উন্নয়নের জোয়ারে বঙ্গবন্ধু’র বাংলাদেশ এখন আধা-পাকিস্তান হয়ে গেছে।

উন্নয়নের জোয়ারে বঙ্গবন্ধু’র বাংলাদেশ এখন আধা-পাকিস্তান হয়ে গেছে।

সিংহবাড়ীর শিয়াল!
নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের সিংহবাড়ীর বাংলাদেশী যুবক আশিকুল আলম টাইমস স্কয়ারে গ্রেনেড হামলা পরিকল্পনার অভিযোগে ঈদের পরপরই ৬জুন ২০১৯ গ্রেফতার হয়েছেন। তিনি আইএস’র সমর্থক। পুলিশের ভাষ্যমতে সিরিয়াল নাম্বার মুছে ফেলা আগ্নেয়াস্ত্র কেনার পর তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি গ্রেনেড ও সুইসাইড ভেষ্ট কিনতে চেয়েছিলেন। লেজার সার্জারী করে চোঁখের দৃষ্টিশক্তি প্রখর করেছিলেন যাতে লক্ষ্যবস্তুতে ঠিকঠিক আঘাত হানতে সক্ষম হন? তার পরিকল্পনা ছিলো টাইমস স্কয়ারে গ্রেনেড হামলা করে মানুষ মারার? আশিকুল আলম থাকতেন সিংহবাড়ীতে, কিন্তু তাঁর পরিকল্পনাটি ছিলো ধূর্ত শিয়ালের মত?

ক’দিন আগে, জুন মাসের প্রথম দিকে অস্ট্রেলিয়ার আদালত বাংলাদেশী ছাত্রী মোমেনা সোমা-কে এক অস্ট্রেলিয়ানকে গলায় ছুরি চালিয়ে হত্যার চেষ্টার দায়ে ৪২ বছরের কারাদন্ড দিয়েছে। মোমেনা গতবছর (১লা ফেব্রূয়ারি ২০১৮) ষ্ট্যুডেন্ট ভিসায় অষ্ট্রেলিয়া যান এবং ৯দিনের মাথায় ‘আল্লাহু আকবর’ বলে  মেলবোর্নে বিধর্মী মারতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। সদ্য যুবতী মোমেনা আইসিস সমর্থক। তিনি নিজেই বলেছেন, পড়াশোনা নয়, বিধর্মী মারতে তাঁর সেদেশে গমন। মোমেনা ঢাকায় থাকতেন, তার জঙ্গী হবার হাতখড়ি কি ঢাকায়?
  
সামাজিক মাধ্যমে ইসলাম বিরোধী প্রচারণা চালানোর অভিযোগে সিলেটের ওসমানী নগরের বুরুঙ্গবাজারের পাশে একটি হিন্দু বাড়ীতে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে বুধবার ঈদের দিন। ঈদের নামাজের শেষে প্রায় দু’শ মুসুল্লী এ হামলা চালায়। এ ঘটনায় মামলা হয়নি, কেউ গ্রেফতার হননি। সোমবার ১০জুন ২০১৯ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা নিবারণ বড়ুয়া ফেইসবুকে ‘ইসলাম অবমাননার’ দায়ে গ্রেফতার হয়েছেন। আপাতত: বড়ুয়া হলেন ‘অনুভূতি’র সর্বশেষ কোরবানী। স্থানীয় মিডিয়ায় এগুলো এসেছে। বড়বড় মিডিয়ায় তেমন আসেনা, কারণ এসব ঘটনা নিত্য-নৈমত্যিক; তদুপরি, আইসিটি এক্ট বহাল আছে?

মে মাসের কুড়ি তারিখ ইউক্রেনের ষষ্ট প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নিয়েছেন ভলডিমার জেলেন্সকি। শপথ অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, অফিসের দেয়ালে আমার ছবি টাঙ্গাবেন না, আপনার সন্তান বা পিতামাতার ছবি টাঙ্গান। আপনার মা-বাবা যেমন আপনাকে এ জায়গায় নিয়ে এসেছেন, আপনিও আপনার শিশুকে আরো সুন্দর জায়গায় পৌঁছে দিন। তিনি আরো বলেন, আমি একদা ছবি পরিচালনা করতাম, দেশ তো আর ছবি নয়, তবে আমরা সবাই মিলে দেশকে ছবির মত করে গড়ে তুলতে পারি।

প্রথম দু’টি ঘটনায় একজন বাংলাদেশী হিসাবে আমরা লজ্জিত। শুধু ওঁরা দু’জন নয়, কিছুদিন আগে আকায়েদুল্ল্যাহ বা নাফিসের ঘটনা ভুলে যাবার নয়? আরো আছে। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশীদের এমনতর জঙ্গী ঘটনার তালিকা এখন বেশ লম্বা। বাংলাদেশ সম্ভবত: জঙ্গী বিনির্মানে পাকিস্তানকে পিছনে ফেলে দিচ্ছে? সামাজিক মাধ্যমে একজন লিখেছেন, ‘দেশের চাহিদা মিটিয়ে বাংলাদেশ এখন বিদেশে জঙ্গী রফতানি করছে’। কেন এমন হচ্ছে? 

কিছুদিন আগে এক পরিচিত মুসলিম মহিলা বললেন, ‘দাদা, ছেলেটি বড় হচ্ছে, চারিদিকে যেমনি জঙ্গী হাওয়া, বড় ভয় হয়’? তাকে বলেছিলাম, ‘কেন, আমাদের ছেলেমেয়ে নিয়ে তো এ ভয় হয়না’? যোগ দিয়েছিলাম, ‘ছেলেকে মানুষ বানাও। ছেলে ভালো মানুষ হলে একজন ভালো মুসলমানও হবে’। আশিকুল আলম ঘটনাটি ‘স্ট্রিং অপারেশন’।  সদ্য দু’জন হিন্দু-বৌদ্ধ বলেন, ‘স্ট্রিং প্রক্রিয়ায় ফাঁদ পেতে ধরাটা কতটা যৌক্তিক সেটাও বিবেচ্য’। তাদের প্রশ্ন করেছি, আপনাদের ছেলেকে এভাবে প্ররোচিত করলে কি তাঁরা জঙ্গী হবে? তাদের উত্তর, ‘নো ওয়ে’।

একজন একটি দৃষ্টান্ত দিলেন, কাশ্মীর থেকে চল্লিশ লক্ষ হিন্দু ব্রাহ্মণ বিতাড়িত হয়েছেন, একজনও জঙ্গী হননি। কিন্তু কাশ্মীরে মুসলমানদের বিশেষ সুবিধা দেয়ার পরও সেখানে ঘরে ঘরে জঙ্গী? একই কথা প্রযোজ্য বাংলাদশের হিন্দুদের ক্ষেত্রেও। তাঁরা প্রতিনিয়ত অত্যাচারিত হচ্ছেন, কিন্তু একজনও জঙ্গী হচ্ছেন না। কারণ কি? সন্ত্রাস বা জঙ্গীবাদ ইত্যাদি কথাবার্তা উঠলে অনেকে ভারত বা অন্য দেশের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, হিন্দু সন্ত্রাসী, বৌদ্ধ বা খৃষ্টান সন্ত্রাসীও তো আছে। দেশে দেশে বা সকল ধর্মে উগ্রপন্থী আছে তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। কিন্তু ঐসব সন্ত্রাসীরা লোকাল বা স্থানীয়, এরা কেউ অন্য দেশে বিধর্মী মারতে যায়না? অন্য ধর্মীয় সন্ত্রাসীরা রাষ্ট্র বা সমাজের বৃহত্তর অংশের সমর্থন পায়না। তাদের অপকর্মের বিচার হয়। সেখানে গণতান্ত্রিক শক্তি বা প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীদের কথা শোনা যায়। যেটা বাংলাদেশ বা মুসলিম বিশ্বে দেখা যায়না।

তৃতীয় ঘটনাটি বা হিন্দু নির্যাতন বাংলাদেশে ঘটছে সেটা কেউ অস্বীকার করেননা, কিন্তু এই নিয়ে কারো কথা শোনা যায়না। ঘটনার বিচার হয়না। সবাই অজুহাত দেয়ার চেষ্টা করেন। অথচ ঘটনাগুলো সন্ত্রাসী ঘটনা। ‘কচু গাছ কাটতে কাটতেই নাকি ডাকাত হয়’, ছোটখাট সন্ত্রাসীর ঘরে বড় সন্ত্রাসী জন্ম নিলে তো অবাক হবার কিছু থাকে না? কথা একেবারে শোনা যায়না তাও নয়, সুলতানা কামাল, বা শাহরিয়ার কবীর-রা কথা বলেন। এদের সংখ্যা নগন্য এবং তাদের অনেকের মাথার ওপর ‘মৃত্যুদন্ড’ ঝুলছে। কথা বলতে হয় সরকারী মানুষজনকে, রাজনৈতিক নেতাদের। তাঁরা চুপ। যতক্ষণ প্রধানমন্ত্রী মুখ না খোলেন, অন্যরা চুপ থাকবেন। এরফলে অত্যাচার থামছে না, থামবে না?

ফেইসবুকে ইসলাম অবমাননার কথিত অভিযোগে অতন্ত: দুই ডজন হিন্দু যুবক জেলে পঁচছে। কিন্তু সামাজিক মাধ্যমে হিন্দু ধর্ম অবমাননাকারী সংখ্যা অসংখ্য, পুলিশ তাঁদের খুঁজে পায়না? ওয়াজ মাহফিলের নামে হিন্দু ও মুক্তমনাদের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত বিষোদগার হচ্ছে। এসব অনুষ্ঠানে এমপি বা সরকার দলীয় নেতারা অতিথি থাকেন, তারা সবাই নীরবে এসব হজম করেন অথবা উস্কানী দেন? সম্প্রতি সরকার এমত পনের জন হুজুরের  একটি তালিকা বানিয়েছেন। দেখার অপেক্ষা এদের কি হয়? মূল কথাটি হচ্ছে, রাষ্ট্রযন্ত্রে ধর্ম ঢুকলে যা হয়, বাংলাদেশে তাই হচ্ছে।

সর্বশেষ, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের মত এমন সুন্দর কথা কি আমরা কখনো শুনেছি? দেশ স্বাধীন হবার পর মানুষ স্বপ্ন দেখেছিলো একটি সুন্দর বাংলাদেশের। বঙ্গবুন্ধু ধর্মীয় ৰাষ্ট্ৰ পাকিস্তানের সাম্প্রদায়িক কদর্য স্বরূপটি সঠিক দেখতে পেয়েছিলেন। তিনি ধর্মের বেড়াজাল থেকে রাষ্ট্রকে বের করে একটি মানবিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তা হয়নি।

বাংলাদেশে স্বাধীন হয়েছিলো একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসাবে। তাই থাকতে হবে। উন্নয়নের জোয়ারে বঙ্গবন্ধু’র বাংলাদেশ এখন অনেকটা আধা-পাকিস্তান হয়ে যাচ্ছে। এমন ধারা চললে, আশিকুল আলমই সম্ভবত: শেষ সন্ত্রাসী হবেনা? দুধ কলা দিয়ে ধর্মীয় রাজনীতি লালন করে দেশকে সন্ত্রাস মুক্ত রাখা যাবেনা। ধর্মীয় উগ্রবাদ যদি একটি সমাজ নিয়ন্ত্রণ করে, তাতে সমাজ বিষাক্ত হয়, ভালো মানুষ হারিয়ে যায়, আনন্দ-উল্লাসে নৃত্য করে দুর্বৃত্ত। #