গোবিন্দ হালদার ১৯৩০ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁয়ে জন্মগ্রহণ করেন এবং (১৭ জানুয়ারি ২০১৫) শনিবার সকালে কলকাতার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সঙ্গীত স্রষ্টা গোবিন্দ হালদারের মৃত্যু হয় তিনি একজন বাঙালি
গীতিকার। তাঁর রচিত প্রথম কবিতা ছিল ‘আর কতদিন’। তিনি প্রায় সাড়ে তিন
হাজার কবিতা ও গান লিখেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ দূর দিগন্ত। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতারে সম্প্রচারিত তার লেখা গানসমূহ মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করতো। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার রচিত উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে, পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে, লেফট রাইট লেফট রাইট, হুঁশিয়ার হুঁশিয়ার, পদ্মা মেঘনা যমুনা, চলো বীর সৈনিক, হুঁশিয়ার, হুঁশিয়ার বাংলার মাটি অন্যতম। তিনি ভারতের আকাশবাণী বেতারের তালিকাভুক্ত গীতিকার ছিলেন।
‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা’
এক সাগর রক্তের বিনিময়ে,
বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা
আমরা তোমাদের ভুলব না।
দুঃসহ বেদনার কন্টক পথ বেয়ে
শোষণের নাগপাশ ছিঁড়লে যারা
আমরা তোমাদের ভুলব না।
যুগের এ নিষ্ঠুর বন্ধন হতে
মুক্তির এ বারতা আনলে যারা
আমরা তোমাদের ভুলব না।
কিষাণ কিষাণীর গানে গানে,
পদ্মা, মেঘনার কলতানে,
বাউলের একতারাতে আনন্দ ঝঙ্কারে
তোমাদের নাম ঝংকৃত হবে।
নতুন স্বদেশ গড়ার পথে
তোমরা চিরদিন দিশারী রবে
আমরা তোমাদের ভুলব না।”
নিঃসন্দেহে আমাদের বাঙ্গালীদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ
ঘটনা,সবচেয়ে বড় ঘটনা হল আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ। শুধু দীর্ঘ নয় মাস
যুদ্ধই নয়,আরো অনেক ত্যাগ এর বিবিময়ে আমরা আমাদের এ দেশটি পেয়েছি।
নিজের দেশ। বিষয়টা বলতেই কেমন জানি গর্বে বুকটা ফুলে উঠে। চোখ ছলছল করে।
একাত্তরের বিষয়টা বলি। একাত্তরে বলতে গেলে আমাদের কাছে কিছুই ছিল না।
পাকিস্তানী বাহিনী ছিল আধুনিক অস্ত্রে সুসজ্জিত, তাদের ছিল দীর্ঘ
প্রশিক্ষণ। সেই হিসেবে আমাদের কিছুই ছিলনা। আসলে কিছু ছিলনা বললে ভুল হবে।
আমাদের ছিল সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার তাগিত,আবেগ,অদম্য দেশপ্রেম আর প্রচন্ড
সাহস। আর বলে না? ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়,আর সেই উপায় আমরা বের করে
নিয়েছি। সেই সময় আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের, সাধারণ মানুষের সাহস,
আবেগ,দেশপ্রেম বাড়ানোর কাজ করত এমনই কিছু দেশাত্মবোধক গান। আমার সোনার
বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি,মানুষ মানুষের জন্য, জয় বাংলা বাংলার জয়, পূর্ব
দিগন্তে সূর্য উঠেছে, লেফট রাইট লেফট রাইট, হুঁশিয়ার হুঁশিয়ার, পদ্মা
মেঘনা যমুনা, চলো বীর সৈনিক, হুঁশিয়ার, হুঁশিয়ার বাংলার মাটি অন্যতম। তখন
কি, এখনও এই গানগুলো শুনলে গায়ের রোম শিউরে উঠে। অদম্য সাহস জুগিয়েছিল
তখন গানগুলি।
‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি’
মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি
মোরা একটি মুখের হাসির জন্য অস্ত্র ধরি।।
যে মাটির চির মমতা আমার অঙ্গে মাখা
যার নদী জল ফুলে ফুলে মোর স্বপ্ন আঁকা।
যে দেশের নীল অম্বরে মন মেলছে পাখা
সারাটি জনম সে মাটির টানে অস্ত্র ধরি।।
মোরা নতুন একটি কবিতা লিখতে যুদ্ধ করি―
মোরা নতুন একটি গানের জন্য যুদ্ধ করি
মোরা একখানা ভালো ছবির জন্য যুদ্ধ করি
মোরা সারা বিশ্বের শান্তি বাঁচাতে আজকে লড়ি।।
যে নারীর মধু প্রেমেতে আমার রক্ত দোলে
যে শিশুর মায়া হাসিতে আমার বিশ্ব ভোলে
যে গৃহ কপোত সুখ স্বর্গের দুয়ার খোলে
সেই শান্তির শিবির বাঁচাতে শপথ করি।।
মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি
মোরা একটি মুখের হাসির জন্য অস্ত্র ধরি।।
এরকম কয়েকটি গানের গীতিকার হলেন গোবিন্দ হালদার। বাংলাদেশের
মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতারে সম্প্রচারিত তার লেখা গানসমূহ
মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করতো। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার রচিত উল্লেখযোগ্য
গানের মধ্যে মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি, এক সাগর রক্তের
বিনিময়ে, পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে, লেফট রাইট লেফট রাইট, হুঁশিয়ার
হুঁশিয়ার, পদ্মা মেঘনা যমুনা, চলো বীর সৈনিক, হুঁশিয়ার, হুঁশিয়ার বাংলার
মাটি অন্যতম।তিনি ভারতের আকাশবাণী বেতারের তালিকাভুক্ত গীতিকার ছিলেন।
বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে গত ১৩ নভেম্বর কলকাতার ওই হাসপাতালে ভর্তি হন গোবিন্দ হালদার। এ
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার মানিকতলার জিতেন্দ্রনাথ রায় হাসপাতালে তিনি
চিকিৎসাধীন। পরবর্তীতে টার কিডনির অসুস্থতায় তিনি আরও দুর্বল হয়ে পরেন ।
তাঁকে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছিল। তাঁকে এক পর্যায়ে
রাইস টিউব দিয়ে খাওয়ানো হয়েছিল। গোবিন্দ হালদারের বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।
চোখেও কম দেখতেন। ২০০৬ সালের গোটা মার্চ মাস জুড়ে বিবিসি বাংলার শ্রোতারা
তাঁদের বিচারে সেরা যে পাঁচটি গান মনোনয়ন করেছেন, তার ভিত্তিতে বিবিসি
বাংলা তৈরী করেছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ কুড়িটি বাংলা গানের তালিকা। এর
মধ্যে দুটি গান হলো গোবিন্দ হালদারের-
১। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনল যারা : সুরকার – আপেল মাহমুদ; গীতিকার – গোবিন্দ হালদার
২। মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি : গীতিকার – গোবিন্দ হালদার; সুরকার ও শিল্পী – আপেল মাহমুদ
আয়কর বিভাগে কর্মরত অবস্থায় বন্ধু কামাল আহমেদের অনুপ্রেরণায় এবং
উৎসাহে তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের উপর গান রচনা করেন। কামাল আহমেদ তাকে
স্বাধীন বাংলা বেতারের কর্ণধার কামাল লোহানীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেন এবং তার হাতে ১৫টি গানের একটি খাতা দেন।
এ গানগুলোর মধ্যে স্বাধীন বেতারে প্রথম প্রচারিত হয় সমর দাসের সুরারোপিত
পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে গানটি। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়েই তার আরও
কিছু গান স্বাধীন বেতারে সম্প্রচারিত হয়। পাক বাহিনীর আত্মসমর্থনের খবর
পাওয়ার পরপরই সন্ধ্যায় ১৬ই ডিসেম্বর প্রচারিত হয় এক সাগর রক্তের
বিনিময়ে গানটি যা সুর দিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত সুরকার ও কণ্ঠশিল্পী
আপেল মাহমুদ এবং মূল কণ্ঠ দিয়েছিলেন স্বপ্না রায়। আরও কণ্ঠ দিয়েছিলেন
আপেল মাহমুদ এবং সহশিল্পীরা।
তাঁর মত সুর স্রষ্টা বেঁচে থাকবেন তাঁর কাজের মাঝে আজীবন, যতদিন টিকে থাকবে এই বাঙলা। তাঁর প্রতি অশেষ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
আরো দেখুন………………….
|
||