খট্টরের বিফলতাকে ধিক্কার জানানোর পাশাপাশি এগুলোকে পাশ কেটে চলে গেলে-তো চলবে না।

(১) নেগেটিভ রাজনীতি

মোদী রামরহিমকে প্রণাম করেছিলেন। তার সমর্থনে টুইট করেছিলেন। অটলজী আশারামের সঙ্গে নেচেছিলেন … ইত্যাদি ইত্যাদি … …. হুম, এমন খবরে আমি ব্যক্তিগতভাবে একটুও অবাক হই না। যেমন অবাক হই না বরকতিকে ‘দাদা’ বানিয়ে জোব্বা মাথায় তার পাশে বসতেন মমতাদেবী। ইমাম আর গুরু-দ্বার প্রমুখের থেকে আশীর্বাদ ভিক্ষা (ভোট ভিক্ষা) করতে যান আপের স্থপতি কেজরিওয়াল, ভারত তেরে টুকরে হোঙ্গে বোলনে-ওয়ালাদের সহানুভূতি দেখাতে জেএনইউ ক্যাম্পাসে ছুটে যান রাহুল-সীতারাম, কাগজ দেখে ভাষণ দিতে গিয়ে গড়গড় করে শুধু দলিত-দলিত করতে থাকেন বহেনজী, অনুরূপ ঠিক একই ব্যকরণে মোদীর বা বিজেপি নেতা-মন্ত্রীদের আসল ‘রাম’ ছাড়াও এই ভণ্ড রামরহিম-আসক্তিতে কোনও প্রভেদ নেই। সবই ভোট বৈতরণী উৎরে যাওয়ার কৌশল মাত্র। শুধু বিজেপি নয়, এই ভোট-ভক্তির খেলায় বিভিন্ন সময়ে গো-বলয়ে নিজেদের বৈতরণী পার করতে চেয়েছে কংগ্রেস-আপ-বহুজন-সমাজবাদীরাও। আসলে সবই অঙ্কের (থুড়ি, ব্যাঙ্কের) খেলা। বিরোধী যারা হরিয়ানার ঘটনায় সরব, তারাও কিন্তু রামরহিম ও তার তাণ্ডবী চ্যালা-চামুণ্ডার অসভ্য আচরণকে পাশ-কাটিয়েই প্রতিবাদ করছে। খট্টর আর বিজেপিকে দোষারোপ করেই নিজেদের তুলে ধরছে যতদূর সম্ভব। বস্তুত বিজেপির ছিট-ফুট নেতা পরোক্ষে যেমন রামরহিমের ওকালতি করছে, বিপরীতে (*বাম ছাড়া) আর কোনও দল কিন্তু রাম-রহিমের বিরুদ্ধে বা তার চ্যালাদের বিরুদ্ধে ঝেড়ে কাশার হিম্মত করছে না। কেন? তারাতো সেকুলার, তারাতো বিজেপির মত সাম্প্রদায়িক দল নয়। তাহলে কিসের কম্পালশন? (*না বামেরা কিন্তু ভণ্ড ও ভণ্ডর চেলাদের দিলঘুলে প্রটেস্ট করেছে। তার অবশ্য কারণও রয়েছে। কারণ সেখানে তাদের বুক বাজানোর কোনও প্রভাব ফেলে না, ‘আপাতত’ ফেলবেও না, তাই তারা অপেক্ষাকৃত বেশী সরব হয়ে কেরল ও বাংলার জন্য যতটা বেশী ডিভিডেন্ট তোলা যায় তুলবে। তবুও বলবো মন্দের ভালো। অন্ততঃ দিল খুলে প্রটেস্টতো করছে) 

একটি বেসরকারি সূত্র থেকে জানতে পারলাম ডেরার ফলোয়ারদের মধ্যে নাকি প্রায় ৭৫ শতাংশই দলিত বর্গের। তথাকথিত উচ্চশ্রেণীর ধার্মিক নানা উপেক্ষার শিকার হয়েই নাকি তারা ডেরার দিকে আকর্ষিত হয় (বলা ভালো কবলে পড়ে)। তা যদি সত্য হয়, তবে এই দলিত রাজনীতির জন্যই কি মায়াবতীজির মত একজন পৃথিবী বিখ্যাত মহান দলিত নেত্রীও চ্যালাদের উৎপাতকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিন্দা করার হিম্মত দেখাতে পারছেন না? কাল যদি তিনি ইস্যু তৈরি করেন ‘দলিত বলেই খট্টর সরকার গুলি চালিয়েছে ভক্তদের উপর খুব একটা অবাকও হব না।’ এটাই হল রাজনীতির কম্পালশন ও আদর্শের দ্বিচারিতা।

রাহা বাত সাক্ষী কা। বেচারা! বলির পাঁঠা। হ্যাঁ সাক্ষী যে খেলাটা খেলেছে তা ওকে দিয়ে খেলানো হচ্ছে রাম-রহিমের চ্যালাদের মেসেজ দেবার জন্য। যাতে লাঠি ও মহিষ দুটোই ঠিক থাকে। এটা এখন ভারতীয় রাজনীতির খুব জনপ্রিয় কালচার। এতে একদিকে সরকার লোক দেখানি কড়া অবস্থান নিয়ে ইমেজ ভালো করবে, অপরদিকে সাক্ষীর মত বাচাল নেতার মাধ্যমে ভক্তদের মেসেজ পাঠাবে আমরা-তো তোমাদের সঙ্গেই রয়েছি মিত্রোঁ‍। আর এ খেলা শুধু সাক্ষী বা বিজেপি খেলছে তাইই নয়, বরং রীতিমত জাত-ধর্মের ডেটাকে সম্বল করে তথা কথিত সেক্যুলার তকমা-ধারী সব দল ও দলের নেতারাই। এই তো কিছুদিন আগেই গো-মাংস জনিত হিংসার ঘটনায়, রাহু গান্ধির দল কেরলে প্রকাশ্যে বাছুর কেটে ফেস্টিভাল করলো। ঠিক তারপরেই রাহুল গান্ধি মিডিয়ার সামনে চোখমুখ শক্ত করে রাগ দেখিয়ে বললেন — ‘ইয়ে বহুত গলত কিয়া, হম ইয়ে সব বরদাস্ত নেহি করেঙ্গে দোস্তোঁ‍’ সম্ভবত সেই ঘটনায় সাসপেন্ডও হয়েছিল এক কংগ্রেসি নেতা। অর্থাৎ হরে দরে মেসেজ পাঠিয়ে দেওয়া তাদের কাছে, যারা গো-মাংসে উজ্জীবিত হয়ে ভোট ব্যাঙ্কের বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে তাদের বাক্সে। এ খেলা চলছে নিরন্তর। কাজেই এই রাম-রহিম, আশারামদের মত ঘটনাযে ভারতীয় রাজনীতির খুব একটা কিছু যে হেরফের হবে তা মোটেও নয়। 

(৩) বুমেরাং রাজনীতি

রায় পছন্দ না হলেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল চিৎকার করতে থাকে, ‘সিবিআই কেন্দ্রের হাতের পুতুল!’ তা তাই যদি হয়, তাহলে রুলিং সরকারতো চার অক্ষরের বোকা নয় যে ইচ্ছে করে বলবে ‘আ ব্যাল মুঝে মার’ — তেমন যদি সহজ হত এ ক্ষেত্রেও আগেই প্রভাব খাটিয়ে কেশের দফা-রফা করে দিতে পারতো। রায়ও হত অন্য রকম। খামোখা খট্টরকে বলির বখরা করে পাঙ্গা নিতে যাবে কেন? আশারাম-রামরহিমকে মুক্তি দিতে পারলে জনসমর্থন আরও বেড়ে যাবে হরিয়ানা, পাঞ্জাব, দিল্লি, রাজস্থান, গুজরাট, মহারাষ্ট্রতে থাকা তাদের পাঁচ+পাঁচ=দশ কোটি চ্যালা চামুণ্ডার কাছে, এসব ক্যালকুলেশন কি তারা বোঝে না, এতই বোকা?

(৩) পজিটিভ রাজনীতি

রাজনীতি হোক বা আদর্শগতভাবেই হোক কোনও পার্মানেন্ট নিয়ম আছে কি, যে অতীতে যাকে প্রণাম করা হয়েছিল, বন্ধু ছিল, ভবিষ্যতে কু-কর্ম প্রকাশ্যে এলে তাকে জুতো পেটা করা যাবে না? সরকার যদি তা করে তাহলে মন্দ কি? যাঁ‍হাতক রামরহিম কেশ, যতদূর জানি এই কেশ শুরু হয়েছিল বাজপেয়ী আমলে এবং কাকতলীয়ভাবে সাজা হল মেদির জামানায় (মাঝে দশ বছর কংগ্রেস ছিল সরকারে) ঘটনাচক্রে মরল মানুষও। যারা মারা পড়লো, প্রশাসন জানিয়েছে তারা সকলেই রাম-রহিমের তাণ্ডবী ফলোয়ার। শুধু তাই নয় প্রাথমিকভাবে খট্টর ডাহা ফেল করলেও পরবর্তীকালে ডেরার দফতরগুলো শিল করা হচ্ছে। পাঁচশর বেশি চ্যালা-চামুণ্ডা গ্রেফতার। কয়েকজনের উপর দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি নষ্ট করার জন্য দেশদ্রোহিতার মামলা। আদালতের আদেশে ক্ষয়ক্ষতি উদ্ধার করা হবে স্বঘোষিত গড-ম্যানের কাছ থেকেই — এ সবইতো পজিটিভ। খট্টরের বিফলতাকে ধিক্কার জানানোর পাশাপাশি এগুলোকে পাশ কেটে চলে গেলে-তো চলবে না।