ইসলামে কি প্রতিবেশী গরীব হিন্দু বা খ্রিস্টানকে জাকাতের টাকা দিয়া যায়?
কিছুদিন আগে বাংলাদেশ ও ভারতীয় অনলাইন পত্রিকাগুলোতে একটা নিউজ প্রকাশ হতে দেখা গেছে, ‘জাকাতের টাকায় হিন্দু মেয়ের বিয়ে’ শিরোনামে। সবাই ধন্য ধন্য করেছে। না, অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, বরং সাম্প্রদায়িক সুপ্রিমিটি থেকে এই গর্ববোধ। সবাই বলছিলো, ইসলামের এই জাকাত সিস্টেমরা দেখুন কত মহান, এরকম আর অন্য কোন ধর্মেই, এটাই সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্মের একটা নমুনা…।
প্রথম কথা হচ্ছে উক্ত নিউজ সত্য হলে ইসলাম ধর্ম মতে মুসলিমদের জাকাতের টাকায় হিন্দু মেয়ের বিয়ে দিলে সেটা জাকাত আদায় হিসেবে গ্রহণ হবে না! ইসলামে স্পষ্ট করে বলা আছে, জাকাত কেবল মাত্র গরীব মুসলিমদের মধ্যে দিতে হবে। এই সম্পর্কে ফুকাহায় কেরাম ও উলামায় কিরাম সকলে একমত জাকাত ফিতরা মান্নাত কাফফারা কোন কাফেরের জন্য দেয়া যাবে না। কারণ কুরআনে বলা আছে-
إِنَّمَا يَنْهَاكُمُ اللَّهُ عَنِ الَّذِينَ قَاتَلُوكُمْ فِي الدِّينِ وَأَخْرَجُوكُمْ مِنْ دِيَارِكُمْ وَظَاهَرُوا عَلَى إِخْرَاجِكُمْ أَنْ تَوَلَّوْهُمْ وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ “মহান আল্লাহ তাদের সাথে তোমাদেরকে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেছেন, যারা দীনের ব্যাপারে তোমাদের সাথে যুদ্ধ করছে। তোমাদেরকে স্বদেশ থেকে বহিষ্কৃত করেছে এবং তোমদেরকে দেশ থেকে বহিষ্কার করণে সাহায্য করেছে। তাদের সাথে যারা বন্ধুত্ব করে তারা জালিম।” (সূরা মুমতাহিনা, আয়াত নং-০৯)। এটাই হচ্ছে দলিল।
হাদিসে আরো স্পষ্ট করে এ সম্পর্কে বলা আছে, أَنَّ اللَّهَ افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ صَدَقَةً فِي أَمْوَالِهِمْ تُؤْخَذُ مِنْ أَغْنِيَائِهِمْ وَتُرَدُّ عَلَى فُقَرَائِهِمْ “মহান আল্লাহ তাদের ধন-সম্পদের উপর যাকাত ফরয করেছেন। তা মুসলিম ধনীদের থেকে আদায় করে মুসলিম গরীবদেরকে দেওয়া হবে।” (বুখারী শরীফ, হাদীস নং-১৩৯৫)।
আপনার প্রতিবেশী গরীব হিন্দু বা খ্রিস্টানকে আপনি জাকাতের টাকা দিতে পারবেন না। স্রেফ ‘গরীব’ বলে আল্লার কাছে কিছু নেই, অবশ্যই সেটা ‘গরীব মুসলমান’ হতে হবে। ইসলামে মুসলিমদের মধ্যে বিবাদ, হিংসা, কলহ, রক্তপাত করতে নিষেধ করা আছে। সেটা কোনভাবেই অমুসলিমসহ ধরা হয়নি। আজকাল সেগুলোকেই মহান হিসেবে তুলে ধরতে ‘মুসলমান’ না লিখে ‘মানুষ’ হিসেবে অনুবাদ করা হয়।
জাকাতের মহান হয়ে উঠার কোন কারণ নেই কারণ এটি কেবল নিজ সম্প্রদায়ের মধ্যে বন্টন করতে বলা হয়েছে। এই সিস্টেমটি চালু হয় মুহাম্মদ যখন মদিনাতে যান। মদিনার আনসাররা সবাই ছিলো ব্যবসায়ী। টাকা পয়সা জমিজমাতে তাদের কোন অভাব ছিলো না। অপরদিকে মুহাম্মদ তার ১১ স্ত্রী ও অনুসারীদের নিয়ে দিন আনি দিন খাই অবস্থা। প্রথম প্রথম মুহাযিরদের সবাই মেহদানদারী করলেও এটি তো বছরের পর বছর সম্ভব নয়। মুহাম্মদ তখনই মুসলিম ধনীদের সম্পদের উপর অপর গরীব মুসলমানের ভাগ আছে বলে মত দেন। তখন থেকে জাকাত আদায়কে নিয়ম করা হয়। এটি হতে পারত পৃথিবী অন্যতম মহান একটি ধর্মীয় অনুসঙ্গ যদি এই বন্টনে অমুসলিমদের মধ্যেও বিবেচিত করা হতো। কিন্তু ধর্ম কখনই মহান হতে পারবে না কারণ সে নিজ সম্প্রদায় ব্যতিত অন্য কারোর কথা ভাবে না। ইসলামে এটি আরো নির্মমভাবে সত্য। ইসলামে অমুসলিম বিপদগ্রস্তের জন্যই দোয়া করা যায় না। তাদের জন্য মঙ্গল শুভকামনাও করাও হারাম। এতখানি উগ্র সাম্প্রদায়িক একটি ধর্ম জাকাত বা দানকে চরমভাবে ঘৃণ্য অমানবিক করে ফেলেছে! তাই জাকাত নিয়ে মুসলমানদের বড়াই করার কিছু নেই।
এই লেখা নিয়ে এরপর কিছু ইসলামপন্থি আসবে মিথ্যার অভিযোগ নিয়ে। তাই ইসলামিক কিছু গ্যাড়াকল এখানেই ভেঙ্গে দেয়া যাক। মুহাম্মদ ইসলামীক রাষ্ট্রে ‘জিন্মি অমুসলিমদের’ মাঝে (অবশ্যই তাদের আহলে হাদিস হতে হবে) নফল দান খয়রাত করতে নির্দেশ দিয়েছেন। নফল দান মানে যেটা জাকাত নয়। ধরুন আপনি কোন গরীব কাফেরকে একটা মেশিন কিনে দিলেন। এটা দিতে পারবেন তবে এটা জাকাত হিসেবে আপনার খাতায় আল্লাহ এন্টি করে দিবে না। আর এই যে ‘জিন্মি অমুসলিম’ জিনিসটা কি? এরা হচ্ছে তারা যারা ইসলামী হুকুমত মেনে মুসলিমদের দেশে তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে জিজিয়া কর দিয়ে বসবাস করবে। এরা কখনই রাষ্ট্রের দায়িত্ব পাবে না, নেতা হতে পারবে না, মুসলিমদের চেয়ে কখনও মর্যাদায় বড় হতে পারবে না- এরকম শরীয়তী শর্তে যারা বসবাস করে তাদের বুঝানো হয়। সেরকম গরীব কাফেরকে একবার হযরত ওমার বাইতুল মাল থেকে কিছু দান করেছিলেন। এটা জাকাত ছিলো না। কিন্তু আজকাল সেটাকেই বড় করে ইসলামের মহানত্ব দেখাতে প্রচার করা হচ্ছে।
স্পষ্ট কথা হচ্ছে, কোন কাফেরকে দান করা যাবে না। তবে সেই কাফের যদি ইসলামিক দেশের জিন্মি হয়ে থাকে তাহলে তাকে নফল ভিক্ষা দানখয়রাত করা যাবে। নতুবা কাফের মাত্রই মুসলমানদের কৃপা পাবে না। ইসলামে সব মাহযাব ও ইমামের এটাই মত।