জঙ্গিদের কোন ধর্ম নেই, কিন্তু ধর্মে জঙ্গি আছে।।

যদিও জঙ্গিদের কোন ধর্ম নেই তবু সব জঙ্গিরা কেন মুসলমান হয়- এই সরল অংকটি যারা ইচ্ছে করেই মিলাতে চাইত না তারাই বাংলাদেশের এক জঙ্গিকে ‘রাজিব গান্ধি’ নামে ডাকত। এই নামে ডাকলে বেশ একটা হিন্দু হিন্দু ফ্লেবার পাওয়া যায়। একইভাবে কাস্মিরে এক ‘হিন্দু জঙ্গিকে’ ভারতের লিবারেল মিডিয়া আটক করেছে দেখলাম! মিডিয়া আটক করেছে বললাম কারণ তারা এতদিন বলে এসেছিল জঙ্গিদের কোন ধর্ম নেই। কিন্তু তারাই এখন লিখছে ‘হিন্দু জঙ্গি স্বন্দীপ’! স্বন্দীপ মুসলিম হয়ে আদিল নাম নিলেও সে হিন্দুই থেকে যাবে কারণ সে জঙ্গি হিসেবে ধৃত হয়েছে। আইএসের সিদ্ধার্থ ধর নামের ভারতীয় সদস্যকে নিয়েও এই রকম খেলা হয়েছিল। সে যে মুসলিম মেয়েকে বিয়ে করে ধর্মান্তরিত হয়ে হজ থেকে ফিরেই জঙ্গি ভাবাপন্ন হয়ে গিয়েছিল সেটা চেপে রেখে তাকে ‘সিদ্ধার্থ ধর’ ‘আইএসের হিন্দু জঙ্গি’ এভাবেই সব জায়গায় বর্ণনা করা হতো। ‘জঙ্গিদের কোন ধর্ম নেই’ এটা যে নিজেদের ছাল বাঁচানোর আয়োজন ছিল সেটা ‘হিন্দু জঙ্গি’ আবিস্কার করা থেকে স্পষ্ট হয়ে পড়ে। যদিও এইরকম প্রচেষ্টা বেশ পুরোনো। যে সব হাদিসের বক্তব্য যৌন নিপীড়ন, মানবাধিকার বিরোধী বলে প্রতীয়মাণ সেসব হাদিস বর্ণনাকারী ইহুদী থেকে ধর্মান্তরিত হলেই সব দায় তার উপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা হতো। বক্তা পরোক্ষভাবে বলতে চায় রাবি পূর্বে ইহুদী ছিলেন এটা মাথায় রাখতে হবে… মানে ইহুদীরা তো ইসলামের নিন্দা করবেই…।

ইসলামের ভেতর প্রচন্ড ইহুদী বিদ্বেষ বিদ্যমাণ থাকার পরও, মুসলমানরা সেই বিদ্বেষ চর্চা জারি রাখার পরও নিজেদের উপর মুসলিম বিদ্বেষ, ইসলামোফোবিয়া, ইহুদী ষড়যন্ত্র… হওয়ার অভিযোগ করে থাকে। সারা পৃথিবীতে ইসলামী সন্ত্রাসবাদীদের উত্থানে জিহাদীরা যখন কুরআন-হাদিস দিয়ে তাদের মতবাদ প্রচার করে আসছিল তখন ‘জঙ্গিদের কোন ধর্ম নেই’ বলে একটি বিশেষ ধর্মীয় মতবাদকে আড়াল করতে চেয়েছিল সবাই। বুখারী শরীফের জিহাদ অধ্যায়, কুরআনের আনফাল, তওবা’র মত দু-দুটো সশস্ত্র জিহাদের উপর সুরা থাকার পরও ‘জঙ্গিদের কোন ধর্ম নেই’ ছিল মুসলিম মডারেট এবং অমুসলিম সেক্যুলার-বামদের জপ মন্ত্র। কিন্তু সিদ্ধার্থ ধর, স্বন্দীপ নামের কেউ গ্রেফতার হলেই সেটা ‘হিন্দু জঙ্গি’! এই গ্রুপ এখন অমরনাথের তীর্থ যাত্রীদের উপর জঙ্গি হামলাকে কোন বিশেষ ধর্মের উপর হামলা বলতে নারাজ। তারা বলছেন এটা কোন ধর্মের উপর হামলা নয়, মানবতার উপর হামলা! আশ্চর্য সেই হামলার ঘটনায় বাস চালাক ‘সেলিমকে’ বিশেষ একটা চরিত্র করে বার বার তুলে ধরা হয়েছে এ জন্য যে এই বাস চালাক একজন মুসলিম, সে তার বাসের বেশির ভাগ তীর্থ যাত্রী হিন্দুকে রক্ষা করতে সমর্থ হয়েছে…। এই কোণা দিয়ে সেলিমের ধর্মীয় পরিচয় বের করা ফেলা হলো ঠিকই। ওদিকে অমরনাথে কারা তীর্থ করতে যায়? কেন কি বিবেচনায় তাদের টার্গেট করা হয়েছিল? যারা হামলা করেছে কি তাদের ধর্মীয় দর্শন?

ইউরোপে নিরাপত্তার স্বার্থে হিজাব নিষিদ্ধ করলে, ফ্রান্সের স্কুলের বাচ্চাদের ইউনিফর্ম থেকে সব রকম ধর্মীয় ও বর্ণবাদী চিহৃ মুছে ফেলার চেষ্টা হলেই যখন মুসলিমরা তাদের বোরখা-হিজাব আকড়ে ধরে- তখন এরাই ইউরোপে ইসলামোফোবিয়া, মুসলিম বিদ্বেষ হচ্ছে বলে হৈ চৈ শুরু করে দেয়। মুসলিম মডারেটদের ভন্ডামী নতুন করে বলার কিছু নেই। কিন্তু অমুসলিম সেক্যুলারদের আবারো সেই একই ভুল। ইসলামের জিহাদের মত সন্ত্রাসবাদের শিকার হচ্ছে মানুষ। শিবসেনা, সংঘ পরিবারের হিন্দুত্ববাদের শিকার হচ্ছে মানুষ- এটা সোজাসুজি বললেই সমস্যার সমাধান মিলবে। গরুর মাংস খেতে বাধা দেয়ার ঘটনায় গরুর মাংস খেয়ে প্রতিবাদ করার সঙ্গে কল্পনা করুন সৌদি নারীদের ইসলামী শাসনের নির্মমতার প্রতিবাদে কোলকাতার রাস্তায় নারী অধিকার কর্মীরা বোরখা পুড়িয়ে প্রতিবাদ করল- আপনি সমর্থনে হাত বাড়াবেন নাকি ইসলাম বিদ্বেষ বলে বেঁকে বসবেন? মুসলমানদের গরুর মাংস খাওয়ার অধিকারের চেয়ে তাদের সমাজের নারীদের তিন তালাক বাতিল হওয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আজকে ইসলামী সন্ত্রাসবাদ নিয়ে এই যে গা বাঁচানোর খেলা- এটা আগামী পৃথিবীকে নতুন করে ধর্মীয় সহিংসতা বাড়িয়ে দিবে। খ্রিস্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ ধর্মীয় পরিচয়ে মুসলমানদের উপর হামলা শুরু হতে পারে। তখন এইসব একচোখারা কি এখনকার মতই গান গাইবেন? বার বার বলে আসছি সেক্যুলাররা ফেল করা মানে ১৮০ ডিগ্রী ঘুরে তাদের সম্পূর্ণ বিপরীত আদর্শই জয়ী হওয়া। সারা পৃথিবীর মুসলমানদের আত্মজিজ্ঞাসার পরিবর্তে তাদের আত্মতুষ্ঠিতে আটকে রাখার জন্য দায়ী অমুসলিম সেক্যুলাররা। এর ফল ভাল হবে না…।