সমস্যাটা কোথায়? মিয়ানমার সরকারের ‘হিন্দু রোহিঙ্গাদের’ নিয়ে কোন আপত্তি নেই।

সমস্যাটা কোথায়? মিয়ানমার সরকারের ‘হিন্দু রোহিঙ্গাদের’ নিয়ে কোন আপত্তি নেই। তাদের ফিরিয়ে নিতে এরিমধ্যে মিয়ানমার সরকার কাজ করছে। হিন্দু রোহিঙ্গারাও দেশে ফিরতে মুখিয়ে আছে। উল্টো দিকে ‘মুসলিম রোহিঙ্গাদের’ নিতে মিয়ানমারের আপত্তি অনাগ্রহ সকলের জানা। একই সঙ্গে মুসলিম রোহিঙ্গরা মিয়ানমারে ফিরতেও চায় না। বিবিসির বার্মিজ বিভাগের সম্পাদক উইন থান জানাচ্ছেন, ‘মুসলিম রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় ফিরতে ইচ্ছুক না হলেও হিন্দু শরণার্থীরা স্বেচ্ছায় ফিরতে চায়। আর মিয়ানমার সরকারও চায় প্রত্যাবাসন শুরু করতে’।

হিন্দু রোহিঙ্গারা মিয়ানমারকে ভয় পাচ্ছে না। তারা দেশে ফিরতে উন্মুখ হয়ে আছে। মূলত এই হিন্দু রোহিঙ্গারা বার্মিজ সেনাবাহিনীর চিরুণী অভিযানে ঝাঁকের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলো। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া হিন্দু রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে বিবিসি জেনেছিলো মিয়ানমারে তারা বার্মিজ সেনাবাহিনী নয় তাদেরই স্বজাতি রোহিঙ্গা মুসলিমদের কাছে জিন্মি ছিলো। সংখ্যাগরিষ্ঠ রোহিঙ্গা মুসলমানদের কাছে সংখ্যালঘু হিন্দু রোহিঙ্গারা কেমন থাকতে পারে সেটা নিশ্চিয় কাউকে বলে দিতে হবে না। যাই হোক, আসল প্রশ্ন হচ্ছে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের মত একটা পিছিয়ে পড়া অনুন্নত জাতির প্রতি এতখানি বিরাগ হলো কেন? দেখা যাচ্ছে তারা রোহিঙ্গাদের মধ্যে যারা অমুসলিম তাদের ব্যাপারে কোন আপত্তি করছে না। কেবলমাত্র মুসলিম রোহিঙ্গাদের প্রতি তাদের যত আপত্তি। কারণটা কি?

মনে করেন বাঙালী হিন্দু আর বাঙালী মুসলমান- এদের মধ্যে খালি বাঙালী হিন্দুদের বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কোন আপত্তি নেই। তাহলে বিষয়টা কেমন হয়ে গেলো না? রোহিঙ্গা মুসলমানরা কি এমন করেছে যে বার্মা আর তাদের নিতে চায় না? এমন তো না জাতিগতভাবে রোহিঙ্গারা বিদ্যা বুদ্ধি শিক্ষায় বার্মিজদের বিপদে ফেলে দিয়েছে। জাতিগত অসন্তুষ্ঠি গড়ে উঠে এইরকম প্রতিযোগিতায়। সংখ্যাগরিষ্ঠ রোহিঙ্গা মুসলমান রাখাইনে থাকলে বার্মিজ সরকারের সমস্যাটা কোথায়? চাইনিজ উইঘুর মুসলিমরা জিয়াংজিয়ানে সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাদের নিয়ে চীন সরকারের সমস্যাটা কোথায়? মুসলমানরা নামাজ পড়লে অমুসলিমদের কোন ক্ষতি তো হয় না। মুসলমানরা কুরআপ পড়লে অমুসলিমদের কোন লোকসান হয় না। ইউরোপে হিন্দুরা একটা উল্লেখ্যযোগ্য সংখ্যায় উপস্থিত যাদের বেশির ভাগ ভারত থেকে আগত। তাদের নিয়ে কখনই সাম্প্রদায়িক সমস্যা ঘটার কথা শোনা যায়নি। কেবলমাত্র ‘মুসলিম ফোবিয়ার’ কথা শোনা যায় কেন? শ্রীলংকায় বৌদ্ধ খ্রিস্টানরা মিলেমিশে আছে সিংহলিজদের মধ্যে। কেবলমাত্র মুসলিমদের সঙ্গে তাদের দাঙ্গা বাধছে কেন? সমস্যাটা আসলে কোথায়?

হিন্দুদের ভালো, তাদের ধর্ম ভালো এরকম কিছু কি এই লেখা নির্দেশ করছে? যে কোন নির্মোহ পাঠক উপলব্ধি করবেন আমার লেখায় সেরকম কিছু নির্দেশ করছে না। আমাকে ভুল বুঝবেন না। ইউঘুর মুসলিম বা রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর চলা একটি নির্যাতনের ঘটনারও আমি সমর্থক নই। এই লেখটা যদি আপনি ভিন্ন লাইন থেকে ধরতে পারেন তাহলে পৃথিবীতে চলা সম্প্রদায়গত সমস্যাগুলোর পিছনে মূল ক্রিমিনালকে আপনারা চিনতে পারবেন। শ্রীলংকায় একটি মসজিদ ছিলো যেখানে মুসলিমরা নামাজ পড়তে গিয়ে বয়ান শুনত যে তাদের প্রতিবেশী সিংহলিজ বা তামিল হিন্দু খ্রিস্টান বৌদ্ধ কাফেরদের ঘৃণা করতে হবে। শ্রীলংকার গির্জাতে হামলার আগে সেই মসজিদে ইসলামিক খিলাফতের আওতায় শ্রীলংকাকে আনতে হলে মুসলমানদের জানমাল দিয়ে সংগ্রাম করতে হবে এমন আহ্বান জানানো হত। এরকম একটি উদাহরণ শ্রীলংকার হিন্দু মন্দির কি দেখানো যাবে? তামিলদের উপর সিংহলিজরা যে পরিমাণ অত্যাচার করেছে তারপরও কি তামিল মন্দিরে এরকম কিছু শোনা গেছে? কোন গির্জা থেকে পৌত্তলিক লংকানদের বিরুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার মন্ত্রণা ছড়ানো হত না। পৃথিবীর সবগুলো ধর্ম কুসংস্কারময়, অবৈজ্ঞানিক প্রথা আর বিশ্বাসে পুঁতিগন্ধময়। এমন নয় যে হিন্দু শাস্ত্র বা খ্রিস্টান বাইবেল ইহুদী তাওরাতে অন্য ধর্ম বিশ্বাসীদের সম্পর্কে হেয় করে বা ঘৃণা করে কিছু বলা নেই। নিশ্চিয় আছে। কিন্তু এসব জিনিস ঐসব সম্প্রদায়ের মধ্যে আজ চর্চিত নয়। এমনকি আজ কোন ইহুদী ধর্মালয় থেকে খ্রিস্টানদের সম্পর্কে বিষেদাগার করা হয় না। এমনকি খ্রিস্টান চার্চ থেকে যীশুর মৃত্যুর জন্য ইহুদীদের দায়ী করা হয় না। একবার চিন্তা করে দেখুন যীশুকে ক্রুশে চড়ানোর জন্য কয়েকজন ইহুদী রাব্বিকে দায়ী করা হয়। যদি এমনটা ইসলামে থাকত, যেমন মুহাম্মদকে কয়েকজন ইহুদী হত্যা করেছিলো, তাহলে মসজিদ থেকে কি পরিমাণ ইহুদীদের উপর অভিশাপ বর্ষিত হত? ইসলামের ইতিহাসে ইহুদীদের উপর চলা জেনোসাইড ঘটার পরও মসজিদ থেকে ইহুদীনাসারাদের উপর যে পরিমাণ ঘৃণা অভিশাপ বর্ষিত হয়, কুরআনে যে পরিমাণ অভিশম্পাত তাদের উপর করা হয়েছে তাতেই তো ধর্মটা আজকের পৃথিবীকে অশান্ত করে তুলেছে। তাই একটা মসজিদ কিছুতে মন্দির চার্চ প্যাগোডার মত ধর্মালয় নয়। মসজিদ ছিলো ইসলামের সূচনাকাল থেকে রাজনৈতিক কার্যালয়। নবী মসজিদে নববীতে বসে প্লাণ করতেন বনু নযির ইহুদী গ্রামে হামলা করবেন। মসজিদে বসে তিনি লুটের মাল (গণিমতের মাল) ভাগ বন্টন করতেন। এখান থেকেই তিনি জিহাদের পোশাক পরে অস্ত্র হাতে বের হতেন। কাজেই মসিজদ কোনকালেই আধ্যাত্মিক ধ্যান আরাধনার জায়গা ছিলো না। এ কারণেই আজকের যুগের সব মসজিদগুলোই কমবেশি এরকম হয়ে থাকে। নিউয়র্কের মসজিদটিতে নাইন ইলেভের আগে প্রতি নিয়ত কাফেরদের উপর গজব পড়ার জন্য মুনাজাত ধরা হত। বুকে হাত দিয়ে একটা সত্য কথা বলুন, আমেরিকার মাটিতে একটি হিন্দু মন্দিরে, শিখ মন্দিরে, বৌদ্ধ প্যাগোডায় এভাবে অবিশ্বাসীদের প্রতি ঘৃণা ছড়ানো হত? মধ্যযুগে চর্চা বা মন্দিরে কতখানি বর্বরতা চলত সে বিষয়ে আমি অবগত আছি, আমার ফোকাস বর্তমান সময়কাল। আমার পয়েন্টটা তাই ধরার চেষ্টা করুন…।

একটা জনগোষ্ঠিকে ইসলাম তার খিলাফত জিহাদের ভাইরাস দ্বারা কিভাবে আজকের পৃথিবীতে সকলের চক্ষুশূল করে তুলেছে তার দুটো উদাহরণ চাইনিজ উইঘুর মুসলিম আর রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠি। এই দুই সম্প্রদায় চীন ও মিয়ানমারে অনুন্নত পিছিয়ে পড়া এক সম্প্রদায়। তাদের ঈর্ষা করার কোন কারণই নেই। শ্রীলংকায় এতগুলো ধর্ম সম্প্রদায় আছে কারোর সঙ্গে সমস্যা হচ্ছে না শুধু মুসলিমদের সঙ্গে লাগছে কেন? শ্রীলংকান গির্জাতে হামলাকারীর মসজিদে দেয়া বয়ানের যে ভাষা আমরা শুনেছিলেন সেটা ছিলো ইসলামের কাফেরদের প্রতি তীব্র ঘৃণা বিদ্বেষের বর্হিপ্রকাশ। আমি বলছি না সব মুসলিম জঙ্গি জিহাদী। তবে মুসলমানদের ধর্ম যেহেতু ইসলাম কাজেই ফান্ডামেন্টালিস্টরা জিহাদের চেষ্টা করবেই। সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেই তারা ইসলামী রাষ্ট্রের জন্য বিচ্ছিন্নতাবাদ চালাবে। রোহিঙ্গা মুসলমানদের বার্মা নিবে না এ কারণেই। জিহাদের ময়দানের সৈনিক হতে মুসলমানদের দ্রুত প্রজনন আরো একটি আতংকের দিক অমুসলিমদের কাছে। জন্মহার দিয়ে তারা শরীয়ার দাবী তুলবে। সংখ্যাগরিষ্ঠদের দাবীর মুখে ইসলামিক আইন চালু করবে। সারা পৃথিবীতে মুসলিমরা এখন সবচেয়ে বেশি শরণার্থী। তাদের সন্ত্রাসী হিসেবে সবাই সন্দেহের চোখে দেখে। এই সন্দেহ অবিশ্বাসের জন্য দায়ী মুসলিমদের ইসলামী চেতনা। এই চেতনা নিছক হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ধর্মের মত সাম্প্রদায়িক চেতনা নয়। সেরকম ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক চেতনা হলে রোহিঙ্গা মুসলমান বা উইঘুর মুসলমানদের নিয়ে শাসকদের কোন সমস্যা হওয়ার কথা ছিলো না। বার্মিজ বৌদ্ধ মৌলবাদীদের কোন প্রোবলেম ছিলো না। ইসলামী চেতনা একটি রাজনৈতিক জাতীয়তাবাদী চেতনা। এই চেতনায় নিজেদের অন্যদের পদনত করে নিজেদের শাসক হিসেবে দেখতে ইচ্ছা করে। এই চেতনা তাই একই জাতিসত্ত্বার মধ্যে বিভেদ তৈরি করে, বহু জাতি গোষ্ঠির মধ্যে নিজেদের পৃথক করে ফেলে…। মূলত এই রাজনৈতিক চেতনাই আজকের বিশ্বে মুসলিমদের সারা বিশ্বে ভিলেন করে তুলেছে। এ থেকে পরিত্রানের একটা পথ, মুসলমানদের ধর্ম থেকে দূরে রাখা। সৌদি আরব নিজেদের উপর জিহাদীদের ছায়া পড়তে দেখে তাই সিনেমা হল, খেলাধুলা, টিভি বিনোদন কেন্দ্র খুলে দিয়েছে যাতে মানুষ অতিরিক্ত ইসলাম নিয়ে মশগুল না থাকে। সৌদির মত ইসলামের জন্মভূমি নিজেদের বাঁচাতে যেখানে ইসলাম বিরোধী পথ বেছে নিয়েছে সেখানে আমরা আরো বেশি করে ইসলামী চেতনা জাগাতে মাদ্রাসা মসজিদ বানানোর সরকারী উদ্যোগ বাড়িয়ে দিয়েছি। শুধু নিজেদের জন্য নয়, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নাকি কয়েক হাজার মাদ্রাসা গড়ে উঠেছে সরকারের প্রত্যক্ষ পরোক্ষ নজরদারীতেই! ১১ লাখ রোহিঙ্গার জন্য হাজার খানেক মাদ্রাসা যদি প্রয়োজন হয়- এইরকম একটা সম্প্রদায়কে মিয়ানমার যে নিবে না তার কারণ ঐ চেতনা কারণেই। বার্মিজরা আর ইসলামীক ভাইরাস নিবে না- এটা তো আর খোলাখুলি তারা বলতে পারে না।