ইসলাম কি শান্তির ধর্ম? তাদের কোরান কি বলে আসুন জেনে নি।মিশরের মসজিদে যারা বোমা মেরে ৩০৫ জন মুসল্লিকে (এরমধ্যে ২৭টি শিশু ছিলো) হত্যা করেছে তারা সবাই কথিত ইমাম
মাহাদীর বাইয়াত প্রত্যাশী মুমিন ছিলো। যে নৃশংসতা তারা ঘটিয়েছে তাতে তারা বিন্দুমাত্র অনুতপ্ত নয়।
কারণ তারা জানে ইমাম মাহদীর বাইয়াত প্রত্যাশী আল্লার সৈনিকদের নৃসংশতার উদাহরণ হিসেবে পবিত্র গ্রন্থে বলা হয়েছে তাদের ঘোড়ার সিনা পর্যন্ত রক্তে ডুবন্ত থাকবে (মাজমাউজ জাওয়াইদ)। কি পর্যন্ত মানুষ হত্যা করলে ঘোড়ার সিনা পর্যন্ত রক্ত ডুবন্ত থাকে অনুমান করুন…।
মিশরের হামলার প্রত্যক্ষদর্শী একজন বলেছেন, হামলাকারীদের লম্বা চুল এবং মুখে দাড়ি ছিলো। তারা ‘আল্লাহো আকবর’ বলে ধ্বনি দিচ্ছিল। ইসলামের ইমামদের মতে এটা ‘শেষ জমানা’ চলছে। ইমাম মাহাদীর বাইয়াত নিতে ঘর ত্যাগকারী আল্লার সৈনিকদের কি রূপ বৈশিষ্ট হবে তার বর্ণনা আছে হাদিস শরীফে।
ইমাম যুহরি বলেছেন, ‘পূর্ব থেকে কালো পতাকা এগিয়ে আসবে, যাদের নেতৃত্ব দেবে এমন এক দল লোক, যারা হবে ঝুলপরিহিত খোরাসানি উস্ট্রীর মতো, লম্বা চুল ও দাঁড়ি বিশিষ্ট। তাদের বংশ হবে গ্রামীণ আর নাম হবে উপনাম। তারা দামেস্ক নগরীকে জয় করবে। তাদের থেকে তিন ঘণ্টার জন্য রহমত প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে’।(আল ফিতান, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ২০৬)।
তিন ঘন্টার জন্য রহমত প্রত্যাহার করে নেয়া বলতে ইমাম মাহাদীর লোকজন কতখানি নিষ্ঠুরতা দেখাবে সেটা বুঝানো হয়েছে। আপনার আশেপাশে খেয়াল করে দেখতে পারেন ঘাড় পর্যন্ত বাবরি চুলের হুজুর যুবকদের, কেউ সবুজ বা কালো পাগড়িও বাঁধে। এরা হাদিস থেকেই নিজেদের তরিকা ঠিক করে নিয়েছে। তারা ইমাম মাহদীর দলে যোগ দিতে অপেক্ষা করে আছে।
এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ধৃত জিহাদীদের চোহারা মোবারক খেয়াল করলেও উপরের হাদিসের সঙ্গে মিল পাবেন। হাদিস অনুযায়ী তারা নিজেদের একাধিক উপনাম ব্যবহার করে। চুল লম্বার করে রাখে। তাদের কালো পোশাক ও কালো পতাকার রহস্যও হাদিসে আছে।
নবী মুহাম্মদের অত্যন্ত প্রিয় সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘পূর্ব দিক (খোরাসান) থেকে অবশ্যই কালো পতাকাবাহী দল আসবে। ঘোড়ার সিনা পর্যন্ত রক্তে ডুবন্ত থাকবে (মাজমাউজ জাওয়াইদ)। অর্থাৎ কালো পতাকাটা নিছক ফ্যান্টাসি বা ছেলেমানুষী এডভেঞ্চারের উদ্দেশ্যে গুলশান হামলার সময় জিহাদী ছেলেগুলো ব্যবহার করেনি। মিশরের মসজিদে হামলাকারীদের হাতেও ছিলো কালো পতাকা।
মুহাম্মদের মৃত্যুর পর তার অনুসারীরা ক্ষমতা ভোগ করতে নিজেদের মধ্যে তীব্র গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। এই যুদ্ধে নবীর মেয়ে ফাতিমা এবং তার স্বামী হযরত আলী (একই সঙ্গে তিনি নবীর চাচাতো ভাই এবং জামাতা) ক্ষমতা হারা হোন। তার অনুসারীরা বঞ্চিত হয়ে ফের ইসলামের মসনদে বসার স্বপ্ন দেখতে থাকেন।
আলী স্বয়ং নবীর বংশজাত বিধায় আলীর অনুসারীরা নিজেদের ইসলামের সবচেয়ে সহি অনুসারী মনে করত। একইভাবে আয়েশা এবং তার পিতা মনে করতেন ইসলাম সম্পর্কে সঠিক তরিকা তারাই অনুসরণ করেন। এরাই পরবর্তীকালে ‘শিয়া’ ‘সুন্নি’ হিসেবে পরিচিত হোন।
ইসলামের প্রথম গৃহযুদ্ধকালে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে মুসলমান মুসলমানের রক্ত পান করেছে। অমুসলিম বলতে কোন শব্দ বা চিহৃ তখন আরব ভূখণ্ডে ছিলো না। কারণ উমারের আমলে শেষ ইহুদিটি তার মাতৃভূমি থেকে বিতাড়িত হয়েছিলো। তাই ইসলামের গৃহযুদ্ধ ছিলো মুসলমানদের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এই গৃহযুদ্ধ ইসলামের ললাট লিখন যা আজো বিদ্যমান। কারণ কিভাবে প্রতিপক্ষ অপর মুসলমানকে কচুকাটা করতে হবে তার বয়ান পাওয়া যায় সে সময়কার বর্ণনা করা হাদিস পড়লে। এই হাদিসটা পড়লে বুঝবেন ক্ষমতার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বি মুসলমানদের কিভাবে উশকানি দেয়া হয়েছিলো।
আরতাত (রা.) বলেন, ‘সুফিয়ানি কুফায় প্রবেশ করবে। তিনদিন পর্যন্ত সে দুশমনদের বন্দীদেরকে সেখানে আটকে রাখবে এবং সত্তর হাজার কুফাবাসীকে হত্যা করে ফেলবে। তারপর সে আঠার দিন পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে তাদের (কুফাবাসীদের) সম্পদগুলো বণ্টন করবে। তাদের (কুফাবাসীদের) মধ্যে একদল খোরাসানে ফেরত যাবে।
সুফিয়ানির সৈন্যবাহিনী আসবে এবং কুফার বিল্ডিংগুলো ধ্বংস করে সে খোরাসানবাসীদেরকে তালাশ করবে। খোরাসানে একটি দলের আবির্ভাব ঘটবে, যারা ইমাম মাহদির দিকে আহ্বান করবে। অতঃপর মাহদি ও মানসুর (একজন সেনাপতি) উভয়ে উভয়ে কুফা থেকে পলায়ন করবে। সুফিয়ানি উভয়ের তালাশে সৈন্য প্রেরণ করবে। অতঃপর যখন মাহদি ও মানসুর মক্কায় পৌঁছে যাবে, তখন সুফিয়ানির বাহিনীকে ‘বায়দা’ নামক স্থানে মাটির নিচে ধ্বসিয়ে দেওয়া হবে। এরপর মাহদি মক্কা থেকে বের হয়ে মদিনায় যাবেন এবং ওখানে বনু হাশেমকে মুক্ত করবেন।
এমন সময় কালো পতাকাবাহী লোকেরা এসে পানির উপর অবস্থান করবে। কুফায় অবস্থিত সুফিয়ানির লোকেরা কালো পতাকাবাহী দলের আগমনের কথা শুনে পলায়ন করবে। কুফার সম্মানিত লোকেরা বের হবে যাদেরকে ‘আসহাব’ বলা হয়ে থাকে, তাদের কাছে কিছু অস্ত্র শস্ত্রও থাকবে এবং তাদের মধ্যে বসরা’বাসীদের থেকে একজন লোক থাকবে। অতঃপর কুফাবাসী সুফিয়ানির লোকদেরকে ধরে ফেলবে এবং কুফার যে সব লোক তাদের হাতে থাকবে, তাদেরকে মুক্ত করবে। পরিশেষে কালো পতাকাবাহী দল এসে মাহদির হাতে বাইয়াত গ্রহণ করবে।’ (আল ফিতান: ৮৫০, মুহাক্কিক আহমদ ইবনে সুয়াইব এই হাদিসটির সনদকে ‘লাবাসা বিহা’ বা ‘বর্ণনাটি গ্রহণ করা যেতে পারে’ বলেছেন)।
বর্তমান ইসলামী সন্ত্রাসের পিছনে রাজনীতি, অর্থনীতি ইত্যাদি বড় বড় কারণ বিদ্যামান আছে সত্যি। বাম ঘরানার লোকজন ধর্মীয় কারণকে অগ্রাহ্য করে এই দুটি কারণকেই বড় করে দেখাতে চান। আবার কেউ কেউ আছে কেবল ধর্মীয় কারণটিই বড় করে দেখাতে বেশি আগ্রহী। এই তর্ক আর বিতর্কের আড়ালের আপনার আশেপাশে যে যুবকটি ইমাম মাহাদীর বাইয়াত লাভের আশায় চুল লম্বা করে পাগড়ি বাঁধছে তার থেকে আমরা কেউই কিন্তু নিরাপদ নই।
হলি আর্টিজানের অতিথিরাও ভাবেনি তাদের শহরেই বেড়ে উঠছে কথিত কল্পিত ইমাম মাহাদীর অনুসারীরা। এরা রাজনীতি অর্থনীতির তোয়াক্কা করে না। এদের জন্ম ‘পবিত্র কিতাবের’ পৃষ্ঠা থেকে। কাজেই রাজনীতি অর্থনীতির সঙ্গে পবিত্র কিতাবকে না রাখলে নিজের বিপদের নেপথ্য কারণকেও সাম্রাজ্যবাদী ইহুদীনাসারাদের ষড়যন্ত্র বলেই ভ্রম হবে…।