~~ পরমাণু জাতীয় বোমাই কি মহেঞ্জোদাড়োকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল? ~~..১৯২০ সালে আবিষ্কার হয় এক প্রাচীন সভ্যতার। নাম মহেঞ্জো দাড়ো এবং হরপ্পা অধুনা পাকিস্তান। সেই সময়ই প্রথম সূত্র সন্ধান মেলে চার হাজার বছর আগেও একটি সমৃদ্ধ নগর সভ্যতা গড়ে উঠেছিল ইন্দাস বা সিন্ধু নদের তীরবর্তী অঞ্চলে। যা প্রাচীন ইজিপ্ট /মেসোপটেমিয়ার সভ্যতা গুলিকে টক্কর দেওয়ার মতো। ১৯২১ সাল থেকে বঙ্গ সন্তান রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে খনন কার্য শুরু হয়, সেই সময় উঠে আসে একের পর এক অত্যাশ্চর্য ঐতিহাসিক, অবাক করে দেওয়ার মতো পুরাতত্ত্ব তথ্য। এই বৃৎ শহরের নগর পরিকল্পনা নাগরিকদের মৌলিক পরিষেবার পরিকাঠামো , ছিল অতুলনীয়। সেই সময়ই পোড়া মাটির তৈরি ইট, জিপসাম, (সিমেন্ট) জলনিরোধক বিটুমিনাস (পিচ) ব্যবহৃত হয়েছিল। কিন্তু প্রশ্ন এক সমৃদ্ধ নগর সভ্যতা কী ভাবে শেষ হয়ে গেল?হরপ্পা মহোঞ্জোদাড়ো আবিষ্কার হওয়ার পর থেকে দফায় দফায় খনন কার্য চলেছে…সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে ইতিহাস গবেষক,পুরাতত্ত্ব গবেষকেরা এসেছেন। নানা ভাবে বৈজ্ঞানিক ভিত্তির উপর তদন্ত চালিয়েছেন। সেই সমস্ত তদন্তে উঠে এসেছে নানা মত। ২০০২ সালে পল বান তাঁর বইতে একটি বর্ণনা দিয়েছেন। একটি ঘর, ঘর সংলগ্ন একটি পাতকুয়ো, সেখানেই দুটো কঙ্কাল দেখা গিয়েছে। তাদের মৃত্যুকালীন শারীরিক ভঙ্গিমা যা ছিল তা অনুমান করা যায়, তারা যেন হামাগুড়ি দিয়ে ঘরের সিঁড়ি বেয়ে রাস্তায় আসার চেষ্টা করেছিলেন। অন্য একটি জায়গায় আরও কিছু কঙ্কাল দেখতে পাওয়া যায়। তাদেরও শরীরের ভঙ্গিমা ছিল,যে পালানোর চেষ্টা করেও পারেননি। পুরো দৃশ্যই ছিল যেন আঁকাচিত্র। আশে পাশে নটি কঙ্কালকে দেখলে বোঝা যায়, কেউ যেন আছড়ে ফেলে দিয়েছে একটি উঠোনে। আরও বেশকিছু কঙ্কাল উদ্ধার হয়, যেগুলি পাথরকুচি, ছাইয়ের ধ্বংসাবশেষে চাপা ছিল। পুরো চিত্রতেই বোঝা যায়, এক ভয়ংকর ধ্বংসলীলা চলেছিল সেখানে। বহু তর্ক বিতর্ক আলোচনা, ঐতিহাসিক ও বৈজ্ঞানিক প্রমাণের পর নিশ্চিত সকলেই, যে সেখানে এক ভয়ংকর হত্যালীলা হয়েছিল। কিন্তু মজার বিষয় এই নগর খননকার্যে কোনও অস্ত্র মেলেনি। তাই বিপাকে অঙ্কের সূত্র মেলাতে গিয়ে বিপাকে পড়েন গবেষকরা।একটা অংশের মত, বন্যা ও বিপর্যয়ই এই সভ্যতার ও মৃত্যু-লীলা মূল কারণ। মনে করা হয়, বন্যার ফলে কিছু জল বাহিত কলেরা ধরণের রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে, ফলে পুরো সভ্যতাই ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যায়। আর একটা অংশ দৃঢ় বিশ্বাসী প্রবল বন্যার জেরেই শেষ হয়ে গিয়েছে এই সভ্যতা।প্রথমসারির পুরাতত্ত্ব আধিকারিকরা মনে করেন, কলেরাবা মানুষের নিজস্ব হামলার তুলনায় প্রাকৃতিক বিপর্যয় অনেক বেশি যুক্তিসঙ্গত। কিন্তু এখানেই একাধিক প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, তাই যদি হবে, তাহলে কেন ঘরের বাইরে থেকে লোকেরারাস্তায় নেমে আসার চেষ্টা করেছিল? কেন দেহগুলি বরফে আটকে থাকার হয়ে থাকবে? জলে ভেসে গেলেতো পচন সারা শরীর এবং হাড়কেও নষ্ট করবে। আর তাদের মৃত্যু যদি কোনও ভয়ংকর রোগে আক্রান্ত হয়েছিল, তাহলে তাদের কবর নির্দিষ্ট জায়গায় না দিয়ে শহরের বিচ্ছিন্ন একাধিক এলাকায় দেওয়া হল?তাহলে কি পরমাণু হামলা ছিল?উপরের যুক্তিগুলিকে ঘণ্ডন করে একাধিক গবেষক এখানেই সূত্র খুঁজতে থাকেন অন্য কারণের। আর এখানেই উঠেআসে পরমাণু বোমার তত্ত্ব। ভারত ব্রিটেন গবেষক ডেভিন ডাভেনপোর্ট তিনি নিজে ভারতে বারো বছর থেকে গবেষণাচালিয়েছেন হিন্দু পুরাণ বই এবং প্রমাণের লক্ষ্যে। তাঁর বই অ্যাটোমিক ডেসট্রাকশন ২০০০ বিসি। সেখানে তিনি বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের প্রমাণ্য দেন। মহেঞ্জো দাড়ো থেকে বেশ কিছু পাথর উদ্ধার করেন, যা অনেকটাই কাচের মতো। বিজ্ঞান বলছে, কোনও পাথরকে যদি ১৫০০ সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় গরম করে পুনরায় হঠাৎ ঠান্ডাকরা হয়, তাহলে তার চরিত্র বদলে যায়, দেখতে লাগে অনেকটা কাচের মতো। শহরের এপিসেন্টার থেকে ৫০ ইয়ার্ডের মধ্যে এমন বেশ কিছু প্রমাণ্য পাওয়া গিয়েছে যা পাথর বা মাটি, ইট গলে গিয়েছে প্রবল তাপে। এবং৬০ ইয়ার্ড দূরে একটি জায়গা দেখা গিয়েছে, যেখানে বিস্ফোরণ স্থলের সঙ্গে বুহবু মিল রয়েছে।আর এক ইতিহাস গবেষক, এ গরোভবস্কি তাঁর রিডিলস অফ অ্যান্সিয়েন্ট হিস্ট্রিতে লিখেছেন, একটি কঙ্কালে রেডিও অ্যাক্টিভের নমুনা মিলেছে যা প্রাকৃতিক রেডিও অ্যাক্টিভের তুলনায় ৫০ গুন বেশি। ডাভেনপোর্টের দাবি, হিরোসিমা, নাগাসাকিতে পরমাণু হামলার পর যে চিত্রদেখা গিয়েছিল, তার সঙ্গে এই কঙ্গালগুলির অনেক মিল রয়েছে।আর এই ডাভেনপোর্টের মতকেই অনেকটা সমর্থন দিয়েছে আধুনিক বিজ্ঞান গবেষকরা। কারণ, সাধারণ আগুন হলে পোড়া মাটির ইটের ঘর পুড়ো গলে যাবে না কখনওই। আর ওই অঞ্চলে কখনও আগ্নেয়গিরি প্রভাব পড়েছিল তার ঐতিহাসিক বা বৈজ্ঞানিক প্রমাণ বহু খোঁজাখুঁজির পর মেলেনি।সুপরিচিত পুরাতত্ত্ব গবেষক উইলিয়ম স্ট্রামের মত,মহেঞ্জোদাড়োতে পোড়া মাটির ইটের গলন সাধারণ বা প্রাকৃতিক আগুলের ফলে হতে পারে না। অ্যান্টোনিও ক্যাসেলানি রোমের মহাকাশ ইঞ্জিনিয়ার তিনি এক বাক্যে স্বীকার করেছেন, মহেঞ্জোদাড়োর সভ্যতা নষ্ট হওয়ার পিছনে প্রকৃতিক কোনও ঘটনার অবদান নেই।তাহলে কি মহেঞ্জোদাড়ো শেষ হওয়ার পিছনে আনবিক বোমাই দায়ী? তর্কের খাতিরে যদি তাই ধরা হয়, তাহলে সেই বোমা তৈরি করেছিল কে? কোন ফর্মুলা থেকে উঠে এসেছিল আনবিক বোমা। এই ঘটনা সত্যি হলে, অনুমান করা যায়, সেই সময় কতটা প্রযুক্তিগত উন্নত ছিল মহোঞ্জোদাড়ো? বর্তমান বিজ্ঞান মাত্র কয়েক কদম এগোতে পেরেছে প্রাচীন সভ্যতার খোঁজে? এখনও বহু প্রশ্নের উত্তর বাকি, বহু রহস্যের উন্মোচনও বাকি।.তথ্যঃ বেঙ্গলী ফিড