যে সব কারণে বাংলাদেশে পাঠ্য বই থেকে হিন্দু ও নাস্তিক লেখকদের লেখা বাদ দেওয়া হয়েছে ।

একটু মনোযোগ দিন, যে সব কারণে হিন্দু ও নাস্তিক লেখকদের লেখা বাদ দেওয়া হয়েছে ।
1. পঞ্চম শ্রেণীর বাংলা বই থেকে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ হুমায়ূন আজাদের ‘বই’ কবিতাটি বাদ দিয়েছে যে কারণে তা হলো – ‘যে বই তোমায় ভয় দেখায়/ সেগুলো কোন বই নয়/সে বই তুমি পড়বে না/যে বই তোমায় অন্ধকারে বিপথে নেয়’ ! হুমায়ূন আজাদ এখানে কোন বইয়ের নাম উল্লেখ করেনি ; অথচ মুসলমানরা ধরে নিয়েছে কুরআন শরীফকেই নাকি ইঙ্গিত করেছে । আর এতে নাকি কোমলমতি শিশুদের ইসলাম বিদ্বেষী করা হচ্ছে । যার পরিবর্তে ‘বিদায় হজ’ সংযুক্ত করেছে ।
2. ষষ্ঠ শ্রেণীর বাংলা বইতে এস ওয়াজেদ আলীর ‘রাঁচি ভ্রমণ’ বাদ দেওয়ার কারণ ভারতের ঝাড়খন্ডের রাজধানী রাঁচি হিন্দুদের একটি তীর্থস্হান । যার পরিবর্তে সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘নীলনদ আর পিরামিডের দেশ’ যুক্ত হয়েছে ।
3. একই শ্রেণীর সত্যেন সেনের ‘লাল গরুটা বাদ দেওয়ার কারণ গরু মায়ের মতো উল্লেখ করে মুসলমান বাচ্চাদের নাকি হিন্দুত্ববাদ শেখানো হচ্ছে । যার পরিবর্তে মুহম্মদ শহীদুল্লাহ রচিত ‘সততার পুরষ্কার’ যুক্ত হয়েছে । যেটা পুরোটাই ইসলামিক ধ্যান ধারণা নিয়ে রচিত ।
4. সপ্তম শ্রেণীর বাংলা বইতে নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের
‘লাল ঘোড়া’ গল্পটি বাদ দেওয়ার কারণ – গল্পে লালু নামে
একটি ঘোড়া ছিল । আর এতে মূলত পশুর প্রতি ভালোবাসার
প্রকাশ পেয়েছে ; যাতে নাকি মুসলমানদের পশু কোরবানীতে বাধা দেওয়ার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে । যার পরিবর্তে হাবীবুল্লাহ বাহারের ‘মরু ভাস্কর্য’
যুক্ত হয়েছে । যেখানে প্রকাশ পেয়েছে মোহাম্মদের জীবন চরিত্র ।
5. সুকুমার রায়ের ‘আনন্দ’ কবিতায় ফুলকে ভালোবাসার কথা বলেছে আর যেটা ইসলামের সাথে মেলে না – তাই বাদ পড়ে গেছে ।
6. কালিদাস রায়ের ‘অপূর্ব প্রতিশোধ’ কবিতায় কত সুন্দর ভাবে ইসলামের প্রশংসা করা হয়েছে – ‘তার তাজা খুলে ওজু করে আজো নামাজ পড়িনি/আত্না তোমার ঘুরিছে ধরায় স্বর্গে পাইনি ঠাঁই ! তবুও কবিতাটি বাদ দেওয়া হয়েছে ।
7. সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘মে দিনের কবিতা’ কেন বাদ দেওয়া হয়েছে তার ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি ।
8. স্বর্ণকুমারী দেবীর ‘উপদেশ’ কবিতাতে পিতামাতা এবং গুরুজনকে দেবতুল্য বলা হয়েছে ; জগতের
সৃষ্টিকর্তা ভগবান । যার কারণে কবিতাটি বাদ দেওয়া হয়েছে ।
9. রণেশ দাশগুপ্তের ‘মাল্যদান’ গল্পে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ; অথচ এটাকেও বাদ দেওয়া হয়েছে ।
10. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বাংলাদেশের হৃদয়’ কবিতাটি বাদ দেওয়ার কারণ – ‘ডান হাতে তোর খড়গ জ্বলে, বাঁ হাত করে স্নেহের হাসি’ ! কবিতায় নাকি দেবী দুর্গাকে প্রশংসা করা হয়েছে ।
11. শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিখ্যাত গল্প ‘লালু’ বাদ দেওয়ার কারণ কালীপূজা ও পাঁঠা বলির
কাহিনী যুক্ত আছে ।
12. অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বইতে বুদ্ধদেব বসুর ‘নদীর স্বপ্ন’ কবিতাটি বাদ দিয়ে কায়কোবাদের ‘প্রার্থনা’ যুক্ত করেছে ।
13. উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী রচিত ‘রামায়ণ কাহিনী-আদিখন্ড’ শীর্ষক গল্পটি বাদ দিয়েছে ; কারণ সেখানে রামকে প্রশংসিত করা হয় যেটা নাকি কোমলমতি মুসলমান শিশুদের আঘাত করবে ।
14. নবম শ্রেণীর বাংলা বইতে সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পালামৌ’ গল্পটি বাদ দেওয়ার কারণ এটি ভারতের পর্যটন স্পট বলে ।
15. জ্ঞান দাস রচিত ‘সুখের লাগিয়া’ কবিতাটি বাদ দেওয়ার কারণ কবিতাদ্বয়ে রামকৃষ্ণের ভক্তি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে । যার পরিবর্তে শাহ মোহাম্মদ সগীরের ‘বন্দনা’ যুক্ত করেছে । যেটা কিনা ইসলামিক চিন্তাধারার কবিতায় বটে ।
16. ভারতচন্দ্র গুণাকর রচিত ‘আমার সন্তান’ কবিতাটি বাদ দেওয়ার কারণ কবিতায় মঙ্গলকাব্যের অন্তভূক্তি, যা দেবী অন্নপূর্ণাকে প্রশংসা ও প্রার্থনা করার কথা বলা হয়েছে । যার পরিবর্তে আলাওলের ‘হামদ’ কবিতাটি যুক্ত করেছে ।
17. লালন শাহ রচিত ‘সময় গেলে সাধন হবে না’ কবিতাটি বাদ দেওয়ার কারণ লালন সমাজকে প্রশংসিত করেছে । যার পরিবর্তে আব্দুল হাকিমের ‘বঙ্গবাণী’ কবিতাটি যুক্ত করেছে ।
18. রঙ্গলাল বন্দোপাধ্যায়ের ‘স্বাধীনতা’ কবিতাটি কি কারণে বাদ দেওয়া হয়েছে জানা যায়নি । যার পরিবর্তে গোলাম মোস্তফার ‘জীবন বিনিময়’ কবিতা যুক্ত করেছে ।
19. সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘সাঁকোটা দুলছে’ কবিতাটি বাদ দেওয়ার কারণ সাতচল্লিশের দেশভাগ কে নাকি হেয় করা হয়েছে । যার পরিবর্তে কাজী নজরুল ইসলামের ইসলামিক কবিতা ‘উমর ফারুক’ যুক্ত করেছে ।
– এমন আরও অনেক উদাহরণ দেওয়া যায়, সময় সল্পতার কারণে সব উল্লেখ করতে পারিনি । আপনারা নিজেরা প্রত্যেক শ্রেণীর বই হাতে নিয়ে একটু দেখবেন, কিভাবে হিন্দুদের পরিকল্পিত ভাবে ইসলামিক শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে ।
Courtesy-Nayan Saha