এই পৃথিবীটাকে যারা ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ করে ফেলছে, তারাই নাকি আজকে সবচেয়ে বেশি “অসাম্প্রদায়িক”! ভাবা যায় পর্যটনেরও একটি ধর্মীয় পরিচয় দেয়া হচ্ছে যার নাম ‘ইসলামি পর্যটন’!
ডোনাল্ড ট্রাম্প, নরেন্দ মোদী কি পৃথিবীকে ধর্মীয় পরিচয়ে বিভক্ত করার চেষ্টা করেছে? ওআইসি যেভাবে এই বিশ্বকে সাম্প্রদায়িক পরিচয়ে দুইভাগ করে চলেছে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হোন না তারা যারা অন্তত ট্রাম্প-মোদীর বিজয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন!
৫৭টা ‘মুসলিম দেশ’ মিলে বলছে তারা নিজেদের মধ্যে ‘মুসলিম ট্যুরিজম’ চালু করবে যার লক্ষ হবে মুসলিম ও ইসলামবান্ধব পর্যটন গড়ে তোলা। অর্থ্যাৎ, ভাইয়ের অর্থ ভাইয়ের পকেটে যাওয়া নিশ্চত করা। বুঝলেন না বিষয়টা? আপনি কাফেরদের ইউরোপ আমেরিকা ইন্ডিয়া ঘুরতে গেলে টাকাগুলো তো ঐসব দেশে দিয়ে আসবেন। তারচেয়ে তুরস্ক, দুবাই, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ঘুরতে গেলো মুসলমানের টাকা আরেক মুসলমান ভাইয়ের পকেটে যাবে। এর নামই হচ্ছে ‘ইসলামিক পর্যটন’। এই সাম্প্রদায়িক পর্যটনের একটি অনুষ্ঠান বাংলাদেশের ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো যার প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং। তিনি ঐ অনুষ্ঠানে মুসলমানদের মধ্যে পর্যটন বাড়াতে ভিসা সহজকরণ সহ বিভিন্ন অগ্রগতির আশা করে বলেন, বিশ্বে মুসলিম পর্যটকের সংখ্যা ১৫৬ মিলিয়ন, যা ২০২০ সালে বেড়ে দাঁড়াবে ১৮০ মিলিয়ন। একই বছর সারা বিশ্বের জনসংখ্যার ২৬ শতাংশ হবে মুসলিম। এরপরই তিনি মন্তব্য করেন, মুসলিমদের ভাগ্য নিয়ে কেউ যেন খেলতে না পারে, নিজেদের মধ্যে সমস্যা ঘটলে যেন নিজেরাই সেটা মিটিয়ে ফেলা হয়, তার জন্য বাইরের কেউ (অমুসলিম দেশ?) নাক না গলায় তা নিয়ে ওআইসিভুক্ত দেশগুলো যেন একসাথে কাজ করে…।
এই পৃথিবীকে প্রতিনিয়ত সাম্প্রদায়িকভাবে বিভক্ত করে চলেছে মুসলমানরা। ‘ইসলামিক ব্যাংকিং, ইসলামিক এডুকেশন, ইসলামিক গন্থাগার, ইসলামিক ট্যুরিজম, ইসলামিক কালচার…। এসব নিজেরা করেও তারা নরেন্দ মোদী নির্বাচিত হলে উদ্বেগ প্রকাশ করে। বাংলাদেশ সব রকম ইসলামিকরণ নিশ্চিত করেও এখানকার সুশীলরা ভারতে ধর্মবাদী রাজনীতির উত্থানে মাথায় হাত দেয়। এই যে ওআইসির ইসলামিক ট্যুরিজম ঢাকাকে ‘সিটি অব ট্যুরিজম’ ঘোষণা নিয়ে তাদের কোন মাথা ব্যথা নেই কেন? বাংলাদেশ এভাবে নিজেকে মুসলিম বানানোর পরও দেশের কথাকথিত প্রগতিশীলরা মুখ বুজে আছেন কেন? বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী মুসলিমদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলার বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলেছেন। তিনি বিশ্বে মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির সুসংবাদ দিয়েছেন, মুসলমানদের নিজেদের মধ্যে বিবাদকে নিজেদের মধ্যে মিটিয়ে নেয়ার কথা বলেছেন, এগুলো একজন হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, আদিবাসী, পাহাড়ী জনগোষ্ঠিকে কি নিজ দেশে পরবাসী করে তোলে না? অসাম্প্রদায়িকতার সংজ্ঞা কি বদলে গেছে? নাকি আমরা এর নাম দিবো ‘ইসলামিক অসাম্প্রদায়িকতা’?
মুসলিম দেশগুলি নিজেদের মধ্যে ট্যুরিজম সহজ করতে নানা কার্যক্রম হাতে নিবে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পর্যটন স্পটগুলোকে ‘হালাল’ করে তোলা। আমাদের হুমায়ূন আহমেদের ছাওয়াল বান্দরবান ঘুরতে গিয়ে আজান শুনতে না পেয়ে সেটা নিয়ে এড বানিয়ে ফেলেছিলো। আশা করা যায়- বাংলাদেশ সরকার ইসলামিক পর্যটন বান্ধন কর্মসূচীর আওতায় বাংলাদেশের সি-বিচ, পাহাড়ে পর্যাপ্ত মসজিদ তৈরি করে মাইক সহযোগে আজান শোনার ব্যবস্থা করে দিবে। বাংলাদেশের কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ইতমধ্যে পুলিশ সদস্যরা একাধিকবার কাপলদের কাছে বিয়ের সার্টিফিকেট দেখতে চেয়েছে। শরীয়ত সম্মত বিবাহিত স্বামী-স্ত্রী ছাড়া কেউ সি-বিচে গেলো কিনা এরকম নৈতিক পুলিশ নিশ্চত করেই ওআইসি’র মুসলিম ট্যুরিজমকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে…।