“লক ডাউন করে কি লাভ হয়েছে?”
ডাঃ মৃনাল কান্তি দেবনাথ
“লক ডাউন করে কি লাভ হয়েছে?” — প্রশ্ন টা আমার নয়। এই লক ডাউনের প্রয়োজনীতা টা কি ছিলো আমি তা বুঝি এবং সম্পুর্ভাবে মেনে চলেছি।
প্রশ্ন টা করেছে একজন কংগ্রেস নেতা—তিওয়ারী জী। সকালে উঠে আজ এই প্রশ্ন দেখলাম টি ভি তে। এই নেতা গুলো এই ধরনের প্রশ্ন করেন কেনো? না বুঝে, না শুধু রাজনীতি করার জন্য?
আমাদের দেশে ১৩০ কোটি মানুষ বাস করে। তার মধ্যে ক’জন নিজস্ব স্বাস্থ্য বিষয়ক নিয়ম জানেন বা মানেন? এই সংক্রমন ঘঠিত অসুখের মুখ্য কারন হলো “ অস্বাস্থ্যকর ভাবে থাকে, চলা, খাবার খাওয়া।“ আমি জানি এবং বুঝি, যারা গরীব তাদের অনেক মুশকিল আছে। কিন্তু যত্র তত্র থুতু ফেলা উচিত নয় , এই নিয়ম টা পালন করা কি অসুবিধার? আর এটা করতেই বা হবে না কেনো? একজন হাঁচি পেলে মুখে হাত দিতে হবে বা রুমাল দিতে হবে এবং মুখ টা অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিয়ে অন্যের থেকে একটু দূরে চলে যেতে হবে এটা সাধারন বোঝার কথা। কিন্তু কতোজন অন্যের মুখের ওপরে হাঁচি দিয়ে থাকেন? বাইরে বেরুলেই তা দেখাযায়।
( আমি একদিন হিউষ্টনে গাড়িতে যাচ্ছি। মেয়ে গাড়ি চালাচ্ছে। আমার সামনের গাড়িটার জানালা খুলে এক ভদ্রলোক পরিষ্কার রাস্তায় পানে পিক ফেললেন। আমি তো অবাক। মেয়ে বললো, বাবা চিন্তা করো না, উনি ইন্ডিয়া থেকে এসেছেন। দেখো কি হয়”। একটু দূর যেতেই পিছন থেকে হুইসেল দিয়ে পুলিশের গাড়ি এলো। ওই গাড়ি টা আটকালো। ভদ্রলোক কে গাড়ি থেকে নামিয়ে পুলিশের গাড়িতে তুললো। মেয়ে বললো, এবারে ফাইন দিতে হবে নইলে জেল”।)
এই রকম কাজের জন্য আমাদের দেশে কি কোনো শাস্তি আছে, নেই। আমি যখন রোগী দেখি তখন অনেক রোগী ই আমার সামনে হাঁচি দেয়। আমি নিজের সাবধানতা বজায় রাখি তাই এখনো অসুস্থ হই নি।
তা ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, আমাদের দেশে একজন আছেন যিনি সরকারের প্রধান। তিনি আমাদের এই অস্বাস্থ্যকর বদ অভ্যাস গুলো জানেন। লক ডাউন করে এই সংক্রমন পুরো বন্ধ হবে না, কিন্তু মানুষকে বোঝানোর সময় পাওয়া যাবে এবং এদের ভবিষ্যত অসুস্ততার থেকে বাচানো যাবে, সেটা তাকে বিশেষজ্ঞ রা বুঝিয়েছে, তিনি বুঝেছেন। তিনি জানেন যে, ভারতে , ১৩০ কোটি মানুষের দেশে এই সঙ্ক্রমন সহজে যাবে না। অনেক মানুষ অসুস্থ হবে। প্রায় ৮০ লক্ষ প্রবাসী শমিক আছেন দেশের বিভিন্ন স্থানে। তারা ঘরে ফিরতে চাইবেন। আর এই সঙ্ক্রমন বেশ কিছুদিন চলবে। করোনার কোনো ওষুধ নেই, ভ্যাকসিন বাজারে আসতে ১ বছর লাগবে। তাহলে দেশের মানুষের কি হবে? ক’টা হাসপাতাল আছে, কতোজন চিকিৎ্সক আছেন, নার্স আছেন, কটা ভেন্টিলেশন আছে, কতোটা বেড আছে? যেখানে রেশনের দোকানের চেয়ে মদের দোকানে ভীড় বেশী হয় সেখানে কি করে আগামী বেশ কিছু মাস, অন্তত এর প্রতিষোধক বা ভ্যাকসিন না বেরুনো অবধি, কি করে চলবে?????
লক ডাউনে আর কিছু না হোক, আজ অবধি সংক্রমন ৬০ হাজারের কাছে, মৃত্যু হয়েছে ৩০০০ কাছে। প্রথম দিকে টেষ্ট হচ্ছিলো না। এখন হচ্ছে তাই বেশী সংখ্যায় ধরা পড়ছে। তাই সংখ্যা বাড়ছে। এই ক’দিনে মানুষ অন্তত জেনেছে বা বুঝেছে যে, নিজের সাবধানতা নিজের কাছে। এই সংক্রমনের সংখ্যা এবং মৃত্যু হার বা সংখ্যা পৃথিবীর অন্য দেশ থেকে কতো টা কম তা কি ওই কংগ্রেস নেতা বোঝে না????? অবশ্য যারা অন্ধ, তারা দেখবে কি করে।
মনে হচ্ছে, লক ডাউন উঠে যাবে ১৭ ই মের পর। এই সংক্রমন, এর পরে আরো বাড়বে। কিন্তু দেশে আজ তৈরী অসুস্থদের চিকিৎসা দিতে। লক ডাউনের এটাই লাভ।
আমি হলে অবশ্য অন্য ভাবে এটা কে সামাল দিতাম। ২১ দিনের কারফিউ, আর তারপর ৪ মাসের ১৪৪ ধারা। কল কারখানা, অন্য সব কিছু খোলা রাখতাম। মাস্ক এবং শারীরিক দুরত্ব না মানলে ৩০০০ টাকা জরিমানা বা তিন মাসের জেল। সেই সংগে চলতো প্রশাসনিক ভাবে তৈরী হওয়া। কারফিউ এবং ১৪৪ ধারা জারি না করলে, ২৫ থেকে ৩০ হাজার মানুষকে জরিমান না দিলে বা জেলে না পুরলে এদেশের মানুষের হুশ হবে না।
এরা মস্তি করবেই, মদের দোকানে লাইন দেবেই, রাস্তায় দাঁড়িয়ে হাসতে হাসতে, এক সংগে পাশাপাশি বসে মদ গাঁজা খাবেই, যেখানে সেখানে থুতু ফেলবেই, অন্যের সামনে হাঁচি দেবেই। আর মুখের ওপরে হাঁচি দিয়েও একবার বলবে না, “ সরি”, খাবার টেবিলে বসে শব্দ করে উদ্গার ছাড়বেই। এতো সমালোচনা করার জন্য দুঃখিত । এটাই সত্যি।।
হুশ এতোবড়ো এক নেতার ই হয় নি তা সাধারন মানুষের কথা তো ছেড়েই দিলাম। তা না হলে সারা পৃথিবীতে ৩৭ মিলিয়ন এইচ আই ভি বা এইডস এর রোগীর মধ্যে ১৭ মিলিয়ন ( প্রায় অর্দ্ধেক কিন্ত লোক সংখ্যা তো প্রায় অর্দ্ধেক নয়) শুধু আমাদের দেশেই কেনো হয়????
লক ডাউন উঠবে। কিন্তু আমাদের এই করোনা নিয়েই বাস করতে হবে অনেকদিন, হয়তো বা সারা জীবন। কিন্তু লক ডাউন যা করলো তা হচ্ছে, যেখানে আমেরিকায় মারা গেলো ৮০০০০ ( লোক সংখ্যা ৩০ কোটির কাছে আর আমাদের ১৩০ কোটি), সেখানে আমাদের দেশে এই অবধি ৩০০০ ।
যে লোকটা এটা বুঝে আগেই ব্যাবস্থা নিলো, তাকে শুধুই গালাগাল না দিয়ে নিজে সাবধান হোন।।