ভারতের বিপজ্জনক ও পক্ষপাতদুষ্ট সংখ্যালঘু নীতি

ভারতের বিপজ্জনক ও পক্ষপাতদুষ্ট সংখ্যালঘু নীতি
                               ।তৃতীয় পর্ব।
একজন বিজেপি নেতা সুপ্রিম কোর্টের কাছে “ন্যাশনাল কমিশন অফ মাইনরিটি” সংগঠন ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট সেই আবেদন খারিজ করে দেয়। ১৯৯৩ সালে তৈরি হওয়া এই সংগঠন পুরোপুরি সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গিতে চলে। কেননা এই সংগঠনে কোনও হিন্দু সদস্য নেই, সব সদস্যই উক্ত ছয় অহিন্দু সম্প্রদায়ের লোক। চাইলেই বর্তমান বিজেপি সরকার এনসিএমে হিন্দুদের পাশাপাশি ভাষাগত সংখ্যালঘুদেরও ঢুকিয়ে দিতে পারে। এর জন্য খুব বেশী আইনি জটিলতার দরকারও নেই। ২০১৪ সালে জৈন সম্প্রদায়কে এইভাবেই সংবিধান সংশোধন করে ঢোকানো হয়েছিল। তাহলে বিজেপি সরকার কেন হিন্দুদের অধিকার রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না?
ভারতের সংখ্যালঘু নীতির বিরাট একটা খারাপ দিক উপেক্ষা করা হচ্ছে, সেটা হচ্ছে — দক্ষিণ ভারতে তথাকথিত আব্রাহামিক সংখ্যালঘুরা অনেক দিক থেকেই হিন্দুদের চেয়ে ভাল সামাজিক, আর্থিক ও রাজনৈতিক অবস্থানে আছে। তবুও তুলনামূলক অগ্রসর আব্রাহামিকদের তোষণ করা হচ্ছে কেন? পিছিয়ে থাকা হিন্দুদের জন্য রাষ্ট্রের সামান্যতম মাথা ব‍্যথা নেই। যার ফলে সামাজিক ন্যায়ের নিয়ম  চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে।
নির্দিষ্ট ভাবে কারা সংখ্যালঘু হিসেবে গণ্য হতে পারে, এ ব্যাপারে ভারতের সংবিধান নীরব আছে। একবার সুপ্রিম কোর্ট ১১ সদস্যের বেঞ্চ-এর রায় দিয়েছিল টিএমে পাই মামলায় — সংবিধান কারা ধর্মীয় সংখ্যালঘু হতে পারে, সে বিষয়ে রায় দেয় নি সংবিধান; সেখানে ভাষাগত সংখ্যালঘু সম্বন্ধেও একই ভাবে নীরব থেকেছে।  স্বাধীনতার পর থেকে ভারতের সংখ্যালঘু মন্ত্রক যা করে চলছে, তা সম্পূর্ণ বেআইনি ও সংবিধান বিরোধী।
ভারতের সংখ্যালঘু নীতি অনুসারে যেসব সংখ্যালঘু জাতি আর্থিক ও সামাজিক ভাবে পিছিয়ে আছে, তাদেরই কেবল সরকারী সাহায্য দরকার; যাতে তারা অগ্রসর হতে পারে। এক্ষেত্রে তাদের জন্য শিক্ষা বড় অস্ত্র হতে পারে। নিচে তথ্য দেখলে প্রকৃত অবস্থা বুঝতে পারা যাবে।
২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে হিন্দুদের স্বাক্ষরতার হার যেখানে ৬৩.৬১%, সেখানে খ্রিষ্টানদের ৭৪.৩৫%, শিখদের ৬৭.৫১%, বৌদ্ধদের ৭১.৮৪% এবং জৈনদের ৮৬.৭৩%। দেখা যাচ্ছে মুসলিম ছাড়া বাকি সব ধর্মের লোকের স্বাক্ষরতার হার হিন্দুদের তুলনায় বেশী। কি করে ভারত সরকার ৮৬.৭৩% স্বাক্ষরওয়ালা জৈনদের স্কলারশিপ দেওয়ার পক্ষে সাফাই গাইতে পারে, তা আমার বোধগম্যের অতীত। যেখানে হিন্দুদের স্বাক্ষরতার হার মাত্র ৬৩.৬১%, তাও কেন তারা স্কলারশিপ পাবে না; সেটা বুজতে পারছি না।
ঠিক একইভাবে ভারতের ২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে ধর্মীয় ভিত্তিতে আয়ের হার দেখে নেওয়া যাক। হিন্দুরা যেখানে পরিবারপিছু মাসিক আয় হিসাবে মাত্র ৮,০৮৬ টাকা পায়, সেখানে মুসলিমরা ৮,০৬৯ টাকা পায়, খ্রিষ্টানরা ১০,৪২৮ টাকা পায়, বৌদ্ধরা ৮,২১২ টাকা পায়, শিখরা ১৩,০২২ টাকা পায় এবং জৈনরা ১৮,৫৬২ টাকা পায়। হিন্দু ও মুসলিম বাদে বাকি সব ধর্মের যেখানে পরিবারপিছু মাসিক আয়ের পরিমাণ এত বেশী; সেখানে ভারত সরকার কিভাবে শুধুমাত্র একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের পেছনে টাকা খরচ করতে পারে ও অন্যদের উপেক্ষা করে চলতে পারে?
ভারতের সংখ্যালঘু নীতি অনেক ক্ষেত্রেই তফশিলি জাতি ও আদিবাসী নীতির ন্যায় ভ্রান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। বহুলচর্চিত সাচার কমিটির কথা সবাই জানেন। সাচার কমিটি মুসলিমদের অবস্থা নিয়ে যা বলেছিল, সেটাই এখন সব কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি হয়ে গিয়েছে। এন্তোনিয়া মাইনো(সোনিয়া গান্ধী)-র রিমোটে পরিচালিত হওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত তৎকালীন কংগ্রেসের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, মুসলিমদের প্রতি পক্ষপাতিত্বের জন্য প্রবল সমালোচিত হয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “দেশের সম্পদের উপর মুসলিমদের সর্বপ্রথম অধিকার”।
এই পক্ষপাতদুষ্ট মন্তব্যের জন্য তিনি বিরোধীদের তোপের মুখে পড়েছিলেন। 
২০০৬ সালে মনমোহনের মুখ-নিঃসৃত উক্তিকে বিজেপি নির্বাচনী প্রচারণায় কাজে লাগিয়েছিল। কিন্তু ক্ষমতায় গিয়ে বিজেপি নিজেই সেটা করছে – যেটা কংগ্রেস সরকার করেছিল। 
ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সাথে তফশিলি জাতি ও আদিবাসীদের  গুলিয়ে ফেললে সেটা রাজনৈতিক ভাবে একটা আত্মঘাতী পদক্ষেপ হবে। সবাই জানেন অমুসলিম সংখ্যালঘুরা সব ব্যাপারেই তফশিলি জাতি ও আদিবাসীদের চেয়ে এগিয়ে। মুসলিমরা তফশিলি জাতিদের ব্যাপারে ছদ্ম উদ্বেগ দেখাচ্ছে। মুসলিমরা চায় যে, তফশিলিরা  পিছিয়ে থাকুক, তাদের চেয়েও দরিদ্র অবস্থায় থাকুক। একই বাসনা রয়েছে তথাকথিত তফশিলি-প্রেমী রাজনীতিবিদদের মধ্যেও। এজন্য ষড়যন্ত্রকারীরা দলিত-মুসলিম ঐক্যের নামে পার্টিশনের সময়ের মতো নতুন প্রতারণার জাল বিছিয়েছে। এদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, বিভ্রান্তি ছড়িয়ে নতুন পাকিস্তান সৃষ্টির আওয়াজ তোলা।
মুসলমানদের জন্য কোনও অবস্থাতেই তফশিলিদের ন্যায্য সুবিধাগুলো বরাদ্দ করা উচিত নয়। মুসলমানরা প্রায় ৮০০ বছর ভারত শাসন করেও  এত দরিদ্র ও পিছিয়ে আছে কেন – সে বিষয়ে নিয়ে তারা আগে আত্মসমীক্ষা চালাক। তারা যেহেতু আগেই ধর্মের ভিত্তিতে ভারত ভেঙে আলাদা দেশ করে নিয়েছে; তাই তাদের কোনও বাড়তি পাওনা থাকা উচিত নয়; তথচ তাদের সব কিছু উজাড় করে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে, সংখ‍্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের বঞ্চিত করে।
পূর্ববর্তী পর্বের লিঙ্ক : https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=1158599087809356&id=100009778263804
সম্পাদনা 
কৃত্তিবাস ওঝা
ফুলিয়া, পশ্চিম বঙ্গ, ভারত
(ক্রমশ)