বুকে হাত দিয়ে বলুন তো, ফেইসবুকে আপনি ইসলাম নিয়ে কথা বলতে ভয় পান না? ফেইসবুকে যদি আপনার পরিচয় ওপেন থাকে আপনি কাদের ভয়ে ইসলাম নিয়ে কথা বলতে ভয় পান?
এবার নির্মোহভাবে সত্যি কথাটা বলুন, হিন্দু ইহুদি খ্রিস্টান ধর্ম নিয়ে কথা বলতে কি আপনার ভয় করে? এই যে ভারতে আমাদের বন্ধুরা পরিচয় দেখিয়েই হিন্দুত্ববাদীদের জয় শ্রীরাম শ্লোগানকে “জয় ছিঃ রাম” বলে সেটা কি আপনি ইসলাম নিয়ে বাংলাদেশে কল্পনা করতে পারেন? নিজের খুমা মোবারক দেখিয়ে!
এই যে আপনি যাদের ভয়ে কথা বলতে চান না সেই তারাই যখন দাবী করে গুটি কয়েক উগ্রবাদীর জন্য গোটা সম্প্রদায়কে সন্ত্রাসী জঙ্গি বলা উচিত নয়- তখন শুনতে কথাটা কেমন লাগে? যেমনই লাগুক, আমাদের ভেবে দেখা উচিত অভিযোগটা যৌক্তিক কিনা…।
গত দুই মাসে বাংলাদেশের দুটি জায়গায় একই রকম ঘটনা ঘটল। গতকালই ভোলাতে একই ঘটনা ঘটেছে। একটা হিন্দু ছেলে ফেইসবুকে ইসলাম নিয়ে খারাপ কথা লিখেছে। তারপর শুক্রবার জুম্মা পরবর্তী তৌহদী জনতা মিছিল নিয়ে সেই ছেলেটির দোকানে গিয়ে হামলা চালায়। সঙ্গে বেছে বেছে হিন্দু অন্যান্য দোকান বাড়িঘরে হামলা অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি। পুলিশ এসে ছেলেটিকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। আইসিটি আইনে মামলা হয়। একটা পরিবার ধ্বংস হয়ে যায় মুহূর্তে। আর গোটা কমিউনিটিতে একটা ট্রমার সৃষ্টি হয়। এদেশে থাকা আর নিরাপদ নয়…।
প্রায় সব ঘটনার স্কিপ্ট একই রকম। ফেইসবুকে ইসলাম নিয়ে হিন্দু যুবকের কটুক্তি আর তৌহিদ জনতার হামলা। যে ছেলে নিজের চেহারা পরিচয় দেখিয়ে ফেইসবুক চালায় সে এলাকার মুসলমানদের ধর্ম নিয়ে খারাপ কথা লিখে কি করে বাজারে দোকানদারি করে নিশ্চিন্তে? স্কিপ্টের এই দুর্বলতার প্রশ্ন না তুলে ঘটনার পরবর্তী আমরা মডারেট নামের অদ্ভূত এক প্রজাতির উক্তি তখন শুনতে পাই -ইসলাম নিয়ে কটুক্তি করা ঠিক হয় নাই আবার এভাবে হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলাও ঠিক হয় নাই…। ইসলামে এসব হামলা সমর্থন করে না তবে ইসলাম নিয়ে কটুক্তি করে দেশের শান্তি বিনষ্ট করাও উচিত হয় নাই…। মত প্রকাশের স্বাধীনতা মানে যা খুশি তা বলা নয়…।
প্রায় সব সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশে একই অবস্থা। পাকিস্তানেও একই স্কিপ্ট চলছে। বাংলাদেশে হিন্দুদের ফেইসবুক ব্যবহার প্রতিনিয়ত কঠিন হয়ে উঠছে। যে কারোর জায়গা জমি হাতিয়ে নিতে, ব্যবসাপাতি লাটে উঠাতে খালি একটা ইসলাম অবমাননার অভিযোগ তোলা গেলেই হলো। ব্যক্তিগত রোষ থেকে রাজনৈতিক ফয়দা লোটা যখন একসঙ্গে হাত মেলায় তখন সেটা ‘তৌহদী জনতায়’ রূপ নেয়। এই তৌহদী জনতা একটা নির্দলীয় জাতীয় ঐক্য। এই যে ‘তৌহদী জনতা’ তারা ফ্রন্টে লড়াই করে। আর যাদের সংলাপ তুলে ধরলাম তারা ইন্টেল্যাকচুয়াল সাপোর্ট দেয়। এরা কখনই বলে না তসলিমা নাসরিনকে বাংলাদেশের সরকার কাদের ভয়ে বাংলাদেশে আসতে দেয় না? ‘গুটি কয়েক উগ্রদের’ কেন তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ সুগ্ররা পরাজিত করতে পারে না?
এবার বিপরীত কাহিনী দেখুন ভারতে। পশ্চিমবঙ্গে একটা হিন্দু মুসলমান দাঙ্গা হয়ে গেলো! করোনা টেস্টে মুসলিমদের পজেটিভ হওয়ার পরিমাণ বেশি হওয়াতে হিন্দুরা টিটকারি দিয়েছিলো করোনা মুসলিমরা ছড়াচ্ছে। এটা শুনে মুসলিমরা রেগে আগুন হয়ে যায়। তারপর দুই পক্ষ একে অপরের উপর, দোকানপাট, বাড়ি ঘরে হামলা চালায়।
তা ভারতে মুসলমানরা যদি নিরহ গোবেচারা নিপীড়িত নির্যাতিত সংখ্যালঘুই হবে তাহলে টিটকারি শুনে দাঙ্গায় জড়ালো কিভাবে? পাকিস্তানে তো কোনদিন শুনি না খ্রিস্টান কিংবা হিন্দুরা মুসলমানদের সঙ্গে দাঙ্গায় জড়িয়েছে? বাংলাদেশে শুনেছেন হিন্দু কিংবা বৌদ্ধরা কোন টিটকারি বা তাচ্ছিল্যের প্রতিবাদে দাঙ্গায় জড়িয়েছে? তাহলে মুসলিমরা ভারতে কেন জড়ায়? আপনি হয়ত বলবেন ভারতে মুসলিমদের একটা বড় অংশ থাকায় এমনটা হয়। তাহলে শ্রীলংকায় আপনি কি বলবেন? সেখানে সংখ্যাগুরু সিংহলজিদের সঙ্গে অতি সামান্য মুসলিম সম্প্রদায় কেমন করে দাঙ্গায় জড়ালো? সেখানে তো গির্জাতে হামলা পর্যন্ত হয়েছে…।
বাংলাদেশে এমন কোন হিন্দু আছে যে জীবনে অন্তত একবার মা*লাউনের বাচ্চা’ এই গালি শুনে নাই? ভারত তাদের বাপের দেশ! বাংলাদেশেরটা খায় ভারতের গুণগান গায়…। এসব শুনে শুনে কয়টা প্রজন্ম বড় হলো তবু একটা দাঙ্গা হলো না। কিন্তু এমন কিছু যদি ভ্যাটিকান সিটিতে পোপের বাড়ির বাইরেও যদি কোন মুসলমানকে নিয়ে সামান্য রশিকতা করা হয় তাহলে শুনবেন সেখানে লাশ পড়ে গেছে! কোলকাতার রাস্তায় প্লেকার্ড দেখেছিলাম, যদি কেউ তাদের নবীকে নিয়ে টু শব্দটি করে তাহলে তার লাশ ফেলে দেয়া হবে…!
শেষ কথা সব মুসলমান জঙ্গি নয় এটি প্রমাণের দায়িত্ব সব মুসলমানেরই। আপনাদের দেখাতে হবে তসলিমা বাংলাদেশে ঘুরে যেতে পেরেছে। ইসলাম নিয়ে লিখে কাউকে হত্যা করা হয় না। কোন বাউলকে গান গেয়ে জেলে যেতে হয় না। সংখ্যাগরিষ্ঠ জঙ্গি না হলে গুটিকয়েক জঙ্গি কিছুতে এই রকম চরম অসহিষ্ণুতা সৃষ্টি করতে পারে না। এটা তাদেরকেই প্রমাণ করতে হবে।