হ্যাপি বার্থডে প্রভূ যীশু!
………………………………………..
যীশু খ্রিস্টের সত্যিকারের কোন অস্তিত্ব থেকে থাকলে তার পিতৃহীন জন্ম নিয়ে নানা কথা বলা যেতো। কাহিনীতে মেরী যেহেতু মন্দিরের সেবাদাসী ছিল তাই তার কুমারীকালে গর্ভবতী হওয়ার পিছনে মন্দিরের কোন সেবায়াতের ভূমিকাই বাস্তবিক। কিন্তু একটা গল্প-মিথকে ধরে নিয়ে যীশুর আলোচনা এই রচনায় প্রাসঙ্গিক নয়। আমরা এখন নানা সূত্র থেকে দেখব যীশু বলতে আদৌ কেউ ছিলেন কিনা। মজার ব্যাপার হচ্ছে, যীশুর কোন অস্তিত্বহীন প্রমাণিত হলে একজন বিশ্বাসী খ্রিস্টান যতখানি মনোক্ষুণ্ন হবে তার চেয়ে হাজারগুণ হবে একজন বিশ্বাসী মুসলমান। তার কাছে মনে হবে, সে এতকাল প্রতারিত হয়ে এসেছে এক প্রতারকের কথাকে বিশ্বাস করে?
ইসলাম ধর্মের মত খ্রিস্টান ধর্মটিও মূলত পৌত্তলিক ধর্ম থেকে বিবর্তিত হয়ে এসেছে। কথিত যীশুর জন্ম সময়কালে ইহুদীরা তিনটি গোষ্ঠিতে বিভক্ত ছিল- ফারিসিজ, এসেনিজ ও সাদুসিজ। এই সাদুসিজরাই ছিল মুসা নবীর অনুসারী। ফারিসিজ ও এনেসিজরা ছিল গৌতম বুদ্ধের অনুসারী। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দিতে সেলুসিড ও টলেমী রাজ্যে যে বুদ্ধবাদ প্রতিষ্ঠিত ছিল তা সম্রাট অশোকের অধ্যাদেশ সম্বলিত শিলাখন্ডে থেকে জানা যায়। বহু প্রমাণ রয়েছে গবেষকদের হাতে এসেনিজ গোষ্ঠিরাই পরে খ্রিস্টান ধর্মের সূচনা করে। বৌদ্ধবাদের যে অহিংস মতবাদ যীশুর চরিত্র নির্মাণে তার ছোঁয়া খুঁজে পাওয়া যায়। তার কুমার জীবন, খ্রিস্টান ফাদার-সিস্টারদের বৈরাগ্য সবই প্রাচীন এনেসিজদের ধর্মীয় বিশ্বাস ছিল। এনেসিজরা বুদ্ধবাদের অনুসারী হলেও তারা ইহুদী হিসেবেই পরিচিত ছিল। খ্রিস্টান ধর্মটিকে গড়েপিঠে তুলেন মূলত সাধু পল। তিনি এসেনিরা যে ধর্মমত বিশ্বাস করত সেটাই থিম হিসেবে ধরে সুসমাচার প্রচার শুরু করেন। এসেনিজরাই ফেরেস্তা, বেহস্ত-দোযগ, পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা, ক্রুশ বিদ্ধ ঈশ্বর পুত্রের পাপমোচন ইত্যাদিতে বিশ্বাস করত। এসেনিজরা বিশ্বাস করত গৌতম বুদ্ধ ভবিষ্যত বাণী করেছিলেন তার মৃত্যুর ষোলশো বছর পর একজন অবতার পৃথিবীতে আসবেন। সেই সময়কাল পার হলে এসনিজ ইহুদীরা যারা বুদ্ধিস্ট ছিল তারাই যীশুর আবির্ভাবের ঘোষণা দেন। পরে যীশুর জন্ম কাহিনীটি আর্যদের সূর্য কিংবদন্তির সঙ্গে জুড়ে দেয়া হয়।
সূর্য কিংবদন্তি ছিল পৌত্তলিক আর্যদের ধর্মের নিউক্লিয়াস। এই বিশ্বের সমস্ত শক্তির উৎস সূর্যকে ধরে তাকেই ঈশ্বররূপে আর্যরা গণ্য করত। বেদের আর্যরা মনে করত রাশিচক্রের অশ্ব (মেষ) সূর্য দেবতা। তিনি মৃত্যুবরণ করেন মানবজাতির পাপের কারণে। এই কারণে অশ্বমেধ যজ্ঞের প্রচলন হয়। এসেনিজরাও শুরুতে ক্রাইস্টের যে পুজা করত তা ভেড়ার আকৃতি বানিয়ে। কারণটি ঐ রাশিচক্রের মেষ (ভেড়া) রাশিকে আকৃতি দেয়া। প্রাচীনকালে এই ভেড়াকে বলা হত ইশ্বরের ভেড়া যে পৃথিবীর পাপ মোচন করতে এসেছেন। কনস্ট্যান্টাইন পোগোনেটাস রাজত্বকালে ষষ্ঠ সিনোড দ্বারা সিদ্ধান্ত হয় প্রাচীন প্রতীক মেষের পরিবর্তে একটি মানুষ্যাকৃতি ক্রুশ বিদ্ধ অবস্থায় দেখানো হবে। ষষ্ঠ সিনোডের এই সিদ্ধান্ত পোপ আড্রিয়ান-১ কর্তৃক স্বীকৃত করা হয় (Quoted is Higgin’s Anacalypsis, vol ii P.3)।
প্রাচীন পৌত্তলিক ধর্মে ক্রুশ ছিল পবিত্রতম ধর্মীয় প্রতীক। প্রাচীন মিশরিয়ানরা ক্রুশকে পবিত্র চিহৃ বলে বিশ্বাস করত। তাদের বহু দেবতার গায়ে বা হাতে এই চিহৃ অংকিত থাকত। মিশরের অন্যতম দেবতা হোরাসের হাতে ক্রস ধরা চিহৃ দেখা যায়। মূলত প্রাচীন মশিরীয়ানরাই ক্রসের ব্যবহার শুরু করে বলে ধরা হয়। আলেকজান্ডার যখন সম্রাট সেরাপিসের মন্দির ধ্বংস করেন সেই মন্দিরের পাথরের ভিত্তি ছিল ক্রসের উপর যেটা বর্তমান গির্জাগুলোতেও হয়ে থাকে। প্রাচীন মিশরীয় দেবতা ওসিরিস ক্রুশ ধারণ করে মানুষের দিকে দৃষ্টিপাত করলে মানুষ অমরত্ব লাভ করত। এছাড়া গ্রীক, ব্যবিলীয়ন, পার্শিয়ানদের মধ্যে ক্রুশের ব্যবহার ছিল। প্রাচীন ভারতে ব্রাহ্মণদের কাছে ক্রুশ ছিল একটি রহস্যময় পবিত্র চিহৃ। হিন্দুদের অগ্নি দেবের চিহৃ হচ্ছে ক্রুশ। বেনারস ও মথুরায় দুটি প্রধান মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ত্রুশের উপর। এমনকি হিন্দুদের ঈশ্বর শ্রীকৃষ্ণকে ক্রুশে চড়িয়ে হত্যা করা হয়েছিল বলে প্রাচীন ধর্মীয় তথ্য থেকে জানা যায় (Bible Myth, page 187, fiaure 7)।
পৃথিবীর ধর্মগুলোর একটি ধারাবাহিক ইতিহাস রয়েছে। প্রাচীন আর্যদের সূর্য কিংবদন্তি থেকেই পৌত্তলিক ধর্মগুলো পড়ে উঠেছিল হাজার হাজার বছর ধরে লালন পালনের মাধ্যমে। পরবর্তিকালে একেশ্বরবাদ যা সেমিটিক ধর্ম রূপে বিকাশিত হয়েছিল সেগুলোও ছিল পৌত্তলিক ধর্মের উৎস থেকে ধার করা। খ্রিস্টান ধর্মটি এসেনিজ ইহুদীদের সৃষ্টি সেটি উপরে লিখেছি। রাশিচক্রের মেষ রাশি ২৫ ডিসেম্বর সূর্যকে অতিক্রম করে, তাই ঈশ্বরের মেষ ২৫ ডিসেম্বর পূর্ণ জীবন লাভ করে। এটাই যীশুর জন্মদিন যা এক সময় একটি ভেড়ার আকৃতিতে পুজিত হত। খোদ খ্রিস্টান চার্চই তাদের গোপন নথিতে ভেড়ার বদলে একটি মানুষ্যাকৃতিতে ক্রাইস্টের আদল দেয়ার সিদ্ধান্ত হয় সেকথা জানা যায়। এইরকম একটি কাল্পনিক চরিত্রকে ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হযরত মুহাম্মদ নবী হিসেবে স্বীকার করেছেন এবং সাত আসমানে গিয়ে যীশুর সঙ্গে সাক্ষাতের দাবী পর্যন্ত করেছেন! এত বড় ধাপ্পাবাজির কথা ধর্মের ইতিহাসে সম্ভবত দ্বিতীয়টি নেই। ভেবে রীতিমত ভিড়মি খেতে হয়…।
(সূত্র: এরিয়ান সান-মাইথ: দ্য অরিজিন অব রিলিজিয়ন্স)
[রি-পোস্ট]