আপনার মা বোনেরা আবার কবে গনিমতের মাল হবে ফ্রেন্ডস ?
———————————————————
অবিভক্ত ভারতে, ধর্মীয় হানাহানি, মারামারি, কাটাকাটি রক্তপাত, ধর্ষণ যখনই মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বাঙালি সেকুলাঙ্গাররা তখনই বুলি উড়িয়েছে ‘হিন্দু-মুসলিম ভাই-ভাই ।’ মানলাম হিন্দু-মুসলিম ভাই ভাই , তাহলে বোনেদের কি হবে বা কি হয়েছিল ? পাঞ্জাবের ধর্মীয় বিভাজনে জানা যায় ভারত ভাগের সময় দিল্লির করোলবাগে ৭৫০০০ শিশুকে জন্ম দিয়েছিলো আজকের পাকিস্তানের ভুখন্ড থেকে ধর্ষিত হয়ে আসা হিন্দু-শিখ মহিলারা । কতজন গনিমতের মাল হয়ে জিম্মি হয়েছিল আর কতজনকে ধর্ষণের পর খুন করা হয়েছিল তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই ! আর বাংলার ধর্মীয় বিভাজনে সংখ্যালঘু হিন্দু বাঙালি মহিলাদের কি হয়েছিল সঠিক পরিসংখ্যান আছে নাকি কারুর কাছে ? বাংলার সেকুলাঙ্গার আঁতেল জনসমষ্টি বলতে পারবে কতজন সংখ্যালঘু বাঙালি হিন্দু মহিলাকে ধর্ষিত হতে হয়েছিল অধুনা বাংলাদেশ, সেদিনের পূর্ববঙ্গ বা পূর্ব পাকিস্তানে ? কতজনকে বলপূর্বক ধর্মান্তরিত করে নিকাহ করেছিল ধর্মীয় জিঘাংসায় উন্মত্ত কুলাঙ্গার সেদিনের বাঙালি মুসলমান ? কত মহিলার লাশ ধর্ষণ করে নদী , নালায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল ? পারবেনা, কিন্তু বুলি ফোঁটাতে দিন মাইক হাতে, মঞ্চ কাঁপিয়ে দেবে এই মেরুদন্ডহীন সেকুলাঙ্গারের দল ! ১৯৪৬ এর নোয়াখালী একতরফা সংখ্যালঘু বাঙালি হিন্দু নিধনযজ্ঞ নিয়ে আগের পর্বগুলোতে বেশ কয়েকটি রেফারেন্স দিয়ে, উক্তি তুলে ধরে আপনাদের সামনে তথ্য রেখেছি যে কি হারে সেদিন নোয়াখালীর সংখ্যালঘু হিন্দু বাঙালি নারীদের ধর্ষণ করা হয়েছিল, বলপূর্বক ধর্মান্তরিত করে নিকাহ করেছিল কুলাঙ্গার বাঙালি মুসলমান খুনিরা । কথাগুলো একটাও আমার নিজের না , প্রতিটার রেফারেন্স কারুর বিবৃতি বা রিপোর্টের অংশ । এই নৃশংসতা অবশ্য আজকের ভারতের মহাত্মা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত গান্ধীকে বিচলিত করেনি । পাঠক ভাবছেন, কি ঔদ্ধত্যে এই কথা বলছি ? আসুন জেনে নি :
রক্তরঞ্জিত ১৯৪৬ এর নোয়াখালী পরিদর্শনের পর গান্ধী বুড়ো এক অভিনব ‘অহিংস’ পথের সন্ধান দিয়েছিলো সংখ্যালঘু বাঙালি হিন্দুদের । নোয়াখালীর সংখ্যালঘু বাঙালি হিন্দুদের গান্ধী আহবান জানিয়েছিল “তারা যেন কখনোই অসহায়ভাবে মৃত্যু বরণ না করে । বরং, তাদের উচিত একটিও শব্দ না করে হত্যাকারীর তরবারির দিকে মাথা এগিয়ে দেওয়া । তাহলেই দাঙ্গা থেমে যাবে ।” ধর্ষিতা বা অপহৃতা মেয়েদের কাছে মেরুদন্ডহীন গান্ধী আহবান জানালো, তারা যেন তাদের অত্যাচারীদের বাঁধা না দেয় । কারণ, “মেয়েদের জানা উচিত কিভাবে মৃত্যুবরণ করতে হয় । সুতরাং খুব সাহসের সাথে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে এবং এর জন্য একটুও শোক করা উচিত নয় । কেবলমাত্র তাহলেই তাদের উপর এই অত্যাচার (ধর্ষণ ও অপহরণ) বন্ধ হবে ।” (women must know how to die…women (should) face death bravely and without murmur. Then only would the terrible killing now going on, stop.) {The Statesman 18-10-46} | পাঠক ভাবুন, সেই জঘন্য নৃশংসতার পরিপ্রেক্ষিতে এই মেরুদন্ডহীনের কি বাণী নিপীড়িত সংখ্যালঘু বাঙালি হিন্দুর প্রতি ! আজকের ভারতে এ মহাত্মা ! ছিঃ !! এই উদ্ভট অহিংসতার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে কংগ্রেস সভাপতি কৃপালানী বলেছিলো :” গত কয়েকদিন ধরে আমি যা দেখেছি তার পরিপ্রেক্ষিতে শুধু এটুকুই বলতে পারি, কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকার কিছু করুক না করুক, স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রত্যেক বাঙালির (হিন্দু) আত্মরক্ষার ব্যবস্থা করা উচিত ।” (from whatever I have seen and heard the day before and yesterday I am clearly of the opinion that whatever the Government’s, provincial or central, may or may not do, every Bengali, male or female, has to defend himself or herself. ). {Amrita Bazar Patrika 22-10-46} | কৃপালানী আরো বলেছিলো :
“আমি যদিও সম্পূর্ণ অহিংসায় বিশ্বাসী, তা সত্ত্বেও রাজেন্দ্রলাল রায়ের প্রতি আমার পূর্ণ শ্রদ্ধা জানাচ্ছি । প্রত্যেক বাঙালির সামনে আমি রাজেন্দ্রলাল রায় ও তার পরিবারের কথা উদাহরণ স্বরূপ তুলে ধরতে চাই যারা দুদিন লড়াই করে আক্রমণকারী উন্মত্ত জনতাকে ঠেকিয়ে রেখেছিলেন ।” (Amrita Bazar Patrika 22-10-46) |
১৯৪৬ এর অক্টবরে শুরু হওয়া নোয়াখালীতে একতরফা সংখ্যালঘু বাঙালি হিন্দু নিধনযজ্ঞের প্রতিবাদ সারা ভারত জুড়ে হয়েছিল, বোম্বের ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ রেখেছিলো, বেনারসে ছাত্ররা ক্লাস বয়কট করে, দিল্লী , বিহার, উত্তরপ্রদেশ এমনকি মুসলিম লীগ শাসিত সিন্ধু প্রদেশে দীপাবলির চিরাচরিত আলো জ্বালানোর প্রথা বর্জন করে ‘black diwali’ পালন করা হয়েছিল কিন্তু নির্লজ্জ মেরুদন্ডহীন বাংলায় যথারীতি ধুমধাম করে কালীপুজো পালন করা হয়েছিল ! নোয়াখালীর নিপীড়িত সংখ্যালঘু বাঙালি হিন্দুর প্রতি কোনো স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ হয়েছিল এমন কোনো কাগজের রিপোর্ট বলেনা । অবশ্য নির্লজ্জ্ব বাঙালি এর প্রতিদান পেয়েছিল ১৯৪৭ এ যেদিন মানচিত্রে পাকিস্তানের জন্ম হয়েছিল আর প্রায় এককোটি সংখ্যালঘু বাঙালি হিন্দু ভিটেমাটি ছেড়ে পূর্ববঙ্গ নামের ভুখন্ড থেকে এপার বাংলায় পা রেখেছিলো । এই এতসব ঐতিহাসিক ধর্মীয় জিঘাংসার পরেও আজকের সেকুলাঙ্গার বাঙালি এখনো সম্প্রীতির একতরফা বার্তা ছড়ায় । আরে মূর্খ সম্প্রীতি একে অপরের প্রতি প্রদর্শিত হয়, সম্প্রীতি একতরফা হয়না……………………………!