শত্রুদের উদ্দেশ্যে খানকতক উপদেশ (নিজেকে কুরুক্ষেত্রের ভীষ্ম কল্পনা করছি না, কিন্তু শক্তিশালী শত্রু প্রচুর রিসোর্স নিয়ে, ম্যানপাওয়ার নিয়েও যখন অনবরত ধেড়ায়, তখন তাকে যেমন কয়েকটা বিনেপয়সার অ্যাডভাইস দিতে হাত নিশপিশ করে, এ তেমনই ব্যাপার)।
ইসলামিস্টঃ আপনাদের মধ্যে মডারেটদের সামনে আনুন। ফুলটুস তাকিয়া চাই। পারলে এবছর মহরমে তাজিয়া বের করবেন না। দুর্গাপুজোর ভাসান মমতা আপা তো আপনাদের মুখ চেয়ে বন্ধ করে দেবেন, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে যে পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, তখন আপনাদের বিশাল শরীয়া পরিকল্পনায় যে ফুটো গুলো হবে, সে ছিদ্রগুলো কে আটকাবে? দাবাং এ সলমনের ডায়ালগ মনে করুন। বেশি না, মাত্র তিরিশটা বছর চেপেচুপে চালান। নিজেরা সংখ্যাগরিষ্ঠ না হোন, একবার চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশ পার্সেন্ট হয়ে যান, তারপরে মনের সুখে জেহাদ করবেন, গাজী হবেন, কাফের কাটবেন, আর বুটপরস্তিকে উচ্ছেদ করবেন। তদ্দিন, বাম আর তৃণ সেকুলারদের দিয়ে খুব করে বলান, বাংলার মাটি সেকুলার ঘাঁটি বুঝে নিক চাড্ডিত্ব।
চাড্ডিঃ নিজের মুখ বন্ধ রাখুন যতটা পারেন। আপনারা মুখ খুল্লেই কেলো হয়। স্রেফ কপি পেস্ট করে যান। ইসলামের কোথায় কি অত্যাচার হল, নেট থেকে নামান আর স্টেটাসে ঝাড়ুন। তাত্ত্বিক সাজতে যাবেন না। বানরে সঙ্গীত গায়, শিলা জলে ভেসে যায়, আর চাড্ডিতে তাত্ত্বিক হয়, এ দেখিলেও হয় না প্রত্যয়। ইসলামের প্রতিক্রিয়ায় আপনাদের ভোট বাড়ছে, মোদীর বালের ডিমনিটাইজেশনে নয়। আপনাদের কিচ্ছু করতে হবে না, স্রেফ “ওই দ্যাখো ইসলাম” বলে যান। তাহলেই হবে। ইন্টেলেকচুয়াল সাজবেন না, মানায় না। হনুমান আছেন, হনুমানই থাকুন। তবে বাইরের বাজার থেকে ইন্টেলেকচুয়াল কিনে আনতে পারেন, এমন ইন্টেলেকচুয়াল যার চাড্ডি ব্যাকগ্রাউন্ড নেই, ফলে মাথাটা ভোঁতা হয়ে যায়নি।
আরেকটা টিপ দিই। বিশ্বমানব বাঙালি একেবারেই শেকড়হীন। বিশ্ববিপ্লবী বাঙালিও তাই। গতকাল মাওভজনা করেছে, আজ হনুমান ভজনা করতেই পারে, রামনবমীও করতে পারে, এটা আশ্চর্য শোনালেও। স্রোতের শ্যাওলা তো, ভেসে ভেসে এ ঘাট থেকে ওঘাটে যেতেই পারে। ইতিহাস নেই যে জাতির, তার ভবিষ্যতও নেই। কাজেই আশায় থাকুন। এ গাছটার শেকড় আগে থেকেই কেটে রাখা, কাঠ চিরে আপনাকে শুধু ফার্নিচার বানিয়ে নিতে হবে। উপরন্তু বুদ্ধিজীবীদের একটা বড় অংশ সেই ইংরেজ আমল থেকেই সরকারের নিবিড় সহায়ক (ঘরে বাইরে উপন্যাসটা ইংরেজ পুলিসের প্রোপ্যাগ্যান্ডা ছিল, লুকাচ মন্তব্য করেছিলেন)। ফলে ভাত ছড়ান, পায়রা কবিরা অনেকেই আসবেন। আজ যারা বলছেন, ঈদের দিন গরু খাওয়া আমার অবিনশ্বর ভারতীয় অধিকার, কাল তাদের কয়েকজনও পালটি খেতে পারেন। আমি দিল্লিতে এক অধ্যাপককে চোখের সামনে দেখলাম পালটি খেতে, কংগ্রেস আমলে বলতেন ঈদে গরু কাটার অধিকার নিয়ে, এখন বিজেপি জয়েন করে গোরক্ষার কথা বলছেন। ওদিকে কফি হাউজে পচা শিঙাড়া খাইয়ে দিলেই পশ্চিমবাংলার চীনেবাজারে বুদ্ধিজীবী কেনা যায়, এতই সস্তা। আপনাদের তো স্কচ খাওয়ানোর পয়সা আছে।
সিপিএমের কমরেডঃ ঘুরে দাঁড়াতে চাইলে কার্ল মার্ক্সের এই ইসলাম সংক্রান্ত সমালোচনাটা পরবর্তী পার্টি কংগ্রেসে কেউ তুলুন। “কোরান এবং তা থেকে উদ্ভূত মুসলমানি আইন বিভিন্ন জনমানুষের নিজস্ব ভৌগলিক ও সাংস্কৃতিক সত্ত্বাকে নামিয়ে আনে এক সুবিধাবাদী দ্বি-জাতীয় ও দ্বি-দেশীয় বিভেদেঃ যারা ইসলামে বিশ্বাসী, আর যারা অবিশ্বাসী বা কাফের। অবিশ্বাসী বা কাফের হল হার্বি, বা শত্রু। ইসলামিজম কাফেরদের জাতিকে নিষিদ্ধ করে, যার ফলে এক চিরস্থায়ী শত্রুতা তৈরি হয় মুসলমান ও অবিশ্বাসীর মধ্যে।” (অন দ্য ইস্টার্ন কোয়েশ্চন নামক প্রবন্ধ। লেখাটা মার্ক্সিস্ট ডট অর্গ সাইটে পাবেন, এই লিঙ্কে যান – http://www.marxists.org/archive/marx/works/1854/03/28.htm )
কমিউনিস্ট আন্দোলন এসেছে বাংলার জাতীয়তাবাদী বিপ্লবী আন্দোলন থেকে। বাংলাভাষী হিন্দু ছিল এ দুই আন্দোলনেরই ব্যাকবোন। সেই বাংলাভাষী হিন্দুর ব্যাকবোনটাই ভেঙে দিয়ে এ রাজ্যে কমিউনিস্ট আন্দোলন ঘুরে দাঁড়াবে না। আপনাদের মধ্যে জেহাদীদের দালালদের চিহ্নিত করুন, ইংরেজ, নেহরু, ইন্দিরা সমস্ত আমলেই আপনাদের কমপ্রাদর চরিত্র নিয়ে আলোচনা করুন, বাঙালিত্ব আইডেন্টিটির সঙ্গে আপনাদের পার্টির আদর্শগত বিরোধকে রিনেগোশিয়েট করুন।
প্রায় অসম্ভব বটে। তবে রোগী যখন মৃত্যুশয্যায়, খুব কড়া ওষুধের দরকার। পারলে ওষুধটা খান, নইলে বাংলা থেকে অবধারিত ফুটবেন, এবং সেই স্পেসটা কে নেবে? নো প্রাইজ ফর গেসিং। বিজেপি।
তৃণঃ (ঠিক শত্রু না, হাফ শত্রু। হাফ গেরস্ত যেমন ঠিক পুরো গেরস্ত হয় না, গেরস্তই হয় না আসলে, হাফ শত্রুও ঠিক শত্রু হয় না। তৃণমূল কারও শত্রু না। যে করে খেতে পারে তৃণমূল তার)।
যেরকম নির্লজ্জভাবে মুসলিম তোষণ করেছেন, ততটাই নির্লজ্জ হয়ে হিন্দু তোষণ করুন। আগুপিছু ভাববেন না, ভাবার সময় নেই। সামনের বছর মমতা নিজেই তপন ঘোষের সভায় যান, তপন ঘোষকে পারলে নিজের দলে টানার চেষ্টা করুন মন্ত্রীত্ব ইত্যাদি দিয়ে। আর ওই উদারবাদী সর্বধর্মসমন্বয়ের বাণী যথেষ্ট হয়েছে, বাংলা বনাম দিল্লির হাস্যকর রণহুঙ্কারও কাজে দেবে না। ওসবে চিঁড়ে ভেজে না। পাব্লিক কি পাগল নাকি যে সিন্ডিকেটের কাছ থেকে দিল্লির সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কে জ্ঞান শুনবে আর নারদা সারদার কাছ থেকে শক হুন দল পাঠান মোগল একদেহে হল লীন শুনবে (শেষ উক্তিটা মদন মিত্র সেই সারদার সভায় করেছিলেন। পাক্কা তিন বছর এস এস কে এমে থাকতে হল। সুদীপ আর তাপসের সে ভাগ্যও হচ্ছে না)?
আপনারা কোনও আদর্শ নিয়ে আসেন নি, সিপিএম হটানো ছাড়া তৃণমূলের আর কিছু আদর্শ ছিল না। আপনাদের দলটা আপাদমস্তক লুম্পেন, সুবিধাবাদী, দুর্নীতিগ্রস্ত। আজ যে ইন্টেলেকচুয়ালরা জয় মমতা বলছে, গতকাল এরাই জ্যোতি আর বুদ্ধদেবের জয়ধ্বনি দিত। আগামীকাল অন্য দল ক্ষমতায় এলে এরা ভোল বদলাবে না ভাবার কারণ নেই। কিন্তু বাংলায় আপনাদের সরানো মানে বিজেপিকে আনা, সেটা বাঙালি একদম অতিষ্ঠ না হয়ে পড়লে করবে না। মুসলিম তোষণ বন্ধ করা মানে সে ভোটব্যাঙ্ক হাতছাড়া হয়ে যাবে, হাতছাড়া হলে হয় সিপিএমের দিকে যাবে (তবে এমন হবে মনে হয় না, সিপিএমের সে জোর নেই আর এই মুসলিম পোলারাইজেশন করার মত, করতে গেলে পালটা গেরো হতে পারে, দলের আসল ভিত্তিটাই নষ্ট হয়ে যেতে পারে), নইলে বিজেপি (বিজেপির মাইনরিটি সেল পশ্চিমবঙ্গে ক্রমশঃ শক্তিশালী হচ্ছে)। এমনিতেই তখন গদি ওল্টাবে।
মোল্লাতোষণ করুন, কিন্তু সেটাকে ব্যালেন্স করুন পালটা হিন্দু তোষণ করে। বাজে শোনাচ্ছে, কিন্তু এ ছাড়া গতি নেই। ওটা থামাতে পারবেন না যখন, এটা শুরু করে দিন। ইওর টাইম স্টার্টস নাও। টিক টক টিক টক। দুহাজার উনিশ বেশি দেরি নেই।
বন্ধুদের উদ্দেশ্যে এই পোস্ট নয়, এ শুধু শত্রু আর হাফ শত্রুদের জন্য। বন্ধুদের জন্য বক্তব্য তো সবসময়েই রাখি। আজ একটু শত্রুদের জ্ঞান দিই।