পজিশন পেপার নয় এটা। কিন্তু তবুও সাম্প্রতিক কোর্স কারেকশনের ক্ষেত্রে যে ঘটনাপ্রবাহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
এক, আগেই বহুবার বলেছি, আমি এবং আমার তৈরি আন্দোলন নোয়ার ভূমিকা পালন করবে, এরকমই আমাদের ধারণা ছিল। সিলেক্ট ফিউ, মাস নয়। সবাইকে বাঁচানো যাবে না, ইতিহাস আমাদের মেরে রেখেছে। যে জাতির মধ্যে বিশ্বমানবতা প্রচার করে গেছেন রবীন্দ্রনাথ, আর মৌলবী স্বয়ং রামমোহনকেই ডাকা হত। যে জাতির মধ্যে বিধান রায়ের মত নেহরু গান্ধীর এজেন্ট পশ্চিমবাংলার রূপকার। যে জাতির হৃতভূমি পূর্ববঙ্গে সুহরাওয়ার্দির গুণ্ডা মুজিব হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। যে জাতির মধ্যে দীর্ঘসময় রাজত্ব করেছেন জ্যোতি বসু, বাংলা ভাষাটাই ঠিকমত না জেনে, বাঙালির ইতিহাস তো ছেড়েই দিলাম। যে জাতির বিপ্লবীরা জেলের মধ্যে দলে দলে আত্মসমর্পণ করলেন রাশিয়া আর ইংরেজের কাছে। যে জাতির বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী হাজি নুরুল থেকে সিদ্দিকুল্লা সবাইকে নিয়ে চলেন, কিন্তু হিন্দু সংহতির নেতা তপন ঘোষের সঙ্গে প্রকাশ্যে কথা বলতে গেলে তাঁর হিজাব অনুমতি দেয় না। যে জাতির বুদ্ধিজীবী যাদবপুরে বসে বিশ্বের তাবৎ বিপ্লবী আন্দোলন, প্যালেস্টাইন থেকে রোহিঙ্গা, সবকিছু নিয়েই মাথা ঘামায়, কিন্তু ঘরের পাশে পূর্ববঙ্গে যেখানে দেশভাগের সময় পঁয়ত্রিশ শতাংশ হিন্দু ছিল, সেখানে আজ চার কি পাঁচ শতাংশ মেরেকেটে, এই মারাত্মক এথনিক ক্লিনজিং দেখতে পায় না। যেখানে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে স্বাধীনতার সময়কার ষোলো শতাংশ মুসলমান জনসংখ্যা আজ অনুপ্রবেশের ফলে ত্রিশ শতাংশ ছাড়ায়, অর্থাৎ জনসংখ্যায় এদের অনুপাত দ্বিগুণ হয়ে গেছে, ষোলো থেকে বত্রিশ। যেখানে বাঙালি শব্দটির বহুপ্রাচীন এবং আজও লোকায়তভাবে মান্য যে অর্থ, সেই ইতিহাসকে জীবন্ত কবর দিয়ে একটা ভাষাবাদী বেলুন ফোলানো হয় পেট্রো ডলারের সাহায্যে। যেখানে বাঙালির ভাষা ধ্রুপদীর মর্যাদা পায় না কারণ তৃণমূলের জেহাদী লবি সফলভাবে কলকাঠি নাড়ে। সেই পশ্চিমবঙ্গকে বাঁচাতে গেলে মির্যাকল দরকার। সেটা হবে না। কাজেই আমাদের কাজ হবে প্ল্যান বি নিয়ে। পার্সি মডেল, নির্বাসিত তিব্বতি বৌদ্ধ মডেল, বা খুব সফল হলে ইহুদী মডেল।
দুই, মোদির জুমলা দেখে মনে হচ্ছিল দুহাজার উনিশ অবধি এই করেই কাটবে। ডিমনিটাইজেশন ভারতে জেহাদবিরোধী লড়াইকে অন্তত এক বছর পিছিয়ে দিয়েছে, ফালতু জিনিস নিয়ে বাজার গরম করতে গিয়ে জ্বলন্ত সমস্যাগুলোকে ধামাচাপা দিয়েছে। সেটা অ্যামেরিকার নির্দেশে হয়েছে, না গুজরাটি বানিয়া লবির নির্দেশে, জানি না। যেহেতু পশ্চিমবঙ্গে যারা বিজেপি করেন, তারা বাদবাকি তৃণ ও সিপিএম বাঙালির মতই দলদাস, তারা এই সময় যা বলেছেন, তা দলদাসত্বই থেকে গেছে। যাই হোক। দিল্লিতে বিজেপি এবং আর এস এস এর বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য মুখকে দেখেছি সমালোচনা করতে মোদির।
তিন, কিন্তু এবছর অবস্থা পাল্টাতে লাগল। যোগী আদিত্যনাথ উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী, তিন তালাক সুপ্রিম কোর্টে রদ, এবং রোহিঙ্গা ঝামেলায় মোদির প্রকাশ্য স্ট্যান্ড, এগুলো তো ভারতের বিজেপির প্রতি যে কোনো জেহাদবিরোধী ব্যক্তিকেই যথেষ্ট সহানুভূতিশীল করে দিতে পারে, কারণ জেহাদ আটকানোর কাজটাই আমরা বিজেপির থেকে বরাবর আশা করে এসেছি, ভারতের সভ্যতার শেকড়ে ফেরার কাজটাই আশা করে এসেছি, জুমলা দেখতে চাইনি, মোদির উচ্চবিত্ত সমর্থকরা জুমলায় খুশি হতে পারেন, কিন্তু যারা মোদিকে ভোট দিয়ে জিতিয়েছে, তারা হবে না।
একটা খুব ছোট্ট ঘটনা, কিন্তু তাও দাগ কেটেছে। যে ব্যক্তি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সঙ্ঘের, অর্থাৎ ডুটার নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন বিজেপির, আমি তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি (সে অবশ্য সিপিএমের প্রার্থীকেও হাড়ে হাড়ে চিনি, ব্যক্তিগতভাবেই চিনি)। লোকটি সৎ, লোকটি জাতীয়তাবাদী, এবং জুমলাবিশ্বাসী নন, সংস্কৃতির লড়াইটাতে বিশ্বাস করেন, এবং মাথাটা খুব পরিষ্কার, মানে গণেশের মাথায় প্লাস্টিক সার্জারিতেও বিশ্বাস করেন না। এই বিজেপিতেই কিন্তু অনেকে আছেন, যারা স্রেফ শিক্ষার প্রাইভেটাইজেশনে আগ্রহী। তো মনে হল, একটা পরিবর্তন হচ্ছে, আর এস এস থেকেই করা হচ্ছে।
কিন্তু আমি বহুবার বলেছি, একা ভারতের সঙ্ঘ পরিবারের পক্ষে আটকানো সম্ভবই না জেহাদীদের। রাশিয়া আর চীন কি চাইছে, খুব জরুরি। আপনারা জানেন, রাশিয়া, ভারতের পুরোনো বন্ধু, অনেকগুলো কারণে ভারতের ওপরে ক্ষেপে গেছে। মোদির একটা বড় ব্যর্থতা। যাই হোক, সেই রাশিয়ার চিন্তাবিদরা যে আলোচনা করছেন রোহিঙ্গা নিয়ে, সে আলোচনা আমার কাছে এসেছে। ইংরেজিতে এখনও করেন নি, রুশ ভাষাতেই করছেন। আমার রুশ একেবারেই কাঁচা, কিন্তু আজকের পৃথিবীতে অনুবাদ কোনও সমস্যা নয়।
তারপরে দেখলাম রাষ্ট্রসঙ্ঘে ভেটো দিয়ে রাশিয়া আর চীন আটকে দিয়েছে রোহিঙ্গা নিয়ে মায়ানমারকে ভর্ৎসনা করার মার্কিন প্রস্তাব। অ্যামেরিকা ভারতের বন্ধু, অনেক সঙ্ঘীই ভাবেন। আমার একটা চ্যারিটির প্রস্তাব রইল হিন্দুত্ববাদীদের কাছে। অ্যামেরিকা কেন বন্ধু নয়, কেন ট্রাম্পের অ্যামেরিকাও ক্রমশ সেই লিবেরাল এস্টাব্লিশমেন্টের কাছে আত্মসমর্পণ করছে, স্টিভ ব্যাননের পদত্যাগ থেকে কি কি সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত, ভারতে মোদি-আম্বানি-আদানি রাজত্বে লিবেরালবাদের কি কি বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠছে, এগুলো নিয়ে আমি একটা সেমিনার করিয়ে দেব বিনিপয়সায়। যে অ্যামেরিকা রোহিঙ্গা ইশুতে মায়ানমারকে ভর্ৎসনা করতে চায়, সে অ্যামেরিকা কেন বন্ধু নয়, সেটা বোঝা খুব জরুরি। যাই হোক, সে অন্য কথা।
আজ যদি বাংলাদেশ-মায়ানমার দ্বন্দ্ব হয়, সেখানে সারা পৃথিবীর সমস্ত জেহাদবিরোধী শক্তির এক হওয়ার একটা সম্ভাবনা আছে। রাশিয়া আর চীন যদি চায়, বাংলাদেশের ও পশ্চিমবাংলার ইসলামিক এস্টাব্লিশমেন্ট গুঁড়িয়ে দেওয়া যায়।
প্ল্যান এ অতএব। কুরুক্ষেত্র। দেখা যাক।
আরও একবার ব্যাপকতম জেহাদ-বিরোধী ঐক্যের ডাক দিলাম।