#গৃহদাহের_কারণ_ও_বিশ্বাসঘাতকেরা
অশোক মিত্র, পরম নেহেরু অনুরাগী ছিলেন ।কিন্তু তিনি 1946 এর গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং এর সময় নেহেরু এবং গান্ধীজীর ব্যবহারেই চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছিলেন যে,” এমন দাঙ্গা হবার পরেও নেহেরু বা গান্ধীজি একবার কলকাতায় আসার প্রয়োজনও বোধ করলেন না ।এর একমাত্র কারণ এই দাঙ্গায় মুসলিমদের দায়িত্ব অনেক বেশি ছিল ।তাই যদি গান্ধী নেহেরু কলকাতায় আসতেন তাহলে তারা মুসলিম বিরোধী আখ্যা পেতে। এরম একটা ভয়ংকর পরিস্থিতিতে ন্যায় অন্যায় বিচার করা যাবে না; মুসলিমদের দোষ দেখলে সে ব্যাপারে চুপ করে থাকতে হবে ,হজম করে যেতে হবে ।
কমিউনিস্টরা হচ্ছে আরেকদল যারা এই দাঙ্গার মুসলিম লীগের দায়িত্ব চুনকাম করার প্রাণপণ চেষ্টা করেছিল – দাঙ্গার আগে, দাঙ্গার পরে, দাঙ্গার সময়।
কমিউনিস্টরা যদি সেদিন পাকিস্তানের সমর্থন না করত, তবে হয়তো দেশবিভাগের অভিশপ্ত ঘটনা টা এড়ানো যেত। কিন্তু কমিউনিস্ট পার্টি সেদিন তা করেনি।পার্টির স্বার্থে শুধু পাকিস্তানকে সমর্থন করেই তারা ক্ষান্ত হন নি ।পশ্চিম বাংলার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু কিন্তু সেদিন মুসলিম লীগ নেতা কুখ্যাত 1946 গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং এর নায়ক সুরাবর্দী সাথে একই মঞ্চে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানের দাবি জানিয়েছিল।
কোন নিচের এই ঘৃণ্য ভূমিকাকে সঠিকভাবেই ব্যক্ত করেছেন চিন্তাবিদ ডক্টর জে বি শেঠি ” কমিউনিস্টদের সম্ভবত সবচেয়ে বড় বিশ্বাসঘাতকতা দৃষ্টান্ত হলো পাকিস্তান সৃষ্টির পক্ষে তাদের যুক্তি খাড়া করা । দেশ বিভাগ রোদ করা এই কারণেই সেদিন অনেক বেশি কঠিন হয়ে পড়ে ছিল বলে সাধারণভাবে ঐতিহাসিক একমত। পাকিস্তানের মুসলিম লীগের কাছে সত্যিকারে বুদ্ধিজীবী গোষ্ঠী বলে কিছু ছিল না । জাতিসত্তা স্তালিনীয় তত্ত্বের নামে কমিউনিস্টরা স্বাধীন মুসলিম লীগের অন্যায় আবদারের প্রতি বৌদ্ধিক মদত জুগিয়ে ছিল। দেশভাগের দাবিকে যুক্তিযুক্ত বলে জাহির করেছিল। অথচ স্তালিন তার নিজের দেশের ক্ষেত্রে এই তত্ত্বকে আমল দেননি।”
সোমনাথ লাহিড়ী বলেছিলেন , “মুসলিম লীগ সেদিন ধর্মঘট পালন করার চেষ্টা করেছিল। দোকানপাট বন্ধ রাখতে বলেছিল ।হিন্দুরা যদি তাদের কথা শুনত, পায় পা দিয়ে ঝগড়া না করতো তাহলে হয়তো কিছুই হতো না ।”
কমিউনিস্ট পার্টির মুখ পত্র” স্বাধীনতায়” 16 ই আগস্ট হিন্দুদের কাছে আবেদন করা হয়েছিল। “মুসলিম লীগ নেতারা যাই বলুক না কেন? মুসলিমরা কত ব্রিটিশ বিরোধী তা দেখতেই পাচ্ছেন। অতএব সেদিন যদি তারা ঝোঁকের বসে বিপথগামী কিছু একটা করে বসে তবে আপনারা তাকে একটা ভাইয়ের ভুল বলেই মেনে নেবেন।”
13 ই আগস্ট সন্ধ্যেবেলা অমর মুখার্জি ও মংড়ু টাটুয়া বালিতে একটি জুট মিলের গেটে আয়োজিত সভায় শ্রমিকদের এবং বালি হপতা বাজারের দোকানদারদের রীতিমতো হুমকি দিয়ে বলে ,”16 আগস্ট প্রত্যক্ষ সংগ্রামে অংশগ্রহণ করতেই হবে । নচেৎ ফল খারাপ হবে।”
মেটিয়াবুরুজে লিচুবাগান বস্তি তে আটকে পড়া হতভাগ্য ওরিয়াদের হত্যায় স্থানীয় কমিউনিস্ট নেতা সৈয়দ আব্দুল্লাহ ফারুকী প্রমুখ ভূমিকা নিয়েছিল । তার কুকীর্তি চুনকাম করার জন্য আবার ময়দানে নেবে ছিলেন ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সেক্রেটারি মাধব মুন্সি এবং মর্নিং নিউজ।
এই লীগপন্থী morning news 6 সেপ্টেম্বর তারিখে মাধব মুন্সির ঘোষণাকে পাথেয় করে Hindu press lie nails বলে একটি খবর ছেপেছিল । এই ফারুক এক্ষেত্রে একটা information দি পরবর্তীকালে cpi এর টিকিটে বিধায়ক নির্বাচিত হন।
এ ক্ষেত্রে একটা information দিয়ে রাখি যে লীগপন্থী কাগজ মর্নিং নিউস লিখেছিল ছেচল্লিশের দাঙ্গার আগে ” কোন ব্রিটিশের গায়ে হাত যেন না পড়ে। ব্রিটিশ এর গায়ে হাত তোলা ইসলামবিরোধী।। বাস্তবে ও কোন ব্রিটিশ এই দাঙ্গায় মার খায়নি নিহত হওয়া তো দূরের কথা।
জয়া চ্যাটার্জী লীগপন্থী ও communist ঐতিহাসিক ছিল। তার লেখায় দাবি করেছিল, যে ,”16 ই আগস্ট সকাল বেলা কলকাতার বাঙালি হিন্দু ভদ্র লোকেরা কেন ব্রিটিশ জাতীয়তাবাদের অনুশীলন ছেড়ে মুসলিম লীগের সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরুদ্ধে নিজেদের সংগঠিত করেছিলেন?”
অর্থাৎ আমাদের আত্মরক্ষার অধিকার নেই ?অর্থাৎ অশোক মিত্র , স্ট্যানলি ওলপার্ট, জেনারেল টাকার, লিভারমরএবং আরো অনেকে, এমনকি আব্দুল মনসুরের মত
(হকপন্থী )ব্যক্তিত্ব সবাই হিন্দু সাম্প্রদায়িক ?একমাত্র জয়া দেবী হলেন ধর্মনিরপেক্ষ ?
নোয়াখালীর ও তার জেনোসাইড এর কোন উল্লেখ জয়া দেবী তার গ্রন্থে করে নি। কারণ, সম্ভবত সেখানে গোলাম সারওয়ার বলি হয়েছিলেন ,প্রধানত গরীব হিন্দু স্কুল মাস্টার দোকানদার, ধোপা নাপিত এবং তথাকথিত ভদ্র লোক নয় তারা।তাই এক্ষেত্রে ঘাড়ে দোষ চাপানো কঠিন ।
পশ্চাত্পদ নমঃশুদ্র জাতি নেতা যোগেন মন্ডল পরবর্তীকালে মুসলিম হত্যার যে চেহারা দেখে ছিলেন এবং নিজের মন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগপত্রে লিপিবদ্ধ করেছিলেন তা জয়া দেবী কে বিচলিত করেনি। মুসলমানদের সার্টিফিকেট দিতে ও হিন্দুদের দোষারোপ করতে তিনি বেপরোয়া ছিল। মুসলিম লীগের কুকীর্তি চুনকাম করার প্রচেষ্টা কঠোরতম মুসলিম সাম্প্রদায়িকতার মুখে শোনা যায়নি । এর এই অদ্ভুত অচিন্তনীয় ব্যাখ্যা কে অমলেশ ত্রিপাঠী ,পার্থ চট্টোপাধ্যায় ,বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর মতো ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক বিজ্ঞানীরা “
#রাবিশ বলেছেন।
তথ্যঃ
চল্লিশের দশক ও তিন দুঃস্বপ্ন
ওরা শুধু ভুল করে যায়
ডক্টর জে বি শেঠি : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস 13.07.87
যোগেন মন্ডলের চিঠি
শেখ মুজিবর রহমানের আত্মজীবনী
উদ্বাস্তু : হিরণমনয় ব্যানার্জি
অমলেন্দু দে
#শ্রী