জন্ম ও কর্মজীবন
যিনি বাংলাদেশের[৩] (তৎকালীন বাংলা) নড়াইলের ডুমদী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার আসল নাম বিজয় অধিকারী।[৪] কবি তার ভক্ত ও স্থানীয়দের কাছে ‘পাগল বিজয়’ হিসেবে সমধিক পরিচিত। তার বহু জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে এ পৃথিবী যেমন আছে, তেমনই ঠিক রবে / সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে, পোষা পাখি উড়ে যাবে সজনী একদিন ভাবি নাই মনে”, তুমি জানো না রে প্রিয়/ তুমি মোর জীবনের সাধনা , ” আষাঢ়ের কোন ভেজা পথে ” প্রভৃতি অন্যতম।
তাঁর পিতার নাম নবকৃষ্ণ বৈরাগী ও মাতার নাম হিমালয় কুমারী। তিনি
স্থানীয় টাবরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে
পড়ার সময়ে নেপাল বিশ্বাস নামক একজন শিক্ষকের কাছে যাত্রাগানের উপযোগী
নাচ, গান ও অভিনয় শেখেন। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য তিনি বেশ
কয়েকটি স্কুল পাল্টান। প্রায় সবখানেই তিনি এমন এক বা একাধিক শিক্ষক পান,
যাদের কাছে তিনি গান শেখার সুযোগ পেয়েছিলেন। অল্প বয়সে পিতামাতা হারানোয়
তার লেখাপড়া বেশিদূর এগোয়নি। দশম শ্রেণি পর্যন্ত তিনি লেখাপড়া করেন।
তিনি স্থানীয় স্কুলে কিছুদিন শিক্ষকতার কাজ করেন। কিছুদিন করেন
নায়েবের কাজ। পাশাপাশি তিনি নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের লোক ও আধুনিক গান চর্চা
করতেন। ১৯২৫ সালে তিনি গোপালগঞ্জের কবিয়াল মনোহর সরকারের কাছে কবিগান
শেখেন। কিছুদিন পর তিনি রাজেন্দ্রনাথ সরকারের সংস্পর্শে আসেন এবং তার কাছেও
কবিগানের তালিম নেন।
১৯২৯ সালে বিজয় সরকার নিজের একটি গানের দল করেন এবং কবিয়াল হিসেবে
পরিচিতি এবং জনপ্রিয়তা লাভ করেন। তিনি গানের কথা এবং সুর করতেন। ভাটিয়ালী
সুরের উপর ভিত্তি করে তার ধুয়া গানের জন্য তিনি বিপুল জনপ্রিয়তা পান।
তিনি রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল ইসলাম, জসীমউদ্দীন, আব্বাসউদ্দীন আহমদ
প্রমুখের সান্নিধ্যে আসেন।
বিজয় সরকার প্রায় ৪০০ সখি সংবাদ এবং ধুয়া গান রচনা করেন। এর মধ্যে কিছু কাজ বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ
থেকে প্রকাশিত হয়। তিনি বাংলা একাডেমী, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী, এবং
রেডিও-টেলিভিশনেও কবিগান পরিবেশন করেন। বাংলাদেশ ও ভারতে তিনি আনুমানিক
৪০০০ আসরে কবিগান পারিবেশন করেন। এছাড়া তিনি রামায়ণ গানও পরিবেশন করতেন।
বিজয় সরকার-এর পারিবারিক উপাধি ছিল বৈরাগী। তিনি নিজে বৈরাগী উপাধি
ত্যাগ করে অধিকারী উপাধি গ্রহণ করেন। কবিয়াল হিসেবে খ্যাতি অর্জন করার পর
তিনি অবশ্য বিজয় সরকার নামে পরিচিত হয়ে পড়েন।
পুরস্কার ও সম্মাননা
২০১৩ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করে।