তর্কবাগীশ সবজান্তা বামপন্থী এবং মূর্খ মাঝির গল্প…
একটা বামপন্থী গ্রুপে বামপন্থীদের সঙ্গে জোর তর্ক বিতর্ক হল। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই এই লেখা। এই অভিজ্ঞতা কম বেশি সবারই হয়তো আছে। এই বামপন্থীরা সত্যিই প্রকৃতির এক অদ্ভুত সৃষ্টি। চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখালেও এরা দেখতে তো চাইবেই না, বরং অদ্ভুত সব মার্ক্সীয় তত্ত্ব খাড়া করে বাস্তব দেখাটাকেই অস্বীকার করবে।
অস্বীকার করার কোন উপায় নেই, দুটি সম্প্রদায়ের মানসিকতার একটা পরিষ্কার পার্থক্য আছে, যেটা আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপট, শিক্ষার হার বা কোন কিছু দিয়েই কোনমতেই ব্যাখ্যা করা যায় না। কিন্তু এরা এটা স্বীকারই করবে না। যদি হিন্দু মুসলমানদের মধ্যে বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করে তুলনা করা হয়, দেখা যাবে সুস্পষ্ট পার্থক্য। দেখা যাবে একজন তথাকথিত অসাম্প্রদায়িক শিক্ষিত প্রগতিশীল আলোকপ্রাপ্ত মুসলমানও একজন সাধারণ হিন্দুর চেয়েও বেশি সাম্প্রদায়িক হয়। একটি হিন্দু অধ্যুষিত এবং অপরটি মুসলিম অধ্যুষিত পাশাপাশি দু’টি গ্রাম, আর্থ সামাজিক অবস্থাও এক। অথচ একটি গ্রামে আইনের শাসন চলে না, প্রশাসনকেও সমঝে চলতে হয়। মুখে বড় বড় কথা বলা ‘মানুষে মানুষে ভেদাভেদ নেই’ বলা সেকুলার দাদারা সেখানে পোস্টিং নিতে চান না। খুব সস্তায় জমি বা ফ্ল্যাট পেলেও কিন্তু সেখানে যাবেন না। যদিও সম্পূর্ণ হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় একটি মুসলিম পরিবার থাকতে কিন্তু কোন অসুবিধা হয় না। কারনটা কি? সবাই জানে, কিন্তু স্বীকার করবে না কিছুতেই।
যেমন ধরুন, শ্রীজাতর পাশে তো এদেশের তাবৎ প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীরা দাঁড়িয়েছেন, এমনকি ধর্মভীরু অনুকূল ঠাকুরের শিষ্য শীর্ষেন্দুর মত লেখকও। বাংলাদেশে তসলিমা বা হুমায়ুন আজাদদের পাশে হুমায়ুন আহমেদরা দাঁড়িয়েছিলেন কি? বরং হুমায়ুন আহমেদদের বক্তব্য ছিল এরকম লিখলে তো এরকমই হবে। বলুন তো, আর্থ সামাজিক অবস্থা বা শিক্ষায় এরা মুসলিম সমাজের ঠিক কোন শ্রেণীতে পরেন? এই যদি হয় মুসলিম প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীদের মানসিকতা, সাধারণ মুসলমানদের মানসিকতাটা কি? আসলে বাস্তবটা হল হাতেগোনা কয়েকজন মুসলমান পদবীধারী নাস্তিক (ইসলামি পরিভাষায় ‘মুরতাদ’) ছাড়া হাজার চেষ্টা করলেও এদের প্রগতিশীলতা, অসাম্প্রদায়িকতা একটা লেভেলের উপর উঠবেই না।
এবার ধরুন, পাশাপাশি কয়েকটি দেশের তুলনা টানলাম – হিন্দু প্রধান নেপালও কিছু দিন আগে হিন্দু রাষ্ট্র থেকে ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হয়ে গেছে, সেদেশের সাধারন মানুষ তো বাধা দেয় নি। ঠিক এই ভাবে মুসলিম প্রধান পাকিস্তান কোনদিন ইসলামিক রাষ্ট্র থেকে ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হয়ে যাবে – আমরা কি কখনো কল্পনাও করতে পারি? কেন পারি না? এবার বামপন্থীরা বেশ উজ্জীবিত হয়ে বলে উঠবেন, এটা তো নেপালের কমিউনিস্টদের কৃতিত্ব। আরে, আমিও তো সেকথাই বলছি – মুসলিম প্রধান বাংলাদেশ বা পাকিস্তানে কমিউনিস্টরা কেন সেখানকার মানুষকে এইভাবে উজ্জীবিত করতে পারে না? যে বামপন্থা একদা হিন্দু রাষ্ট্র নেপালের হিন্দুদের সমাজতান্ত্রিক আদর্শে উদ্বুদ্ধ করে ধর্ম ভুলিয়ে দেয়, সেই একই বামপন্থায় উদ্বুদ্ধ হয়েই বাম দূর্গ কেরালা কেন পরিণত হয় জেহাদী ঘাঁটিতে, সেই একই বামপন্থা সেখানে কেন মুসলমানদের উদ্বুদ্ধ করে মধ্যযুগীয় শরিয়তের সমর্থনে সাড়া জাগানো মিছিল করতে? যে বামপন্থা এই কেরলে জাতীয়তাবাদী যুবকদের একের পর এক জেহাদী কাায়দায় খুন করায়, সেই বামপন্থাই দলে দলে মুসলমান যুবকদের আই এস এ পাঠায়।
যাই হোক, ওপারের বিপ্লবের জন্য উপযুক্ত উর্বর ভূমিতে কেন বিপ্লবের চাষাবাদ হল না ? সব আগুন খেকো বিপ্লবীদের কেন এপারেই আসতে হল ? ওপারে কি প্রলেতারিয়েত কম ছিল? দাড়ি-লুঙ্গিধারী শ্রমজীবি মানুষ, খেটে খাওয়া শোষিত মানুষ, হ্যাভ নটস তো অনেক ছিল। তাহলে ওপারের কমরেডরা ওই দাড়ি-লুঙ্গিধারী হ্যাভ নটস-দেরকে নিয়ে ওপারে বিপ্লব করল না কেন? বাংলাদেশ বা পাকিস্তান সহ বিভিন্ন মুসলিম প্রধান দেশগুলিতে কমিউনিস্টদের তেমন অস্তিত্ব নেই কেন? এদেশে জনসংখ্যার অনুপাতের সঙ্গে ভীষণ রকম বেমানান প্রচুর মুসলিম বামপন্থী দেখা যায়, এটা ঠিক হলে তো মুসলিম প্রধান বাংলাদেশ বা পাকিস্তান কবেই অসাম্প্রদায়িক হয়ে যেত, লাল বিপ্লব ঘটে যেত । কিন্তু কেন জানি মুসলিম প্রধান সেসব দেশে সেক্যুলারিজমের ‘স’ ও নেই বামপন্থার ‘ব’ ও নেই । রহস্যটা কি?
কি বললেন, বাংলাদেশে বামপন্থীরা নেই? এবার এনারা এড়ে তর্ক জুড়ে দেবে। কথা শুনে শুনে মনে হবে যেন বামেরা সেদেশের প্রধান বিরোধী দল, সেদেশের প্রতিনিয়ত অকথ্য সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিবাদে শাহবাগ স্কোয়ারে দল বেঁধে কাছিম আর শূয়োর খেয়ে প্রতিবাদ জানায়, জঙ্গী আন্দোলন করে, পদক টদক যার যা ছিল সব ফিরিয়ে দিয়েছে।পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বাধীনতার দাবি জানায় জোর গলায়! মৌলবাদের বিরুদ্ধে সদা তৎপর(!) এই সুবিধাবাদী ক্ষমতালোভী বামপন্থীরা যে ক্ষমতার স্বাদ পেতে সেদেশে জামাতের মত কট্টর ইসলামিক মৌলবাদী দলের সঙ্গে জোট করেছিল – সেটা কিন্তু বেমালুম চেপে যাবে। টিমটিমে যেটা আছে, সেটাও তো ইসলামাইজ্ড বামপন্থা, সেখানকার গভীর ইসলাম বিশ্বাসী বামপন্থী নেতারা ধর্ম প্রাণ মুমিন হিসেবে হজ টজ করে। যে দেশের বামপন্থার কিংবদন্তি নায়ক মৌলানা ভাসানীর মতো মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক মানসিকতার মানুষ, সেখানকার বামপন্থা যে আসলে কি, সহজেই অনুমেয়। সেখানকার কমিউনিস্ট পার্টির সদর দফতরে আছে নামাজ আদায়ের সুব্যাবস্থা ! মুসলিম প্রধান দেশে যে এটুকু আছে, সেটা নিয়েই এদের কত গর্ব ! স্বাভাবিক !
একটা বিশেষ ব্যপার লক্ষ্য করেছেন কি? ইসলাম বিরোধিতা বা সমালোচনার অভিযোগে বাংলাদেশে একের পর এক ব্লগার খুন হলেও, একজন বামপন্থীকেও ইসলামিক জেহাদীরা আজ পর্যন্ত খুন করেছে কি? বা ঐসব ব্লগারদের একজনও বামপন্থী ছিলেন কি?
যা বলছিলাম নেপালের কথা, কিছু দিন আগেও হিন্দু রাষ্ট্র থাকা হিন্দু প্রধান নেপালের সঙ্গে ইসলামিক রাষ্ট্র সৌদি, পাকিস্তান সহ অন্যান্য মুসলিম প্রধান রাষ্ট্রের পার্থক্যটা কি অনেক কিছু প্রমাণ করে দিচ্ছে না ? একদা হিন্দু রাষ্ট্র থাকা নেপাল কি ইসলামিক রাষ্ট্র সৌদির মতোই ছিল? শরিয়তের মত করে মনু সংহিতাকে সংবিধান বানিয়েছিল নেপাল ? সৌদীর মতোই নেপালেও বিধর্মীদের ধর্মাচরণ নিষিদ্ধ ছিল? সৌদীতে যেমন একটিও মন্দির বা চার্চ নেই, এমনকি অমুসলিমদের নাগরিকত্ব পর্যন্ত নেই, নেপালেও অহিন্দুদের সঙ্গে এমনটাই করা হত ? সেই হিন্দু রাষ্ট্র থাকা নেপাল আর ইসলামিক রাষ্ট্র সৌদির পার্থক্যটাই কি হিন্দু আর মুসলমানদের মানসিকতার পার্থক্য সূচিত করছে না?
না, এরা সেটা মানবে না – সাধারণ হিন্দু আর সাধারণ মুসলমানদের মানসিকতা নাকি একই ! কিন্তু তাহলে মুসলিম প্রধান বাংলাদেশে বরং নেপালের উল্টোটা কি করে হল? ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে জন্ম নিয়েও বাংলাদেশের রাষ্ট্র ধর্ম সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের দাবি মেনে পরে ইসলাম হয়ে গেছে। কেউ বাধা বাধা দিয়েছিল কি ? নাকি বরং সাধারণ মুসলিম জনতা খুশীতে ফেটে পড়েছিল? বাংলাদেশে মৌলবাদী জামাতের ভোট মাত্র দুই শতাংশ। অথচ দেশটাকে আবার ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র ঘোষণার একটা চেষ্টা করেও পিছিয়ে আসতে হয় বাকী এত বিশাল সংখ্যক ‘অসাম্প্রদায়িক সাধারণ মুসলমান’ এর প্রতিক্রিয়ার কথা ভেবে! ভাবুন তো, এই হিন্দু সংখ্যাগুরু ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র ঘোষণা করতে গেলে সংখ্যাগুরু হিন্দুদের বড় অংশই কি বিক্ষোভে ফেটে পড়বে না?
এবারও নিজেদের দিকে ঝোল টানার একটা বৃথা চেষ্টা হবে – আসলে এদেশের মানুষ যে অনেক বেশি সচেতন, এর কৃতিত্ব এদেশে সক্রিয় বামপন্থী চিন্তাধারার। আরে, আমারও তো এটাই প্রশ্ন – ওসব দেশে কেন বামপন্থা সক্রিয় হতে পারে না? আর যদি সত্যিই সক্রিয়তা একইরকম হয়, দুটো সম্প্রদায়ের এই পার্থক্যের কারণটা তাহলে কি ? নাকি, মুসলিম প্রধান দেশে টিঁকে থাকতে গিয়ে বামপন্থারও ইসলামীকরণ হয়ে গেছে? নাহলে জামাতের মত কট্টর মৌলবাদী দলের সঙ্গে জোট হয় কিভাবে? একই দেশ ভেঙ্গে সৃষ্টি হওয়া আমাদের প্রতিবেশী মুসলিম প্রধান দুটি দেশে মৌলবাদের এত রমরমা কেন, এই সোজা প্রশ্নের সোজা কোন উত্তর তো পাবেনই না, এই বাস্তবটাকে স্বীকার পর্যন্ত করবে না এরা।
নাসিরনগর, মালোপাড়া, নারায়ণগঞ্জ, রংপুর সহ সেদেশের বিভিন্ন এলাকায় হিন্দু বসতি গুলিতে যে উন্মত্ত মুসলিম জনতা হায়েনার মত দল বেঁধে হামলে পড়েছিল , এরা কি সাধারণ মুসলমান ছিল না? পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিদের উপর প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদতে কারা অকথ্য নির্যাতন চালাচ্ছে? এমনকি এদেশের ক্যানিং, দেগঙ্গা, কালিয়াচক, ধুলাগড় বা বাদুড়িয়ায় ? নাসিরনগরের কথা শুনে আবার এঁদের কেউ কেউ বলে উঠবেন, সেখানে কিন্তু দুজন মুসলমান হিন্দুদের বাঁচাতে এগিয়ে এসেছিলেন। ভাবুন অবস্থা, ধর্মোন্মাদ মুসলমানের সংখ্যা হাজার হাজার, আর বিপরীতে মাত্র দুজন – অনুপাতটা দেখুন। কোনটা সহী ইসলাম? আসলে যে মাপকাঠি দিয়ে মেপে কোন কোন হিন্দুদের মৌলবাদী আখ্যা দেওয়া হয়, সেই মাপকাঠিতে মাপলে নব্বই শতাংশ মুসলমানই কি মৌলবাদী নয়?
বামেরা এবার উপায়ন্তর না দেখে বেশ গম্ভীর হয়ে বলবে – আসলে মানুষে পার্থক্য নেই, ওসব দেশে মানুষের গনতান্ত্রিক অধিকারটাই নেই, পরিবেশ নেই। কিন্তু আমারও তো এটাই প্রশ্ন – যেকোন মুসলিম প্রধান দেশে কেন কোন স্থিতিশীলতা নেই, গনতান্ত্রিক পরিবেশ কেন নেই বা থাকলেও কেন মজবুত নয় ? রক্তপাত, হানাহানি, অভ্যুত্থান, এ ওকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল – এসবই লেগে আছে, তেল এবং আমেরিকার স্বার্থ বিহীন দেশেও ? এই ভারতবর্ষের মুসলিম প্রধান অংশ গুলি ভেঙে ভেঙে যতগুলো আলাদা রাষ্ট্রের জন্ম হল, প্রত্যেকটি ইসলামিক রাষ্ট্র । একটিও কেন ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হল না ? এতবার ভেঙে মুসলমানদের জন্য আলাদা মুসলিম রাষ্ট্রের জন্মের পরও হিন্দু প্রধান মূল অংশটা কিন্তু ধর্ম নিরপেক্ষতার সব দায় মাথায় নিয়ে রয়ে গেল ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র । ভবিষ্যতে যদি আবার ভাঙে, সেটাও হবে ধর্মীয় রাষ্ট্র। হিন্দু প্রধান মূল অংশটা কি তখনও থেকে যাবে ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হয়ে? কেন এমন?
কিন্তু স্বীকার করাটা যে এদের ধাতে নেই ! যারা এতক্ষণ বলছিল যে একজন সাধারণ হিন্দু আর মুসলমানে কোন পার্থক্য নেই, তারাই এবার এই পার্থক্যের কারণ হিসেবে শিক্ষাকে টেনে আনবে। কিন্তু আমারও তো একই কথা – এত এত স্কুল কলেজ থাকতে এদের মধ্যে মাদ্রাসার এত প্রসার কেন। আমাদেরও তো ছিল সংস্কৃত টোল, এখন আছে কি? ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে মাদ্রাসা। মাদ্রাসাগুলির মধ্যযুগীয় অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশে যে কি শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে, সে তো সবারই জানা। পাকিস্তানের রাজধানী খোদ ইসলামাবাদে স্কুলের চেয়ে মাদ্রাসার সংখ্যা বেশী। এই আধুনিক যুগেও এরা শিক্ষিত হওয়ার চেয়ে ধর্মীয় শিক্ষা কেন চায়, জেহাদী কেন হতে চায়? শিকড়টা কোথায়?
এই যে শিক্ষার কথা বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের জেহাদীদের বেশীরভাগই তো উচ্চ শিক্ষিত। মুসলমানদের এই শিক্ষিত যুব সম্প্রদায় পুরো বিশ্বের মুসলমানদের দুর্দশার আসল কারণ হিসেবে আমেরিকাকে চরম শত্রু মনে করে, আবার এই এরাই প্রতিশোধের আগুনে দলে দলে সেই আমেরিকারই তৈরি আই এস এ যোগ দিচ্ছে, যোগ দিয়ে কোরানের আয়াত ধরে ধরে মানুষ মারছে, বিধর্মী নারীদের ধর্ষণ করছে, জন্নতের লোভে নিজেকে পর্যন্ত উড়িয়ে দিচ্ছে। বোকার মত দলে দলে আমেরিকার ফাঁদে গিয়ে পা দিচ্ছে! বড় অদ্ভুত যুক্তি! আসলে যে বিসমিল্লাতেই গলদ, সেটা এরা কেউ খুঁজতে চাইছে না। জেহাদী আক্রমণ স্থানীয় হলে রাজনীতি আর আন্তর্জাতিক হলে আম্রিকা আর তেলের দোষ ! বিধর্মীদের হত্যা, ধর্ষণের কথা, সারা বিশ্বে ইসলামি খিলাফত প্রতিষ্ঠার নির্দেশ কিন্তু কোন আসমানী কিতাবে লেখা নেই। আসলে আমরা ঐ সাহেবদের বই না পড়া নেহাতই মূর্খ বলেই বুঝতে পারি না এই নাসিরনগর, রংপুর বা বাদুড়িয়া, ধুলাগড় – সবই যে আসলে আম্রিকার চক্কান্ত ! হিন্দু মুসলিমের মধ্যে লড়িয়ে দিয়ে ছোরা, পাইপগান, চাপাতি এসব অস্ত্রের ব্যবসা করতে হবে না ! তবে কেন জানি এদেশে হোক আর ওদেশে, সংখ্যালঘু হোক আর সংখ্যাগুরু – একটা সম্প্রদায়ই শুধু কেন জানি এগুলি করে ! এরাই শুধু বোকার মতো রাজনীতির মোহরা হয়, আমেরিকার মোহরা হয়। নাইজেরিয়ার খ্রীষ্টান দের কচুকাটা করা বোকোহারাম, সোমালিয়ার আল শবাব, ফিলিপিন্সের মোরো ইসলামিক সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলী কিন্তু ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য লড়ছে না ! ভারতের কাশ্মীর, চীনের জিন জিয়াং বা রাশিয়ার চেচেনরাও কিন্তু শুধু স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছে, আলাদা ইসলামিক রাষ্ট্র গঠন বা ইসলামের সঙ্গে এদের কোন যোগাযোগই নেই। কিন্তু তবুও কেন জানি জম্মু কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি পবিত্র রমজান মাসে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী অভিযান বন্ধ রাখার আবেদন জানায় কেন্দ্রের কাছে!
বামপন্থীরা ইসলামিক পক্ষপাতিত্বটা ঢাকতে আরেকটা হাস্যকর যুক্তি খাড়া করে – সংখ্যাগুরুদের মৌলবাদ বেশি বিপজ্জনক, তাই জায়গা বুঝে এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়, লড়াইয়ের অভিমুখও পাল্টে যায়। তাই এরা এদেশে যেমন হিন্দু মৌলবাদের বিরুদ্ধে কথা বলে, বাংলাদেশ পাকিস্তানে মুসলিম মৌলবাদের বিরুদ্ধেও বলে। এদেশে এদের যেমন বামৈস্লামিক বলা হয়, বাংলাদেশেও নাকি এদের বলা হয় যে এরা হিন্দুদের পক্ষে কথা বলে। এরা মৌলবাদের প্রতিবাদ করে বলেই নাকি এদের উপর হিন্দুদের পক্ষপাতিত্ব করার অভিযোগ আনা হয়, ঠিক যেমন এদেশে মুসলিম পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করা হয়। সংখ্যায় কম না বেশি – মুসলিম মৌলবাদের ক্ষেত্রে কথাটা খাটেই না। নাইজেরিয়াতে থাকলে এরা কোন মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতেন, সংখ্যাগুরু না সংখ্যালঘু, মুসলিম না খ্রীষ্টান? এই বাংলায় কী সংখ্যাগুরু মৌলবাদ বেশি শক্তিশালী, বেশি বিপজ্জনক, নাকি সংখ্যালঘু মৌলবাদ? কারা অত্যাচারিত? শুধু কি মমতার আমলেই? তসলিমা বিতাড়ন কেন হয়েছিল, মোল্লাদের পায়ে মুখ ঘষে বৌদ্ধিক গুণে ভরপুর কার আমলে হয়েছিল? কেন শ্রীজাতর বিরুদ্ধে সামান্য এফ আই আর করলেও যাদের কাছে চরম অসহিষ্ণুতা বলে মনে হয়, তসলিমাকে প্রায় মেরে ফেললেও, বাঁচাতে সেনা তলব করার মতো অবস্থা সৃষ্টি হলেও সেটা কেন অসহিষ্ণুতা মনে হয় না? বানতলা কাদের আমলে?
ইসলামাইজ্ড বামপন্থার অজুহাত আর দিয়ে লাভ কী, এদের দের মুখোশ খুলে গেছে।
আমরা দেখেছি তো বাংলাদেশে ভাম পন্থীরা যে কী ‘ভিরাট’ লড়াই করছে ইসলামিক মৌলবাদের বিরুদ্ধে! সেদেশে এখন সিপিবির সদর দফতরের ভেতরে নামাজ পড়ার সুব্যাবস্থা। অবশ্য বামপন্থীরা তো আসলে ধর্ম বিরোধী নয়, শুধুই হিন্দু বিদ্বেষী । বামপন্থী মানেই ইসলাম পন্থী ।
এই গান্ডু দের কাছে জানতে ইচ্ছে করে – এদেশে তো সংখ্যাগুরু মৌলবাদের পাশাপাশি সংখ্যালঘু মৌলবাদও যে আছে শুধু নয়, আরও বেশি শক্তিশালী, বাংলাদেশে অস্তিত্ব আছে কি সংখ্যালঘু মৌলবাদের? তাহলে সেদেশে যেটুকু ছিঁটে ফোঁটা মৌলবাদ বিরোধী আন্দোলন হবে , সেটা তো ইসলামিক মৌলবাদের বিরুদ্ধেই হবে, যার অস্তিত্বই নেই তার বিরুদ্ধে কিভাবে হবে ! আর এদেশে বেশি শক্তিশালী, সুসংহত, সংগঠিত এবং বেশি বিপজ্জনক হওয়া সত্ত্বেও ইসলামিক মৌলবাদ বা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একেবারে নিরব থেকে একতরফা শুধু হিন্দু মৌলবাদের বিরুদ্ধে সরব হওয়াই এদের বামৈস্লামিক শব্দের যথার্থতা প্রমাণ করছে। সবচেয়ে বড়ো কথা, এদেশে মুসলিমরা যা যা করছে, যেভাবে সংখ্যালঘু হয়ে সংখ্যাগুরু হিন্দুদের উপর অত্যাচার চালাচ্ছে এবং এরপরও যেভাবে এদেশের বামপন্থীরা শুধু মুসলমানদের পক্ষেই গলা ফাটাচ্ছে, বাংলাদেশের হিন্দুরাও যদি ঠিক সেই আচরণ ওদেশে করত – এই তথাকথিত বামপন্থীদের একজনকেও কি পাওয়া যেত হিন্দুদের হয়ে কথা বলার? নাকি এই এরাই নেমে পড়ত হিন্দু নিধন যজ্ঞে(মুসলিম হলে) বা এই বামপন্থীদেরই (হিন্দু হলে) সঙ্গের কমরেড মুসলমানরাই হত্যা করতো? কিছু না করেই ওদেশে হিন্দুদের যা অবস্থা, রাগের মাথায় একটা ‘বাদুড়িয়া’ করলে বা একটা ‘আখলাখ’ কে মেরে ফেললে বা একটা কামদুনি পার্ক স্ট্রিট বা বানতলা করে ফেললে একজন হিন্দুরও আর সেদেশে থাকা সম্ভব হত কি? একজন তথাকথিত অসাম্প্রদায়িক মুসলমানকেও পাওয়া যেত কি এদের পাশে? আর এদেশে?
একটা মজার কথা এরা প্রায়ই বলে থাকে যে এই মুহূর্তে হিন্দু মৌলবাদই নাকি দেশের প্রধান শত্রু, সঙ্গে নাকি আছে রাষ্ট্র শক্তি – তাই এখন একে রুখতেই সর্ব শক্তি নিয়োগ করতে হবে। কিন্তু ইসলামিক মৌলবাদ বিচ্ছিন্নতাবাদে যেভাবে দেশটা ছেয়ে যাচ্ছে, যেভাবে জনসংখ্যার অনুপাত পাল্টে যাচ্ছে – আমাদের ভবিষ্যত কি ? হিন্দু প্রধান এই মহান ধর্ম নিরপেক্ষ দেশটাই কি তখন বাংলাদেশ পাকিস্তান হয়ে ইরাক সিরিয়া হয়ে যাবে না? এরা তখন বলে – ভবিষ্যতেরটা ভবিষ্যতে চিন্তা করা যাবে, তখন ইসলামিক মৌলবাদের বিরুদ্ধেও এভাবেই লড়াই করা হবে।
কিন্তু কথা হল, হিন্দু প্রধান দেশে তথাকথিত হিন্দু মৌলবাদের দাপাদাপির মধ্যেও যেভাবে চোখ রাঙিয়ে আঙুল উঁচিয়ে হিন্দু মৌলবাদের বিরুদ্ধে, ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে বলা যাচ্ছে, ইসলাম কায়েম হলে সাহস হবে কি কারোর টু শব্দটি করার? কোথাও হচ্ছে কি সাহস? এমনকি এখনও হিন্দু আধিপত্যে থাকা হিন্দু প্রধান এই ভারতেই? এখনই এদেশে হিন্দু মৌলবাদের বিরুদ্ধে সরব হওয়া যতটা সহজ, ঠিক ততটাই কঠিন ইসলামিক মৌলবাদের বিরুদ্ধে কিছু বলা।
এরা প্রত্যেকেই বিশ্বমানব। এতক্ষণে এরা আপনাকে ভিয়েতনাম, রাশিয়া, আফগানিস্তান সব দেখিয়ে আনবে। বিশ্বমানব বলে এরা সুদূর গাজার মুসলমানদের কান্না শুনতে পায়, কিন্তু ঘরের পাশের বাংলাদেশ, নিজের দেশের কাশ্মীরি পন্ডিত বা নিজের রাজ্যের ধুলাগড় বাদুড়িয়ার হিন্দুদের কান্না এদের কর্ণ কুহরে প্রবেশাধিকার পায় না। লক্ষ্যণীয়, কোথাও কোন মুসলমান আক্রান্ত হলে যে প্রতিক্রিয়া এরা দেখায়, হিন্দুরা এর চেয়ে একশ গুন বেশি আক্রান্ত হলেও এর একশ ভাগের এক ভাগ প্রতিক্রিয়াও এরা দেখায় না।
পাঠক বর্গ, এতক্ষণ নিশ্চয়ই লক্ষ্য করলেন, বহুবার আমাকে ‘আমি তো সেকথাই বলছি’ গোছের কথা বলতে হয়েছে। কিন্তু প্রত্যেক বারই এরা কুতর্ক করে অবান্তর এবং অপ্রাসঙ্গিক কথা টেনে এনে মূল প্রসঙ্গকে এড়িয়ে পাঁকাল মাছের মত ঠিক পিছলে বেরিয়ে যায়।
কোনমতেই যুক্তিতে না পেরে এবার আপনাকে বিজেপি আরএসএস বানিয়ে এরা পাল্টা বলতে থাকবে কবে কোথায় কোন বিজেপি RSS কি করেছে। যেন অন্য কেউ কোন দুষ্কর্ম করেছে বললে আমার করা দুষ্কর্মটা মিথ্যে হয়ে যাবে।
এরপর শেষ পর্যন্ত একেবারে ব্যক্তি আক্রমণ – ইতর, অশিক্ষিত, ছোটলোক! এদের ধারণা, একমাত্র বামপন্থীরাই প্রকৃত শিক্ষিত, প্রগতিশীল, আর বাকি সবাই গন্ড মূর্খ। ওসব সাহেবদের বই আর তত্ত্ব যাদের জানা নেই, তাদের জীবনটাই যেন বৃথা।
বামপন্থীরা ভীষণ উন্নাসিকতায় ভোগে। এদের ধারনা, এরাই খুব উচ্চ শিক্ষিত, সবজান্তা। বাকিরা বামপন্থী নয় বলেই সবাই অশিক্ষিত। কিন্তু শুধু টাকা থাকলেই যেমন বড়লোক হওয়া যায় না, সঙ্গে আভিজাত্য আর বনেদীয়ানা না থাকলে, ঠিক তেমনি শুধু শিক্ষাগত যোগ্যতা বা সার্টিফিকেট দিয়েও শিক্ষিত হওয়া যায় না, যদি উপলব্ধি আর দর্শন না থাকে – এই বোধটাই এদের গড়ে উঠলো না। কি লাভ, এই শিক্ষা ধুয়ে ধুয়ে জল খেয়ে!
অথচ ইতিহাস থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়ে এদের জানার বহর দেখলে সত্যিই অবাক হতে হয়। এইসব সর্বজ্ঞ বিভিন্ন তত্ত্ব জ্ঞানে ভরপুর বিদ্যে বোঝাই বাবু মশাইরা যদি বিদেশী সাহেবদের বইয়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের প্রতিবেশী অর্থাৎ তাদের তুতুভাইদের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে যে আসমানী কিতাব সেই গ্রন্থগুলি একটু উল্টে পাল্টে দেখতেন ! এই আধুনিক যুগেও একটা সম্প্রদায়ের বেশিরভাগ মানুষ মধ্যযুগের যে গ্রন্থের প্রতিটি অক্ষর মেনে চলতে চায়, সেই গ্রন্থে আদৌ বিধর্মীদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বা সম্প্রীতির কথা আছে কি না, নাকি আছে শুধু ঘৃণা, বিদ্বেষ আর বশ্যতা – সেটা না জেনেই বামপন্থীরা এদের সঙ্গে নিয়ে কিভাবে সম্প্রীতি আর বৈষম্য হীন সমাজের স্বপ্নে মশগুল হয়ে আছে – তা তারাই বলতে পারবে। নোয়াখালীতে হিন্দুদের যখন কচুকাটা করা হচ্ছিল, এদের পূর্বজরা তখন ঘরে ঘরে কৃষি বিপ্লব শেখাচ্ছিলেন । এরপর মোল্লাদের লাথি খেয়ে কুকুরের মতো পালিয়ে এসে অন্যদের সঙ্গে এদেরও ঠাঁই নিতে হয়েছিল একটা সাম্প্রদায়িক নোংরা লোকের ছিনিয়ে আনা ভূমিতে । অতীত অভিজ্ঞতা যাদের বর্তমানকে চালিত করে না, তাদের ভবিষ্যতও অতীতের মতোই হয়।
এই বিদেশী প্রভুর এদেশী এজেন্টরা আসলে জ্ঞান পাপী ! জানে সবই, বিদেশী প্রভুর নির্দেশে বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে সন্ত্রাসের মূল উৎসকে সযত্নে ঢেকে রাখছে । না হলে এদের বিদেশী প্রভুরা যেখানে সেই সন্ত্রাসের মূল উৎসকে চিহ্নিত করে কার্যকরী পদক্ষেপ নিচ্ছে, এরা উল্টা পথে হাঁটছেন কেন?
বিভিন্ন তত্ত্বজ্ঞানে ভরপুর কিন্তু বাস্তবজ্ঞান শূন্য এই বামপন্থীদের দেখে আমার ঐ গল্পটার কথা মনে পড়ে – ঐ একই রকম আর্কিমিডিসের জলের অপসারণ সূত্র সহ বিভিন্ন তত্ত্বজ্ঞানে ভরপুর বিদ্যার জাহাজ কিন্তু সাঁতার না জানায় মাঝ নদীতে ডুবতে বসা বিদ্যে বোঝাই বাবু মশাই আর মূর্খ মাঝির গল্পটার কথা। দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত তত্ত্বজ্ঞান বাঁচায়, নাকি বাস্তবজ্ঞান বা ব্যবহারিক জ্ঞান ।