্বার্থকে মাথায় রেখে।
মুসলমানরা কখনোই নিজেদের ভোট ব্যাঙ্ককে কোন দলের বাপের সম্পত্তি বানায় না। সেটাকে নিলামে তোলে সর্বোচ্চ তোষনকারী দলের কাছে ট্র্যান্সফার করে মাত্র, এখন যেমন সিপিএম থেকে করেছে তৃণমোল্লার কাছে ।
আগেই বলেছি, ধর্মীয় কারণে সাম্প্রদায় সচেতন সংখ্যাগুরু মুসলমানদের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে বলেই মুসলিম প্রধান দেশে সংখ্যালঘু তোষণ হয় না । তাই হিন্দু বিদ্বেষী হলেও(সহী মুসলিম মাত্রেই হিন্দু বিদ্বেষী) মন্দের ভালো আওয়ামী লীগের কাছে গচ্ছিত আছে হিন্দু ভোট। তাই তথাকথিত হিন্দুদের প্রতি সহানুভূতিশীল বলে প্রচারিত এই আওয়ামী লীগের মন্ত্রী বলতে পারেন “হিন্দুরা থাকলে ভোট পাব, আর চলে গেলে জমি পাব” বা ফেসবুকে মিথ্যা পোষ্টের গুজব ছড়িয়ে নাসিরনগর হামলার পর “মালাউনের (হিন্দুদের মালাউন বলে গালি দেওয়া হয়) বাচ্চারা বেশি বেড়ে গেছে”! এই যদি হয় সহানুভূতি শীল দলের অবস্থা, বাকিদের মানসিকতা কল্পনা করে নিন। কার কাছে যাবে হিন্দুরা? আর এদেশে? কিন্তু
এই যে মুসলিম প্রধান বাংলাদেশ ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে জন্ম নিয়েও পরে রাষ্ট্র ধর্ম ইসলামের হয়ে যায় বা হিন্দু প্রধান নেপাল হিন্দু রাষ্ট্র থেকে ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হয়ে যায় – তার পেছনেও ভোট এবং সেই ভোটের রসায়ন কি হবে, সেটা ঠিক করে দেয় সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের মানসিকতা। ঠিক যে কারণে মুসলিম প্রধান পাকিস্তানের হিন্দু প্রধান নেপালের মতো রূপান্তর আমরা ভাবতেও পারি না। অসাম্প্রদায়িক বলে প্রচারিত আওয়ামী লীগ সরকার তো ক্ষমতায়, কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ কি অসাম্প্রদায়িক ! সাধ্য আছে কি সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের মানসিকতার বিরুদ্ধে গিয়ে বাংলাদেশকে আবার ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র ঘোষণার? ছোট্ট একটা উদাহরণ দিই – বাংলাদেশে পাঠ্য বইয়ে গরুর মাংসের ওজন দিয়ে দেওয়া আছে অংক। বোঝাই যাচ্ছে, এটা ইচ্ছাকৃত, আরও অনেক কিছু দিয়েই তো ওজনের অংক হয়। যাই হোক, হিন্দুদের তো সাধ্য নেই প্রতিবাদ করার, সেই অংক করতেই বাধ্য। কিন্তু সংখ্যাগুরু মুসলমানদেরও তো কেউ প্রতিবাদ করে না, রাজনৈতিক দল গুলি? এদেশে পাঠ্য বইয়ে শূয়োরের মাংস দিয়ে অংক দেওয়ার কথা কেউ ভাবতে পারে কি? দিলে মুসলমানরা দাঙ্গা শুরু করে দেবে না? হিন্দুরা, রাজনৈতিক দলগুলি প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে পড়বে না? এই পার্থক্যের সবটাই কিন্তু ঐ বিশেষ মানসিকতা এবং ঐ মানসিকতার তৈরি করে দেওয়া ভোট ব্যাংক। বাংলাদেশে হাসিনা একবার হিন্দুদের দূর্গা পূজার শুভেচ্ছা জানানোয় সারা দেশ প্রতিবাদে ফেটে পড়েছিলো। মুসলিম হয়ে কাফেরদের উৎসবে শুভেচ্ছা ! আর এদেশে? বিজেপির মতো হিন্দুত্ববাদী দলকেও জানাতে হয় রমজানের শুভেচ্ছা, দিতে হয় ইফতার ! কারণ সেটা মুসলিম ভোট কাছে টানলেও অসাম্প্রদায়িক হিন্দুদের মনে বিরূপ প্রভাব তো ফেলবে না।
শুধু এখন নয়, এদের রাজনৈতিক প্রাজ্ঞতা এবং দূরদূর্শিতা অনেক বেশি বলেই হিন্দুদের বোকা বানিয়ে দেশ ভেঙে নিজেদের জন্য আলাদা দু দুটি ভুখন্ড ছিনিয়ে নিল, ছিনিয়ে নিয়েও বাকীটার সবজায়গায় ছেয়ে রইল আবার ভাঙার জন্য। আর সংখ্যাগুরু হয়েও হিন্দুদের হাতে রইলো লবডঙ্কা। শুধু তা’ই নয়, নিজেদের জন্য দেশ ভাঙ্গলেও, সেই ভাঙার জন্য ডাইরেক্ট অ্যাকশন নাম দিয়ে কোলকাতা আর নোয়াখালীতে হিন্দু নিধন যজ্ঞ করলেও, এর দায় কিন্তু মুসলমানদের উপর এলো না। সবই নাকি চক্কান্ত, এরা নাকি চায়নি ! না চেয়েও পেয়ে গেল নিজেদের প্রাপ্যের অনেক বেশি ! শুধু তা’ই নয়, খুব বোকা আর চক্রান্তকারীদের সহজ শিকার বলে আলাদা সেই ভূখন্ড পেয়েও সেখানে যেতে হলো না মুসলমানদের । আর খুব চালাক হয়ে হিন্দুরা কি পেল, সেটা বললেই আপনি সাম্প্রদায়িক!
আসুন, এবার থিওরি আর প্র্যাক্টিক্যাল মিলিয়ে দেখি –
জানি না সত্যি কিনা, শুনলাম আরএলডি প্রার্থী তবসুম বেগম কৈরানা জেতার পড়ে মিডিয়ায় প্রথম প্রতিক্রিয়া জানালেন __
“এই জয় আল্লার জয় !
এই হার রামের হার !
এর আগেও উত্তর প্রদেশে লালুর দলের এক মুসলিম প্রার্থীর জয়ে ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ শ্লোগান দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল।
যাই হোক, এই তবসুম এই রকম ধর্মীয় মেরুকরণের কথা বলে থাকলেও একে কিন্তু কেউ সাম্প্রদায়িক বলছে না, বরং বিরোধীরা সবাই উল্লসিত, বিজেপিকে তো হারানো গেছে । বরং হিন্দু সংখ্যাগুরু দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একজন হয়ে এভাবে সংখ্যাগুরু হিন্দুদের প্রতি সাম্প্রদায়িক অপমান সূচক মন্তব্য করেও তথাকথিত সেক্যুলারবাদী দলগুলির হাততালি পাচ্ছে, শুধু এই কারণে যে মোদীকে তো হারানো গেল ! এই হিন্দুদের ভোটেই বিজেপিকে হারিয়ে জয়ীও হয়েছে এই রকম হিন্দু বিদ্বেষী সাম্প্রদায়িক মানসিকতার একজন প্রার্থী, শুধু এই কারণে যে ‘সাম্প্রদায়িক’ বিজেপিকে হারাতে হবে। এভাবেই বিরোধীরা রাজনৈতিক কারণে মোদী বা বিজেপির বিরোধীতা করতে করতে কখন যে হিন্দু বিরোধী বা দেশবিরোধী হয়ে ইসলাম পন্থী হয়ে যাচ্ছে – টেরও তো পাচ্ছে না। নাকি সচেতন ভাবেই…? এই সুযোগটা সুযোগ সন্ধানীরা নেবে না?
মুসলিম প্রধান বাংলাদেশ বা পাকিস্তানে এমনটা কল্পনা করুন। শাসক বা বিরোধী – সংখ্যালঘু প্রার্থী যে দেবে, রাজনীতি মাথায় তুলে সব মুসলিম ভোট এক হয়ে ঐ দলের জামানত জব্দ করে দেবে। আর এমন মন্তব্য করলে তো সারা দেশে ঐ দল এবং জোট করা দলগুলোর সাইনবোর্ডও খুলে নেবে। এখানেই পার্থক্য মানসিকতার, যেটাতে মুসলমানরা অনেক এগিয়ে। এমনকি সবচেয়ে শান্তিপ্রিয় বলে পরিচিত বৌদ্ধরাও মায়ানমারের গত নির্বাচনে রোহিঙ্গা মুসলমানদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ঠিক এই রাস্তাই নিয়েছিল। কিন্তু আমাদের বোধদয় আর কবে হবে !
এটা তো সত্যি, মুখে জাতপাতের বিরুদ্ধে বললেও সেক্যুলারবাদী দলগুলোকে, এমনকি বিজেপির মতো হিন্দুত্ববাদী দলকেও মুসলিম প্রধান এলাকায় দাঁড় করাতে হয় মুসলিম প্রার্থী, করতে হয় মুসলিম তোষণ। এছাড়া উপায়ও নেই, কারণ হিন্দুরা এখনও সাম্প্রদায়িক সচেতনতায় মুসলমানদের থেকে অনেক পিছিয়ে। সম্প্রদায় সচেতন হিসাবে মুসলমানরা এই সুযোগ লুফে নেবে না কেন? এই যদি অবস্থা হয় – ইসলামিক আগ্রাসন থেকে এদেশকে রক্ষা করা কারোর পক্ষেই সম্ভব নয়।
কিন্তু যদি…,
যদি তবসুম এর মন্তব্যটাকেই হিন্দুরা আপন করে নিতে পারে? কোন বিজেপি কংগ্রেস বামপন্থী আর তৃণমূল না – ঠিক উল্টো ভাবে, ঠিক এভাবেই যদি একজন মুসলমান প্রার্থীর জয়কেই কোণঠাসা হিন্দুরা, হিন্দু বা হিন্দু ধর্মের পরাজয় হিসাবে হিসেবে দেখা শুরু করে?
ঠিক ততদিন পর্যন্ত এই নির্লজ্জ মুসলিম তোষণ চলতেই থাকবে , যতদিন এই নির্লজ্জ তোষণ সংখ্যাগুরুদের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে না।
যতদিন না এই নির্লজ্জ মুসলিম তোষণ সংখ্যাগুরুদের মনে সার্বিক বিরূপ প্রভাব ফেলছে, যতদিন পর্যন্ত হিন্দুরাও মুসলমানদের মতো সম্প্রদায় সচেতন না হচ্ছে, তোষনকারীদের বিপক্ষে পুঞ্জীভুত ক্ষোভ সৃষ্টি না করছে চুড়ান্ত মেরুকরণ-ততদিন এই একতরফা ইসলামিক মেরুকরণ আমাদের সামনে ইরাক সিরিয়ার হাতছানি দেবেই।
আর যদি সময় থাকতে মেরুকরণ হয়, আমাদের সামনে হাতছানি দিতে পারে বড়জোর একসময়ের হিন্দু রাষ্ট্র থাকা নেপাল । হিন্দু প্রধান হওয়ার কারণে সেই নেপাল ধর্মীয় রাষ্ট্র হলেও ধর্মনিরপেক্ষ মানসিকতার রাষ্ট্র বলে প্রচারিত মুসলিম প্রধান বাংলাদেশের থেকেও কি অনেক বেশি অসাম্প্রদায়িক ছিল না ? আর ইসলামিক রাষ্ট্র আফগানিস্তান বা পাকিস্তানের তুলনায়…? তাহলে কি একজন সাম্প্রদায়িক হিন্দুত্ববাদী মানুষও একজন তথাকথিত অসাম্প্রদায়িক মানসিকতার মুসলমানের চেয়েও বেশি অসাম্প্রদায়িক হয়? হাসিনা কেন, কোন মুসলমানের পক্ষেই কি সম্ভব হাসিনা বা হাসিনার দলের চেয়ে বেশি ‘অসাম্প্রদায়িক’ হওয়া?