আমার একজন টি-শার্ট ফ্যাক্টরি মালিক বন্ধু আছে যিনি আমাকে সম্প্রতি তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেন। তিনি জানিয়েছেন, তার বানানো টি-শার্টের পাইকারী ক্রেতারা টি-শার্টের ডিজাইন হিসেবে মানুষের মুখ ও প্রাণ আছে এমন প্রাণীর চিত্র না দিতে অনুরোধ জানিয়েছে। কারণ কাস্টমার এসব কম কেনে। মসজিদে নামাজ পড়তে তাদের সমস্যা হয়। টি-শার্টের আসল ক্রেতা হচ্ছে তরুণ সমাজ। তাদের কাজ থেকে এরকম ফিডব্যাক আসা দেখে একটা দেশের আগামী দিন কেমন যাবে বুঝা যায়। বাংলাদেশের ঢাকায় ‘ইস্পাতের কান্না’ নামের একটা ভাস্কর্যের নারী অবয়বের উপর কাপড় ঢেকে দেয়া হয়েছে। দৈনিক প্রথম আলো ক্যাপসনে লিখেছে, ‘দুর্বৃত্তরা’ এই কাজ করেছে। এখানে পরিস্কার করে লিখতে হবে ‘মুসলমানরা’ এই কাজ করেছে। মুসলমান ছাড়া আর কোন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ভাস্কর্য নিয়ে চুলকানি নেই। ছবি আঁকা, ভাস্কর্য নির্মাণ ইসলামে হারাম। মক্কা দললের পর হযরত মুহাম্মদ খালিদ বিন ওয়ালিদকে দিয়ে পৌত্তলিকদের সব রকম মূর্তি ভাস্কর্য ধ্বংস করিয়েছিলেন। তিনি আলীকেও বলেছিলেন, যেখানে দেখবে মূর্তি, উচু কবর- ভেঙ্গে সমান করে দিবে। এসব বুখারী হাদিস মাদ্রাসায় পড়ে একজন ছাত্র আলেম হয়ে বের হয়। তারপর সে ওয়াজ করে, টকশো করে, মসজিদে ইমামতি করে। সে যখন ইসলামের নির্দেশ সম্পর্কে বয়ান করবে তখন তাকে এসব বলতেই হবে। আর একজন সাধারণ চিন্তাধারার মানুষ যে ধর্মান্ধ সে তো হুজুরদের কাছ থেকেই ধর্মকে জানবে। তাহলে টি-শার্টের ক্রেতা তরুণটির রক্ষণশীল হয়ে উঠার জন্য আদতে হুজুরকে দায়ী মনে করলেও প্রকৃত ক্রিমিনাল ইসলাম। হুজুরদের ওয়াজের উপর নজরদারী করে লাভ নেই যদি মাদ্রাসা নির্মাণ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারেন। মাদ্রাসা চালানো কঠিন করে দিন। দানের উৎস বন্ধ করেদিন। যাকাত ফেতরা দেয়া বন্ধ করে দিন দেখবেন ভাস্কর্যগুলো নিয়ে জনগণের চুলকানি বন্ধ হয়ে গেছে। দশ বছর ইসলামের গোড়ায় জলসিঞ্চন বন্ধ করে দেন দশ বছর পর দেখবেন তরুণ সমাজ আবার বব ডিলানের ছবিঅলা টি-শার্ট পরতে চাইছে। চে গুয়েভারার টি-শার্ট পরলে নামাজ হবে না- এরকম বুড়টে চিন্তা তরুণদের মাথায় আসবে না যদি সে প্রগতিশীল শিক্ষা পায়।
শত শত সিসি ক্যামেরায় মধ্যে ঢাকা শহরে কারা ভাস্কর্যের মুখে কাপড় ঢেকে দিলো সেটা উদ্ধার করতে শার্লক হোমস হওয়া লাগে না। কিন্তু হুজুর প্রিয় সরকার তাদের ধরবে না। আমরা জানি কারা ভাস্কর্য মূর্তি মুক্ত বাংলাদেশের ঘোষণা দিয়েছিলো। আমরা এটাও জানি সেই ঘোষণাকারীদেরই সরকার থেকে জমি দেয়া হয়েছে যাতে আরো বেশি করে ধর্মান্ধ জনগোষ্ঠি তৈরি করা যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত এড়িয়ায় গাছে গাছে আরবীতে আল্লাহু মোহাম্মদ লেখা দেখে জায়গাটাকে মাদ্রাসা মনে হওয়াটা একজন আগুন্তুকের জন্য খুব সহজ। গোটা ঢাকা শহরে চমকে যাবার মত ইসলামিকরণ দেখে আমরা চমকে গেলেও গ্রাম মফস্বলের খবর প্রায় রাখিই না। কমিউনিস্টরা গ্রাম দিয়ে শহর দখলের যে প্লাণ নিয়েছিলো, বাংলাদেশের ইসলামপন্থিরা সেটারই হুবহু ক্লোন করেছে। গ্রামে ভোররাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছেলেদের নাম ধরে ধরে ফজরের নামাজে নিয়ে যাওয়া হয়। দাড়ি না রাখলে ভৎসনা করা হয়। স্কুলগুলোর হেডমাস্টারা ছেলেমেয়ের জোহরের নামাজ পড়া বাধ্যমূলক করে দিয়েছে। এরকম কিছু চাপিয়ে দেয়ার উপর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থা নেয়ার কোন সাহস নেই কারণ এখানে ইসলামের বিরুদ্ধে তাকে একশান নিতে হবে। ৪০ দিন জামাতে নামাজ পড়ার লোভ দেখিয়ে বাংলাদেশের এক শিল্পপতি বালকদের বাইসাইকেল দিয়েছে। এটা তুরস্ক থেকে আমদানি করা। সমাজে রন্ধে রন্ধে ভাইরাস বাসা বেধেছে। সরকার সেই ভাইরাস ভ্যাকসিন দিয়ে দূর করার বদলে উল্টো বাসা বাধতে সাহায্য করছে…।
আরো বিশ্রী খারাপ কিছু দেখার জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। ইসলামের শিক্ষা কি কি জন্ম দিতে পারে তার কোন ধারণাই আপনাদের নেই। ইসলামের উপর লেখাপড়া না করলে আপনি ধারণাই করতে পারবেন না মানব সভ্যতাকে গলা টিপে হত্যা করার জন্য একা ইসলামই যথেষ্ঠ!