ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক কখনো ভাল ছিল না।
ভারত যেদিন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল সেদিন সংসদে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী একটি আবেগময় ভাষন দিয়েছিলেন।তার জবাবে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা অটল বিহারি বাজপেয়ী বাংলাদেশের অভ্যুদয়কে স্বাগত জানিয়ে মৃদু বিদ্রুপের সুরেই ইন্দিরা গান্ধীকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন,
আপনার বাবা জওহর লাল নেহেরু একটি পাকিস্তান তৈরিতে সাহায্য করেছিলেন আর আপনি দুটি পাকিস্তান তৈরিতে সহযোগিতা করলেন।আপনাকে অভিনন্দন।সেদিন অটল জীর কথা অনেকের ভাল লাগেনি।তিনি একটি হিন্দুত্ববাদী দলের নেতা ছিলেন বলেই এমনটা মনে হয়েছিল।কিন্তু বাংলাদেশ সৃষ্টির ৪৯ বছরে সে কথা আজ অক্ষরে অক্ষরে মিলে গিয়েছে।বাংলাদেশ এখন শুধু মাত্র একটি নাম সর্বস্ব দেশ বাকি সবটাই পাকিস্তানি ভাবধারায় পরিচালিত।
রাষ্ট্রীয়ভাবে দায়সারা গোচের সম্পর্ক থাকলেও দুটি দেশের জনগনের মধ্যে কোন কালেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল না।ধর্ম দুটি দেশের জনগনকে মনস্তাত্বিকভাবে পৃথক করে রেখেছে।বিশেষ করে ইসলাম ধর্মে বিধর্মীদের সম্পর্কে কোরানে যে ধরনের বিষোদগার করা হয়েছে তাতে মুসলমানদের মনোজগতে তার একটা সুদূরপ্রসারী প্রভাব সব সময় কাজ করে।দুই দেশের মধ্যে আসা যাওয়ার সম্পর্কটুকু শুধুই স্বার্থের।কেউ ব্যবসায়ীক কারনে কেউ চিকিৎসার জন্য কেউ বেড়াতে কেউ আবার আসে ধর্মীয় কারনে।এরসাথে নিবিড় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কোন যোগাযোগ নেই।তবে এই সম্পর্কের মধ্যে ব্যতিক্রমও রয়েছে তবে তা এতই নগন্য যে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।
প্রতিবেশীদের মধ্যে দন্ধ থাকে সমস্যা থাকে এটাই স্বাভাবিক
কিন্তু এই দুই দেশের মধ্যে দন্ধ প্রতিবেশী সুলভ নয় জাতি বিদ্বেষ মূলক।এই সম্পর্ক শুধু ভারত-বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নয় পৃথিবীর সব দেশেই কম বেশি বিধর্মীদের প্রতি মুমিনদের এই মনোভাব রয়েছে।কারন পৃথিবীতে একমাত্র ধর্ম ইসলাম যেখানে আল্লাহ স্বয়ং অমুসলিমদের বলেছেন,কাফের-অপবিত্র-নিকৃষ্টতম জীব-অকৃতজ্ঞ-অধঃপতিত-বিশ্বাসঘাতক-নোংরা-কলুষিত-পাপিষ্ঠ-গরু বাছুর-কুকুর-গাদা-তারা সৃষ্টির নিকৃষ্টতম জীব ইত্যাদি। এগুলোর প্রত্যেকটি বিশেষনের পিছনে আয়াত নাম্বার রয়েছে।ইসলাম ও হিন্দু ধর্মের মধ্যে মৌলিক পার্থক্যের কারনেই উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে উপর উপর কিছু আদান-প্রদান ঘটলেও উভয়ের মধ্যে ঐক্য বা মিলন সম্ভব হয়নি।এই ধারা পরিবর্তনের কোন সুযোগ নেই।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদানের কথা বাংলাদেশী মুসলিমরা ভুলে গিয়েছে।কারন যে উদ্দেশ্য নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল বর্তমানে তার কিছুই অবশিষ্ট নেই।বাংলাদেশ এখন শুধু একটি ভূখন্ড মাত্র।বাকি সব ইসলামী ভাবধারা আবর্তীত।দুটি দেশের মধ্যে একটি অদ্ভুত মিল রয়েছে।ভারতে যখন সংশোধিত নাগরিকত্ব বিল পাস হয়েছে তখন বাংলাদেশ ঘুরিয়ে এই বিলের বিরোধিতা করেছে।বিল পাসে বাংলাদেশী মুসলমানদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।কারন এই নাগরিকত্ব আইন পাসের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনুপ্রবেশকারী মুসলিমরা।ফলে দুই দেশের বন্ধুত্বে ফাটল ধরবে এটাই
স্বাভাবিক। ক্রিকেটে পাকিস্তান জিতলে ভারতীয় মুসলিমরা টিভিতে মালা পরায় কলকাতার পার্ক সার্কাসে রাজা বাজারে ব্যান্ড বাজিয়ে মিছিল করে পাকিস্তান জিন্দাবাদ শ্লোগান দেয়।একই ভাবে ঢাকা স্টেডিয়ামে ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট খেলা অনুষ্ঠিত হলে গ্যালারি উপসে পড়ে পাকিস্তানের পক্ষে গলা ফাটায়।মেয়েদের গলায় পোস্টার শোভা পায় “আফ্রিদি মেরি মি”।আসলে এরা সবাই এক জাতিত্বের বন্ধনে আবদ্ধ।এরা কেউ বাংলাদেশের নাগরিক কেউ ভারতের কিন্তু এরা এক সূত্রে গাথা নাগরিক পরিচয় ভিন্ন হলেও ধর্মীয় পরিচয়ে এরা এক।এগুলো দুই দেশের বন্ধুত্বে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির একটি কারন।
দুটি দেশেই ধর্ম নিরপেক্ষতা সাংবিধানিক ভাবে স্বীকৃত।কিন্তু ভারতে যেখানে নির্যাতন নিপীড়নে হিন্দুর সংখ্যা কমে গিয়েছে সেখানেই ধর্ম নিরপেক্ষতা অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে।একই ভাবে বাংলাদেশে হিন্দু জনসংখ্যা ২৮% থেকে এখন ৯% এ নেমে গিয়েছে।দেশটি ধর্ম নিরপেক্ষ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ বলে নেতারা গলা ফাটায় কিন্তু কেন হিন্দুরা দেশত্যাগ করে সে ব্যাপারে কোন কথা বলে না।এই ঘটনা প্রত্যক্ষ ভাবে দুই দেশের জনগনের মধ্যে বন্ধুত্বে ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে।যোগাযোগ নিয়ে অনেক কথা বলা হয় ভারতকে নাকি অবৈধভাবে সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত যত সুযোগ সুবিধার কথা বলা হয় তার একটিও অনৈতিক বা প্রোটোকল ছাড়া হয়নি।পাকিস্তান আমলে ভারতের সাথে পূর্ব-পাকিস্তানের যত কানেক্টিভিটি ছিল তার এখনো অনেক বাকি।এই নিয়ে অনেক ভারত বিদ্বেষী প্রোপাগাণ্ডা ছড়ানো হয় যার কোন ভিত্তি নেই।এগুলো দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।ভাষা শিল্প সংস্কৃতি খাদ্যাভ্যাস চালচলন কথাবার্তার মধ্যে যতই মিল থাকুক না কেন ধর্মীয় ভাবাবেগ সেখানে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।ঢাকার রাস্তায় প্রকাশ্যে ভারত আক্রমণের হুশিয়ারী দেয়া হয়,ওয়াজ মাহফিল করে বলা হয় হিন্দুর সম্পত্তি দখল করলে জান্নাত না পেলেও জাহান্নামে যেতে হবেনা।মূর্তি পূজা,মূর্তি ভাঙার উস্কানিমূলক বয়ান দিয়ে হিন্দুদের মানুষিকভাবে দুর্বল করে দেশত্যাগে বাধ্য করা দুটি সম্প্রদায়ের বন্ধুত্বের নিদর্শন হতে পারেনা।এসবই সুসম্পর্কের পথের কাটা।
দুই দেশের জনগনের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার এসব উস্কানিমূলক প্ররোচনার বিরুদ্ধে নীরব।উপরন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন মদিনা সনদ ও মহানবী হজরত মুহাম্মদের বিদায় হজের ভাষনের নির্দেশনা অনুসারে দেশ চলবে।এই সরকার আরো বলেছে তারা পবিত্র কোরান এবং সুন্নাহ বিরোধী কোন আইন পাশ করবে না।মুসলমানদের জন্য এই প্রতিশ্রুতি যতটা সফল হিন্দুদের অস্তিত্বের প্রশ্নে ততটাই বিপদ সঙ্কুল।এর প্রভাবে বাংলাদেশ এখন একটি জলন্ত আগ্নেয়গিরিতে অবস্থান করছে।দিন যতই যাচ্ছে হিন্দুরা ততই বিপন্ন হয়ে পড়ছে।এসবই দুই দেশের বন্ধুত্বের উপর প্রভাব পড়ছে।বন্ধুত্ব একক কোন বিষয় নয় তারজন্য চাই সহমর্মিতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।নইলে এই সম্পর্ক আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে।